ছবি: সংগৃহীত।
কথিত আছে, পরাধীন ভারতে রানি প্রথম এলিজাবেথের খুবই পছন্দের প্রসাধনী ছিল শ্বেতচন্দন। রানির বিছানার চাদরে খাঁটি চন্দনের গন্ধে ভরা না থাকলে তিনি প্রীত হতেন না। কারণ চন্দন রানির শরীর ও মনকে সুন্দর রেখে আনন্দে ভরিয়ে তুলতো। শরীরের সঙ্গে চন্দনের সম্পর্ককে মহর্ষি বাৎসায় ও তাঁর ‘কামসূত্রে’ ব্যক্ত করেছেন। বাৎসায়ন মুনির মতে চন্দন সুভাস হল চিরকালীন ভালোবাসার অঙ্গ। প্রেম ও কামের সুন্দরতম পরিবেশ রচনায় চন্দনের গন্ধ এক বিশেষ ভূমিকা নেয় যা পরিণতি দেয় নর ও নারীর সাধের মিলনক্ষন।
ভারতে প্রাচীনকাল থেকে বিভিন্ন মন্দিরের পুজোয় চন্দনকে সুগন্ধি দ্রব্য হিসাবে ব্যবহার করা হয়ে আসছে। মন্দির চত্বরে তাই পা রাখলেই বাতাসে ভেসে আসা চন্দনের সুবাসে মন হয় প্রফুল্ল, হৃদয় ওঠে এক গভীর অনুরণন।
দেশে শুধু মন্দিরের পুজোতে চন্দনকে সুগন্ধি দ্রব্য হিসাবে ব্যবহার নয়, মন্দিরের বিগ্রহ সাজানোর জন্য চন্দনের ফোঁটা ব্যবহার করা রীতি আছে। রক্ত চন্দন ‘দেবী আরাধনা’ এবং শ্বেত চন্দন ‘দেবতা আরাধনা’-র অঙ্গ হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তাই মন্দিরের চত্বরে পা রাখলেই বাতাসে ভেসে আসা চন্দনের সুবাসে মন হয় উৎফুল্ল, হৃদয় ভরে ওঠে এক গভীর অনুরণনে। শুধু হিন্দু বা বৌদ্ধ মন্দিরের কথাই বা কেন বলবো? সুফি সন্তর মসজিদেও চন্দনের সুবাসে ভরা আগরবাতি জ্বলতে থাকে এবং এই চন্দনের সুবাস বাতাসে ভাসতে থাকে। ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে চন্দন কাঠ নিঃসৃত তেল দ্বারা নির্মিত ধূপকাঠি, ভক্ত এবং ভগবানের মধ্যে যেন এক অসাধারণ যোগসূত্র স্থাপন করেছে।
বর্তমানে ভারতে চন্দন কাঠ প্রায় লুপ্তপ্রায় এবং এক কেজি চন্দন কাঠের দাম লাখ টাকার উপর হওয়ার অগত্যা চন্দন কাঠের পরিবর্তে এখন শবদাহের পাশে চন্দনের ধূপকাঠি বা আগরবাতি জ্বালানোর প্রচলন আছে।
বৈষ্ণব ধর্ম মতে সারা অঙ্গে চন্দনের তিলক ধারণ করার রীতি আছে। পদ্মপুরাণে উল্লেখ আছে যে বৈষ্ণবরা যদি তুলসী মালা এবং চন্দনের তিলক এর মাধ্যমে নিজেদের শরীরকে সাজিয়ে তুলতে পারে তাহলে সেই শরীরই বৈকুণ্ঠ ধাম বা বিষ্ণুমন্দিরে পরিণত হয়। কপাল ছাড়াও চন্দন তিলক তারা দেহের দ্বাদশ স্থানে অঙ্কন করেন। বিষ্ণুর দ্বাদশ নাম উচ্চারণের মাধ্যমে তারা এই রীতি অনুসরণ করেন। কপাল তিলক অঙ্কনের সময় ‘কেশব’কে প্রণাম জানানো হয় মন্ত্রের মাধ্যমে।
