সেই জুটি।
১৯৭২ সালে আসে ‘সংযোগ’ ছবিটি। এই ছবিতে কিশোরের গাওয়া ‘এক দো তিন চার’ গানটিতে একটি মজার সুর ব্যবহার করেন পঞ্চম। একটি মিউজিক্যাল চেয়ারের দৃশ্যে জনি ওয়াকার কিশোরকে লিপ দিচ্ছেন। আর কিশোরও জনি ওয়াকারের কথা মাথায় রেখে তাঁর প্রাণোচ্ছল কণ্ঠ ব্যবহার করে জনির নাচের তালে অভিনয় করে গিয়েছেন তাঁর কণ্ঠের মাধ্যমে। এই ছবির ‘রূপ ইয়ে তেরা জিসনে বানায়া’ গানটি বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। নায়িকা মালা সিনহার উদ্দেশ্যে নায়ক অমিতাভ বচ্চনের লিপে এই গানটির ক্ষেত্রে পঞ্চম যেন খুব সন্তর্পনে সুরটি রচনা করেছেন। এই গানের ক্ষেত্রে কিশোরের গাওয়ার ঢংটিও একটু লক্ষ্য করবেন।
এই ছবিতে অমিতাভকে যেহেতু ‘অ্যাংরি ইয়াং ম্যান’ হিসেবে দেখানো হয়নি, তাই পঞ্চম সুরের ক্ষেত্রে নিজেকেও অনেকটাই সংযত রেখেছেন। কিশোরও গেয়েছেন ততটাই সংযতভাবে। সুরকার এবং গায়কের সঠিক তালমিল বোধয় একই বলে।
এবার যদি আসি ‘বোম্বে টু গোয়া’ ছবির কথায়। ‘দেখা না হাই রে সচা না’ গানটির কথা যদি ধরেন। খেয়াল করে দেখবেন, এখানেও সেই একই পঞ্চম-কিশোর-অমিতাভ। কিন্তু উপস্থাপনা একেবারে ভিন্ন। ছবিতে অমিতাভকে যেহেতু এক প্রাণোচ্ছল ছটফটে নায়ক হিসেবে দেখানো হয়েছে। তাই পঞ্চম-কিশোর দুজনেই এক সম্পূর্ণ অন্য ধারা অবলম্বন করেছেন গানটির উপস্থাপনার ক্ষেত্রে।
একই বছর মুক্তি পাওয়া ‘রাখি আউর হাতকড়ি’ ছবিটি বাণিজ্যিকভাবে সেই ভাবে সাফল্য না পেলেও ‘আচ্ছি নেহি সনম দিল্লাগি’ গানটি তুমুল সাড়া ফেলে দিয়েছিল সেই সময়। মাইনর স্কেলে তৈরি এই গানটি একটি অভিনব ছন্দকে আশ্রয় করে এগিয়ে গিয়েছে, আর কিশোর এবং আশা তাঁদের স্বভাবসিদ্ধ গায়কীর মাধ্যমে মাতিয়ে রেখেছেন আমাদের।
এই ছবিতে অমিতাভকে যেহেতু ‘অ্যাংরি ইয়াং ম্যান’ হিসেবে দেখানো হয়নি, তাই পঞ্চম সুরের ক্ষেত্রে নিজেকেও অনেকটাই সংযত রেখেছেন। কিশোরও গেয়েছেন ততটাই সংযতভাবে। সুরকার এবং গায়কের সঠিক তালমিল বোধয় একই বলে।
এবার যদি আসি ‘বোম্বে টু গোয়া’ ছবির কথায়। ‘দেখা না হাই রে সচা না’ গানটির কথা যদি ধরেন। খেয়াল করে দেখবেন, এখানেও সেই একই পঞ্চম-কিশোর-অমিতাভ। কিন্তু উপস্থাপনা একেবারে ভিন্ন। ছবিতে অমিতাভকে যেহেতু এক প্রাণোচ্ছল ছটফটে নায়ক হিসেবে দেখানো হয়েছে। তাই পঞ্চম-কিশোর দুজনেই এক সম্পূর্ণ অন্য ধারা অবলম্বন করেছেন গানটির উপস্থাপনার ক্ষেত্রে।
