শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪


ছবি: সংগৃহীত।

 

প্রাক্‌কথন

পঞ্চতন্ত্রের “কথামুখম্‌” বা ভূমিকায় এই পঞ্চতন্ত্র গ্রন্থটির রচনার পিছনের গল্প-কথা তো আমরা শুনলাম। বুঝতেও পারলাম যে রাজার ছেলেদের রাজনীতি শেখানোর জন্যই এই গ্রন্থটি রচনা করা হয়েছে। তবে এই গ্রন্থটি আগাগোড়া পড়লে সহজেই যে আপনি রাজনীতি শাস্ত্রের বিদগ্ধ একজন পণ্ডিত হয়ে উঠতে পারবেন— এমনটাও কিন্তু নয়। আমার কথায় আস্থা রেখে পঞ্চতন্ত্র পড়ে সহজেই রাজনীতি-কূটনীতি শিখে নেওয়ার যে পরিকল্পনাটি আপনি করেছিলেন, সে উৎসাহে আপনার কিছুটা ভাঁটা পড়লেও, তার থেকে উদ্ধার পাওয়ার জন্য একটা সূত্রের সন্ধান আপনাকে দিতে পারি। কিন্তু তার আগে বিষয়টিকে আরেকটু পরিষ্কার করে বুঝে নেওয়া আবশ্যক। পঞ্চতন্ত্রের “কথামুখম্‌” বা ভূমিকায় এই পঞ্চতন্ত্র গ্রন্থটির রচনার পিছনের গল্প-কথা তো আমরা শুনলাম। বুঝতেও পারলাম যে রাজার ছেলেদের রাজনীতি শেখানোর জন্যই এই গ্রন্থটি রচনা করা হয়েছে। তবে এই গ্রন্থটি আগাগোড়া পড়লে সহজেই আপনি রাজনীতি শাস্ত্রের বিদগ্ধ একজন পণ্ডিত হয়ে উঠতে পারবেন।

প্রথমেই আপনাকে স্মরণ করতে বলবো প্রাচীন কালের ভারতীয় শিক্ষা-ব্যবস্থার ধারাটিকে। সে আমলে জ্ঞানের চর্চা হতো গুরুশিষ্য পরম্পরায়। গুরু তাঁর অন্তেবাসী শিষ্যকে প্রত্যক্ষ ভাবে বুঝিয়ে দিতেন যে কোনও পাঠ্যগ্রন্থের গূঢ়তত্ত্বগুলিকে। সেটা উপনিষদের ব্রহ্মতত্ত্ব থেকে শুরু করে ধনুর্বিদ্যা—যে কোনও বিষয়ের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হতে পারে। শিষ্য সরাসরি গুরুর সামনে বসে পাঠ নিতেন, প্রশ্ন করতেন, গুরুর সেবাও করতেন এবং গুরু নিজেকে উজাড় করে তাঁর আগ্রহী শিষ্যকে বুঝিয়ে দিতেন গ্রন্থের সকল মর্মার্থ, যা তিনি জীবন দিয়ে, পরম্পরা দিয়ে উপলব্ধি করেছেন। হতে পারে তার সবটা হয়তো গ্রন্থে লেখাও থাকে না, থাকে শুধু অভিজ্ঞতায়।

সোজা বাংলায় আজকের দিনে আমরা যাকে “গুরুমুখী বিদ্যা” বলি, সেই আমলের বিদ্যাচর্চাটাও ছিল ঠিক তেমনই। তাই, গুরু পরম্পরায় পাওয়া এমন বহু কূটনৈতিক তত্ত্ব, যা এই পঞ্চতন্ত্রের কাহিনিগুলোর মধ্যে হয়তো সূক্ষ্মভাবে আছে, সেগুলি আপনি মুদ্রিত “পঞ্চতন্ত্র” গ্রন্থটির একটি বাংলা কিংবা ইংরেজি অনুবাদ কিনে নিয়ে একা একা পড়তে শুরু করলেও, তার সূক্ষ্ম নীতি-অনীতিগুলি অনেক ক্ষেত্রেই আপনার চোখ এড়িয়েও যেতে পারে। অনেকক্ষেত্রেই, গল্পের মর্মার্থ, যেটি হয়তো গল্পে স্পষ্টভাবে বলা হয়নি, সেটা আপনি আপনার পরিণত বুদ্ধি নিয়ে হয়তো বুঝতে পারবেন, আবার অনেক ক্ষেত্রে পরম্পরালব্ধ অর্থশাস্ত্রের জ্ঞানটি না থাকলে আপনি খেয়াল নাও করতে পারেন।

