অ্যালফ্রেড হিচকক।
চলচ্চিত্রের সেটে কী হচ্ছে সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়, প্রেক্ষাগৃহের পর্দায় কী ফুটে উঠছে সেটাই আসল কথা। এই উপদেশ ফ্রিডরিখ উইলহেলম মারনো দিয়েছিলেন এক নবীন চিত্রপরিচালককে। যে চিত্রপরিচালকের নাম যাঁরা হলিউড বা ব্রিটিশ ছবি খুব একটা দেখেন না তাঁরাও বিলক্ষণ জানেন। তিনি হলেন অ্যালফ্রেড হিচকক। হিচককের ‘সাইকো’, ‘ভার্টিগো’, ‘রেয়ার উইন্ডো’, ‘দ্য বার্ডস’ বা ‘নর্থ বাই নর্থওয়েস্ট’ চলচ্চিত্রপ্রেমীদের অতিপরিচিত এক ছবির জগৎ।
১৯২৪ সালে, যখন লুবিশ, ফ্রিটজ লাঙ্গ, মারনো জার্মান চলচ্চিত্র জগতে তাঁদের সেরা শিল্পকর্মে ব্যস্ত, যখন জার্মান অভিব্যক্তিবাদ শীর্ষে, সেই সময়ে হিচকক পৌঁছন বার্লিনের বেবেলসবার্গ স্টুডিওতে। ‘দ্য ব্ল্যাকগার্ড’ বলে একটি ছবির সহকারী পরিচালক হিসেবে হিচককের জার্মানি যাত্রা। তার ফলে জার্মান ছবির নান্দনিকতা এবং জার্মান অভিব্যক্তিবাদের ছাপ থেকে যায় হিচককের প্রায় সব ছবিতেই। লাঙ্গ এবং মারনোর ছায়া হিচককের শেষের দিকের ছবিতেও স্পষ্ট।
হিচকক স্বীকার করেন, একটি প্রয়োজনীয় উপদেশ যা মারনো ও তাঁর বেবেলসবার্গের সহকর্মীদের থেকে উনি পেয়েছেন, সেটা হল চলচ্চিত্রের মূল মাধ্যম দৃশ্য, কথা নয়। চলচ্চিত্রে শব্দের বা অক্ষরের আধিক্য ছবিকে দুর্বল করে। কমিয়ে দেয় দৃশ্যের যৌক্তিকতা ও মুগ্ধতা। কমে আসে চলচ্চিত্র ও বই-এর মধ্যের ব্যবধান। হিচকক মজা করে বলতেন যখন সিনেমাতে শব্দের আবির্ভাব ঘটেনি, অর্থাৎ যখন নির্বাক চলচ্চিত্রের যুগ, সেই যুগে স্ক্রিনে যখন চরিত্রেরা কথা বলতেন বেশি তখন স্বাভাবিক নিয়মেই টাইটেল কার্ডও ব্যবহার করতে হত বেশি। তার ফলে দর্শককে একটা গোটা সন্ধ্যা কাটাতে হত পড়াশোনা করে। বেচারি প্রেক্ষাগৃহ থেকে বেরোতেন প্রায় একটা গোটা বই পড়ে।
১৯২৪ সালে, যখন লুবিশ, ফ্রিটজ লাঙ্গ, মারনো জার্মান চলচ্চিত্র জগতে তাঁদের সেরা শিল্পকর্মে ব্যস্ত, যখন জার্মান অভিব্যক্তিবাদ শীর্ষে, সেই সময়ে হিচকক পৌঁছন বার্লিনের বেবেলসবার্গ স্টুডিওতে। ‘দ্য ব্ল্যাকগার্ড’ বলে একটি ছবির সহকারী পরিচালক হিসেবে হিচককের জার্মানি যাত্রা। তার ফলে জার্মান ছবির নান্দনিকতা এবং জার্মান অভিব্যক্তিবাদের ছাপ থেকে যায় হিচককের প্রায় সব ছবিতেই। লাঙ্গ এবং মারনোর ছায়া হিচককের শেষের দিকের ছবিতেও স্পষ্ট।
