রবিবার ১০ নভেম্বর, ২০২৪


ছবি: প্রতীকী। সংগৃহীত।

কুরুপাণ্ডবদের আর এক পিতামহ, যিনি জন্মমাত্রই ঋষিত্ব বরণ করেছেন, গৃহের বন্ধনে ধরা দেননি। কিন্তু গৃহকোণের স্নেহের মায়াডোরটুকু ছুঁড়ে ফেলে দিতে পারেননি। মায়ের আহ্বানে, পরিবারিক আত্মীয়তায় রক্তের সম্পর্ক সৃষ্টি করেছেন। কখনও নির্মোহ আবেগে পৌত্রদের বাঁচিয়ে রাখতে, কখনও বা ধর্মোপদেশে নবীন প্রজন্মের দিকভ্রান্তি দূর করতে, বার বার ছুটে এসেছেন। কোন প্রাণনায় তাঁর এই দোটানা? ঋষি হয়েও, মায়ের গৃহীসত্তা হয়তো তাঁর এই আবেগের উৎসমূল। তিনিই মহাভারতস্রষ্টা, শ্রীকৃষ্ণ দ্বৈপায়ন বেদব্যাস। তাঁর জন্মও বিচিত্র। কুরুবংশের যখন উত্তরাধিকারী কেউ নেই। সমস্যা সমাধানে তৎপর শান্তনুপত্নী সত্যবতী। তিনি কানীন পুত্র (কুমারী অবস্থার পুত্র) ব্যাসদেবকে বংশরক্ষার অনুরোধ জানাবেন স্থির করলেন। অভিভাবক তুল্য সৎপুত্র গাঙ্গেয় ভীষ্মকে অকপটে কুমারী অবস্থার জীবনচিত্র বর্ণনা প্রসঙ্গে অযাচিত মাতৃত্বের কাহিনিটি জানালেন। পটভূমি আবারও নদী, যমুনা। কাজল নয়না শ্যামাঙ্গী, তন্বী, সত্যবতী পিতার হয়ে নৌকায় পারাপার করছেন। একদা ধার্মিক শ্রেষ্ঠ এবং মহর্ষি পরাশর সত্যবতীর নৌকার যাত্রী হলেন। ঋষি তরুণীর সৌন্দর্যে মুগ্ধ হলেন। কামার্ত ঋষি প্রশ্ন করলেন—

ক্ব কর্ণধারো নৌর্যেন নীয়তে ব্রূহি ভামিনী!
সুন্দরী, বলো কাণ্ডারী কে? সত্যবতী আত্মপরিচয় দিয়ে বললেন—

অনপত্যস্য দাশস্য সুতা তৎপ্রিয়কাম্যয়া। সহস্রজনসম্পন্না নৌর্ময়া বাহ্যতে দ্বিজ।।
নিঃসন্তান দাশরাজার কন্যা আমি। তাঁর প্রিয়কাজটি হল সহস্র নৌযাত্রীকে পারাপার, সেই কাজটিই আমি করে থাকি। ঋষির মুগ্ধতা তখন সুহাসিনী কন্যার স্বর্গীয় রূপের সুষমায়, দৃষ্টি— ‘রম্ভোরূ’ অর্থাৎ কদলীস্তম্ভসদৃশ সুগঠিত সুন্দর ঊরূর দিকে। পূর্বাশ্রমের প্রাকৃতজনসুলভ প্রেমের ছলাকলা হয়তো ঋষির এখনও স্মরণে আছে। তিনি তাঁকে বসুনন্দিনী বাসবী সম্বোধনে তুষ্ট করে জানালেন কন্যার জন্মের পূর্ব ইতিহাস। একটি উদ্দেশ্যপূরণেই ঋষি পরাশরের এই উদ্যোগ, সেটি হল কন্যার প্রেমপূর্ণ হৃদয় জয়।

