শুক্রবার ২২ নভেম্বর, ২০২৪


ফ্রিদা এবং দিয়েগো। ছবি: সংগৃহীত।

যুক্তরাষ্ট্রে থাকাকালীন ফ্রিদা তাঁর ডায়রিতে লিখেছিলেন, ‘অভিজাত সমাজ আমাকে স্বস্তি দেয় না। বড়লোকদের আমার ভালো লাগে না। কারণ, আমি দেখেছি হাজার হাজার মানুষ বাস করছে চরম দারিদ্র্যের মধ্যে, তাদের খাবার নেই, থাকার মতো বাড়ি নেই, এটা আমাকে দারুণ আহত করে। হাজার হাজার ক্ষুধার্ত মানুষকে অভুক্ত রেখে বড়লোকেরা ফুর্তি করে বেড়ায়, যা আমাকে বিরক্ত করে। তবে যুক্তরাষ্ট্রে শিল্পের বিকাশ আমাকে মুগ্ধ করে। আমি দেখতে পাচ্ছি, যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ ভুগছে রুচির বিকারে… তারা যেন বাস করে মুরগির খোঁয়াড়ে, যা ময়লা আর অস্বস্তিতে ভরপুর। বাড়িগুলো যেন ওভেন, বাড়িগুলো সম্পর্কে যা বলা হয়, তা আসলে মিথ। হতে পারে আমি ভুল করছি, কিন্তু আমি সে কথাই বলছি, যা আমি অনুভব করছি।’ এই ছিলেন ফ্রিদা।

ফ্রিদা কাহলো, পৃথিবীবিখ্যাত মেক্সিকীয় চিত্রশিল্পী যিনি নিজের যন্ত্রণাময় জীবন, শারীরিক প্রতিবন্ধকতা অথবা মানুষের দুঃখ, অসুবিধা প্রকাশে, তা সে রঙতুলিতে হোক বা বাচিক প্রকাশে, ছিলেন অনবদ্য। ১৯৩৮ সালে পরাবাস্তববাদী আন্দোলনের প্রধান আঁদ্রে ব্রেটন, ফ্রিদার কাজকে ‘রিবন অ্যারাউন্ড এ বোম্ব’ আখ্যা দিয়েছিলেন। কিন্তু ফ্রিদা বলতেন, পরাবাস্তবের চেয়ে তাঁর চিত্রে বাস্তব অবস্থার প্রতিফলনই প্রবল। আসলে কোনও রাখঢাক না রেখে তাঁর আঁকা আত্মপ্রতিকৃতিগুলো হোক বা অন্য ছবি সবই ছিল কঠোর বাস্তবতার প্রতীক।
১৯০৭ সালের ৬ জুলাই মেক্সিকোর কয়োকান শহরে জন্ম হয় ফ্রিদা কাহালোর। জন্মের পর থেকেই তিনি এক মিশ্র সংস্কৃতির মধ্যে বেড়ে ওঠেন‌। জার্মান-হাঙ্গেরিয়ান বাবা আর মা ছিলেন স্প্যানিশ ও তেহুয়ানা আদিবাসী মিশ্র রক্তের মানুষ। ছোটবেলা কেটেছিল মেক্সিকো শহরের এক উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারে। মেক্সিকোর সমসাময়িক বিপ্লবের আঁচ এসে পড়ত তাঁর বাড়িতে। নিজেকে সেই বিপ্লবের সঙ্গে একাত্ম করার জন্য তিনি বলতেন যে, তাঁর জন্ম ১৯১০ সালে। কিছু বছরের মধ্যেই শুরু হয়েছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। বিশ্ব রাজনীতিতে এসেছিল বিরাট পরিবর্তন। সেই সময় গুলিবর্ষণ শুরু হলেই ফ্রিদার মা ফ্রিদা ও তাঁর ভাইবোনদের নিয়ে লুকিয়ে পড়তেন। আবার বিদ্রোহীরা সাহায্য চাইলে মা তাঁদের খাবারের আয়োজন করতেন। তাঁর বাবা ফটোগ্রাফার গিলেরমো কাহলো উনিশ বছর বয়সে জার্মানি থেকে মেক্সিকো এসে বদলে ফেলেন নিজের নাম।

