ছবি: প্রতীকী।
আয়ুর্বেদ চিকিৎসা শাস্ত্রে, আমলকি গাছের প্রায় সব অংশই মানব জাতির কল্যাণের কাজে ব্যবহৃত হয়। যেমন ফল, ফুল, বীজ, পাতা, মূল, বল্কল ইত্যাদি অংশগুলি কোষ্ঠকাঠিন্য দূরীকরণে, জ্বরে, রক্ত পরিশোধনকারী হিসাবে, কাশি-হাঁপানি নিয়ন্ত্রণে, চোখ ও চুলের সমস্যায় উপকার দিয়ে আসছে সেই ঋকবেদের সময় থেকে। তেমনই আধুনিক চিকিৎসাশাস্ত্রে এটি ক্যানসারও নিরাময় করে। হয়তো এই কারণেই আমলকি গাছকে ‘ধাত্রীমা’ বা ‘ধাত্রীকা’ উপাধিতে সম্মানিত করা হয়েছে। হিন্দুদের কাছে খুবই প্রবিত্র গাছ হিসাবে পরিচিত এই গাছটিকে ঘিরে নানান পৌরাণিক কাহিনিও প্রচলিত আছে সেই প্রাচীনকাল থেকে। বৃহৎ পুরাণ অনুযায়ী দেবী পার্বতী এবং লক্ষ্মীর কাছে আমলকি খুবই পবিত্র বৃক্ষ।
একদা লক্ষ্মী এবং পার্বতীর মধ্যে সামান্য বিবাদ ঘটে থাকে। শিবপত্নী পার্বতী ইচ্ছা প্রকাশ করেন যে, তিনি নতুন এক ধরনের পূজার অর্ঘ্য শ্রীবিষ্ণুর পদতলে নিবেদন করবেন এবং তা শুনে লক্ষ্মীও মনে মনে ঠিক করলেন যে তিনিও নতুন কোন পূজার উপাদান দিয়ে দেবাদিদেব মহাদেবকে তুষ্ট করবেন। দুই দেবী সেই বিষয়কে ঘিরে কাঁদতে শুরু করলেন এবং তাদের চোখের জল থেকে সৃষ্টি হল এই আমলকি গাছ এবং সেই গাছের পাতা দিয়ে দুই দেবী শিব ও বিষ্ণুকে তুষ্ট করলেন।
একদিকে যেমন শিবরাত্রির দিন আমলকি গাছকে পুজো করা হয় অন্যদিকে আবার বিষ্ণু ভক্তরা আমলকি একাদশী পালন করেন ফাল্গুন মাসের একাদশীর দিনে। ভারতীয় সভ্যতা ও সংস্কৃতির সঙ্গে ঘনিষ্ট ভাবে মিলেমিশে আছে নানান দেবদেবীর উপস্থিতি। লোকো কথা অনুযায়ী, আমলকী গাছে ভগবান বিষ্ণু এবং তার প্রিয় পত্নী লক্ষ্মী অধিষ্ঠান করে তাই হিন্দুরা আমলকী একাদশীতে এই গাছকে পুজো করেন।
ব্রহ্মাণ্ড পুরাণে আমলকি একাদশীর বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে। মহামুনির বশিষ্ঠের বর্ণনা অনুযায়ী, বৈদিশার রাজা চিত্রসেন ছিলেন বিষ্ণু পুজোর একনিষ্ঠ পূজারী। বিষ্ণু মন্দিরের দক্ষিণ দিকে থাকা এক আমলকি বৃক্ষকে কেন্দ্র করে চিত্রসেন সারাদিন উপবাস করেন এবং রাত জেগে বিষ্ণুর উপাসনা করে আমলকি একাদশী পালন করেছিলেন। এর বহুকাল পরে একদিন গভীর অরণ্যে রাজা যখন নরখাদক দস্যুদের হাতে পড়লেন তখন তিনি আমলকি একাদশী পালনের পূণ্য ফলের দৌলতে নিজের প্রাণ ফিরে পেলেন।