প্রণয়গ্রহণার্থায় বক্ষ্যে বাসবি! তচ্ছৃণু।।

ঋষি সত্যবতীর জন্মবৃত্তান্ত উদ্ঘাটন করলেন। জানালেন— বসুরাজ যাঁর অপর নাম উপরিচর তাঁরই ঔরসে গঙ্গা-যমুনা সঙ্গমস্থলে জাতা মৎস্যরূপিনী অদ্রিকা নামে অপ্সরার গর্ভে জন্ম নিয়েছিলে মৎস্যগন্ধা সত্যবতী। তিনি আরও জানালেন কন্যা অচ্ছোদা নামেও খ্যাত। প্রসিদ্ধ অচ্ছোদসরোবর সেই নামেই পরিচিত। ঋষি ভবিষ্যদ্বাণী করলেন—

পরাশরস্য দায়াদং ত্বং জনয়িষ্যসি।
তুমি পরাশরের ঔরসে একটি পুত্র প্রসব করবে।।

পিতা উপরিচর, মৎসীগর্ভজাত কন্যাটিকে ধীবররাজকে দান করেছিলেন।

রাজ্ঞা দত্তা চ দাশায় কন্যেয়ং তে ভবত্বিতি।

কন্যাটি সৌন্দর্য এবং অধ্যবসায়াদি সত্ত্বগুণ এবং শিল্পকলাদিগুণযুক্ত, তাই তাঁর নাম হল সত্যবতী। মৎস্যঘাতী ধীবরদের আশ্রিতা, তাই সেই সময়ে তাঁর নাম ছিল মৎস্যগন্ধা। এরপরে যৌবনে উপনীত সত্যবতীর জীবনে নাটকীয় পটপরিবর্তন। তীর্থযাত্রী ঋষি পরাশরের সঙ্গে আকস্মিক সাক্ষাৎ। পারাপারের নাইয়া মৎস্যগন্ধী, স্বর্গীয় রূপের আধার সত্যবতী। পরাশরের চোখের সতৃষ্ণ মুগ্ধতা ধরা দিল সত্যবতীর দৃষ্টিতে। তিনি ঋষিকে জানালেন—

মৎস্যগন্ধেতি নামাহুর্দাশরাজসুতাং জনাঃ। জন্ম শোকাভিতপ্তায়াঃ কথং জ্ঞাস্যসি কথ্যতাম্।।

আমি ধীবররাজকন্যা, মৎস্যগন্ধা নামে লোকে আমায় জানে। পিতামাতার অভাবজনিত কারণে অর্থাৎ জন্মবিষয়ে অজ্ঞতার কারণে শোকার্তা আমি, আমার জন্মবৃত্তান্ত কী? জানান। ঋষি পরাশর সত্যবতীকে জন্মবৃত্তান্ত জানালেন।

এরপরেই সোজাসুজি প্রণয়ভিক্ষা করলেন। এ শুধু প্রেমপ্রস্তাব নয়,সম্পূর্ণ যৌন আবেদন তো বটেই তবে লক্ষ্য একটি আছে,সেটি হল পুত্রসন্তানলাভ।

তস্মাদ্বাসবি!ভদ্রং তে যাচে বংশকরং সুতম্। সঙ্গমং মম কল্যাণি! কুরুষ্বেত্যভাষত।।

হে বাসবি (বসুকন্যা), তোমার মঙ্গল হোক। তোমার কাছে একটি বংশরক্ষক পুত্র কামনা করি। হে কল্যাণি, তুমি আমার সঙ্গে সঙ্গমে লিপ্ত হও।
আরও পড়ুন:

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-১৪: অনন্তপ্রবাহিনী গঙ্গা, আকাশগঙ্গা, সুরলোক, হিমালয়— কোনটি তাঁর উৎস?

বাঙালির মৎস্যপুরাণ, পর্ব-৫৯: হ্যাচারিকে কাজে লাগিয়ে বছরভর মাছ চাষ করে আয় সুনিশ্চিত করা সম্ভব

যমুনার অপর পারে ঋষিরা ধ্যানমগ্না, লজ্জিতা ধীবররাজকন্যা সত্যবতী, তিনি ঋষির প্রস্তাবে রোমাঞ্চিত কিন্তু দ্বিধান্বিত। ঋষি লক্ষ্যপূরণে অদম্য। ঘন কুয়াশায় ঢেকে দিলেন চতুর্দিক।তবুও ধীবররাজের কন্যার মনে সঙ্কোচ, আমি কুমারী, পিতার অধীন, আমার কুমারীত্ব নষ্ট হবে যে—
বিদ্ধি মাং ভগবন্।কন্যাং সদা পিতৃবশানুগাম্।ত্বৎসংযোগাচ্চ দূষ্যেত কন্যাভাবো মম।।