ফ্রিদা দাবি করতেন তাঁর বাবা ছিলেন ইহুদি-হাংগেরিয়ান বংশোদ্ভুত, কিন্তু মা ছিলেন প্রকৃতপক্ষে স্পেনীয়। ছোটবেলা থেকেই চিত্রশিল্পের প্রতি ফ্রিদার আকর্ষণ। সেই আকর্ষণই তাঁর ক্ষত-বিক্ষত ব্যক্তিগত জীবনে যুগিয়েছিল বেঁচে থাকার রসদ।

ছবি: সংগৃহীত।

ছোটবেলায় বাবার বন্ধু প্রিন্ট মেকার ফার্নান্দো ফার্নান্দেজের কাছ থেকে আঁকার তালিম পেয়েছিলেন ফ্রিদা। ছয় বছর বয়স থেকে পোলিও রোগে আক্রান্ত হওয়ার কারণে তাঁর ডান পা আকারে ছোট ও নিস্তেজ হয়ে পড়ে, হাঁটাচলায় অসুবিধের কারণে স্কুলে সহপাঠীদের হাসির-ঠাট্টার পাত্রী হন। মনে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতের সৃষ্টি হয়। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা ঢাকার জন্য লম্বা গাউন আর কয়েক স্তর বিশিষ্ট মোজা পরতে শুরু করেন তিনি। এছাড়া তাঁর স্পাইনা বাইফিদা নামে একধরনের জন্মগত রোগ ছিল, যা তাঁর মেরুদণ্ড আর পায়ের বৃদ্ধি ব্যাহত করে। তাঁর অনন্য সাজগোজ পরবর্তীতে স্টাইল স্টেটমেন্টে পরিণত হয়।

আজও পৃথিবী জুড়ে বিখ্যাত ডিজাইনাররা ফ্রিদার প্রতি শ্রদ্ধাবশত তাদের পোশাক আশাকে ফ্রিদার মুখাবয়ব ফুটিয়ে তোলেন। তাঁর কাজ যা পৃথিবী আগে দেখেনি, অদৃষ্টের সঙ্গে তাঁর হার না মানা লড়াই যা সুস্থ স্বাভাবিক জীবন যাপনকারী যে কোনও মানুষের উপলব্ধিরও বাইরে, সেই শিল্পী শিল্পকলাকে নিজের জীবনবোধের, ভাবপ্রকাশের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে জনপ্রিয় মাস্টার আর্টিস্টদের সঙ্গে একসারিতে চলে আসেন।
আরও পড়ুন:

মাই নেম ইজ গওহর জান—ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতে অঘোষিত বিপ্লব এনেছিলেন এই শিল্পী

ইতিহাস কথা কও, কোচবিহারের রাজকাহিনি, পর্ব-১: রাজবাড়ির ইতিকথা—ইতিহাসের অন্তরে ইতিহাস

বৈষম্যের বিরোধ-জবানি, পর্ব-২৮: ‘সম্মতি’ আদায়ের চাবিকাঠি

তাঁর থেকে প্রায় কুড়ি বছরের বড় বিখ্যাত চিত্রশিল্পী দিয়েগো রিভেরার সঙ্গে ১৯২৯ সালে তাঁর বিবাহের মধ্যে দিয়ে তিনি নিজের শৈশবের না পাওয়া স্নেহ, ভালোবাসার পূরণ করেছিলেন তাও নয়। কারণ ফ্রিদা তাঁর প্রফেশনাল ফটোগ্রাফার বাবার খুব কাছাকাছি ছিলেন, বাবাও মেয়েকে ভালোবাসতেন হৃদয় দিয়ে। বিভিন্ন সময়ে ফ্রিদা তাঁর বাবাকে স্টুডিওর নানা কাজে সাহায্য করতেন। সেখানে ডিটেইলিংয়ের কাজ করতে করতে ফ্রিদা তীক্ষ্ণ দৃষ্টি অর্জন করেছিলেন। কিন্তু পড়াশোনার ক্ষেত্রে তাঁর মূল আকর্ষণের বিষয় ছিল বিজ্ঞান।