হিচকক স্বীকার করেন, একটি প্রয়োজনীয় উপদেশ যা মারনো ও তাঁর বেবেলসবার্গের সহকর্মীদের থেকে উনি পেয়েছেন, সেটা হল চলচ্চিত্রের মূল মাধ্যম দৃশ্য, কথা নয়। চলচ্চিত্রে শব্দের বা অক্ষরের আধিক্য ছবিকে দুর্বল করে। কমিয়ে দেয় দৃশ্যের যৌক্তিকতা ও মুগ্ধতা। কমে আসে চলচ্চিত্র ও বই-এর মধ্যের ব্যবধান। হিচকক মজা করে বলতেন যখন সিনেমাতে শব্দের আবির্ভাব ঘটেনি, অর্থাৎ যখন নির্বাক চলচ্চিত্রের যুগ, সেই যুগে স্ক্রিনে যখন চরিত্রেরা কথা বলতেন বেশি তখন স্বাভাবিক নিয়মেই টাইটেল কার্ডও ব্যবহার করতে হত বেশি। তার ফলে দর্শককে একটা গোটা সন্ধ্যা কাটাতে হত পড়াশোনা করে। বেচারি প্রেক্ষাগৃহ থেকে বেরোতেন প্রায় একটা গোটা বই পড়ে।
১৯২৭ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি লন্ডনে মুক্তি পায় হিচককের নির্বাক চলচ্চিত্র ‘দ্য লজার’, যেটা পরিচালক হিসেবে তাঁর প্রথম জনপ্রিয় ছবি বলা যেতে পারে। কুখ্যাত সিরিয়াল কিলার ‘জ্যাক দ্য রিপার’-এর খোঁজের আদলে তৈরি ‘দ্য লজার’। এখানে খুনি ‘দ্য অ্যাভেঞ্জার’। প্রতি মঙ্গলবার রাতে সেই অ্যাভেঞ্জার খুন করে একটি অল্পবয়সী স্বর্ণকেশী মেয়েকে। সাত সপ্তাহে সাতটি মেয়ের মৃতদেহ পাওয়া যায় লন্ডনের বিভিন্ন অন্ধকার কুয়াশাচ্ছন্ন গলিতে। খবরের কাগজ রমরমিয়ে সেই খবর ছাপায়। শহরে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক।
স্বর্ণকেশী বা ব্লন্ড মেয়েদেরই একজন এই ছবির নায়িকা। নাম ডেইজি। ডেইজির বাড়ির দোতলায় আসে এক নতুন ভাড়াটে, ইংরাজিতে যাকে বলা হয় ‘লজার’। তার আচার আচরণ বেশ সন্দেহজনক। তবুও ডেইজি প্রেমে পড়ে লজারের। ডেইজির মা ও ডেইজির প্রেমিক, জো— দু’ জনেই সন্দেহের চোখে দেখে লজারকে।
অষ্টম মঙ্গলবার রাতে সেই লজার বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় এবং তার ঠিক পরেই খুন হয় আরেকটি মেয়ে, সেই বাড়ির খুব কাছেই। বাড়ির লোকের সন্দেহ আরও তীব্র হয়। পুলিশ লজারের ঘরে তল্লাশি চালায়। পায় একটি বন্দুক, একটি লন্ডনের ম্যাপ, অ্যাভেঞ্জারকে নিয়ে লেখা খবরের কাগজের অসংখ্য ক্লিপিং ও কিছু সোনালি চুলের মেয়ের ছবি। লজার ধরা পড়ে।
