মুক্তির তারিখ : ০১/০৭/১৯৫৫
প্রেক্ষাগৃহ : রাধা,পূর্ণ,প্রাচী ও ইন্দিরা
পরিচালনা : মানু সেন
উত্তম অভিনীত চরিত্রের নাম : শচীকান্ত
‘শাপমোচন’- এর জনপ্রিয়তা এমন অংশে পৌঁছল যে আগের এবং পরের ছবিগুলির ভাগ্যরেখা অনেকাংশে বদলে গেল।
অনেক পরিচালকের-প্রযোজকের মুখের রেখা তখন কালো হয়ে গিয়েছিল। কারণ ‘শাপমোচন’ মুক্তি পাবার আগে হলে যে ছবিগুলো চলছিল সেগুলো থেকে মানুষ বেরিয়ে এসে সবাই আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা ‘শাপমোচন’-র প্রেক্ষাগৃহে ভিড় জমাতে থাকলেন। সেই সঙ্গে এমনও পরিবেশ তৈরি হল যে, বম্বের হিন্দি ছবিগুলো প্রেক্ষাগৃহ থেকে পরপর শেষ করতে পারলে যেন ভালো হয় অর্থাৎ কলকাতার মেন রিলিজিং চেনে ‘শাপমোচন’ যখন চলছে তার জনপ্রিয়তার ঢেউ গ্রামেগঞ্জে এমনভাবে ছড়িয়ে গেল যে কবে ‘শাপমোচন’ হলে আসবে। এই নিয়ে দর্শকরা রীতিমতো কানাঘুষো শুরু করে দিল।
সে-সময় এর ফল হয়েছিল বহুমুখী। যেমন যে ছবিগুলো তৈরি হয়ে মুক্তির অপেক্ষায় ছিল তাদের রিলিজিং ডেট কেউ আটকে রাখল, কেউ বা সাহস করে রিলিজ করে দিল। সাল তারিখের নিরিখে আমরা দেখি মাত্র এক মাসের ব্যবধানে পরিচালক মানু সেন-র তত্ত্বাবধানে অন্য হলে রিলিজ করল ‘বিধিলিপি’।
কারণ যে হলগুলোর সিরিজে ‘শাপমোচন’ চলছিল সেখানে জায়গা পেতে হলে কয়েক মাস তো বটেই কাউকে কাউকে কয়েক বছরও অপেক্ষা করতে হয়েছে। আমরা দুটি ছবির যদি রিলিজিং ডেট নিয়ে যদি আলোচনা করি তাহলে এ উক্তির তাৎপর্য বোঝা যাবে। ‘শাপমোচন’ রিলিজ করেছে রূপবাণী, অরুণা ও ভারতী উত্তর মধ্য এবং দক্ষিণ কলকাতার তিনটি হলের চেনে। সেই রূপবাণী, অরুণা ও ভারতীতে আবার উত্তম কুমারের ছবি আসছে প্রায় তিন মাস পর। এর মাঝে উত্তম কুমারের ব্লকবাস্টার ‘হ্রদ’ মুক্তি পাওয়ার জন্য দর্পনা, ছায়া ও পূর্ণ যে হল গুলো দ্বিতীয় শ্রেণির সেখানে রিলিজের ব্যবস্থা করতে হচ্ছে।
অনেক পরিচালকের-প্রযোজকের মুখের রেখা তখন কালো হয়ে গিয়েছিল। কারণ ‘শাপমোচন’ মুক্তি পাবার আগে হলে যে ছবিগুলো চলছিল সেগুলো থেকে মানুষ বেরিয়ে এসে সবাই আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা ‘শাপমোচন’-র প্রেক্ষাগৃহে ভিড় জমাতে থাকলেন। সেই সঙ্গে এমনও পরিবেশ তৈরি হল যে, বম্বের হিন্দি ছবিগুলো প্রেক্ষাগৃহ থেকে পরপর শেষ করতে পারলে যেন ভালো হয় অর্থাৎ কলকাতার মেন রিলিজিং চেনে ‘শাপমোচন’ যখন চলছে তার জনপ্রিয়তার ঢেউ গ্রামেগঞ্জে এমনভাবে ছড়িয়ে গেল যে কবে ‘শাপমোচন’ হলে আসবে। এই নিয়ে দর্শকরা রীতিমতো কানাঘুষো শুরু করে দিল।
সে-সময় এর ফল হয়েছিল বহুমুখী। যেমন যে ছবিগুলো তৈরি হয়ে মুক্তির অপেক্ষায় ছিল তাদের রিলিজিং ডেট কেউ আটকে রাখল, কেউ বা সাহস করে রিলিজ করে দিল। সাল তারিখের নিরিখে আমরা দেখি মাত্র এক মাসের ব্যবধানে পরিচালক মানু সেন-র তত্ত্বাবধানে অন্য হলে রিলিজ করল ‘বিধিলিপি’।
