ছবি: প্রতীকী। সংগৃহীত।
বট গাছকে উর্বরতার প্রতীক হিসাবে পুজো করে আসছেন সন্তান ধারনে ইচ্ছুক নারীরা। মহাভারতে এক পর্বে বর্ণিত আছে যে, এক মা ও তার মেয়ে দুটি আলাদা আলাদা বটবৃক্ষকে আলিঙ্গন করেছিলেন। ফলস্বরূপ তাদের দুই সন্তান হয়েছিলেন, যার মধ্যে একজন ছিলেন খ্যাতনামা ঋষি বিশ্বামিত্র এবং অন্যজন জমদগ্নি। এক লৌকিক উপকথায় আছে এক নিঃসন্তান নারী বটবৃক্ষের পুজো-অর্চনা করে সাতটি পুত্র সন্তানের জননী হয়েছিলেন। পুরাণের সতী সাবিত্রীর কথা প্রায় সকলেরই জানা। বিবাহের এক বছরের মধ্যে সাবিত্রী তাঁর স্বামীকে হারিয়ে ফেলেন। সাবিত্রী বটবিক্ষোকে পুজো করেই অবশেষে তার স্বামীর প্রাণ ফিরে পেলেন। এই কথাকে স্মরণে রেখেই সবধারা বট সাবিত্রী ব্রত পালন করেন। উপবাস করে ওই দিন বট বৃক্ষকে প্রদক্ষিণ করেন। এ সব কারণেই হয়তো ভারতীয় নারীদের মনে বটবৃক্ষ খুবই পবিত্র জায়গা করে নিয়েছে।
শুধুই কি উর্বরতার প্রতীক?
না, অমরত্বের প্রতীক হিসাবেও যুগ যুগ ধরে বট বৃক্ষকে স্থান দিয়েছে ভারতীয় পুরাণ। পৃথিবীতে মানুষের জন্ম মুহুর্তে মানবজাতির কল্যাণার্থে দেবতারা মর্তে রক্ষক হিসাবে পাঠান রানি নিরন্তালিকাকে। তিনি একটি পাতায় মুড়ে নিজের সঙ্গে কিছু বট গাছের বীজ পৃথিবীতে নিয়ে আসেন এবং মানব কল্যাণের স্বার্থে সেগুলি রোপন করলেন। আরও একটি আদিবাসী লোককথায় বটগাছকে নিয়ে সুন্দর একটি উপাখ্যান আজ পাঠকদের শোনাবো।
পাতাল বাসিনি সর্পরাজ বাসকীর একটি সুন্দর উদ্যান ছিল এবং সেই উদ্যানের শোভা বর্ধন করত এক বিশাল বট বৃক্ষ। দেবী অম্বা একদিন সেই বৃক্ষের স্বপ্ন দেখে বৃক্ষটিকে পৃথিবীতে আনতে চাইলেন। কিন্তু সে পথ কেউই জানতেন না। তবে সামান্য এক গুবরে পোকার সাহায্যে পাতাল লোকে প্রবেশ করলেন দেবী অম্বা। ঘরতর যুদ্ধের শেষে বাসুকীর আগুনের লেলিহান শিখায় প্রাণ হারালেন অম্বা। ঘটনাচক্রে দেবাদিদেব মহাদেব এবং পার্বতী সেই উদ্যানে ভ্রমণ করছিলেন। অম্বার এরূপ অবস্থা দেখে দেবী পার্বতী স্পর্শকাতর হয়ে পড়লেন। মহাদেবকে বারংবার অনুরোধ করলেন সোমবার প্রাণ ফেরানোর জন্য। মহাদেব অস্বীকার করলে পার্বতী ভীষণ ক্রধানিত হলেন। জানালেন, অম্বা তাঁরই এক অবতার। তাই অম্বা প্রাণ না ফিরে পেলে তিনিও মহাদেবের কাছে ফিরবেন না। দেবী পার্বতীকে বিলীন হতে দেখে অগত্যা মহাদেব নিরুপায় হয়ে অম্বাকে সশরীরে ফিরিয়ে আনলেন। বরদানও করলেন। বরস্বরূপ অম্বা প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য সহস্র মস্তক বিশিষ্ট সর্পরাজ বাসকীর একটি মস্তক বাকি রেখে বাকিগুলো কর্তন করলেন। এরপর দেবী পার্বতীর আশীর্বাদে অম্বা সেই বটবৃক্ষকে পাতাললোক থেকে ধরাধামে এনে প্রতিষ্ঠা করলেন।
বট গাছ সামাজিক স্তরে এবং চিকিৎসা শাস্ত্রে ব্যবহার হয়ে আসছে সেই রামায়ণ-মহাভারত তথা বৈদিক আমল হতে।
এক নজরে
হাত বাড়ালেই বনৌষধি: পদ্মপুরাণ
ক্যাবলাদের ছোটবেলা, পর্ব-২: “যে ‘কেবল’ পালিয়ে বেড়ায়”
কী কী উপাদানে ভরপুর?
এছাড়াও বট গাছের লাটেক্স বা তরুক্ষীরে থাকে অ্যালবুমিন, শর্করা, ম্যালিক অ্যাসিড, বেসিন ইত্যাদি ইত্যাদি রাসায়নিক যৌগ।
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৩৮: চলতে চলতে ‘সাহেব বিবি ও গোলাম’
পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-৯: যোগ্য বা অযোগ্য—যে মানুষই রাজার আশেপাশে থাকেন, রাজা তারই কথায় ওঠেন-বসেন
চিকিৎসাশাস্ত্রে বটগাছের ব্যবহার
জীবাণু ধ্বংস করতে
শরীরের জ্বালা ভাব কমাতে
পায়ের পাতা ফাটা দূর করতে
স্ত্রী রোগ নিরাময়ে
দেখব এবার জগৎটাকে, পর্ব-১২: বেশিক্ষণ থাকলে আরও কী কী হতো কে জানে, মুহূর্তে নৌকা ঘোরাল বনি
বৈষম্যের বিরোধ-জবানি, পর্ব-২৪: সতী ও অসতী মাঝে পিতৃতন্ত্র
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসাবে
দাঁতের সমস্যায়
ইমিউনোমডুলেটর হিসাবে
নানাবিধি রোগ নিরাময়ে
এই সকল কারণেই হয়তো হিন্দু পরম্পরা অনুযায়ী বটগাছ ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বরের আশ্রয়স্থল হিসাবে যুগ যুগ ধরে পুজো পেয়ে আসছে। তাই অনেকেই বিশ্বাস করেন যে, বটবৃক্ষের কোনও একটি সামান্য অংশের ভস্ম যদি তেলের সঙ্গে মিশিয়ে অঙ্গে ধারণ করা যায় তবে দেহের সকল পাপের নাকি মুক্তি ঘটে।