একই বছর মুক্তি পাওয়া ‘রাখি আউর হাতকড়ি’ ছবিটি বাণিজ্যিকভাবে সেই ভাবে সাফল্য না পেলেও ‘আচ্ছি নেহি সনম দিল্লাগি’ গানটি তুমুল সাড়া ফেলে দিয়েছিল সেই সময়। মাইনর স্কেলে তৈরি এই গানটি একটি অভিনব ছন্দকে আশ্রয় করে এগিয়ে গিয়েছে, আর কিশোর এবং আশা তাঁদের স্বভাবসিদ্ধ গায়কীর মাধ্যমে মাতিয়ে রেখেছেন আমাদের।
‘সীতা অউর গীতা’ ছবির দুটি গান বিশেষভাবে উল্লেখ করার মতো। ‘হাওয়া কে সাথ সাথ’ এবং ‘কই লড়কি মুঝে কাল রাত স্বপ্নে মে মিলি’ গান দুটিতে পুরুষ কণ্ঠ হিসেবে কিশোরকে বেছে নেবার কারণ হল গান দুটির ধরন। আবার একই কারণে দুটি গানের ক্ষেত্রে দুই ভিন্ন মহিলা কণ্ঠ বেছে নেওয়া। প্রথম গানটিতে কিশোরের সঙ্গে ডুয়েট গেয়েছেন আশা ভোঁসলে। আর দ্বিতীয় গানটিতে কিশোরের সঙ্গে ছিলেন লতা মঙ্গেশকর। একটু খেয়াল করলেই বুঝতে পারবেন যে, প্রথম গানটির ক্ষেত্রে গানটির গতি, হালকা একটি ক্যাবারে ঘেঁষা ভাব, নায়ক নায়িকার চাঞ্চল্য, কিছুটা খুনসুটি এবং প্রণিচ্ছলতার সঙ্গে তাল মেলাতেই আশাকে নির্বাচন করা হয়েছে। দ্বিতীয় গানটি নিজস্ব ছন্দে এগোলেও প্রথম গানটির তুলনায় একটু যেন কম গতিময়। নায়িকাও এই গানটিতে যেন একটু বেশি সংযত। তাই এই গানটির ক্ষেত্রে পঞ্চমের পছন্দ লতাকে। গানটির আরও একটি অভিনব দিক হল, দ্বিতীয় ইন্টার লুড থেকে আচমকাই গানটির স্কেল পরিবর্তন হয়ে যাওয়া। যেটিতে আবার ধরা পরে আর ডি বর্মণের উপর পাশ্চাত্য সঙ্গীতের বিশেষ প্রভাব।
প্রসঙ্গত, একটি গান অথবা ‘ইন্সট্রুমেন্টাল পিস’ চলাকালীন হঠাৎ করে সেটির স্কেল পরিবর্তন হতে পাশ্চাত্য সঙ্গীতে আমরা বহুবার দেখেছি। আর সেটিকেই তিনি আমাদের কানে পৌঁছে দিয়েছেন এই গানটির মাধ্যমে। অথচ উপরোক্ত দুই গানের ক্ষেত্রেই পুরুষ কণ্ঠ হিসেবে কিশোরকে বেছে নেওয়ার এক এবং অদ্বিতীয় কারণ নায়কের সঙ্গে কণ্ঠের একটি সামঞ্জস্য ধরে রাখার প্রচেষ্টা। সেই প্রচেষ্টায় সুরকার একশো ভাগ সফল। আসলে পঞ্চম এমন একজন সুরকার এবং সুরসাধক যিনি গতে বাঁধা পথে যেন চলতে নারাজ। সব ক্ষেত্রে নতুন কিছুকে অবলম্বন করে সুর সৃষ্টি করা, অপূর্ব কিছুর জন্ম দেওয়া, ‘আউট অফ দ্য বক্স’ ভাবনায় মত্ত থাকা। দৈনন্দিন জীবনে কানে ভেসে আসা সবকটি শব্দকে নিজের ভাবনায় রেখে সুযোগ মতো সেগুলিকে প্রয়োগ করা, এগুলিই পঞ্চমকে যেন বিশেষভাবে আলাদা করে রাখে। যে কোনও শব্দই যেন মহামূল্যবান। সবকটি শব্দের প্রতিই যেন তাঁর সমান অধিকারবোধ। এই সবের সঙ্গে ছিল নায়ক অথবা নায়িকার কথা মাথায় রেখে গানের প্রেক্ষাপট এবং দৃশ্যকে প্রাধান্য দিয়ে গায়ক এবং গায়িকা বেছে নেওয়ার এক অপার ক্ষমতা। অত্যন্ত আশ্চর্জনকভাবে তৎকালীন বেশিরভাগ নায়কের ক্ষেত্রে কণ্ঠ হিসেবে বেছে নিতেন কিশোর কুমারকে। তাঁর ভাবনাও সম্পূর্ণভাবে মিলে যেত।