কিন্তু পুলিশের হাত থেকে কোনওক্রমে পালিয়ে দেখা করে ডেইজির সঙ্গে। সে প্রথম তার প্রেমিকাকে জানায় যে সে খুনি নয়। দর্শক ও ডেইজি জানতে পারে যে অ্যাভেঞ্জারের প্রথম শিকার ছিল এই লজারের বোন। আর সেই সিরিয়াল কিলারকে ধরতেই লজারের লন্ডন আসা। শেষে আসল অ্যাভেঞ্জার ধরা পড়ে ও লজার ফিরে পায় তার ডেইজিকে।
স্বর্ণকেশী বা ব্লন্ড মেয়েদেরই একজন এই ছবির নায়িকা। নাম ডেইজি। ডেইজির বাড়ির দোতলায় আসে এক নতুন ভাড়াটে, ইংরাজিতে যাকে বলা হয় ‘লজার’। তার আচার আচরণ বেশ সন্দেহজনক। তবুও ডেইজি প্রেমে পড়ে লজারের। ডেইজির মা ও ডেইজির প্রেমিক, জো— দু’ জনেই সন্দেহের চোখে দেখে লজারকে।
অষ্টম মঙ্গলবার রাতে সেই লজার বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় এবং তার ঠিক পরেই খুন হয় আরেকটি মেয়ে, সেই বাড়ির খুব কাছেই। বাড়ির লোকের সন্দেহ আরও তীব্র হয়। পুলিশ লজারের ঘরে তল্লাশি চালায়। পায় একটি বন্দুক, একটি লন্ডনের ম্যাপ, অ্যাভেঞ্জারকে নিয়ে লেখা খবরের কাগজের অসংখ্য ক্লিপিং ও কিছু সোনালি চুলের মেয়ের ছবি। লজার ধরা পড়ে।
কিন্তু পুলিশের হাত থেকে কোনওক্রমে পালিয়ে দেখা করে ডেইজির সঙ্গে। সে প্রথম তার প্রেমিকাকে জানায় যে সে খুনি নয়। দর্শক ও ডেইজি জানতে পারে যে অ্যাভেঞ্জারের প্রথম শিকার ছিল এই লজারের বোন। আর সেই সিরিয়াল কিলারকে ধরতেই লজারের লন্ডন আসা। শেষে আসল অ্যাভেঞ্জার ধরা পড়ে ও লজার ফিরে পায় তার ডেইজিকে।
আরও পড়ুন:
লাইট সাউন্ড ক্যামেরা অ্যাকশন, পর্ব-৪: জার্মান অভিব্যক্তিবাদ ও মারনোর নসফেরাতু
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৪১: কান্না হাসির দোল দোলানো ‘একটি রাত’
পঞ্চমে মেলোডি, পর্ব-১৮: মনে পড়ে পঞ্চমের কণ্ঠে শোলে ছবির সেই বিখ্যাত ‘মেহবুবা মেহবুবা…’ গানটি?
ছবিটির বেশিরভাগ অংশ আলো আঁধারির কুহকে বোনা। অন্ধকার, কুয়াশা, আর্তনাদের ক্লোজ শট, আধ-ঢাকা মুখ দিয়েই গল্প বলেছেন হিচকক। টাইটেল কার্ডের ব্যবহার যৎসামান্য। ‘লজার’-এর একটি বিখ্যাত শটের কথা এখানে উল্লেখ করা যায়। একতলার ঘরে ডেইজি, তার মা, আর জো কথা বলতে বলতে স্তব্ধ হয়ে হঠাৎ উপরের দিকে তাকায়। ক্যামেরার পরের কাটে দেখানো হয় দোতলায় লজারের অস্থির পায়চারি।