তাই এই পঞ্চতন্ত্র গ্রন্থটি গল্পের আকারে লিখিত হলেও সেখানে এমন বহু নীতির কথা রয়েছে, যেগুলি হয়তো অনেকটাই অনুমানগম্য কিংবা সযত্নে লুক্কায়িত রহস্যের আড়ালে, যা বিষ্ণুশর্মার মতো “ছাত্রসংসদি লব্ধকীর্তিঃ” গুরুরা, সে আমলে, মৌখিকভাবেই ব্যাখ্যা করতেন তাঁদের শিষ্যদের কাছে। আমরা শুধু গ্রন্থটি পড়ে, আকারে-ইঙ্গিতে থাকা সেইসব গূঢ়তত্ত্বগুলোর সামান্য স্পর্শগুলি হয়তো পেতে সমর্থ হবো কখনও কখনও।

অনেকক্ষেত্রে এক-একটি কাহিনির আড়ালে লুকিয়ে থাকা এমন এমন কূটনৈতিক সব তত্ত্ব আমরা অনুধাবন করবো, যেটি হয়তো আদৌ কাহিনিটির মূল বিষয় নয়। আবার অনেকক্ষেত্রে খেয়াল করলে, আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন যে, বেশ কিছু কাহিনিতে লিখিত নীতিগুলির তুলনায়, অনুমিত কূটনীতিটাই হয়তো অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সোজা কথায় বললে বলতে হয় যে এই কাহিনিগুলিতে যে নীতিগুলি আমরা পেয়ে থাকি, সেগুলি শুধু সরলার্থে বুঝলেই চলবে না, তাকে ব্যঙ্গার্থেও বুঝে নিতে হবে। অর্থাৎ গল্পগুলিকে কেবল শিশুপাঠ্য বাঘ-ভাল্লুকের মনোরঞ্জক কাহিনি বলেই ভুল করে বসবেন না, মনে রাখবেন, এই কাহিনিগুলো মাধ্যমে রাজার ছেলেদের দেশের অভ্যন্তরীণ সুরক্ষা কিংবা বাণিজ্যনীতি থেকে শুরু করে বৈদেশিক নীতিতেও অভিজ্ঞ করে তোলার প্রচেষ্টা করা হয়েছে।

এই ধারাবাহিকে আমরা একটু একটু করে পঞ্চতন্ত্রের গল্প শোনার পাশাপাশি বুঝে নেওয়ার চেষ্টা করবো যে কূটনৈতিক তথা বস্তুবাদী একটি গ্রন্থরূপে পঞ্চতন্ত্রের গুরুত্ব। বুঝে নিতে চাইবো আজ থেকে প্রায় দু’হাজার বছর আগের লেখা গ্রন্থটি আজকের দিনেও ঠিক কতখানি স্থান অধিকার করে আছে, যেটি পড়ে মাত্র ছয়মাসের মধ্যে রাজপুত্রেরা এতটাই রাজনীতিশাস্ত্রজ্ঞ হয়ে উঠেছিলেন যে বিষ্ণুশর্মার দাবি অনুযায়ী দেবরাজ ইন্দ্রকেও তাঁরা কূটনীতিতে পরাজিত করতে সমর্থ ছিলেন।

শুধু এইটুকুই নয়, এই শাস্ত্রের বা গ্রন্থের অপর আরেকটি দৃষ্টফলও রয়েছে, যেটা বলতে পারেন যে চোখে দেখা যায়। যদিও সে ফলের কথাটি পঞ্চতন্ত্রে বলা নেই, কিন্তু পঞ্চতন্ত্রেরই সমানতন্ত্র যে গ্রন্থ, মানে সোজা ভাষায় যাকে পঞ্চতন্ত্রের সংক্ষিপ্ত একটা সংস্করণ বলেও দাবি করা যেতে পারে, সেই হিতোপদেশের ‘প্রস্তাবিকা’ অংশে নারায়ণশর্মা বলেছেন—

শ্রুতো হিতোপদেশোঽয়ং পাটবং সংস্কৃতোক্তিষু।
বাচাং সর্বত্র বৈচিত্র্যং নীতিবিদ্যাং দদাতি চ।।