১৯২২ সালে মেডিকেল সায়েন্সে উচ্চশিক্ষা লাভের উদ্দেশ্যে মেক্সিকোতে প্রিপারেটোরিয়াতে ভর্তি হন তিনি। মেক্সিকোতে সেই সময় জনবিদ্রোহের রোষ অব্যাহত ছিল, রাস্তাঘাটে সহিংস, সশস্ত্র সংগ্রামের সাক্ষী হতেন ফ্রিদা ও তাঁর বন্ধুরা। সেই সময় বিখ্যাত শিল্পী দিয়েগো রিভেরা তাঁদের স্কুলের অডিটোরিয়ামের দেয়ালে কাজ করতে আসেন। তাঁর কাজ দেখে ফ্রিদার ভিতরের শিল্পীসত্ত্বা আবার জেগে ওঠে। ফ্রিদার প্রথম দিকের চিত্রকর্মগুলো রেনেসাঁ মাস্টার্স এবং ইউরোপীয় অ্যাভান্ট-গার্ড শিল্পীদের যেমন আমেদিও মোদিগলিয়ানির দ্বারা প্রভাবিত। তাঁর ছবির বিষয়গুলো পরাবাস্তববাদী হলেও উপাদানগুলোকে বাস্তবতার সঙ্গে মিশিয়ে তিনি নিদারুণ ব্যথা এবং মৃত্যুকে চিত্রিত করেছিলেন।

ছবি: সংগৃহীত।

১৯২৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর কাহলো এবং তাঁর বন্ধু আলেকজান্দ্রো গমজ আরিয়াসের সঙ্গে যে বাসে বাড়ি ফিরছিলেন তা আকস্মিক দুর্ঘটনায় পড়ে। গুরুতর আহত হন ফ্রিদা। সারা শরীর ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায়। কয়েক বছর ধরে প্রায় তেত্রিশটি অস্ত্রপ্রচার হয় তাঁর। এমনকি চিকিৎসকেরাও তাঁর জীবনের আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন। তীব্র শারীরিক যন্ত্রণায় ফ্রিদা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। সেই সময় নিঃশ্বাস নেওয়া ছাড়া তাঁর শরীরের আর কোনও অস্তিত্ব ছিল না। কিন্তু একটু সেরে উঠলে জীবনের ধর্ম মেনে চূড়ান্ত হতাশার মধ্যেও তিনি আশার আলো দেখতে পান ছবি আঁকার মাধ্যমে। পুরোনো শিল্পীদের কাজ নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন।

অচলাবস্থার মধ্যে নিজের যন্ত্রণাদীর্ণ প্রতিকৃতি আঁকা তাঁর জীবনের ক্ষেত্রে অবিচ্ছেদ্য হয়ে ওঠে। তাঁর মা তাঁকে এক বিশেষ ধরনের চিত্রপট তৈরি করে দেন, যাতে শুয়ে থেকেই ছবি আঁকা যেত। এইসময় নিয়ে বলতে গিয়ে ফ্রিদা তাঁর মাকে পরে বলেছিলেন, ”শুধু ছবি আঁকতাম বলেই সে সময় বেঁচে ছিলাম।” ১৯২৬ সালে আত্মপ্রতিকৃতি ‘ওয়ারিং অ্যা ভেলভেট ড্রেস’ আঁকার পর কাহলো বলেছিলেন, “আমি নিজেকেই আঁকি, কেননা প্রায়শই আমি একা থাকি, আর বিষয়বস্তুগুলোর মাঝে নিজেকেই সবচেয়ে ভালো জানি।”
আরও পড়ুন:

এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৪: সুন্দরবনের লবণ-বৃত্তান্ত

রিভিউ: ওয়েব সিরিজ ‘স্কুপ’, ওটিটি হল বিনোদনের আইপিএল

এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-২৮: সাইনাস নাকি কখনওই সারে না?

আরোগ্য লাভের পর ফ্রিদা ১৯২৭ সালে মেক্সিকান কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেন। সেখানেই তাঁর সঙ্গে আরেকবার দেখা হয়ে যায় দিয়েগো রিভেরার। নিজের আঁকা ছবিগুলো দিয়েগোকে দেখালে দিয়েগো দ্রুত ফ্রিদার প্রতিভা বুঝতে পারেন এবং তাঁকে উৎসাহিত করেন। ছবি আঁকার সূত্রে দিয়াগোর কাছে ফ্রিদার যাতায়াত, পারস্পরিক বোঝাপড়া ক্রমশ ভালোলাগা থেকে ভালোবাসায় পরিণত হয়। এরপর ১৯২৯ সালে তাঁর বাবা মার তীব্র আপত্তি সত্ত্বেও কুড়ি বছরের বড় দিয়েগো রিভেরার তৃতীয় স্ত্রী হিসেবে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন ফ্রিদা। একজন গুণী, বিশ্বখ্যাত চিত্রশিল্পী যিনি কিনা আগে দুবার বিবাহিত এবং অগণিত সমান্তরাল সম্পর্কে বিশ্বাসী সেই মানুষকে বিবাহের ক্ষেত্রে ফ্রিদার ভালোবাসা প্রাধান্য পেয়েছিল। ফ্রিদার মৃত্যুর পর দিয়েগো নিজের আত্মজীবনীতে লিখেছিলেন, যেদিন কাহলো মারা গিয়েছিলেন, সেই দিনটি তাঁর জীবনের সবচেয়ে দুঃখজনক দিন ছিল। তিনি আরও বলেছিলেন যে, তাঁর জীবনের সুন্দরতম অংশ ছিল তাঁর জন্য ফ্রিদার ভালোবাসা।
আরও পড়ুন:

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-২: মেয়েটি যেন গৃহলক্ষ্মী

লাইট সাউন্ড ক্যামেরা অ্যাকশন, পর্ব-৬: হিচককের সাইকো—ম্যারিয়নের স্নান ও নর্মা-র মৃতদেহ

হুঁকোমুখোর চিত্রকলা, পর্ব-৫: আরও একটু বেশি হলে ক্ষতি কী?

বিয়ের পর ফ্রিদার আঁকার ভঙ্গিতে পরিবর্তন আসে। ঢোলা ব্লাউজ, এলোমেলো ফোলা স্কার্ট, কানের দুল, গলার হার, নানা রঙের ফিতে দিয়ে জড়িয়ে রাখা চুল হয়ে ওঠে তাঁর ট্রেডমার্ক। তাঁর আঁকা ‘ফ্রিদা অ্যান্ড দিয়েগো রিভেরা’ (১৯৩০), ‘হেনরি ফোর্ড হসপিটাল ‘ (১৯৩২), ‘মেমরি, দ্য হার্ট’ (১৯৩৭), হোয়াট দ্য ওয়াটার গেভ মি’ (১৯৩৮), ‘দ্য টু ফ্রিদাস’ (১৯৩৯), ‘সেল্ফ-পোর্ট্রেট উইথ থর্ন নেকলেস অ্যান্ড হামিংবার্ড’ (১৯৪০), ‘দ্য ব্রোকেন কলম'(১৯৪৪), আজও সেই পরিবর্তিত পদ্ধতির সাক্ষ্য দেয়। দিয়েগো এই সময় সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘এ সময়ে ফ্রিদা যা এঁকেছে, তা এর আগে দেখেনি শিল্পের ইতিহাস-কঠোর সত্যের সামনে দাঁড়ানো নারীর ছবি।’ তাঁর চিত্রকর্মের সংখ্যা প্রায় দেড়শ থেকে দু’শোর মধ্যে। মেক্সিকান জনজাতিদের হয়ে, তাদের না বলা কথা, ক্লাসিক ধর্মীয় মেক্সিকান ঐতিহ্যের উপাদানগুলোকে তুলে ধরার মধ্য দিয়েই তিনি নিজের শৈল্পিক উৎকর্ষ সাধনের চেষ্টা করতেন।

প্রতিরক্ষামূলক প্রতীক হিসেবে নিজের ছবিতে বানরদের ছবি ব্যবহার করতেন। ছোটবেলায় ঘটে যাওয়া ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনা, অস্ত্রোপচার এবং পরবর্তী জীবনে বারবার মিসক্যারেজের কারণে তাঁকে দীর্ঘদিন হাসপাতালে থাকতে হয়েছিল, সেইসব যন্ত্রণাময়, রক্তাক্ত দিনের অভিজ্ঞতা তিনি কোনও রাখঢাক না রেখে নিজের ছবির মাধ্যমে উন্মোচন করেছিলেন, হাত কাঁপেনি তাঁর কারণ তিনি ছিলেন ফ্রিদা। বিংশ শতাব্দীর নারীমুক্তি আন্দোলনের অন্যতম প্রধান মুখ ছিলেন তিনি। প্যারিসের ল্যুভর মিউজিয়াম কর্তৃপক্ষ তাঁর কাজ ‘দ্য ফেম’ (১৯৩৮) কিনে নেওয়ায়, তিনিই হয়ে ওঠেন বিশ শতকের প্রথম মেক্সিকান শিল্পী যাঁর কাজ জাদুঘরটিতে স্থান পেয়েছে।