আমরা আবার ফিরে আসি একতলায়। লো অ্যাঙ্গেল শটে দেখি তিনজন অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে উপরের দিকে। এর পরের হাই অ্যাঙ্গেল শট দেখায় সেই অস্থির হাঁটার জেরে দুলছে ঝুলন্ত ঝারবাতি। ডিজলভ শটে ঝাড়বাতি মিলিয়ে যায় লজারের পায়ের ক্লোজ শটে। তারপর স্পষ্ট নীচ থেকে দেখা যায় লজারের এপাশ থেকে ওপাশ হেঁটে বেড়ানো। নীচে থাকা মানুষগুলি যে স্পষ্ট বুঝতে পারছে লজারের এই অস্বস্তিকর চলাফেরা সেটা দর্শকদের বোঝানো হয়েছে এক অনবদ্য হিচককীয় পদ্ধতিতে।
একটি মোটা স্বচ্ছ কাঁচের মেঝে তৈরি করা হয়েছে যার উপর দিয়ে হেঁটে বেড়াচ্ছে লজার। আর ক্যামেরা ঠিক সেই মেঝের নীচ থেকে একতলার মানুষগুলির ‘পয়েন্ট অফ ভিউ’ শট তুলছে। কোনও কথা ছাড়া, কোনও টাইটেল কার্ড ছাড়া, শুধু ক্যামেরার ক্রস কাট, ডিজলভ এবং ক্লোজ শট-এর সাহায্যে লজারের যন্ত্রণা, বাকি চরিত্রদের আশঙ্কা ও ডেইজির প্রথম দুর্বল হওয়ার মুহূর্ত ধরেছেন হিচকক। জার্মানিতে পাওয়া তাঁর শ্রেষ্ঠ প্রাপ্তি — ক্যামেরা হাজার হাজার শব্দের থেকেও বেশি কথা বলে।
আমরা আবার ফিরে আসি একতলায়। লো অ্যাঙ্গেল শটে দেখি তিনজন অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে উপরের দিকে। এর পরের হাই অ্যাঙ্গেল শট দেখায় সেই অস্থির হাঁটার জেরে দুলছে ঝুলন্ত ঝারবাতি। ডিজলভ শটে ঝাড়বাতি মিলিয়ে যায় লজারের পায়ের ক্লোজ শটে। তারপর স্পষ্ট নীচ থেকে দেখা যায় লজারের এপাশ থেকে ওপাশ হেঁটে বেড়ানো। নীচে থাকা মানুষগুলি যে স্পষ্ট বুঝতে পারছে লজারের এই অস্বস্তিকর চলাফেরা সেটা দর্শকদের বোঝানো হয়েছে এক অনবদ্য হিচককীয় পদ্ধতিতে।
একটি মোটা স্বচ্ছ কাঁচের মেঝে তৈরি করা হয়েছে যার উপর দিয়ে হেঁটে বেড়াচ্ছে লজার। আর ক্যামেরা ঠিক সেই মেঝের নীচ থেকে একতলার মানুষগুলির ‘পয়েন্ট অফ ভিউ’ শট তুলছে। কোনও কথা ছাড়া, কোনও টাইটেল কার্ড ছাড়া, শুধু ক্যামেরার ক্রস কাট, ডিজলভ এবং ক্লোজ শট-এর সাহায্যে লজারের যন্ত্রণা, বাকি চরিত্রদের আশঙ্কা ও ডেইজির প্রথম দুর্বল হওয়ার মুহূর্ত ধরেছেন হিচকক। জার্মানিতে পাওয়া তাঁর শ্রেষ্ঠ প্রাপ্তি — ক্যামেরা হাজার হাজার শব্দের থেকেও বেশি কথা বলে।
আরও পড়ুন:
এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৩: সুন্দরবনে মানুষের আদি বসতি
এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-২৬: মাছের তেল হার্ট অ্যাটাক আটকায়?