এরপর বিচার করে যা করবার তা করুন বিধৎস্ব যদনন্তরম্।

ঋষি তাঁকে নিশ্চিন্ত করে বললেন—

উবাচ মৎপ্রিয়ং কৃত্বা কন্যৈব ত্বং ভবিষ্যসি। বৃণীষ্ব চ বরং ভীরু। যং ত্বমিচ্ছসি ভাবিনি।।

তুমি আমার প্রিয়কাজটি সম্পন্ন করে কুমারীই থাকবে।হে অনুরাগিনী, ভীরু, যে বর চাও সেটাই প্রার্থনা কর।

বরং বব্রে গাত্রসৌগন্ধ্যমুত্তমম্।

ছেলেমানুষ তরুণী সুন্দরী সত্যবতী, তাঁর দেহে মৎস্যগন্ধ, অত্যন্ত ঘৃণার বিষয় তাঁর, হয়তো সেই কারণে তাঁর নিজের হীনমন্যতাবোধ আছে। তিনি তা থেকে মুক্ত হতে চাইলেন। কী ছিল তাঁর বর প্রার্থনা? শুধুমাত্র দেহের সুগন্ধ। ঋষির অনুগ্রহে লাভ করলেন সেই সৌরভ। সেই থেকে তাঁর নাম হল ‘গন্ধবতী’। সেই গন্ধের বিস্তার যোজনব্যাপী, তাই আরও একটি নাম হল ‘যোজনগন্ধা’। ঋষি পরাশরের সঙ্গে সঙ্গমের অব্যবহিত পরেই গর্ভধারণ করলেন যোজনগন্ধা সত্যবতী। যমুনার এক দ্বীপে জন্ম নিলেন সত্যবতীপুত্র। দ্বীপে জন্ম তাই তাঁর নাম হল দ্বৈপায়ন।

ন্যস্ত দ্বীপে স যদ্বালস্তস্মাদ্দ্বৈপায়নঃ স্মৃতঃ।

সত্যবাদী, শমগুণপ্রধান, তপস্যার প্রভাবে যার পাপ দগ্ধ হয়েছে এমন, সেই নিষ্পাপ পুত্রটি জন্মমাত্রই পিতার সঙ্গে প্রস্থান করলেন। ‘মা’কে কথা দিয়ে গেলেন

স্মৃতোঽহং দর্শয়িষ্যামি কৃত্যেষ্বিতি সোঽব্রবীৎ।

কার্যকালে স্মরণ করলেই আমি দেখা দেব তোমায়। সত্যবতীর দ্বীপে জাত পুত্রটিই মহাভারতস্রষ্টা শ্রীকৃষ্ণ দ্বৈপায়ন বেদব্যাস।চারটি বেদকে বিভক্ত করে তিনি ‘ব্যাস’ নামে অভিহিত হলেন।গাত্রবর্ণ কৃষ্ণ, তাই তাঁর নামের অন্তর্গত হল ‘কৃষ্ণ’ শব্দটিও।

যো ব্যস্য বেদাংশ্চতুরস্তপসা ভগবানৃষিঃ।লোকে ব্যাসত্বমাপেদে কার্ষ্ণ্যাৎ কৃষ্ণত্বমেব।।

তিনিই কুরুপাণ্ডবদের পিতামহ। কারণ তিনি ছিলেন তাঁদের পিতাদ্বয় ধৃতরাষ্ট্র ও পাণ্ডুর বীজদাতা পিতা, রক্তের সম্পর্কে এই পিতৃত্বের বন্ধন‌। হস্তিনাপুরের রাজা শান্তনুর দ্বিতীয়া স্ত্রী সত্যবতীর অকালমৃত দুই পুত্র চিত্রাঙ্গদ ও বিচিত্রবীর্য্য। রাজা হয়ে চিত্রাঙ্গদ গন্ধর্বরাজের সঙ্গে যুদ্ধে মৃত্যু বরণ করেন। কনিষ্ঠ বিচিত্রবীর্য্য রাজা হলেন। বিচিত্রবীর্য্যের অকালমৃত্যুর পরে মা সত্যবতীর অনুরোধে নিয়োগপ্রথায় ব্যাসদেব বিচিত্রবীর্য্যের দুই স্ত্রী, অম্বিকা ও অম্বালিকার গর্ভে যথাক্রমে ধৃতরাষ্ট্র ও পাণ্ডুর জন্ম দেন,ঘটনাক্রমে অম্বিকার দাসীর গর্ভেও তাঁর ঔরসে জন্ম নেন মহান বিদুর।
আরও পড়ুন:

পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-৯: যোগ্য বা অযোগ্য—যে মানুষই রাজার আশেপাশে থাকেন, রাজা তারই কথায় ওঠেন-বসেন

পঞ্চমে মেলোডি, পর্ব-১৫: পঞ্চমের অনবদ্য সৃষ্টির মধ্যে একটি কিশোরের গাওয়া জনপ্রিয় ‘নদিয়া সে দরিয়া’ গানটি

নিজের জন্মবৃত্তান্ত অকপটে বর্ণনা করেছেন মহাভারতকার। সকলের সম্পূর্ণ অজ্ঞাত ছিল ব্যাসদেবের জন্মবৃত্তান্ত। কুমারীমায়ের এবং ঋষি পিতার ক্ষণিক বিভ্রমের ফসল তিনি। নিজের এই গোপন জন্মকাহিনির বিবরণ দিয়েছেন সঙ্কোচহীন, দ্বিধামুক্ত মন নিয়ে।যমুনার তরঙ্গদোলায় নৌকায় তাঁর জন্মের সূচনা। নৌকাটি যেন তাঁর ভাবী জীবনের সূচক। সারা জীবন ভরতবংশীয়দের জীবনদোলায় দোদুল্যমান হয়েছে তাঁর জীবন। যমুনার প্রবাহে মানবোত্তরণের বাহন নৌকা, বেদব্যাসের পিতামাতার সঙ্গমস্থল। তিনি ভরতবংশীয়দের বংশের অব্যাহতগতির বাহক, বীজী পিতা। পিতামহ ভীষ্মের উপস্থিতি যদি হয় কুরুবংশের বটবৃক্ষের ছায়া তবে পিতামহ বেদব্যাস হলেন বংশধারার চালিকাশক্তি। চারিদিকে প্রবহমান যমুনা― গতিময়,যমুনার একটি জনশূন্য দ্বীপে জন্ম নিচ্ছেন একজন বিখ্যাত বংশের বীজী পিতা, বংশগতির নিয়ামক, অথচ জন্মমাত্রই ঋষির ঔদাসীন্যে অনাসক্তির মন্ত্রে দীক্ষিত। ঋষি পিতা পরাশরের সঙ্গে তুলনায়, ইন্দ্রিয়সংযমের সীমা লঙ্ঘনের মাপকাঠিতে, ঋষি বেদব্যাস অনন্য। তাঁর সংযমে বিজয়ীর গৌরব। পিতা পরাশর সঙ্গমে লিপ্ত হয়েছিলেন রূপজমোহে। সুন্দরী,তরুণী সত্যবতীর সৌন্দর্যে তাঁর সংযমের বাঁধ ভেঙ্গে গিয়েছিল। ছলাকলায়, মধুরবাক্যে ভুলিয়েছিলেন কুমারী সত্যবতীকে। যুগপৎ ঋষির অভিশাপ এবং পিতার ভয়ে ভীতা, পুরুষের সঙ্গে যৌনসম্পর্কের অভিজ্ঞতাহীন নিষ্পাপ তরুণী ছিল সে। ঋষিসুলভ ক্ষমতায় অসুলভ বরদানের প্রলোভনে তাঁকে আকৃষ্ট করেছেন। সত্যবতীর বয়ানে,

সান্ত্বপূর্ব্বং মুনিশ্রেষ্ঠঃ কামার্ত্তো মধুরং বচঃ।উক্ত্বা জন্ম কুলং মহ্যং নাসি দাসসুতেতি।।তামহং শাপভীতা চ পিতুর্ভীতা চ ভারত।বরৈরসুলভৈরুক্তা ন প্রত্যাখ্যাতুমুৎসহে।।
আরও পড়ুন:

এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-২২: স্টেরয়েড বড় ভয়ঙ্কর ওষুধ?