প্রসঙ্গত, একটি গান অথবা ‘ইন্সট্রুমেন্টাল পিস’ চলাকালীন হঠাৎ করে সেটির স্কেল পরিবর্তন হতে পাশ্চাত্য সঙ্গীতে আমরা বহুবার দেখেছি। আর সেটিকেই তিনি আমাদের কানে পৌঁছে দিয়েছেন এই গানটির মাধ্যমে। অথচ উপরোক্ত দুই গানের ক্ষেত্রেই পুরুষ কণ্ঠ হিসেবে কিশোরকে বেছে নেওয়ার এক এবং অদ্বিতীয় কারণ নায়কের সঙ্গে কণ্ঠের একটি সামঞ্জস্য ধরে রাখার প্রচেষ্টা। সেই প্রচেষ্টায় সুরকার একশো ভাগ সফল। আসলে পঞ্চম এমন একজন সুরকার এবং সুরসাধক যিনি গতে বাঁধা পথে যেন চলতে নারাজ। সব ক্ষেত্রে নতুন কিছুকে অবলম্বন করে সুর সৃষ্টি করা, অপূর্ব কিছুর জন্ম দেওয়া, ‘আউট অফ দ্য বক্স’ ভাবনায় মত্ত থাকা। দৈনন্দিন জীবনে কানে ভেসে আসা সবকটি শব্দকে নিজের ভাবনায় রেখে সুযোগ মতো সেগুলিকে প্রয়োগ করা, এগুলিই পঞ্চমকে যেন বিশেষভাবে আলাদা করে রাখে। যে কোনও শব্দই যেন মহামূল্যবান। সবকটি শব্দের প্রতিই যেন তাঁর সমান অধিকারবোধ। এই সবের সঙ্গে ছিল নায়ক অথবা নায়িকার কথা মাথায় রেখে গানের প্রেক্ষাপট এবং দৃশ্যকে প্রাধান্য দিয়ে গায়ক এবং গায়িকা বেছে নেওয়ার এক অপার ক্ষমতা। অত্যন্ত আশ্চর্জনকভাবে তৎকালীন বেশিরভাগ নায়কের ক্ষেত্রে কণ্ঠ হিসেবে বেছে নিতেন কিশোর কুমারকে। তাঁর ভাবনাও সম্পূর্ণভাবে মিলে যেত।
আরও পড়ুন:
পঞ্চমে মেলোডি, পর্ব-১১: ‘কটি পতঙ্গ’ ছবিতে পঞ্চমের সুরে কিশোর নিজেকে উজাড় করে দেন
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৩৫: যে ছিল আমার ‘ব্রতচারিণী’
পর্দার আড়ালে, পর্ব-৩৩: ‘অপরাজিত’র সম্পাদনার সময় সত্যজিতের মনে হয়েছিল মিলি চরিত্রটির প্রয়োজন নেই, অগত্যা বাদ পড়লেন তন্দ্রা
অজানার সন্ধানে, অঙ্কই ধ্যানজ্ঞান, মোটা বেতনের চাকরি নির্দ্বিধায় ছেড়ে দেন আইআইটি-র শ্রবণ
‘সভেরা’ ছবির ‘হো গেয়া হোঙ্গে সারে’ গানটি লতা মঙ্গেশকরের সঙ্গে একটি ডুয়েট গান হলেও কিশোরের কণ্ঠের দ্বারা অভিনয় শ্রোতাদের কানে স্পষ্টভাবে ধরা পড়ে। গানের কথা অনুযায়ী একটি মজার সুর গানটিতে ব্যবহার করেন পঞ্চম।
ধর্মেন্দ্র অভিনীত ‘সমাধি’ ছবিতেও তাঁর লিপে কিশোর কণ্ঠদান করেছেন ‘জানে জানা’ এবং ‘মাইনে দেখা এক স্বপ্না’ গান দুটিতে। কখনও কোথাও নায়কের ব্যাক্তিত্বের সঙ্গে গায়কের কণ্ঠকে বেমানান মনে হয়নি। শুধু এটিই কেন? ধর্মেন্দ্র অভিনীত আরও একটি ছবি ‘দো চোর’ এর কথাটিই ভাবুন। এই ছবিতে লতা মঙ্গেশকরের সঙ্গে ডুয়েট গাওয়া কিশোরের দুটি গান ‘চাহে রহ দুর চাহে রহ পাস’ এবং ‘কালি পালক তেরি গোরি’। গান দুটি সেই অর্থে একদমই ‘আপ টেম্পো’ নয়।