ছবি: সংগৃহীত।

১৯৩৩ সালে ফ্রিদা ও দিয়েগো মেক্সিকোতে নতুন বাড়ি নির্মাণ করে বসবাস করতে শুরু করেন। বাড়িটা ক্রমশ শিল্পী এবং রাজনৈতিক কর্মীদের সমাবেশের স্থান হয়ে ওঠে, কিন্তু নানা কারণে বিশেষত দিয়োগোর বেশ কিছু সমান্তরাল সম্পর্কের কারণে ১৯৩৯ সালে ফ্রিদা ও রিভেরা দম্পতির দাম্পত্য জীবনের অবসান ঘটে। এইসময় তিনি তাঁর বিখ্যাত শিল্পকর্ম ‘দ্য টু ফ্রিদাস’ এঁকেছিলেন। তবে ১৯৪০ সালে এই দম্পতি পুনরায় একত্র হন এবং তাদের ‘দ্য ব্লু হোমে’ বসবাস করতে শুরু করেন। সাল ১৯৫০, কাহলোর শরীর ক্রমশ খারাপ হতে শুরু করে। এইসময় মেক্সিকোর সিটি হাসপাতালে তাঁর মেরুদণ্ডে একটা গ্রাফট সার্জারি হওয়ায় তিনি বেশিরভাগ সময় হুইলচেয়ারে কাটাতে শুরু করেন। মেক্সিকান কমিউনিস্ট পার্টির হয়ে তিনি শান্তির পক্ষে প্রচার শুরু করেন।

ছবি: সংগৃহীত।

এভাবে চলতে চলতে ১৯৫৪ সালের ১৩ জুলাই আনুমানিক ছয়টার সময় নার্স তাঁকে বিছানায় মৃত অবস্থায় দেখতে পান। মাত্রাতিরিক্ত ওষুধের ব্যবহারই তাঁর মৃত্যুর কারণ বলে ঘোষণা করা হয়। “আশাকরি মৃত্যুটা আনন্দের হবে, আমি আর কখনওই ফিরে আসার প্রত্যাশা করি না”। অবশেষে মৃত্যু যন্ত্রণাকাতর ফ্রিদার চিরতরে অবসান ঘটে। কিন্তু অবসান ঘটেনা সেই ঘরানার যেখানে কাজের প্রকাশই নারী মুক্তি আন্দোলনের পথ আরও প্রশস্ত করে, আজও ভাষা পায় প্রত্যক্ষ আন্দোলনকারীরা।
* লেখিকা পরিচিতি: ড. বিদিশা মিশ্র বিগত চৌদ্দ বছর ধরে সরকারি কলেজে, বর্তমানে কলকাতার লেডি ব্রেবোর্ন কলেজে অধ্যাপনার সঙ্গে যুক্ত। তাঁর বিষয়— সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্য। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃতি ছাত্রী বিদিশা স্নাতক ও স্নাতকোত্তর উভয় পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে তৃতীয় হন। তাঁর গবেষণার বিষয় ছিল —বাঙালি নৈয়ায়িক চিরঞ্জীব ভট্টাচার্যের গ্রন্থ ‘কাব্যবিলাস’। তাঁর এই গবেষণা ২০২১ সালে কর্ণাটকের আইএনএসসি পাবলিশিং হাউস থেকে ‘দ্য কাব্যবিলাস অফ চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য — এ ক্রিটিক্যাল স্টাডি’ শিরোণামে প্রকাশিত হয়। দেশের বিভিন্ন প্রদেশের পত্রিকায় তাঁর শোধপত্র প্রকাশিত হয়েছে। বর্তমানে তাঁর তত্ত্বাবধানে একাধিক স্কলার গবেষণারত। বিভিন্ন সরকারি কাজকর্ম ও অধ্যাপনার পাশাপাশি তিনি গুরুজি বিপ্লব মুখোপাধ্যায়ের কাছে হিন্দুস্থানি ক্লাসিক্যাল ও রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী জয়শ্রী দাসের কাছে রবীন্দ্রসংগীত শিক্ষারতা। ভ্রমণপিপাসু বিদিশা দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থান ঘুরেছেন, সেইসব অভিজ্ঞতা তাঁকে সমৃদ্ধ করেছে বলে তিনি মনে করেন।

Skip to content