বুধবার ২৭ নভেম্বর, ২০২৪


ভোরামদেব মন্দির চত্বর থেকে কিছুটা পেরিয়ে একটু জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে গেলে নজরে আসবে মান্ডুয়া মহল। এটিও একটি শিবের মন্দির, এগারো শতকে বানানো। সমসাময়িক গোন্ড রাজাদের দ্বারা তৈরি এটি একটি ছোট মন্দির। ভোরামদেব মন্দির এর কাছাকাছি অবস্থিত, তুলনা করা যায় এরকম একটি মন্দির।
বর্তমানে মূল যে মন্দিরের অংশটি তা ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। কিন্তু মাঝখানে এবং নিচে যে স্ট্রাকচারটা তা সম্পূর্ণ সংরক্ষিত আছে। পাথরের ওপরে স্থাপত্য এবং খুব সুন্দর ইরোটিক আর্ট, কামসূত্রের কিছু কিছু পজিশনের নিদর্শন আছে। এই মন্দিরের সবচেয়ে আশ্চর্যজনক বিষয় হল, এই যে শিবলিঙ্গটি, সেটি বেসমেন্টে অর্থাৎ নিচে স্থাপিত। যখন এখানে কেউ শিবকে জল দেবেন অর্থাৎ জলাভিষেক করাবেন শিবলিঙ্গটি ভিজে যাবে কিন্তু মাটিতে জলের কোনও চিহ্ন থাকবে না। এটা বিশ্বাস যে সমস্ত জলটি অদৃশ্য হয়ে যায় এবং অন্য কোথাও চলে যায়। আর যদি বৃষ্টিও হয় তাহলেও এই জায়গাটি কখনো ভরে যায় না। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, ‘মান্ডোয়া’ এই নামটি এসেছে মণ্ডপ থেকে। এখানে সেই সময়কার রাজাদের বিয়ের বাসর নির্মিত হতো।
আরও পড়ুন:

চেনা দেশ অচেনা পথ, পর্ব-১৩: বাইগা বস্তি হয়ে ভোরামদেব মন্দির

রহস্য রোমাঞ্চের আলাস্কা, পর্ব-১১: কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই দু’ একটি ছবি তুলতে না তুলতেই হাত অসাড় হয়ে যাচ্ছিল

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-৯: নুনিয়া

এর থেকে একটু এগিয়ে গেলে ছেড়কি মহল। ছেড়কি মহল আরেকটি মন্দির যেখানে শিবের মূর্তি অর্থাৎ লিঙ্গ প্রতিষ্ঠিত। এরকম বলা হয় সূর্যের প্রথম শিখর মান্ডুয়া মহলে পড়ে এবং সূর্যাস্তের শিখর ছেড়কি মহলে পড়ে। অর্থাৎ আপনি যদি সকালবেলা মান্ডুয়া মহলে শিব দর্শন করেন তবে আপনাকে বিকেলবেলা ছেড়কি মহলে শিব দর্শন করতে হবে। এখন ভগ্নপ্রায় তবুও মন্দিরের ভেতরে স্থানীয় অধিবাসীরা এখনও পুজো করেন। দু-একজন পুরোহিতও আছেন। সবচেয়ে ভালো লাগলো ছেড়কি মহলের যে নাইটগার্ড, যিনি থাকেন তার পরিবার নিয়ে, তার মেয়েটি ১৭ কিলোমিটার রাস্তা অতিক্রম করে কবীরধামে নিউট্রিশন পড়তে একটি কলেজে যায়।
আমি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম “এতটা রাস্তা কষ্ট হয় না?”
বললেন, “কষ্ট হয়। গরমকালে আরও বেশি কষ্ট হয়। কিন্তু আমাকে তো পড়তেই হবে। কারণ আমার বাবা যে কষ্ট করে এখানে আছেন, টুরিস্ট আসে না, সরকারের থেকে অল্প পয়সা, চাষের অল্প জমি, আমাকে তো দাঁড়াতেই হবে।”
দেবতার মাহাত্ম্য কিনা জানি না কিন্তু আমার মনে হল, ছেড়কি মহলে পড়ন্ত সূর্যের আলোয় এই নতুন দিন আমরা দেখতে পেলাম।
আরও পড়ুন:

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৫৭: কবির লেখা, লেখার গল্প

দশভুজা: রুমা দেবী—তিরিশ হাজার মহিলার ভাগ্য পরিবর্তনের কান্ডারি তিনি

আপনি ভোরামদেব দেখতে এসেছেন আর কবিরধাম জেলায় আছেন আর কাওয়ার্ধা প্যালেস দেখবেন না তা হয় না। মৈকাল পর্বতের পাদদেশে প্রায় ৯৪১ মিটার সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতায় অবস্থান এই প্রাসাদটির। ১১ একর জমির উপরে ইতালিয়ান মার্বেল ও স্টোন দিয়ে নির্মিত অপূর্ব সুন্দর এই কাওয়ার্ধা প্যালেস। এর মূল দরজাটি যেখান দিয়ে প্রবেশ করতে হয় তার নাম হাতি দরওয়াজা। কেন এরকম হাতি দরওয়াজা নামকরণ? যে রয়েল প্রসেশন হতো অর্থাৎ রাজকীয় সমাবেশ যেখানে হতো হাতিরা সবসময় আগে যেত তারপরে রাজারা যেতেন আর দরবার হলের মাথায় একটা সুদৃশ্য ডোম আছে সাদা রঙের য়ের সেটিও চমৎকার। আর তার ভেতরে ফিলিক্রি করা কাজ, সবচেয়ে সুন্দর হচ্ছে মার্বেলের সিঁড়ি আর উন্মুক্ত প্রাঙ্গণ। সবুজ ঘাসে ভরা উন্মুক্ত প্রাঙ্গণ।
আরও পড়ুন:

পঞ্চমে মেলোডি, পর্ব-৫: আরডি-র ‘লাকড়ি কি কাঠি কাঠি পে ঘোড়া’ আজও ছোটদের মধ্যে সমানভাবে জনপ্রিয়

এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-১৪: গরম পড়েছে, যত পারুন ঠান্ডা খান! কী হচ্ছে এর ফলে?

ব্যাকপেন-এ কাবু? শুধু ব্যায়াম নয়, ওজনও নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে

মহারাজা ধরমরাজ সিং এটিকে ১৯৩০ সালে নির্মাণ করেছিলেন। অনেক সংস্কৃতি এবং রীতি এই প্রাসাদ নির্মাণে ব্যবহৃত হয়েছে। আগেই বলছি ইতালিয়ান স্টোন ব্যবহৃত হয়েছে, মোঘল এবং ব্রিটিশ স্কাল্পচারের নিদর্শন ও এই প্যালেসটিতে পাওয়া যায়। এখানে এসে আপনি রাত কাটাতে পারেন। রয়্যাল পরিবারের অর্থাৎ রাজ পরিবারের যারা আছেন তাঁদের ব্যবস্থাপনায় নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে আপনি এখানে থাকতে পারেন। রাজ পরিবারের যারা আছেন তাঁরা এত অতিথি পরায়ণ এবং স্থানীয় ছত্তিসগড়ের খাবার তাঁরা পরিবেশন করেন। এটা আমার শোনা, আমি যেহেতু সেখানে রাত কাটাইনি ফলে আমার পক্ষে এর বাস্তবিক অভিজ্ঞতা সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি।
ভোরামদেব থেকে রায়পুর যাবার পথে একটু উলটপুরাণ করে যেহেতু আমার যাবার রাস্তা তখন রায়পুর ছিল না চলে যেতে পারেন রাধা কৃষ্ণ মন্দিরে। খুব পুরানো মন্দির, পাশে একটি বড় সরোবর আছে। চারপাশের প্রকৃতি অসামান্য। ছত্তিসগড়ের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে শান্ত প্রকৃতি, যেখানে প্রতি মুহূর্তে প্রতিটি পাখির ডাক অনুভব করতে পারবেন। এই মন্দিরের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে রাধা কৃষ্ণের মূর্তি। আর বাল-গনেশ এবং বাল-হনুমান মানে ছোট গণেশ এবং ছোট হনুমানের মূর্তি দুটিও খুব আকর্ষণীয়। ভারতের বহু প্রান্তে অনেক রকম মূর্তি দেখেছি। কিন্তু এই মূর্তি দুটি বেশ মনোগ্রাহী, আপনি ভোরামদেব অঞ্চলে থাকবেন একটু কষ্ট করে এই অঞ্চলে এসে এই মন্দিরটি দেখে যেতেই পারেন মানসিক শান্তি পাবেন।—চলবে

ছবি: লেখিকা
* চেনা দেশ অচেনা পথ (Travel Offbeat): লেখক— অর্পিতা ভট্টাচার্য (Arpita Bhattacharya), অধ্যাপিকা, বাংলা বিভাগ, লেডি ব্রেবোর্ন কলেজ। শৈলীবিজ্ঞান নিয়ে গবেষণা করে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেছেন। বর্তমান আগ্রহ ও কাজ ভ্রমণ-সাহিত্য, ইকো-ট্যুরিজম, কালচার ট্যুরিজম, স্মৃতিকথা নিয়ে। এছাড়াও মুক্তগদ্য চর্চা ভালো লাগার জায়গা। এখন পর্যন্ত প্রকাশিত ৫টি গ্রন্থ এবং ৫০ টিরও বেশি প্রবন্ধ। সম্পাদনা করেছেন একটি বই এবং ধারাবাহিক সম্পাদনা করেন রবীন্দ্রনাথ টেগোর অ্যাডভান্সড রিসার্চ সেন্টারের জার্নাল।
 

বাইরে দূরে

লেখা পাঠানোর নিয়ম: এই বিভাগে পাঠকদের সঙ্গে আপনার সেরা ভ্রমণ অভিজ্ঞতার কাহিনি ভাগ করে নিতে পারেন। ভ্রমণ কাহিনি লিখতে হবে ১০০০ শব্দের মধ্যে ইউনিকোড ফরম্যাটে। লেখার সঙ্গে বেশ কিছু ছবি পাঠাতে হবে। চাইলে ভিডিও ক্লিপও পাঠাতে পারেন। ছবি ও ভিডিও ক্লিপ লেখকেরই তোলা হতে হবে। ওয়াটারমার্ক থাকা চলবে না। ইমেল: samayupdatesin.writeus@gmail.com


Skip to content