গান দুটি তৈরি করা হয়েছে দুটি দুই ধরনের ছন্দকে আশ্রয় করে। যে ছন্দ দুটির মধ্যে নেই কোনও জটিলতা। অথচ দুটি ক্ষেত্রেই মেলোডির আবেদন যেন আকাশচুম্বী। আর বলা বাহুল্য, লতার সঙ্গে কিশোর তাঁর স্বভাবসিদ্ধ গায়কীর সাহায্যে অলঙ্করণ করেছেন গান দুটিকে। এই ছবির আরেকটি গান ‘মেরি জান মেরি জান কহে না মানো’ র কথা যদি ধরা যায়, শুনে দেখবেন, আবারও প্রাধান্য পেয়েছে কিশোর কণ্ঠ। গানের অংশগুলিতে আবহ সঙ্গীত নেহাতই কম। ছন্দ ধরে রাখার স্বার্থে যতটুকু প্রয়োজন ঠিক ততটুকুই রাখা হয়েছে।
ইন্টারলুডগুলিকে বাদ দিলে বাকি গানটিতে (যে যে অংশে কিশোর গাইছেন) যন্ত্রসঙ্গীতের প্রাধান্য খুব একটি কানে আসে না। কিন্তু কানে যেটি আসে, সেটি হল পঞ্চমমের পছন্দের সেই অব্লিগেটোর ছোঁয়া। শুনলে মনে হয় ভায়োলিনে বেজে চলা অব্লিগেটোটি যেন কিশোরকণ্ঠকে এক মায়ার বন্ধনে বেঁধে রেখেছে।
ধর্মেন্দ্র অভিনীত ‘সমাধি’ ছবিতেও তাঁর লিপে কিশোর কণ্ঠদান করেছেন ‘জানে জানা’ এবং ‘মাইনে দেখা এক স্বপ্না’ গান দুটিতে। কখনও কোথাও নায়কের ব্যাক্তিত্বের সঙ্গে গায়কের কণ্ঠকে বেমানান মনে হয়নি। শুধু এটিই কেন? ধর্মেন্দ্র অভিনীত আরও একটি ছবি ‘দো চোর’ এর কথাটিই ভাবুন। এই ছবিতে লতা মঙ্গেশকরের সঙ্গে ডুয়েট গাওয়া কিশোরের দুটি গান ‘চাহে রহ দুর চাহে রহ পাস’ এবং ‘কালি পালক তেরি গোরি’। গান দুটি সেই অর্থে একদমই ‘আপ টেম্পো’ নয়।
গান দুটি তৈরি করা হয়েছে দুটি দুই ধরনের ছন্দকে আশ্রয় করে। যে ছন্দ দুটির মধ্যে নেই কোনও জটিলতা। অথচ দুটি ক্ষেত্রেই মেলোডির আবেদন যেন আকাশচুম্বী। আর বলা বাহুল্য, লতার সঙ্গে কিশোর তাঁর স্বভাবসিদ্ধ গায়কীর সাহায্যে অলঙ্করণ করেছেন গান দুটিকে। এই ছবির আরেকটি গান ‘মেরি জান মেরি জান কহে না মানো’ র কথা যদি ধরা যায়, শুনে দেখবেন, আবারও প্রাধান্য পেয়েছে কিশোর কণ্ঠ। গানের অংশগুলিতে আবহ সঙ্গীত নেহাতই কম। ছন্দ ধরে রাখার স্বার্থে যতটুকু প্রয়োজন ঠিক ততটুকুই রাখা হয়েছে।
ইন্টারলুডগুলিকে বাদ দিলে বাকি গানটিতে (যে যে অংশে কিশোর গাইছেন) যন্ত্রসঙ্গীতের প্রাধান্য খুব একটি কানে আসে না। কিন্তু কানে যেটি আসে, সেটি হল পঞ্চমমের পছন্দের সেই অব্লিগেটোর ছোঁয়া। শুনলে মনে হয় ভায়োলিনে বেজে চলা অব্লিগেটোটি যেন কিশোরকণ্ঠকে এক মায়ার বন্ধনে বেঁধে রেখেছে।
আরও পড়ুন:
স্বাদে-আহ্লাদে: তপ্ত দিনে প্রাণ জুড়োতে বন্ধুদের জন্য বানিয়ে ফেলুন আমপান্না
পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-৫: অল্প ক্ষতি স্বীকার করে হলেও ভবিষ্যতে বড় লাভের কথা চিন্তা করা দরকার