হিতোপদেশের এই ‘প্রস্তাবিকা’ অংশেও পঞ্চতন্ত্রের কথামুখের গল্পটিই বলা আছে, তবে স্থান-কাল-পাত্র সমান্য আলাদা। সেখানে রাজার নাম অমরশক্তি নয়, সুদর্শন; আর তিনি পাটলিপুত্র নগরীর রাজা। সেখানে যদিও রাজার পুত্রদের নাম উল্লেখ করা হয়নি, তবে সেখানেও একই দাবি করা হয়েছে যে তাঁদের রাজনীতি শাস্ত্রে পারদর্শী করবার জন্যই লেখা হয়েছিল এই গ্রন্থ। সেখানেই বলা হয়েছে যে এই “হিতোপদেশ” গ্রন্থ পাঠ করলে বিশুদ্ধ বাক্যপ্রয়োগের কুশলতা জন্মায়, মানে বলা ভালো যে, কথা-বার্তায় আপনি একেবারে চৌকশ হয়ে উঠবেন; আর সেইসঙ্গে সকল বিষয়ে বক্তব্য উপস্থাপনের মধ্যেও আপনার যেমন বৈচিত্রও আসবে, বাগ্মীতা প্রকাশ পাবে, তেমনই রাজনীতিশাস্ত্রে আপনার জ্ঞান জন্মাবে। এই দুই গ্রন্থে পাঠের ফল এমনই।
আরও পড়ুন:

পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-১: রাজার ছেলেদের রাজনীতি-কূটনীতি শেখানোর জন্যই লেখা হয়েছিল এই গ্রন্থ

পঞ্চমে মেলোডি, পর্ব-৮: সলিল চৌধুরীর সুরারোপিত গান খুব মনোযোগ দিয়ে শুনতেন পঞ্চম

শাশ্বতী রামায়ণী, পর্ব-৪৩: সীতার মনে কি আশঙ্কার অশনি সংকেত?

আমি বনফুল গো: তিনিই ছিলেন ভারতীয় ছবির প্রথম সিঙ্গিং সুপারস্টার/১

পঞ্চতন্ত্রের কথামুখ বা ভূমিকা অংশ বলতে পারেন এখানেই শেষ। কিন্তু এই আখ্যানভাগটি থেকে এবার আমাদের কিছু বুঝে নেওয়ার আছে। সংস্কৃত ভাষাসাহিত্য নিয়ে একটু-আধটু যাঁরা নাড়াচাড়া করেন তাঁরা জানেন যে সংস্কৃত সাহিত্যে ‘অনুবন্ধচতুষ্টয়’ বলে একটা কথা আছে। মানে চারটে বিষয় যা গ্রন্থের শুরুতেই থাকতে হবে, যেগুলি দেখে পাঠকের আগ্রহ জন্মায় সেই গ্রন্থটির প্রতি। এই বিষয় চারটি হল ‘বিষয়’, ‘প্রয়োজন’, ‘সম্বন্ধ’, ও ‘অধিকারী’। অর্থাৎ যে গ্রন্থটি নিয়ে চর্চা হবে তার ‘বিষয়’ কী? সেটি জেনে পাঠকের ঠিক কি ধরণের ‘প্রয়োজন’ সিদ্ধ হবে? সেই গ্রন্থ বা শাস্ত্র পাঠ করবার ‘অধিকারী’ কে? এবং অবশেষে বিষয়ের সঙ্গে ‘সম্বন্ধ’। সমস্ত তথ্য দিয়ে গ্রন্থের শুরুতেই এইরকম ‘অনুবন্ধচতুষ্টয়’ লেখবার পরম্পরা সংস্কৃত সাহিত্যে দীর্ঘকাল ধরে বিদ্যমান।