কারণ যে হলগুলোর সিরিজে ‘শাপমোচন’ চলছিল সেখানে জায়গা পেতে হলে কয়েক মাস তো বটেই কাউকে কাউকে কয়েক বছরও অপেক্ষা করতে হয়েছে। আমরা দুটি ছবির যদি রিলিজিং ডেট নিয়ে যদি আলোচনা করি তাহলে এ উক্তির তাৎপর্য বোঝা যাবে। ‘শাপমোচন’ রিলিজ করেছে রূপবাণী, অরুণা ও ভারতী উত্তর মধ্য এবং দক্ষিণ কলকাতার তিনটি হলের চেনে। সেই রূপবাণী, অরুণা ও ভারতীতে আবার উত্তম কুমারের ছবি আসছে প্রায় তিন মাস পর। এর মাঝে উত্তম কুমারের ব্লকবাস্টার ‘হ্রদ’ মুক্তি পাওয়ার জন্য দর্পনা, ছায়া ও পূর্ণ যে হল গুলো দ্বিতীয় শ্রেণির সেখানে রিলিজের ব্যবস্থা করতে হচ্ছে।
তার আগে ‘বিধিলিপি’ রাধা, পূর্ণ, প্রাচী ও ইন্দিরা এই হলের চেনে মুক্তি পাচ্ছে। অর্থাৎ রূপবাণী, অরুণা-ভারতী, মিনার-বিজলী- ছবিঘর, শ্রী-প্রাচী -পুর্ণ এ ধরনের হলগুলোতে একনাগাড়ে উত্তম কুমারের ছবি চলেছে।
উক্ত তথ্যের বিনিসুতোমালায় একটা কথা পরিষ্কার করা যায় যে, অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি ছবির রেস কাটতে এবং পরবর্তী ছবিকে হলে জায়গা করে দিতে সর্বোপরি দর্শক মনে জায়গা করে নিতে অনেক সময় ব্যয় করতে হতো। আমার এ প্রতিবেদনের যাঁরা সম্মাননীয় পাঠককুল, তাঁদের একটি বিশেষ ব্যাপার স্মরণ করাতে চাই যে, এ তাবৎকালে একটা সিনেমা রিলিজ করার পর কী ধরনের জনপ্রিয়তা পেতে পারি তার কোনও ধারণা এ প্রজন্মের কিন্তু নেই। কথাটা যদি ভুল প্রমাণ করতে হয় অনেক খুঁজে পেতে একটি সর্বভারতীয় স্তরে রিলিজ করা ছবির কথা আলোচনা করতে হয়।
হালে, ‘বাহুবলী’ নামক যে ছবিটি সারা ভারত জুড়ে চলেছে এবং তাকে নিয়ে যে ক্রেজ দর্শকদের মধ্যে দেখা দিয়েছে তার উদাহরণ দিতে পারা যায়। আর এর আগে তারও বয়স হয়ে গেল প্রায় ২৩ বছর। এই সহস্রাব্দের শুরুতে “কহো না প্যায়ার হ্যায়” বলে যে ছবিটি সর্বভারতীয় স্তরে রিলিজ করেছিল তার জনপ্রিয়তা যদি কারও স্মরণে থাকে তাহলে একটা উদাহরণ হিসাবে দাঁড় করানো যায়।
বিষয়টা খুবই কাকতালীয় হলেও আমাদের ভেবে নিতে অনেক অসুবিধা হবে যে, আজ থেকে প্রায় ৭০ বছর আগে শুধু বেঙ্গল সার্কিটে, একটা ছবির রিলিজ ঘিরে যে উন্মাদনা যখন ছবির প্রচার পর্ব নিয়ে কোনও মাথা ঘামানো হতো না। কেবল একটা মিউজিক্যাল হিট ছবি মানুষ কীভাবে নিতে পারে তার সর্বকালীন সেরা উদাহরণ হিসাবে আজও উজ্জ্বল হয়ে আছে ‘শাপমোচন’ নামক ছবিটি। এরও কয়েক বছর পর ‘মনিহার’ নামক একটি ছবি মিউজিকাল হিট দিয়ে সর্বকালের সেরা জায়গাটি দখল করে নিয়েছিল। সৌভাগ্যবশত সে ছবিরও সংগীত পরিচালকের নাম ছিল হেমন্ত মুখোপাধ্যায়।