দশভুজা: মাই নেম ইজ গওহর জান—ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতে অঘোষিত বিপ্লব এনেছিলেন এই শিল্পী
বিখ্যাত ফরাসি চিত্রপরিচালক ফ্রাঁসোয়া ত্রুফো বলতেন, ভালোবাসার দৃশ্যে হিংস্রতা ও খুনের দৃশ্যে ভালোবাসা সহজেই দেখাতে পারতেন হিচকক। তাঁর ছবিতে দুটোর মাঝে খুব একটা তফাত নেই আসলে। হিচককের কাছে এই দুই ক্রিয়া প্রায়শই এক। হিচককের ‘ফ্রেঞ্জি’ মুক্তি পায় ১৯৭২ সালে। ‘লজার’-এর মুক্তির পঁয়তাল্লিশ বছর পর। এই ছবিটি আর একটি সিরিয়াল কিলারকে ঘিরে। এই সিরিয়াল কিলারকে বলা যেতে পারে ‘দ্য টাই স্ট্র্যাঙ্গলার’। ‘দ্য টাই স্ট্র্যাঙ্গলার’ একের পর এক মহিলাকে ধর্ষণ করে এবং তারপর নিজের গলার টাই দিয়ে শ্বাসরোধ করে মারে তার শিকারকে। শহর সেই লন্ডন। কিন্তু এই লন্ডন ১৯২৭-এর ‘লজার’-এর লন্ডনের থেকে অনেকটা আলাদা। এই লন্ডনের মানুষের মনে মায়া মমতা, দুঃখ কোনও কিছুই যেন নেই। এই শহর অনায়াসেই হাসতে পারে টেমসের জলে ভেসে আসা এক নগ্ন নির্যাতিত দেহ দেখে। রেস্তরাঁ, পানশালায় বা বাড়ির খাবার টেবিলে বসে সেই দেহের নিষ্ঠুর পর্যালোচনার মধ্যে খোঁজে সময় কাটাবার বিলাস।
খুনি কে, তা হিচকক আমাদের ছবির প্রথম দিকেই জানিয়ে দেন। নাম তার বব রাস্ক। রাস্কের কীর্তিও দেখানো হয় রাখঢাক ছাড়াই। দর্শকের সামনে হিচকক তুলে ধরে নির্যাতনের নিষ্ঠুর নিদর্শন। দর্শক হয়ে ওঠে ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায়, সেই পাশবিক অত্যাচারের অংশ। চিনতে বাধ্য হয় তার নিজের মধ্যে লুকিয়ে থাকা নানান অদ্ভুত বা ভয়ংকর সত্ত্বাদের। ‘ফ্রেঞ্জি’র প্রথম ধর্ষণ ও খুনের দৃশ্য ঘটে ভর দুপুরে। একটি অফিসে। রাতের অন্ধকারের আভরণ ছাড়া। নির্জন কোন কক্ষের গোপনীয়তা ছাড়া। দর্শক ছাড় পায় না। সাক্ষী থাকে গোটা ঘৃণ্য ঘটনার।
দ্বিতীয় অপরাধটির দৃশ্যায়ন হয় সম্পূর্ণ অন্য ধাঁচে। ব্যাব নামে একজন ওয়েট্রেসকে আততায়ী নিয়ে যায় নিজের বাড়ির দিকে। ক্যামেরা এবং দর্শক দুই-ই চলে স্লো ট্র্যাক শটে তাদের সাথে। ধীরে ধীরে ব্যাব ও রাস্ক উঠে যায় রাস্কের বাড়ির সিঁড়ি দিয়ে তার অন্দরমহলে।
খুনি কে, তা হিচকক আমাদের ছবির প্রথম দিকেই জানিয়ে দেন। নাম তার বব রাস্ক। রাস্কের কীর্তিও দেখানো হয় রাখঢাক ছাড়াই। দর্শকের সামনে হিচকক তুলে ধরে নির্যাতনের নিষ্ঠুর নিদর্শন। দর্শক হয়ে ওঠে ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায়, সেই পাশবিক অত্যাচারের অংশ। চিনতে বাধ্য হয় তার নিজের মধ্যে লুকিয়ে থাকা নানান অদ্ভুত বা ভয়ংকর সত্ত্বাদের। ‘ফ্রেঞ্জি’র প্রথম ধর্ষণ ও খুনের দৃশ্য ঘটে ভর দুপুরে। একটি অফিসে। রাতের অন্ধকারের আভরণ ছাড়া। নির্জন কোন কক্ষের গোপনীয়তা ছাড়া। দর্শক ছাড় পায় না। সাক্ষী থাকে গোটা ঘৃণ্য ঘটনার।