পঞ্চতন্ত্রের কথামুখের এই কাহিনিটি বলতে পারেন সেই উদ্দেশ্যেই গ্রন্থের শুরুতে সন্নিবিষ্ট হয়েছে। আখ্যানভাগটি থেকে আপনি দিব্যি বুঝতে পারছেন যে এই পঞ্চতন্ত্রের বিষয় হল ‘রাজনীতি-কূটনীতি’ —এই গ্রন্থ চর্চা করেছে ‘নীতিশাস্ত্র’ নিয়ে। এইটিই হল ‘বিষয়’। এই নীতিশাস্ত্রের ‘প্রয়োজন’ কেন? সেটা এককথায় এভাবেই বলে দেওয়া যায় যে এই বইটি পড়লে কেউ আপনার সঙ্গে চালাকি করতে পারবে না বা কেউ আপনাকে রাজনীতি করে বা কূটনীতি করে ফাঁদে ফেলতে পারবে না, কারণ তাঁদের প্ল্যান-প্রোগ্রাম আপনি আগে থেকেই সবটাই বুঝতে পেরে যাবেন —তাই এই গ্রন্থ পড়া ‘প্রয়োজন’। কারণ এই গ্রন্থ রোজ পড়লে স্বয়ং দেবরাজ ইন্দ্রও যে আপনাকে রাজনীতিতে হারাতে পারবে না, সেটা তো গ্রন্থকার নিজেই দাবি করেছেন।

কিন্তু আমি এইটুকুই মাত্র বলতে চাই না। এটা নিঃসন্দেহে একটা বড় প্রয়োজন, যা এই গ্রন্থ পাঠের ফলে সিদ্ধ হয়। কিন্তু আমি আরও কতগুলি বিষয় এখানে নির্দেশ করতে চাই। যেমন আপনি বলতেই পারেন যে আমি ভাই নিরপেক্ষ মানুষ, কারও সাতে-পাঁচে থাকি না, আমার এইসব রাজনীতি-কূটনীতি নিয়ে কী কাজ? সেটা যারা ওই গদির জন্য লড়াই করে, বা ক্ষমতা দখলের জন্য লড়ে তারা এইসব বুঝুক গিয়ে, আমি শান্তিপ্রিয় মানুষ—এই যদি আপনার ভাবনা হয় তাহলে এই প্রসঙ্গেই পঞ্চতন্ত্রেরই মিত্রভেদ (১৭০) অংশের একটা শ্লোক আপনার নজরে আনতে চাই, যাতে আমার বক্তব্যটি বুঝতে আপনার সুবিধা। শ্লোকটির প্রকৃত প্রসঙ্গ নিয়ে না হয় পরে যথা সময়ে আলোচনা হবে, আপাতত সকলের কেন রাজনীতি-কূটনীতি নিয়ে জ্ঞান থাকা আবশ্যক সেকথাটি সরল ভাবে এই শ্লোকটিতে বলে দেওয়া হয়েছে। মূল শ্লোকটি হল—

অত্তুং বাঞ্ছতি শম্ভবো গণপতেরাখুং ক্ষুধার্তঃ ফণী
তং চ ক্রৌঞ্চরিপোঃ শিখী গিরিসুতাসিংহোঽপি নাগাশনম্।।
ইত্থং যত্র পরিগ্রহস্য ঘটনা শম্ভোরপি স্যাদ্ গৃহে
তত্রাপ্যস্য কথং ন ভাবি? জগতো যস্মাত্স্বরূপং হি তৎ।।
আরও পড়ুন:

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৭: ভারতের উত্তরাধিকার, কৌরব ও পাণ্ডবগণ

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৬০: রাতদুপুরে বিপন্নকে বাঁচাতে হাটখোলার পাট আড়তের টাকা এসেছিল জোড়াসাঁকোয়

বাঙালির মৎস্যপুরাণ, পর্ব-৫২: প্রাকৃতিক উপায়ে মাছের ফলন বাড়াতে পুকুরে উদ্ভিদকণা ও প্রাণীকণার ভারসাম্য ঠিক রাখা জরুরি

সংস্কৃত শাস্ত্রের জটিলতার মধ্যে বেশি প্রবেশ না করে বরং মোদ্দা ব্যাপারটা বুঝে নেওয়া যাক। বিষ্ণুশর্মা বলছেন, শম্ভু মানে স্বয়ং মহাদেবের গলার সাপ, গণপতি মানে গণেশের বাহন ইঁদুরকে গিলে খেতে চায়; সেই মহাদেবের সাপকে আবার খেতে চায় ক্রৌঞ্চপর্বত বিদারণকারী কার্তিকেয়’র বাহন ময়ূর; আর সেই ময়ূরের মাংসে আবার আগ্রহ স্বয়ং পর্বতকন্যা পার্বতীর বাহন সিংহের। তাই স্বয়ং মহাদেবের ঘরেই যেখানে নিজেদের মধ্যে এতো খেয়োখেয়ি, ঝগড়া-মারামারি লেগে আছে, সেখানে অন্য সাধারণ পরিবারের কথা আর কী বলবো—সংসারের বাস্তবিক স্বরূপটাই হল এই।