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৬৩: গগনেন্দ্রনাথের ঘুড়ি ওড়ানো
‘আপনা দেশ’ ছবির ‘রোনা কাভি নেহি রোনা’ গানটিতে সুরের তেমন বিশেষ কোনও মডিউলেসান না থাকলেও রাজেশ খান্নার লিপে কিশোরের এই গানটি অনবদ্য। মনে হয় যেন তিনিই অভিনয় করছেন তাঁর কণ্ঠের মাধ্যমে।
পরিচয় ছবির কিশোরের গাওয়া ‘মুসাফির হুঁ ইয়ারো’ গানটির কথা আগেই উল্লেখিত হয়েছে। এই গানটি প্রসঙ্গে একটি সাক্ষাৎকারে ভানু গুপ্ত একটি মজার ঘটনার কথা উল্লেখ করেছিলেন। একদিন সকাল সকাল ভানু গুপ্ত পৌঁছে গিয়েছিলেন পঞ্চমের বাড়িতে। উদ্দেশ্য একটাই, ‘পরিচয়’ ছবির গানগুলিকে সবাই মিলে বসে তৈরি করা। ভানু গুপ্ত পৌঁছেছিলেন, অন্যরা তখনও আসেননি। তখন পঞ্চম তাঁকে বসতে বলে স্নান করতে চলে যান। তো তিনি একা একা বসে কি বা করবেন। নিজের গিটারটি কেস থেকে বের করে নিজের মনে একটি রিদম বাজাতে শুরু করেন। হঠাৎ স্নানঘরের দরজাটি খুলে যায়। দরজার ফাঁক দিয়ে দেখা যায় পঞ্চমের জলে ভেজা মাথা। জিজ্ঞাসু চোখে ভানু গুপ্তকে তিনি প্রশ্ন করেন, তিনি ঠিক কি বাজাচ্ছেন। উত্তরে ভানু বলেন, রিদমটি তাঁর এখনই মাথায় এলো, তাই তিনি বাজাচ্ছেন। এটি শোনার পর পঞ্চম ভানুকে রিদমটি বাজিয়ে যেতে বলে স্নানঘরে দরজা বন্ধ করে দেন। দুই মিনিটের মধ্যে অর্ধেক স্নান সেরে তোয়ালে পরিহিত পঞ্চম বেরিয়ে আসেন। সেই অবস্থায় বসেন হারমোনিয়াম নিয়ে। আর শুধু ‘বাস চলতে জানা’ অংশটির সুর রচনা করে আবার ফিরে যান স্নান ঘরে। তখনও কিন্তু গানটির মুখরা তৈরি হওয়া বাকি।
যাইহোক, ভানু গুপ্ত পঞ্চমের নির্দেশ মেনে বাজিয়ে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ তিনি শুনতে পান যে স্নান ঘরের ভিতর থেকে পঞ্চম ‘মিল গয়া মিল গয়া’ বলে চিৎকার করছেন। খুলে যায় দরজা। দৌড়ে বেরিয়ে আসেন পঞ্চম। আবার বসে পড়েন হারমোনিয়াম নিয়ে। নিমেষে তৈরি করে ফেলেন ‘মুসাফির হুঁ ইয়ারো’ গানটি। ভানু বাকরুদ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকেন পঞ্চমের দিকে। সঙ্গীতের জহুরি সৃষ্টি করে ফেলেন কিশোর কণ্ঠের জন্য আরও একটি খাদহীন স্বর্ণালঙ্কার।
‘পারছাইয়া’ ছবির ‘খুলি খুলি জুলফে’ গানটিতে আবার ধরা পরে পঞ্চমের সেই অতি পরিচিত রিদম। এক মিষ্টি মেলোডিকে আশ্রয় করে এগিয়ে চলে কিশোর কুমারের গাওয়া এই গানটি।
‘রামপুর কা লক্ষ্মণ’ ছবির ‘গুম হ্যায় কিসি কে পেয়ার মে’ গানটির মাধুর্যের কথা একবার ভাবুন তো! লতার সঙ্গে কিশোরের যে রসায়ন সেটি যেন আজও আমাদের একইরকম ভাবে মুগ্ধ করে। আর সুরের বৈচিত্র্য? সে আর নাই বা বললাম। এই গান শোনেননি এমন মানুষ আক্ষরিক অর্থেই বিরল। আজকের দিনেও।