আমলকির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে যে নামটা না বললেই নয় তা হলো চ্যবনপ্রাশ। চ্যবনপ্রাশের মূল উপাদান হল আমলকি। চ্যবনপ্রাশকে কেন্দ্র পরে যে লৌকিক কাহিনি আছে, প্রসঙ্গত তা না উল্লেখ করলেই নয়।
মহা মুনি ভৃগুর পত্নী ছিলেন পুলোমা। একদা ঋষির কুটিরে এক নরাধাম এসে অন্তঃসত্ত্বা পুলোমাকে হেনস্তা করতে উদ্যত হলেন। ভীত পুলোমা তখন সেই অবস্থাতেই অপরিণত সন্তান প্রসব করলেন এবং তাঁর নাম দেওয়া হল চ্যবন। অপরিণত অবস্থায় তাঁর জন্ম হওয়ায় তিনি শারীরিকভাবে দুর্বল ছিলেন। পরবর্তীকালে এক সুন্দরী রাজকন্যা সঙ্গে তার বিবাহ হয় কিন্তু তিনি শারীরিক দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে পারছিলেন না। তখন অশ্বিনী তাকে এক মহাঔষধ তৈরি করে পান করান। ফলস্বরূপ তিনি তাঁর শারীরিক দুর্বলতা কাটিয়ে যৌবন ফিরে পান এবং নিজ পত্নীকে নিয়ে সুখী দাম্পত্য গড়তে পারেন। সেই সময়কাল থেকেই ওই ওষুধের নামকরণ করা হয় চব্যনপ্রাশ। আয়ুর্বেদের যুগ থেকে বর্তমান বিজ্ঞানের যুগেও বলবৃদ্ধি কারক হিসাবে এবং বার্ধক্য রোধের জন্য আমলকী ফলের ব্যবহার হয়ে আসছে।
হাত বাড়ালেই বনৌষধি: বাড়িতে চন্দন আছে? কমতে পারে অনেক অসুখ-বিসুখ
জিৎ-রুক্মিণীর ‘বুমেরাং’ সায়েন্স ফিকশন কমেডি, লক্ষ্য আট থেকে আশি: সৌভিক
এক নজরে
কী কী উপাদানে ভরপুর?
হুঁকোমুখোর চিত্রকলা, পর্ব-৪: আমারে তুমি অশেষ করেছ
পঞ্চমে মেলোডি, পর্ব-১৮: মনে পড়ে পঞ্চমের কণ্ঠে শোলে ছবির সেই বিখ্যাত ‘মেহবুবা মেহবুবা…’ গানটি?
চিকিৎসাশাস্ত্রে আমলকির ব্যবহার
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে
ক্যান্সার নিরাময়ে
কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে
হৃদরোগ সারাতে
জীবাণু বিনাশকারী হিসাবে
এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৩: সুন্দরবনে মানুষের আদি বসতি
আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-১: জয়রামবাটির আদরের ছোট্ট সারু
আয়ুর্বেদিক ওষুধ তৈরিতে
পৌষ্টিকতন্ত্র জনিত সমস্যা সমাধানে
বাতের অসুখ নিরাময়ে
চুল চোখ ও দাঁত সুরক্ষিত রাখতে
সর্দি কাশি এবং হাঁপানি রোগ কমাতে
চিকিৎসা শাস্ত্রে আমলকির ব্যবহার থেকে বোঝা যায় যে প্রাচীন মহর্ষিরা এই কারণেই আমলকিকে ‘অমৃতফল সঞ্জীবনী’ উপাধিতে সম্মানিত করেছিল। আদি গুরু শঙ্করাচার্য বলেছিলেন যে গরিব ব্রাহ্মণ এর কাছে ঐশ্বর্য লাভের পরিবর্তে দ্বাদশীর দিনে একটি আমলকি ফল পাওয়া অমূল্য সমান।