রবি ঠাকুরের বসন্তের এই গান খানা সকলেরই জানা। বসন্তের প্রায় অন্তিম প্রান্তে অর্থাৎ অপরাহ্নে পৌঁছে মন আবারও ফিরে পেতে চায় ছেড়া মেঘের ক্যানভাসে রক্তরাঙা অশোক মঞ্জরীর সুমধুর আন্দোলনে গা ভাসাতে।
অশোক কথাটির অর্থই হল যেখানে শোকের বাতাবরণ নেই। হিন্দু শাস্ত্রমতে অমৃত থেকে সৃষ্ট এই পুষ্প হল প্রেমের প্রতীক। তাই এই পুষ্প কামদেবকে উৎসর্গ করা হয়। বহু হিন্দু ও বৌদ্ধ মন্দিরের চারপাশে অশোক বৃক্ষ লক্ষ্য করা যায়। মহাকবি কালিদাস তার লেখায় “ঋতু সংহারা” অশোক ফুলকে বারংবার ব্যবহার করেছেন। অনেকটা এইরকম বলেছেন—”প্রথম যৌবনের আবির্ভাবে যুবতী নারীর হৃদয়ে রাঙা রক্ত ক্ষরণ হয়।”
মথুরা নগরের এক ভাস্কর্যে অশোকবৃক্ষকে পরিবেষ্টন করে নারী মূর্তি দেখানো রয়েছে। যারা ভালোবাসা এবং কামের দেবতা অশোক-বৃক্ষকে পুজো করছেন। কারণ, প্রাচীন শাস্ত্রমতে এই বৃক্ষ হল নারী প্রজজনের দেবতা। আমাদের বাংলাতে অশোক গাছকে কেন্দ্র করে এও নারীরা এক বিশেষ ব্রত পালন করেন। চৈত্র মাসের শুক্লা ষষ্ঠীতে অশোক ষষ্ঠী ব্রত পালিত হয় বঙ্গদেশে। মহিলারা উপবাস ভঙ্গ করেন অশোক ফুলের কুঁড়ির সাথে কাঁচা দুধ অথবা দধি খেয়ে। এই ব্রতের সূচনা পর্বে ছিলেন দেবী সীতা। লঙ্কেশ্বর রাবণ সীতাকে অপহরণ করার পর তাকে অশোক বনে লুকিয়ে রেখেছিলেন। অশোক ফুল দেবী সীতার অত্যন্ত প্রিয় ছিল। বন্দিনী থাকাকালীন সীতা, ষষ্ঠীর উপবাস উদযাপনের জন্য অশোক ফুলকে বেছে নিয়েছিলেন। শ্রীরামচন্দ্র যতদিন সীতাকে উদ্ধার করে আনেননি, ততদিন সীতা লঙ্কায় অশোক বৃক্ষের নিচে বসে আপন সতীত্ব অটুট রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন। সতীত্বের অভিভাবক হিসাবে স্মরণ করা হয় তাই অশোক বৃক্ষকে।
হিন্দু সংস্কার ও সংস্কৃতিতে তো বটেই বৌদ্ধধর্ম-সাধনাতে অশোক গাছ মিলেমিশে রয়েছে। বৌদ্ধ মন্দিরের সবসময় অশোক গাছ লক্ষ্যণীয়, কারণটা হল গৌতম বুদ্ধের মা মায়া দেবী যখন বুঝতে পারলেন তিনি আসন্ন প্রসবা তখন তিনি একটি অশোক বৃক্ষের নিচে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। লুম্বিনী বাগানে ওই অশোক বৃক্ষের নিচে গৌতম বুদ্ধ জন্মগ্রহণ করেন। ৬৩০ খ্রিস্টাব্দে চিনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাং ভারতে এসে যে বৃক্ষের নিচে বিশ্রাম নিয়েছিলেন, সেই অশোক বৃক্ষের কথা তার বর্ণনায় উল্লেখ করেছেন। তিনি আরও উল্লেখ করেছেন যে অশোক বৃক্ষের চারা খ্রিস্টপূর্ব আড়াইশ বছর আগে সম্রাট অশোক পুত্র মহেন্দ্র, শ্রীলঙ্কা থেকে এ দেশে নিয়ে আসেন এবং অনুরাধাপুরে এই গাছ প্রথম রোপন করেছিলেন। তাই তো ধর্মীয় আচারে অশোক বৃক্ষ যুগ যুগ ধরে নিজের স্থান অটুট রেখেছে।
হাত বাড়ালেই বনৌষধি: সারা বছরের বন্ধু ‘কলা’
প্রসঙ্গ স্বাস্থ্য বিজ্ঞান: জিন এডিটিংয়ে নতুন দিশা, ইঁদুর ফিরে পেল দৃষ্টিশক্তি! মানুষের অন্ধত্বে আলো দেখাবে এই গবেষণা
বিশ্বসেরাদের প্রথম গোল, পর্ব-১১: ফুটবলের ব্ল্যাক প্যান্থার: লেভ ইয়াসিন
এক নজরে
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৩০: দিনের পরে দিন গড়ে যায় ‘বিধিলিপি’
পঞ্চমে মেলোডি, পর্ব-৫: আরডি-র ‘লাকড়ি কি কাঠি কাঠি পে ঘোড়া’ আজও ছোটদের মধ্যে সমানভাবে জনপ্রিয়
বৈষম্যের বিরোধ-জবানি, পর্ব-১৪: সমাজে নারীর বন্ধ্যাত্ব এবং পিতৃতান্ত্রিক চিকিৎসা ব্যবস্থা
কী কী উপাদানে ভরপুর?
মনের আয়না: আপনার সন্তান কি মোবাইলে আসক্ত? এর থেকে মুক্তি পেতে জানুন মনোবিদের পরামর্শ
উপন্যাস: বসুন্ধরা, এবং ২য় খণ্ড, পর্ব-১১: রাত বাড়লে গুলি-বোমার শব্দ, দরজায় অচেনা লোক এলে সন্দেহ হতো
মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৫: জনমেজয়ের সর্পমারণযজ্ঞ — একটি সাধারণ সমীক্ষা
চিকিৎসাশাস্ত্রে ব্যবহার
শ্বেতস্রাব এবং রক্তস্রাব প্রতিরোধে
গর্ভবিনাশ প্রতিরোধে
হৃদস্পন্দন কমাতে
রক্ত ক্ষরণ বন্ধ করতে
কৃমি বিনাশে
উজ্জ্বলহীন ত্বক
খসখসে উজ্জ্বলহীন ত্বকের জন্য যদি অশোক বীজ বেটে হলুদের মতো মাখা যায় তাহলে ত্বক নিজের উজ্জ্বলতা ফিরে পায়। এমনকি অশোক ছালের ঘন নির্যাস গায়ে লাগিয়ে এক দেড় ঘণ্টা রেখে তারপর স্নান করলে স্কিন তার ঔজ্জ্বল্য ফিরে পায়।
বিষাক্ত কীটের দংশন জনিত ব্যথার উপশমে
অর্শ নিরাময়ে
শ্লেষ্মা রোগ নিরাময়ে
স্ত্রীরোগ প্রতিরোধে
এই সকল কারণবশতই হয়তো অশোক বৃক্ষ স্ত্রীলোক দ্বারা ব্যাপকভাবে পূজিত হয়। স্বাভাবিক নিয়মেই ধর্মীয় আচারে অশোক বৃক্ষ তাই নিজের স্থান অটুট রাখতে পেরেছে।