হুঁকোমুখোর চিত্রকলা, পর্ব-১: রস নাই?

সেই চিরন্তন প্রলোভন, উৎকোচের আশ্রয় নেওয়া। এ বিষয়ে তিনি আধুনিক প্রেমপ্রতারকদেরও বোধ করি হার মানান। একটি উদ্দেশ্য ছিল সেটি পুত্রের পিতৃত্বলাভ। কামনাচরিতার্থ এবং পুত্রলাভ দুটোতেই সফল হয়েছিলেন ঋষি ব্যাসপিতা পরাশর। ঋষি বেদব্যাসের মধ্যে কিন্তু এই অসংযম ছিলনা। দুই ভ্রাতৃবধূর সঙ্গে সঙ্গমে লিপ্ত হয়েছেন সম্পূর্ণ নিস্পৃহ আবেগে, শুধুমাত্র মাতৃ আজ্ঞায়। সুপ্ত আবেগ ছিল, সেটি কেবল বংশরক্ষার, বীজদানের কর্ত্তব্যবোধের তাগিদ,তাতে কামনার কলুষতা ছিল না। কর্ত্তব্যের তাগিদে সঙ্গম, উত্তরাধিকারীদান, তারপরে চরম নিস্পৃহতায় ফিরে গিয়েছিলেন নিজস্ব আশ্রয়ে, এই কবি, ক্রান্তদর্শী।

উৎপাদ্য ধৃতরাষ্ট্রঞ্চ পাণ্ডুং বিদুরমেব চ।জগাম তপসে ধীমান্ পুনরেবাশ্রমং প্রতি।।

তাঁর এই আচরণ, আবেগহীন দায়বদ্ধতা শুধু নয়। তাই অপরপক্ষের অনুভূতিহীন প্রতিক্রিয়া বুঝতে পেরে ধৃতরাষ্ট্রের অন্ধত্বের এবং পাণ্ডুর পাণ্ডুবর্ণের এবং দাসীর গর্ভে মহান বিদুরের ধার্মিকতার কারণ নিজের মা সত্যবতীকে জানিয়েছেন অকপটে। ভরতবংশের তিনটি প্রজন্মের, উত্থান, পতন, হিংসা, প্রতিহিংসা, ধর্ম, অধর্মের টানাপোড়েনের প্রত্যক্ষদর্শী তিনি। যমুনা প্রবাহে ভারতজীবন অব্যাহতগতিতে বয়ে চলেছে আজও, সেই প্রবাহেই অচল, অনড় এক দ্বীপে জন্ম নিয়েছিলেন এক মহান স্রষ্টা, ঋষি, বীজী পিতা। এক স্বচ্ছ অচ্ছোদা মা এবং ঋষিপিতার পুত্র ব্যাসদেব। ব্যাস শব্দের অর্থ বিস্তারও। তাই তাঁর নাম বিশেষ তাৎপর্যবাহী। দ্বৈপায়নের জীবন এক মহৎ লক্ষ্যে ধাবমান হয়েছিল, সেটি ― ভারতের ইতিহাসসৃজন। গঙ্গা ভারতকথার একটি চরিত্র, এক মহান পূর্বসূরীর মা, আর যমুনা আর এক পিতৃপুরুষের জন্মের পটভূমি, প্রক্ষিত।
ভরতবংশীয়দের দুই বিখ্যাত পিতামহ,তাঁদের দুই প্রেক্ষিত,দুই মাতৃসমা নদী, গতিময় চিরপ্রবহমানা। গঙ্গাযমুনার এই মহাসঙ্গমের সাক্ষী মহাকাল। গঙ্গা ও যমুনার মতোই ভরতবংশীয়দের চিরন্তন সম্পদ, যুগান্তরেও অবিনাশী, ভারতীয়দের প্রাণের সম্পদ, মহাতীর্থস্বরূপ মহাভারত।—চলবে
* মহাকাব্যের কথকতা (Epics monologues of a layman): পাঞ্চালী মুখোপাধ্যায় (Panchali Mukhopadhyay) অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপিকা, সংস্কৃত বিভাগ, যোগমায়া দেবী কলেজে।

Skip to content