উক্ত তথ্যের বিনিসুতোমালায় একটা কথা পরিষ্কার করা যায় যে, অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি ছবির রেস কাটতে এবং পরবর্তী ছবিকে হলে জায়গা করে দিতে সর্বোপরি দর্শক মনে জায়গা করে নিতে অনেক সময় ব্যয় করতে হতো। আমার এ প্রতিবেদনের যাঁরা সম্মাননীয় পাঠককুল, তাঁদের একটি বিশেষ ব্যাপার স্মরণ করাতে চাই যে, এ তাবৎকালে একটা সিনেমা রিলিজ করার পর কী ধরনের জনপ্রিয়তা পেতে পারি তার কোনও ধারণা এ প্রজন্মের কিন্তু নেই। কথাটা যদি ভুল প্রমাণ করতে হয় অনেক খুঁজে পেতে একটি সর্বভারতীয় স্তরে রিলিজ করা ছবির কথা আলোচনা করতে হয়।
হালে, ‘বাহুবলী’ নামক যে ছবিটি সারা ভারত জুড়ে চলেছে এবং তাকে নিয়ে যে ক্রেজ দর্শকদের মধ্যে দেখা দিয়েছে তার উদাহরণ দিতে পারা যায়। আর এর আগে তারও বয়স হয়ে গেল প্রায় ২৩ বছর। এই সহস্রাব্দের শুরুতে “কহো না প্যায়ার হ্যায়” বলে যে ছবিটি সর্বভারতীয় স্তরে রিলিজ করেছিল তার জনপ্রিয়তা যদি কারও স্মরণে থাকে তাহলে একটা উদাহরণ হিসাবে দাঁড় করানো যায়।
বিষয়টা খুবই কাকতালীয় হলেও আমাদের ভেবে নিতে অনেক অসুবিধা হবে যে, আজ থেকে প্রায় ৭০ বছর আগে শুধু বেঙ্গল সার্কিটে, একটা ছবির রিলিজ ঘিরে যে উন্মাদনা যখন ছবির প্রচার পর্ব নিয়ে কোনও মাথা ঘামানো হতো না। কেবল একটা মিউজিক্যাল হিট ছবি মানুষ কীভাবে নিতে পারে তার সর্বকালীন সেরা উদাহরণ হিসাবে আজও উজ্জ্বল হয়ে আছে ‘শাপমোচন’ নামক ছবিটি। এরও কয়েক বছর পর ‘মনিহার’ নামক একটি ছবি মিউজিকাল হিট দিয়ে সর্বকালের সেরা জায়গাটি দখল করে নিয়েছিল। সৌভাগ্যবশত সে ছবিরও সংগীত পরিচালকের নাম ছিল হেমন্ত মুখোপাধ্যায়।
আমাদের আলোচ্য ‘বিধিলিপি’ ছবিটির প্রেক্ষিত ছিল এ ধরনেরই একটি সময়ের স্বাক্ষর। ব্যক্তিগতভাবে উত্তমের জীবনধারাও বদলেছে। ডে-নাইট শুটিংয়ের ধকল, স্টার থিয়েটারে ‘শ্যামলী’ নাটকের নিয়মিত অভিনয়, এসব কিছু মিলিয়ে মিশিয়ে ব্যক্তি উত্তমের বেঁচে থাকার রীতিও অনেক অংশে বদলে গিয়েছে।
যে উত্তম শুটিং থেকে ফিরে এসে ছবি রিলিজের পর ব্যর্থতার দায়ভার কাঁধে নিয়ে দিনের পর দিন বছরের পর বছর ঘরের কোণে মুখ লুকিয়ে থাকতেন, আজকে কাজের চাপে সে উত্তমকেই বেশিরভাগ সময়ে ঘরের বাইরে কাটাতে হয়। শুধু কাজের তাগিদ নয়, ভিতরের অন্ধকার অতীতটাকে অতিক্রম করার একটা উদগ্র বাসনা সে সময় তার মধ্যে পেয়ে বসেছিল। আমরা যে ছবিটা নিয়ে আলোচনা করছি এ ছবিটা ‘শাপমোচন’ এর সমতুল্য জনপ্রিয়তা হয়তো পায়নি। কিন্তু উত্তমকে কেন্দ্র করে টলি-পাড়ায় ছবির জগতের ঘুরে দাঁড়ানোর ছবির জগতের নিজের পরিবর্তনের একটা সুরম্য পরিবেশ তৈরি হয়েছিল।
অন্যদিকে বাংলা ছবির ইতিহাসে বোধহয় এ ঘটনা আর ঘটেনি যে, একই ছবির গান লেখার জন্য তিনজন দিকপাল গীতিকার কলম ধরেছেন। অতি প্রতিষ্ঠিত প্রণব রায়, সবেমাত্র প্রতিষ্ঠিত গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার এবং আগামী দিনের প্রতিশ্রুতিমান পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়। মা করে দেখিয়েছিলেন ‘বিধিলিপি’ ছবির কর্তৃপক্ষ।
