ছবি: প্রতীকী। সংগৃহীত।
এই নারকেল গাছের উৎপত্তি নিয়ে একটি পৌরাণিক কাহিনি রয়েছে যার সামান্য বিবরণ পাঠকদের শোনাবো। সূর্যবংশের এক প্রজাদরদী রাজা ছিলেন সত্যব্রত। তাঁর একটাই আকাঙ্ক্ষা ছিল যে, তিনি মৃত্যুর পূর্বে এই নশ্বর দেহ নিয়ে একবার স্বর্গে আরোহন করবেন। মুনিবর বিশ্বামিত্র ছিলেন সত্যব্রত এর খুবই ঘনিষ্ঠ। তাই মুনিবর বিশ্বামিত্র সত্যব্রত এর মনোবাঞ্ছাপূরণে সাহায্য করলেন। একসময় সত্যব্রতর দেহ মেঘে রাজ্য ভেদ করে পৃথিবী পেরিয়ে স্বর্গলোকের দরজায় গিয়ে পৌঁছল। কিন্তু দেবরাজ ইন্দ্র ভীষণভাবে রুষ্ট হয়ে গিয়ে এক ধাক্কায় রাজাকে নিচের দিকে ঠেলে দিলেন। ফলস্বরূপ নীচের দিকে সত্যব্রত পড়তে লাগলেন। সেই সময় ভীত রাজা মুনিবরকে স্মরণ করতে থাকলেন। তখন বিশ্বামিত্র মুনি রাজাকে আকাশে ভেসে থাকার বরদান করলেন এবং নীচ থেকে লম্বা একটি স্তম্ভ দাঁড় করিয়ে দিলেন। এই ভাবেই সেই স্তম্ভ নারকেল গাছে এবং সত্যব্রত-র মস্তক নারকেলে পরিণত হল। ত্রিশঙ্কু হয়ে যুগ যুগ ধরে তাই ঝুলে আছে নারকেল ফল।
পশ্চিম ভারতের সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলের মৎস্যজীবীরা সমুদ্রের দেবতাকে তুষ্ট করার জন্য নারকেল উৎসর্গ করেন। শ্রাবণ মাসের পূর্ণিমার মহারাষ্ট্রের মৎস্যজীবীরা, “নারকেল পূর্ণিমা উৎসব” পালন করেন। ওই দিন একটি নৌকাকে সুন্দর করে সাজিয়ে সমুদ্রে নিয়ে যাওয়া হয় এবং নারকেল উৎসর্গ করে এই আশা রাখা হয় যে, সারা বছর তাদের জালে যেন প্রচুর মাছ ধরা দেয়।
উত্তর ভারতে যখন কোনও নারী অন্তঃসত্ত্বা হতে চান, তখন তিনি মন্দিরে গিয়ে মন্দিরের পূজারীর হাতে থেকে একখানা নারকেল গ্রহণ করে, আসন্ন সন্তানের মঙ্গলার্থে। দক্ষিণ ভারতীয়রা বিয়ের রাত্রে অথবা নবরাত্রির সময় নারকেল বিতরণকে পুণ্য কাজ বলে মনে করেন।
গুজরাতে বিয়ের আচার অনুষ্ঠানের সময় কনে তার স্বামীকে একটি নারকেল প্রদান করে, যেই নারকেলটি স্বামী সারা জীবন ধরে নিজের কাছে একটি মূল্যবান স্মৃতিস্বরূপ সংরক্ষণ করেন। নারকেল হল শুভ প্রতীক। তাই এর মাধ্যমে নব দম্পতি নববিবাহিত জীবনের উর্বরতা কামনা করেন।
পূর্ব এবং উত্তর ভারতের ধর্মীয় আচরণে ডাব অর্থাৎ কচি নারকেলকে সৌভাগ্য ও ঐশ্বর্যের প্রতীক হিসাবে মানা হয়। একটি ঘটকে জলপূর্ণ করে বা কখনও ধান পূর্ণ করে তার মাথায় একটি আম্রপল্লব রাখা হয় এবং আম্রপল্লবের ওপর একটি শীর্ষ যুক্ত ডাব রাখার প্রথা প্রচলিত আছে। একে বলা হয় পূর্ণকুন্ড যা হলো দেবী লক্ষ্মীর প্রতিরূপ।
মহীশূরের লোকজন নারকেল বৃক্ষকে পারিবারিক দেবতা বলে গণ্য করেন এবং তার পুজো করেন। মহারাষ্ট্রের কোঙ্কন অঞ্চলের মানুষজন নারকেল বৃক্ষকে দেবতার রূপে সংরক্ষণ করেন, পুজো করেন। কারণটা হল তাঁদের পূর্বপুরুষকে স্মরণে রাখার জন্য। এই ভাবেই সমগ্র ভারতবর্ষের ভিন্ন ভিন্ন লোকসংস্কৃতিতে নারকেল গাছকে দেবতা স্থানে উন্নীত করা হয়েছে।
রোজ খাওয়ার পরে পান খান? অনেক ওষুধ কেনার খরচ বেঁচে যেতে পারে
প্রসঙ্গ স্বাস্থ্য বিজ্ঞান: উদ্বেগের সমস্যায় ভুগছেন? এতে আপনার পরিপাকতন্ত্রের ক্ষতি হচ্ছে না তো?
এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-১৭: গরমে পান্তা ভাত কি সত্যিই শরীর ঠান্ডা করে?
এক নজরে
কী কী উপাদানে ভরপুর?
প্রতি ১০০ গ্রাম নারকেলে উপস্থিত কার্বোহাইড্রেট পরিমাণ ১৫ গ্রাম, প্রোটিন আছে ৩.৫ গ্রাম, ফ্যাট আছে ৩৩ গ্রাম, সোডিয়াম আছে ২০ মিলিগ্রাম এবং পটাশিয়াম আছে ৩৫৬ মিলিগ্রাম। এছাড়াও রয়েছে ক্যালশিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেশিয়াম, ভিটামিন-সি, ভিটামিন-বি৬ এবং ভিটামিন বি১২। ১০০ গ্রাম নারকেলে মোট শক্তির পরিমাণ ৩৫৪ ক্যালরি।
পর্ব-৮: সলিল চৌধুরীর সুরারোপিত গান খুব মনোযোগ দিয়ে শুনতেন পঞ্চম
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৬০: রাতদুপুরে বিপন্নকে বাঁচাতে হাটখোলার পাট আড়তের টাকা এসেছিল জোড়াসাঁকোয়
বৈষম্যের বিরোধ-জবানি, পর্ব-১৭: অর্থনীতির প্রান্তিকতায় নারী এবং তার প্রাতিষ্ঠানিক রূপ
চিকিৎসাশাস্ত্রে এর ব্যবহার
প্রোস্টেটের সমস্যায়
আমাশয় রোগ প্রতিরোধে
হাড় ও দাঁতের সমস্যায়
হৃদপিণ্ড সুস্থ রাখতে
ক্যানসার প্রতিরোধে
লিভার সুস্থ রাখতে
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে
রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-১১: নাথানিয়্যাল গোবিন্দ সোরেনের গল্প
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-১২: সে এক ‘বউঠাকুরাণীর হাট’
দেখব এবার জগৎটাকে, পর্ব-১০: জলপথে আমাজন অরণ্যের গহনে
প্রস্রাবের সমস্যা নিরাময়
ত্বক এবং চুল সুন্দর রাখতে
হজমের সহায়ক হিসাবে
কচি ডাবের জলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন মিনারেল এবং অ্যামাইনো অ্যাসিড থাকায় এটি হজম ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। নারকেল রোগ প্রতিরোধেও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা গ্রহণ করে।
নারকেলের জল থেকে শাঁস সবই বাঙালির প্রিয়। তাইতো ভোজনবিলাসী বাঙালি ঝাল থেকে মিষ্টি সব রকমের রান্নাতেই নারকেল ব্যবহার করে আসছেন সেই প্রাচীনকাল থেকে। ডাব চিংড়ি, নারকেল কুরো দিয়ে মোচার ঘন্ট, ছোলার ডাল বা চালকুমড়োর পদ, চিংড়ি মাছের মালাইকারি, নারকেল পোস্ত কৌড়া যেমন ছোট বড় সব বাঙালির জিভে জল আনে তেমনিই নারকেলের রকমারির মিষ্টির পদ যেমন পিঠেপুলি, নাড়ু, নারকেলের সন্দেশ, নারকেল কুরো সহযোগে চিঁড়ে ভাজা রয়েছে বাঙালির খাদ্যতালিকার অন্তর্গত।
আর শুধু বাঙালির কথাই বা কেন বলবো? বহু প্রদেশের এবং দেশের লোকই নারকেলকে নিজেদের প্রতিদিনের খাবারে জায়গা দিয়েছে। তাইতো প্রতিবছর ২ সেপ্টেম্বর দিনটি উদযাপন করেন এশিয়ান প্যাসিফিক কোকোনাট কমিউনিটি সংস্থার লোকজনরা। ডাব ও নারকেলের ইতিকথা আজ এখানেই শেষ করলাম, বাকি কথা পরে হবে।