দ্বিতীয় অপরাধটির দৃশ্যায়ন হয় সম্পূর্ণ অন্য ধাঁচে। ব্যাব নামে একজন ওয়েট্রেসকে আততায়ী নিয়ে যায় নিজের বাড়ির দিকে। ক্যামেরা এবং দর্শক দুই-ই চলে স্লো ট্র্যাক শটে তাদের সাথে। ধীরে ধীরে ব্যাব ও রাস্ক উঠে যায় রাস্কের বাড়ির সিঁড়ি দিয়ে তার অন্দরমহলে।
আরও পড়ুন:
পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-১২: প্রজাদের কাছে রাজার নিজের ভাবমূর্তি সঠিক রাখতে গেলেও সুযোগ্য রাজকর্মচারীর প্রয়োজন
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৬৭: কবিকন্যার সঙ্গে নগেন্দ্রনাথের সম্পর্কের অবনতি ঘটলেও কবির সঙ্গে ঘটেনি
হুঁকোমুখোর চিত্রকলা, পর্ব-৪: আমারে তুমি অশেষ করেছ
ফরওয়ার্ড ট্র্যাকিং শটের মাধ্যমে আমরাও উঠি সিঁড়ি দিয়ে তাদের সঙ্গে। তারা দরজা ঠেলে ভিতরে ঢোকে। দরজা বন্ধ হয়ে যায়। ক্যামেরা ব্যাকট্র্যাক শুরু করে। খুব আস্তে আস্তে সিঁড়ির রেলিং বেয়ে বেরিয়ে এসে চুপ করে দাঁড়িয়ে পরে উল্টো দিকের রাস্তায়। যেন কত যত্নে আমরা দুই বন্ধুকে ছেড়ে এলাম তাদের প্রাইভেট স্পেসে।
তবে আমরা সবাই জানি ভিতরে আসলে কী হচ্ছে। ক্যামেরার ফিরে আসার যে চলন তাতে যে ভয়ের, যে অসহায়তার সৃষ্টি হয় তা যে কোন আভরণহীন হিংস্র দৃশ্যের চেয়ে বহুগুণ বেশি ভয়াবহ। গোটা দৃশ্যে কোনও কথা নেই। কোনও তাড়া নেই। আছে শুধু ক্যামেরার ব্যাব-কে ছেড়ে আসা। যে ধরনের ক্যামেরার চলন আমরা ভালোবাসার দৃশ্যে দেখে অভ্যস্ত সেই ক্যামেরার ভঙ্গি সৃষ্টি করছে এই আতঙ্ক। এই যত্নের চলন তুলে ধরে এই যত্নেরই নিষ্ঠুরতা।
হত্যার দৃশ্য আর ভালবাসার দৃশ্য গুলিয়ে যায় হতভম্ব দর্শকের মনে। ঘৃণা, উদ্বেগ, অসহায়তা, হয়ত বা ভয়াবহ হতাশা সবই রেখে যায় হিচকক এই শব্দহীন দৃশ্যে।—চলবে।
তবে আমরা সবাই জানি ভিতরে আসলে কী হচ্ছে। ক্যামেরার ফিরে আসার যে চলন তাতে যে ভয়ের, যে অসহায়তার সৃষ্টি হয় তা যে কোন আভরণহীন হিংস্র দৃশ্যের চেয়ে বহুগুণ বেশি ভয়াবহ। গোটা দৃশ্যে কোনও কথা নেই। কোনও তাড়া নেই। আছে শুধু ক্যামেরার ব্যাব-কে ছেড়ে আসা। যে ধরনের ক্যামেরার চলন আমরা ভালোবাসার দৃশ্যে দেখে অভ্যস্ত সেই ক্যামেরার ভঙ্গি সৃষ্টি করছে এই আতঙ্ক। এই যত্নের চলন তুলে ধরে এই যত্নেরই নিষ্ঠুরতা।
হত্যার দৃশ্য আর ভালবাসার দৃশ্য গুলিয়ে যায় হতভম্ব দর্শকের মনে। ঘৃণা, উদ্বেগ, অসহায়তা, হয়ত বা ভয়াবহ হতাশা সবই রেখে যায় হিচকক এই শব্দহীন দৃশ্যে।—চলবে।
* ড. সুবর্ণা মণ্ডল (Subarna Mondal), অধ্যাপক, ইংরেজি বিভাগ, সংস্কৃত কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়।