তাই আপনি নিজে শান্তিতে অরাজনৈতিক হয়ে থাকবেন ভাবলেই যে চারিপাশের পরিস্থিতি আপনাকে থাকতে দেবে এমন নয়, বস্তুবাদীরা তো স্পষ্ট ভাষাতেই বলে থাকেন যে “অরাজনৈতিক থাকাটা একটা ক্যামোফ্লেজ”। আসলে আপনাকে নিজের পরিবারে সম্মানের সঙ্গে বেঁচে থাকতে গেলেও আপনার রাজনীতি-কূটনীতির প্রয়োজন—প্রাচীন ভারতীয় নীতিশাস্ত্রবিদরা অন্ততঃ এমনটাই মনে করতেন। নিজের পরিবারের মধ্যে এই ‘রাজনীতি-কূটনীতি’র কথা শুনে হৃদয়ে আঘাত লাগলেও, ভেবে দেখবেন তাঁদের এই পর্যবেক্ষণ কিন্তু মিথ্যা নয়। বহুকালের সঞ্চিত অভিজ্ঞতাকে ভিত্তি করে লেখা এই পঞ্চতন্ত্র গ্রন্থকে পড়া ও জানা তাই আজকের দিনেও ভীষণভাবে ‘প্রয়োজন’।
আরও পড়ুন:

বিশ্বসেরাদের প্রথম গোল, পর্ব-৫: বলবয় থেকে বিশ্বসেরা

এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-১৬: গরমে কক্ষনও ডিম খেতে নেই?

চেনা দেশ অচেনা পথ, পর্ব-১৬: রতনপুর মহামায়া দর্শন

আর এই গ্রন্থের অধিকারী কারা? এককথায় উত্তর দিতে গেলে বলতে হয় রাজনীতি-কূটনীতি জানতে আগ্রহী যিনি, এই গ্রন্থটি তাঁর জন্য। যিনি এই জ্ঞান গ্রহণ করে তাকে প্রয়োগ করতে পারবেন। এক্ষেত্রে রাজার ছেলেরা নিঃসন্দেহে এই গ্রন্থের অধিকারী। হিতোপদেশে নারায়ণ শর্মা বলেছেন, নির্গুণ বা অযোগ্য বস্তু বা পাত্রের পিছনে পরিশ্রম করলেও তা কখনও সফল হয় না, যেমন আপনি শতচেষ্টা করলেও টিয়াপাখির মতো বকপাখিকে কথা বলা শেখাতে পারবেন না। সে কারণে রাজা, যিনি সর্বগুণসম্পন্ন, তাঁর বংশে নিঃসন্দেহে নির্গুণ সন্তান জন্মাবে না; যেমন কিনা পদ্মরাগমণির খনিতে কখনই কাঁচের মণি থাকতে পারে না। তাই যথার্থ উৎসাহী এবং ব্যুৎপন্ন ব্যক্তি, যিনি রাজনীতি-কূটনীতিতে আগ্রহী, তিনিই এই গ্রন্থের প্রকৃত অধিকারী। আর শেষে বলতে হয়, রাজনীতি জ্ঞানের সঙ্গে এই গ্রন্থের সম্বন্ধ সমানুপাতিক। অর্থাৎ এই গ্রন্থ পাঠ করলে রাজনীতি জ্ঞান যে অবশ্যম্ভাবী—এইটাই হল বিষয়ের সঙ্গে গ্রন্থের ‘সম্বন্ধ’ নাম চতুর্থ অনুবন্ধ। এই চারটি বিষয়কেই খুব স্পষ্ট ভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন বিষ্ণুশর্মা তাঁর এই পঞ্চতন্ত্রের ‘কথামুখম্‌’ অংশে।

এবার আপনি নিশ্চয় বুঝতেই পারছেন এই গ্রন্থটির কেন পৃথিবী জোড়া এমন খ্যাতি। আমাদের এই গ্রন্থের ভূমিকা পর্বের এখানেই ইতি। এবার মূল গ্রন্থের আখ্যানভাগে প্রবেশ করা যাক।—চলবে
* পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি (Panchatantra politics diplomacy): ড. অনিন্দ্য বন্দ্যোপাধ্যায় (Anindya Bandyopadhyay) সংস্কৃতের অধ্যাপক, কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়।

Skip to content