বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর, ২০২৪


ছবি: প্রতীকী।

পরীক্ষার আগে চিন্তায় পেট গুড়গুড় করছে অথবা অফিসের কোনও গুরুত্বপূর্ণ মিটিংয়ের আগে পেটের ভেতর কি রকম একটা হচ্ছে। এই অভিজ্ঞতা বোধহয় আমাদের সকলেরই আছে। কারণ, মানসিক উদ্বেগ বা অতিরিক্ত চাপ যাকে আমরা স্ট্রেস বলে থাকি যার সঙ্গে আমাদের পরিপাকতন্ত্র ওতপ্রোতভাবে জড়িত। মস্তিষ্ক এবং পরিপাকতন্ত্র বা ডাইজেস্টিভ ট্র্যাক্ট একে অপরের সঙ্গে সংযুক্ত এবং তারা সব সময় একে অপরের সঙ্গে কথোপকথন চালিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে, আমাদের শরীরের অন্যান্য সব অংশের তুলনায় সবচেয়ে বেশি স্নায়ু বা নিউরন ডাইজেস্টিভ ট্র্যাক বা পরিপাকতন্ত্রে অবস্থান করে।

পরিপাকতন্ত্র মস্তিষ্কের কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের দ্বারা পরিচালিত হয়। এছাড়া পরিপাকতন্ত্রের নিজস্ব একটি স্নায়ুতন্ত্র আছে যা, পরিপাকতন্ত্রের বা গ্যাস্ট্রোইনটেস্টটিনাল সিস্টেমের বিভিন্ন কোষগুলিকে পরিচালনা করে। আর এই স্নায়ু কোষগুলি এতটাই সক্রিয় বলে পরিপাকতন্ত্রকে দ্বিতীয় মস্তিষ্ক বা সেকেন্ড ব্রেনও বলা হয়। প্রায় ১০ কোটি নার্ভ বা স্নায়ু আমাদের সমগ্র পরিপাকতন্ত্র বা গ্যাস্টরিনটেস্টিনাল ট্রাক্ট প্র্যাক্টের বিভিন্ন কার্যকলাপ, যেমন খাওয়ার খাওয়া থেকে তা পাচিত হয়ে দেহের বিভিন্ন কোষে পৌঁছনো এবং বর্জ্য পদার্থকে দেহ থেকে বার করে দেওয়া সমস্তটাই এই স্নায়ুর দ্বারা পরিচালিত হয়। আর যেকোনও ধরনের উদ্বেগ বা স্ট্রেস এই কার্যকলাপকে বিঘ্নিত করে।
 

ডাইজেস্টিভ সিস্টেমের উপর অতিরিক্ত উদ্বেগের প্রভাব

স্ট্রেস আমাদের শরীরের এমন কিছু শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তন ঘটায় যার ফলে হার্ট রেট, নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস, রক্তচাপ ইত্যাদি অনেকটা বেড়ে যায়। স্ট্রেসের ফলে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের ‘ফাইট অর ফ্লাইট রেসপন্স’ সক্রিয় হয়ে ওঠে যার ফলে দেহের পরিপাকতন্ত্র আক্রান্ত হয় এবং দেহে পাচন সংক্রান্ত নানান রকম সমস্যা আসতে শুরু করে। যেমন এসোফেগাস সংকুচিত হয়, পাকস্থলীতে অ্যাসিডের ক্ষরণ বেড়ে যায় যা, হজমে বাধা সৃষ্টি করে, বমি বমি ভাব, এমনকি ডায়েরিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যাও দেখা যায়। স্ট্রেসের মাত্রা অতিরিক্ত হলে পাকস্থলীতে রক্ত সরবরাহ বাধাপ্রাপ্ত হয়, যার ফলে অক্সিজেন পরিবহণ কমে যাওয়ার দরুণ পাকস্থলীতে নানা রকম ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন বা ক্র্যা ম্পের মতো সমস্যা সৃষ্টি হয়। এর ফলে ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম, ইনফ্লামেটরি বাওয়েল ডিজিজ, পেপটিক আলসার, গ্যাস্ট্রো ইসোফিজিয়াল রিফ্লাক্স (GERD) এই ধরনের নানার সমস্যা আসতে থাকে।

আরও পড়ুন:

ডায়াবিটিস এবং উচ্চ রক্তচাপের কারণে কিডনির ক্ষতি হচ্ছে? কী ভাবে সমস্যা এড়াবেন

বিধানে বেদ-আয়ুর্বেদ: প্রচণ্ড গরমে নাজেহাল? ঘরে বসেই আয়ুর্বেদ অনুসারে ভালো থাকুন

ইংলিশ টিংলিশ: Types of Sentences কাকে বলে জান কি?