পরিচয় ছবির কিশোরের গাওয়া ‘মুসাফির হুঁ ইয়ারো’ গানটির কথা আগেই উল্লেখিত হয়েছে। এই গানটি প্রসঙ্গে একটি সাক্ষাৎকারে ভানু গুপ্ত একটি মজার ঘটনার কথা উল্লেখ করেছিলেন। একদিন সকাল সকাল ভানু গুপ্ত পৌঁছে গিয়েছিলেন পঞ্চমের বাড়িতে। উদ্দেশ্য একটাই, ‘পরিচয়’ ছবির গানগুলিকে সবাই মিলে বসে তৈরি করা। ভানু গুপ্ত পৌঁছেছিলেন, অন্যরা তখনও আসেননি। তখন পঞ্চম তাঁকে বসতে বলে স্নান করতে চলে যান। তো তিনি একা একা বসে কি বা করবেন। নিজের গিটারটি কেস থেকে বের করে নিজের মনে একটি রিদম বাজাতে শুরু করেন। হঠাৎ স্নানঘরের দরজাটি খুলে যায়। দরজার ফাঁক দিয়ে দেখা যায় পঞ্চমের জলে ভেজা মাথা। জিজ্ঞাসু চোখে ভানু গুপ্তকে তিনি প্রশ্ন করেন, তিনি ঠিক কি বাজাচ্ছেন। উত্তরে ভানু বলেন, রিদমটি তাঁর এখনই মাথায় এলো, তাই তিনি বাজাচ্ছেন। এটি শোনার পর পঞ্চম ভানুকে রিদমটি বাজিয়ে যেতে বলে স্নানঘরে দরজা বন্ধ করে দেন। দুই মিনিটের মধ্যে অর্ধেক স্নান সেরে তোয়ালে পরিহিত পঞ্চম বেরিয়ে আসেন। সেই অবস্থায় বসেন হারমোনিয়াম নিয়ে। আর শুধু ‘বাস চলতে জানা’ অংশটির সুর রচনা করে আবার ফিরে যান স্নান ঘরে। তখনও কিন্তু গানটির মুখরা তৈরি হওয়া বাকি।
যাইহোক, ভানু গুপ্ত পঞ্চমের নির্দেশ মেনে বাজিয়ে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ তিনি শুনতে পান যে স্নান ঘরের ভিতর থেকে পঞ্চম ‘মিল গয়া মিল গয়া’ বলে চিৎকার করছেন। খুলে যায় দরজা। দৌড়ে বেরিয়ে আসেন পঞ্চম। আবার বসে পড়েন হারমোনিয়াম নিয়ে। নিমেষে তৈরি করে ফেলেন ‘মুসাফির হুঁ ইয়ারো’ গানটি। ভানু বাকরুদ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকেন পঞ্চমের দিকে। সঙ্গীতের জহুরি সৃষ্টি করে ফেলেন কিশোর কণ্ঠের জন্য আরও একটি খাদহীন স্বর্ণালঙ্কার।
‘পারছাইয়া’ ছবির ‘খুলি খুলি জুলফে’ গানটিতে আবার ধরা পরে পঞ্চমের সেই অতি পরিচিত রিদম। এক মিষ্টি মেলোডিকে আশ্রয় করে এগিয়ে চলে কিশোর কুমারের গাওয়া এই গানটি।
‘রামপুর কা লক্ষ্মণ’ ছবির ‘গুম হ্যায় কিসি কে পেয়ার মে’ গানটির মাধুর্যের কথা একবার ভাবুন তো! লতার সঙ্গে কিশোরের যে রসায়ন সেটি যেন আজও আমাদের একইরকম ভাবে মুগ্ধ করে। আর সুরের বৈচিত্র্য? সে আর নাই বা বললাম। এই গান শোনেননি এমন মানুষ আক্ষরিক অর্থেই বিরল। আজকের দিনেও।
আরও পড়ুন:
দশভুজা: রুমা দেবী—তিরিশ হাজার মহিলার ভাগ্য পরিবর্তনের কান্ডারি তিনি
এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-২০: শোওয়ার বালিশ বিছানা কেমন হবে? শক্ত না নরম?