একইভাবে দেহের বিভিন্ন অঙ্গে তিলক অঙ্কনের ক্ষেত্রেও একই রীতি অনুসরণ করা হয়। যেমন বুকের তিলক ‘মাধব’কে, কণ্ঠের তিলক ‘গোবিন্দ’কে, তলপেটের তিলক ‘নারায়ণ’কে, পেটের ডান দিকের তিলক ‘বিষ্ণু’কে, ডান ঊর্ধ্ব বাহুতে ‘মধুসূদন’কে, বাম ঊর্ধ বাহুতে ‘শ্রীধর’কে, ডান কাঁধে ‘বিক্রম’কে, বাম স্কন্ধে ‘ঋষিকেশ’কে, পেটের বাঁদিকে বামনকে, ঊর্ধ্ব পৃষ্ঠে ‘পদ্মনাভ’কে এবং নিম্নপৃষ্ঠে ‘দামোদর’ কে মন্ত্র উচ্চারণের মাধ্যমে স্মরণ করা হয়। বৈষ্ণব মতে তুলসী মালা এবং চন্দনের তিলক যে ব্যক্তি সারা দেহে এঁকে ঘুরে বেড়ান তাকে কখনো যমদূত, স্পর্শ করতে পারে না। তাদের বিশ্বাস কপালে তিলক হচ্ছে উর্ধ্ব পদ্ম অর্থাৎ শ্রী হরিচরণ কমল। এতক্ষণ শোনালাম চন্দনের আধ্যাত্বিক ধ্যান ধারণার কথা। এবার বলবো চন্দনকে কীভাবে বিজ্ঞানসম্মত উপায় আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কাজে লাগানো যায়।
হাত বাড়ালেই বনৌষধি: ধর্মবৃক্ষ বা বোধিবৃক্ষ অশ্বত্থ
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৪০: সে এক স্বর্গপুরীর ‘চিরকুমার সভা’
এক নজরে
বর্তমান ভারতে চন্দন গাছের সংখ্যা ব্যাপকভাবে কমে যাওয়ায় এটিকে লুপ্তপ্রায় উদ্ভিদ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং ভারত সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে সমস্ত চন্দন গাছ সরকারি সম্পত্তি হিসেবে অধিগ্রহণ করা হয়। একটি চন্দন গাছের আয়ু শতবর্ষ হলেও চন্দন গাছ থেকে ভালো সুগন্ধ যুক্ত চন্দন কাঠ এবং চন্দন তেল পেতে মোটামুটি ৪০ থেকে ৬০ বছর সময় লাগে। চন্দন গাছের চারা রোপনের আগে মাটি লাঙ্গল দিয়ে কোপাতে হবে এবং আগাছা মুক্ত করতে হবে তারপর ওই হালকা পাথুরে কৃষ্ণমৃত্তিকায় একটু ফাঁক ফাঁক করে গাছের চারা বসাতে হবে। এখন অস্ট্রেলিয়ার পশ্চিমাংশে ভারতীয় এই চন্দন গাছের প্রজাতি চাষাবাদ শুরু হয়েছে।
এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-২৬: মাছের তেল হার্ট অ্যাটাক আটকায়?
বৈষম্যের বিরোধ-জবানি, পর্ব-২৬: নারীবিদ্বেষ— অসুখ নাকি রাজনীতি
কী কী উপাদানে ভরপুর?
চিকিৎসাশাস্ত্রে চন্দনের ব্যবহার
রোগ নিরাময়ের আয়ুর্বেদিক পদ্ধতি
ত্বকের যত্ন নিতে
স্ত্রী রোগ নিরাময়
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৬৬: কবির অসুখ-বিসুখ
ভৌতিক উপন্যাস: মিস মোহিনীর মায়া, পর্ব-৯: মোহাবিষ্ট মায়াবী কণ্ঠস্বর, চেনা বলার ঢং, তবে কি মোহিনী?
মানসিক অবসাদ দূর করতে
ওরাল ফ্রেশনার হিসেবে
ত্বকের ক্যানসার নিরাময়
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে
ছবি: সংগৃহীত।
প্রস্রাবের সমস্যা দূরীকরণে
শরীর ঠান্ডা রাখতে
মাথার যন্ত্রণা কমাতে
জীবাণু ধ্বংস করতে
নানা বিধি রোগ নিরাময়ে
ভারত উচ্চবোধের দেশ। তাই সকলের রক্ষাকর্তা অর্থাৎ পালনকর্তা নারায়ণের শিলায় সর্বক্ষণ চন্দন লেপন করার রীতির মাধ্যমে মানবজাতির কল্যাণে চন্দনের যে গুরুত্বপূর্ণ উচ্চ আসন তা বোঝানো হয়।