রবিবার ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪


স্বামী বিবেকানন্দ।

শুঁড়ির দোকানে অনেক মদ থাকে কিন্তু মানুষ কেউ এক পো, কেউ আধ সের, মদ খেয়ে মেতে যায়। অখণ্ড সচিদানন্দও অপার আনন্দের সাগর। কিন্তু ভক্তেরা অল্পাধিক পরিমাণে তাকে উপভোগ করে তৃপ্ত হন। চিনির পর্বতের মতো ঈশ্বর নিত্য বিরাজমান, সাধু, ভক্ত, পিপীলিকা শ্রেণি রূপ যথাশক্তি এক এক দানা নিয়ে ভরপুর হয়ে যায়। শ্রীরামকৃষ্ণ বলেছেন, “শুকদেব, নারদাদি মহাশক্তিমানেরা ডেঁও পিঁপড়ের ন্যায় এক একটি চিনির দানা লইয়ায় ভরপুর হইয়াছেন, অপর সাধারণ এক একটি ছোট দানা লইয়াই ভরপুর হইয়াছেন কিন্তু সেই অসীম অনন্ত অচলের সম্পূর্ণ ইয়ত্তা করিতে পারেন কে এমন শক্তিমান আছেন।”

নারকেলের গাছে বেল খসে যায় কিন্তু একটু দাগ থাকে, শরীর থাকতে ‘আমি’ সেই রূপ একেবারে যায় না, একটু না একটু দাগ থাকে। কিন্তু এই যৎসামান্য আমি জীবনমুক্ত পুরুষকে পুনরায় সংসারে আবদ্ধ করতে পারে না।
“দুর্লভ মানব জন্ম পেয়ে যে ঈশ্বরলাভ করবার চেষ্টা করে না, তার জন্মই বৃথা জানবে।”
‘বিবেকচূড়ামণি’ তে আছে, মানব শরীর, মহাপুরুষ সংসর্গ ও মুক্তির ইচ্ছা, এই তিন দূর্লভ জিনিস। ভক্তির সাধন যেখান থেকে বা যে কোনও সময়ই শুরু করা যায়। শ্রীরামকৃষ্ণ অবতারে সাধনের ভাব ও ধারা অনেক সহজ করে দিয়েছেন। তিনি বলছেন, “যাকে দশজনে জানে, মানে, গণে, ভগবানের বিভূতি অধিক পরিমাণে আছে বুঝতে হবে।”

মলয় চন্দনের হাওয়া বইছে এই সুযোগ পাল তুলে দেওয়ার। সাধন শূন্যরাও তাঁকে লাভ করে ধন্য হয়ে যাবে। তাঁর উপর নির্ভর করে পড়ে থাকা। তিনি অন্তরের অন্ত স্থলে রয়েছেন। অহংকার শূন্য হলেই তিনি প্রকাশিত হবেন।

“কোন এক সময়ে নারদের মনে অভিমান হয়েছিল যে, বুঝি তার মতো ভক্ত আর নেই। ভগবান তা বুঝতে পেরে বললেন, অমুক স্থানে আমার একটি ভক্ত আছে তাকে দেখে এসো। নারদ সে স্থানে গিয়ে দেখে, যে একটি চাষা লোক সকালবেলা উঠে একবার হরিনাম করে লাঙ্গল নিয়ে মাঠে চলে গেল, তারপর সমস্ত দিন আপন কাজকর্ম করে রাত্রি কালে হরিনাম করে শুলো।
আরও পড়ুন:

পর্ব-১৮: ‘দক্ষিণেশ্বরে রাতে কে বাঁশি বাজাতো শুনতে শুনতে মন ব্যাকুল হয়ে উঠতো’

ভবিষ্যবাণী: ভিন দেশে পাড়ি দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন? জেনে নিন গ্রহের কোন অবস্থানে আপনার বিদেশ যাত্রা পাকা হতে পারে

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৬২: প্রথম রবীন্দ্রজীবনী

কে গো অন্তরতর সে…

নারদ বললেন, ‘ভালো রে ভালো। একে ঠাকুর ভক্ত বললেন কি জন্য! ভক্তের লক্ষণ তো এতে কিছু দেখলাম না।’ তারপর ঠাকুরের কাছে গিয়ে নারদ আপন ভাব বললেন। ঠাকুর বললেন, ‘নারদ তুমি এই তেলের বাটিটি হাতে করে গোলক ভ্রমণ করে এসো, কিন্তু দেখো সাবধান যেন এক বিন্দু তেল না পড়ে।’ ঠাকুরের কথা মতো তেল পূর্ণ বাটিটি হাতে করে গোলক ভ্রমণ করে এলেন। ঠাকুর বললেন, ‘নারদ গোলক ভ্রমণ করতে করতে তুমি আমায় কতবার স্মরণ করছিলে?’ নারদ বললেন, ‘ঠাকুর আপনাকে একবারও স্মরণ করতে পারিনি, স্মরণ করব কি, আপনি যে বাটিতে কানায় কানায় তেল ভরে দিয়েছিলেন, একটু চলতে গেলেই পড়ে যায়। কাজে ভয়ে ভয়ে আমাকে তেলের প্রতি দৃষ্টি রাখতে হয়েছিল, আপনাকে আর স্মরণ করতে পারিনি।’ ঠাকুর বললেন, ”তুমি আমার পরম ভক্ত হয়ে আমাকে ভুলে গেল, আর সে আমার কত বড় ভক্ত বল দেখি যে প্রকাণ্ড সংসারের ভার মাথায় নিয়েও দিনের মধ্যে তবু দুইবার আমাকে স্মরণ করছিল।”
আরও পড়ুন:

বৈষম্যের বিরোধ-জবানি, পর্ব-১৮: গৃহ-সহায়িকার পাঁচালি এবং আমাদের ভদ্র সমাজ

ডায়াবিটিসে ভুগছেন? সকালের জলখাবারে কী ধরনের খাবার খেতে পারেন? রইল ডক্তারবাবুর জরুরি পরামর্শ

চেনা দেশ অচেনা পথ, পর্ব-১৮: কোষার ভান্ডার ছররি থেকে কুঠাঘাট হয়ে কুরদার

নারদ বুঝলেন তার অভিমান করা উচিত হয়নি। ভক্ত অভিমান অহংশূন্য হবে। ভগবানের কাছে ভক্তের পুজো আরতি ভজন আর যা কিছু, আন্তরিক মনই বেশি গুরুত্ব। কত সময় বা কত ঐশ্বর্যপূর্ণভাবে তার পুজোপাট করছে তা নয়। যিনি আন্তরিকভাবে একবারও তাকে ডাকেন তা তিনি শুনতে পান। ভগবান ভক্তবৎসল। নিঃস্বার্থ প্রেম ভালো বোঝেন তিনি। শ্রী শ্রীমা বলছেন, “ভক্তি করে ডাকো সকলি পাবে।” তিনি প্রতিজ্ঞা বদ্ধ। তিনি কর্তব্য পালন করেন।
আরও পড়ুন:

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৩৪: স্বপ্ন ও দুঃস্বপ্নের ‘রাত-ভোর’

পঞ্চমে মেলোডি, পর্ব-১০: কিশোর কণ্ঠের উপর যেন এক অলিখিত দাবি ছিল পঞ্চমের

ইংলিশ টিংলিশ: LOL, ASAP, ATM, etc বা e. g.-এর পুরো কথাগুলো কী জানেন?

স্বামীজির কথায়, “ভক্তি বা পুজো বা কোনও না কোনও প্রকার অনুরক্তি মানুষের সর্বাপেক্ষা সহজ সুখকর এবং স্বাভাবিক পথ। এ বিশ্বের স্বাভাবিক অবস্থা হইতেছে আকর্ষণ। উহা কিন্তু নিশ্চিতভাবে একটি চূড়ান্ত বিচ্ছেদে পরিণত হয়। তাহা সত্তবেও প্রেম মানব হৃদয়ে মিলনের একটি সহজে যা তো প্রবৃত্তি। প্রেম নিজের দুঃখের একটি মহা কারণ হইলেও যোগ্য বিষয়ের প্রতি নিয়োজিত হইলে মুক্তি আনয়ন করে। ভক্তির লক্ষ্য ঈশ্বর। প্রেমিক ও প্রেমাস্পদ বিনা প্রেম থাকিতে পারে না। প্রথমে এমন একজন প্রেমাস্পদ থাকা চাই যিনি আমাদের প্রেমের প্রতিদান দিতে পারেন। সুতরাং ভক্তের ভগবানকে এক অর্থে মানবীয় ভগবান হইতেই হইবে। তিনি অবশ্যই প্রেমময় হইবেন। এইরূপ ভগবান আছেন বা নাই এই প্রশ্ন ছাড়িয়া দিলেও ইহা সত্য যে যাহাদের হৃদয়ে প্রেম আছে তাহাদের নিকট এই নির্গুণ ব্রহ্মই প্রেমময় ঈশ্বর বা সগুণ ব্রহ্ম রূপে আবির্ভূত হন।”

ভক্তির রসে স্নান করে ভক্ত যখন নিতান্ত তন্ময় হয়ে যায়, ভগবান মানব শরীর ধারণ করে অবতীর্ণ হন সে ভক্তি রস আস্বাদন করার জন্য।
* অনন্ত এক পথ পরিক্রমা (Ananta Ek Patha Parikrama) : স্বামী তত্ত্বাতীতানন্দ (Swami Tattwatitananda), সম্পাদক, রামকৃষ্ণ মিশন, ফিজি (Fiji)।

Skip to content