অমরনাথের পথে, পর্ব-৬: এবার বালতাল হয়ে ফেরার পালা
১৯৭২ সালে মুক্তি পায় ‘জওয়ানি দিওয়ানি’। কিশোরের গাওয়া ‘সামনে ইয়ে কউন আয়া দিল মে হুই হালচাল’ গানটির উল্লেখ আগেই করেছি প্যাডেল মটকা বাদ্য যন্ত্রটির কথা বলতে গিয়ে। গানটি দৃশ্যায়নের নিরিখে একটি পার্টি সং। গানের একদম প্রথমাংশে কিশোরের কণ্ঠ একেবারে খাদ থেকে ‘ক্রেসেন্ডো’ অবধি উঠে থেমে যাচ্ছে। তারপর একটু ফিলার। কিছুটা কিশোর কণ্ঠ আর বাকিটা ইন্সট্রুমেন্টাল। তারপরই শুরু হয় আসল গানটি। গানটি শুনলে মনে হবে কিশোর স্বয়ং যেন সেই পার্টিতে উপস্থিত। নায়ক রণধীর কাপুর অথবা গায়ক কিশোরের আলাদা করে যেন কোনও অস্তিত্ব নেই। দুজনেই যেন মিলে মিশে একাকার হয়ে গিয়েছেন গানটিতে।
এই ছবির ‘ইয়ে জওয়ানি হ্যায় দিওয়ানি’ গানটি সেই যুগে যে আদেও তৈরি হতে পারে সেটি পঞ্চম প্রমাণ করেছেন। গানের মুখরা একটি স্কেলে আরম্ভ হয়। কিন্তু দুটি অন্তরাই আরম্ভ হয় অন্য আরেকটি স্কেলে। কিন্তু দ্বিতীয় লাইনে আবার ফিরে আসে গানের প্রকৃত স্কেলে। এই মিশ্রণটিকে অসাধারণ বললেও হয়তো কম বলা হয়। কিশোর-পঞ্চম মিলে সেটি করে দেখিয়েছেন। সময় করে আরও একবার শুনে দেখবেন। জলের মতো পরিস্কার হয়ে যাবে আমি ঠিক কি বলতে চাইছি। এই একই ছবির আরও একটি গান ‘জানে জা ঢুন্ডটা ফির রাহা’তে অব্লিগেটোর একটি অসাধারণ প্রয়োগ দেখা যায়। সেটি কিশোর এবং আশার কণ্ঠকে ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে। শুনে দেখবেন, গানের একদম শুরুতে, যখন ‘জানে জা ঢুন্ডটা ফির রাহা’ লাইনটি দ্বিতীয়বারের জন্য গাইছেন তখন নেপথ্যে আশা নিজের কণ্ঠ দিয়ে অব্লিগেটোটি করছেন। আবার পরের দিকে যখন আশা একই লাইনটি গাইছেন তখন কিশোর কণ্ঠে আমরা শুনতে পাই একই অব্লিগেটো। এই ভাবনাগুলি সঠিক জায়গায় প্রয়োগের ক্ষমতা এবং আত্মবিশ্বাসের জন্যই হয়তো পঞ্চম আজও একইরকম ভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