অতিরিক্ত স্ট্রেসের ফলে পাকস্থলী থেকে খাবার ক্ষুদ্রান্ত বা স্মল ইনটেস্টটাইনে পৌঁছতে যেমন দেরি হয়, তেমনি স্মল ইনটেস্টটাইনের মধ্যে দিয়ে অতি দ্রুত খাবার পরিবাহিত হয়ে যায় যার। ফলে খাবার সঠিকভাবে পাচিত হতে পারে না। আর তাই অতিরিক্ত মানসিক বা শারীরিক চাপের মধ্যে থাকলে আমাদের হজমে এবং পেটের নানান রকম সমস্যা দেখা দিতে থাকে। যদিও স্ট্রেস প্রত্যক্ষভাবে আলসারের মতো সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে না। কিন্তু এই ধরনের সমস্যা যদি থাকে তাহলে সেগুলি স্ট্রেসের ফলে বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
আরও পড়ুন:

এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-১৭: গরমে পান্তা ভাত কি সত্যিই শরীর ঠান্ডা করে?

পঞ্চমে মেলোডি, পর্ব-৮: সলিল চৌধুরীর সুরারোপিত গান খুব মনোযোগ দিয়ে শুনতেন পঞ্চম

চেনা দেশ অচেনা পথ, পর্ব-১৬: রতনপুর মহামায়া দর্শন

 

কীভাবে উদ্বেগ নিয়ন্ত্রণ করবেন?

সাধারণত আমরা দু ধরনের মানুষ দেখতে পাই একপক্ষ একদল মানুষ কোন কিছুতেই খুব একটা উদ্বিগ্ন হন না আর একদল মানুষ সামান্য কিছুতেই ভীষণভাবে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন এটা মনে রাখা দরকার স্ট্রেস কিন্তু অল্পমাত্রায় ইতিবাচক কাজ করে করে যেমন যেমন পরীক্ষায় ভালো ফল করতে হবে বলেই কিন্তু পড়াশোনাটা ঠিকমতো করা হয় বা যেকোনো কাজের সফলতা অর্জন করার জন্যই কিন্তু আমরা আমাদের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করি । সমস্যা তখনই দেখা যায় যখন স্ট্রেস আমাদের নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকে না। স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা প্রত্যেক মানুষের ক্ষেত্রেই আলাদা কিন্তু অতিরিক্ত স্ট্রেস সবার শরীরেই কিছু না কিছু প্রভাব ফেলে। তাই প্রত্যেককে নিজের মতো করে স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণ করার উপায় বের করে নিতে হবে। সহজ কিছু পন্থা অবলম্বন করলেই স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। যেমন প্রতিদিন হালকা কিছু শারীরিক ব্যায়াম করা, মেডিটেশন বা ধ্যান করা, সারাদিনের মধ্যে কিছুটা সময় নিজের যেটা করতে ভালো লাগে যেমন গান শোনা, গল্পের বই পড়া, ছবি আঁকা, বাগান করা অর্থাৎ যেটাই আপনার ভালো লাগুক না কেন, সে রকম কিছুর মধ্যে থাকলে অনেকটাই স্ট্রেস কম থাকে। সবাই যা করছে আমাকেও তাই করতে হবে বা সবার যা আছে আমারও সেটাই থাকতে হবে। অর্থাৎ অন্যের সঙ্গে তুলনায় না গিয়ে নিজের ক্ষমতা অনুযায়ী নিজের সেরাটা দিয়ে কাজ করলে স্ট্রেস অনেক কম হয়।

আরও পড়ুন:

পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-২: এখানে দেশের অভ্যন্তরীণ সুরক্ষা, বাণিজ্যনীতি এবং বৈদেশিক নীতির চর্চা করা হয়েছে

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৬০: রাতদুপুরে বিপন্নকে বাঁচাতে হাটখোলার পাট আড়তের টাকা এসেছিল জোড়াসাঁকোয়

বাঙালির মৎস্যপুরাণ, পর্ব-৫২: প্রাকৃতিক উপায়ে মাছের ফলন বাড়াতে পুকুরে উদ্ভিদকণা ও প্রাণীকণার ভারসাম্য ঠিক রাখা জরুরি

খাদ্য তালিকায় সঠিক খাবার রাখা এবং খাবার সময় সঠিক পদ্ধতিতে অবলম্বন করে খাওয়া
কিছু কিছু খাবার আছে যেগুলো স্ট্রেসের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে। আবার এমনও কিছু খাবার আছে যা স্ট্রেস কমাতেও সাহায্য করে। সাধারণত তেলেভাজা এবং অতিরিক্ত মিষ্টি জাতীয় খাবার এবং যেকোনও ধরনের প্রসেসড ফুড স্ট্রেস বা উদ্বেগের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় আর সবুজ শাকসব্জি ফল স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে। তাড়াহুড়ো করে কখনও খাওয়া ঠিক নয়। সময় নিয়ে ধীরে ধীরে ভালো করে খাবার চিবিয়ে খাওয়া উচিত। একবারে অনেকটা খাবার খেয়ে পেট ভর্তি না করে অল্প অল্প করে দিনে ৪-৫ বার খাওয়া উচিত। রাতে শুতে যাওয়ার অন্তত ২ ঘন্টা আগে খাবার খাওয়া দরকার। এবং প্রচুর পরিমাণ জল সারাদিন খেতে হবে। এই ছোট ছোট বিষয়গুলি মাথায় রাখলে হজমের সমস্যা অনেক কম থাকে।
* প্রসঙ্গ স্বাস্থ্য বিজ্ঞান (health-science): ড. দোলন দাস, (Dolan Das) শারীরবিদ্যার অধ্যাপিকা, কল্যাণী মহাবিদ্যালয়।

Skip to content