এরপর আরেকটি ছবি ‘মেরে জীবন সাথী’তে আবারও নতুন করে সামনে আসে কিশোর-পঞ্চম জুটির স্বার্থকতা। ‘চলা যাতা হু’, ‘দিওয়ানা লেকে আয়া হ্যায় দিল কা তারানা’ অথবা ‘ও মেরে দিল কে চেয়ন’। প্রতিটি গান থেকে আজও আমাদের কিছু না কিছু শেখার বাকি থেকে যায়। উপরোক্ত প্রথম গানটির ক্ষেত্রে সার্বিকভাবে সঙ্গীতের মূর্ছনা এবং তার সঙ্গে কিশোরের পরিবেশনা, ইয়র্ডলিং, দ্বিতীয় গানটির প্যোথোস এবং শেষ গানটির ক্ষেত্রে কিশোরের প্রেমিক কণ্ঠের যে উন্মাদনা—এই সবের আড়ালে যিনি লুকিয়ে আছেন, তিনি রাহুল দেব বর্মন।—চলবে
এই ছবির ‘ইয়ে জওয়ানি হ্যায় দিওয়ানি’ গানটি সেই যুগে যে আদেও তৈরি হতে পারে সেটি পঞ্চম প্রমাণ করেছেন। গানের মুখরা একটি স্কেলে আরম্ভ হয়। কিন্তু দুটি অন্তরাই আরম্ভ হয় অন্য আরেকটি স্কেলে। কিন্তু দ্বিতীয় লাইনে আবার ফিরে আসে গানের প্রকৃত স্কেলে। এই মিশ্রণটিকে অসাধারণ বললেও হয়তো কম বলা হয়। কিশোর-পঞ্চম মিলে সেটি করে দেখিয়েছেন। সময় করে আরও একবার শুনে দেখবেন। জলের মতো পরিস্কার হয়ে যাবে আমি ঠিক কি বলতে চাইছি। এই একই ছবির আরও একটি গান ‘জানে জা ঢুন্ডটা ফির রাহা’তে অব্লিগেটোর একটি অসাধারণ প্রয়োগ দেখা যায়। সেটি কিশোর এবং আশার কণ্ঠকে ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে। শুনে দেখবেন, গানের একদম শুরুতে, যখন ‘জানে জা ঢুন্ডটা ফির রাহা’ লাইনটি দ্বিতীয়বারের জন্য গাইছেন তখন নেপথ্যে আশা নিজের কণ্ঠ দিয়ে অব্লিগেটোটি করছেন। আবার পরের দিকে যখন আশা একই লাইনটি গাইছেন তখন কিশোর কণ্ঠে আমরা শুনতে পাই একই অব্লিগেটো। এই ভাবনাগুলি সঠিক জায়গায় প্রয়োগের ক্ষমতা এবং আত্মবিশ্বাসের জন্যই হয়তো পঞ্চম আজও একইরকম ভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
এরপর আরেকটি ছবি ‘মেরে জীবন সাথী’তে আবারও নতুন করে সামনে আসে কিশোর-পঞ্চম জুটির স্বার্থকতা। ‘চলা যাতা হু’, ‘দিওয়ানা লেকে আয়া হ্যায় দিল কা তারানা’ অথবা ‘ও মেরে দিল কে চেয়ন’। প্রতিটি গান থেকে আজও আমাদের কিছু না কিছু শেখার বাকি থেকে যায়। উপরোক্ত প্রথম গানটির ক্ষেত্রে সার্বিকভাবে সঙ্গীতের মূর্ছনা এবং তার সঙ্গে কিশোরের পরিবেশনা, ইয়র্ডলিং, দ্বিতীয় গানটির প্যোথোস এবং শেষ গানটির ক্ষেত্রে কিশোরের প্রেমিক কণ্ঠের যে উন্মাদনা—এই সবের আড়ালে যিনি লুকিয়ে আছেন, তিনি রাহুল দেব বর্মন।—চলবে
* পঞ্চমে মেলোডি (R D Burman): সৌম্য ভৌমিক, (Shoummo Bhoumik) সঙ্গীত শিল্পী।