তৎকালীন বাংলা ছবিতে কাহিনির যে বৈচিত্র্য ছিল সেখানে দুটি ধারা দেখানো হতো।
এক বিবাহিত জীবনের সম্পর্কের টানাপোড়েন। সংকটের সিংহদ্বার দিয়ে উত্তরণ ঘটাতে ঘটনাতে রঙ চড়াতে হতো। দুই অবিবাহিতের বৈবাহিক জীবনে প্রবেশের একটা সংকটময় উত্তরণ।
বাংলাদেশের জলবায়ু অনুযায়ী দুটি আদর্শের রূপরেখাতেই অত্যন্ত সচেতন ভাবে ছবি বানাতে হতো। কারণ সিনেমা শিল্পের মাধ্যমে সমাজতত্ত্বের একটা বিবর্তন মানুষের মনে ছাপ ফেলতো। বৈবাহিক জীবনের টানা পোড়েন যে মানেই দেখানো হোক না কেন তা যেন কখনওই ভারতীয় আদর্শের বৈপরীত্যে না গিয়ে দাঁড়ায়।
যে উত্তম শুটিং থেকে ফিরে এসে ছবি রিলিজের পর ব্যর্থতার দায়ভার কাঁধে নিয়ে দিনের পর দিন বছরের পর বছর ঘরের কোণে মুখ লুকিয়ে থাকতেন, আজকে কাজের চাপে সে উত্তমকেই বেশিরভাগ সময়ে ঘরের বাইরে কাটাতে হয়। শুধু কাজের তাগিদ নয়, ভিতরের অন্ধকার অতীতটাকে অতিক্রম করার একটা উদগ্র বাসনা সে সময় তার মধ্যে পেয়ে বসেছিল। আমরা যে ছবিটা নিয়ে আলোচনা করছি এ ছবিটা ‘শাপমোচন’ এর সমতুল্য জনপ্রিয়তা হয়তো পায়নি। কিন্তু উত্তমকে কেন্দ্র করে টলি-পাড়ায় ছবির জগতের ঘুরে দাঁড়ানোর ছবির জগতের নিজের পরিবর্তনের একটা সুরম্য পরিবেশ তৈরি হয়েছিল।
অন্যদিকে বাংলা ছবির ইতিহাসে বোধহয় এ ঘটনা আর ঘটেনি যে, একই ছবির গান লেখার জন্য তিনজন দিকপাল গীতিকার কলম ধরেছেন। অতি প্রতিষ্ঠিত প্রণব রায়, সবেমাত্র প্রতিষ্ঠিত গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার এবং আগামী দিনের প্রতিশ্রুতিমান পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়। মা করে দেখিয়েছিলেন ‘বিধিলিপি’ ছবির কর্তৃপক্ষ।
তৎকালীন বাংলা ছবিতে কাহিনির যে বৈচিত্র্য ছিল সেখানে দুটি ধারা দেখানো হতো।
এক বিবাহিত জীবনের সম্পর্কের টানাপোড়েন। সংকটের সিংহদ্বার দিয়ে উত্তরণ ঘটাতে ঘটনাতে রঙ চড়াতে হতো। দুই অবিবাহিতের বৈবাহিক জীবনে প্রবেশের একটা সংকটময় উত্তরণ।
বাংলাদেশের জলবায়ু অনুযায়ী দুটি আদর্শের রূপরেখাতেই অত্যন্ত সচেতন ভাবে ছবি বানাতে হতো। কারণ সিনেমা শিল্পের মাধ্যমে সমাজতত্ত্বের একটা বিবর্তন মানুষের মনে ছাপ ফেলতো। বৈবাহিক জীবনের টানা পোড়েন যে মানেই দেখানো হোক না কেন তা যেন কখনওই ভারতীয় আদর্শের বৈপরীত্যে না গিয়ে দাঁড়ায়।
আরও পড়ুন:
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-২৯: সুরের আকাশে ঘটালে তুমি স্বপ্নের ‘শাপমোচন’
পঞ্চমে মেলোডি, পর্ব-৫: আরডি-র ‘লাকড়ি কি কাঠি কাঠি পে ঘোড়া’ আজও ছোটদের মধ্যে সমানভাবে জনপ্রিয়
বিশ্বসেরাদের প্রথম গোল, পর্ব-১১: ফুটবলের ব্ল্যাক প্যান্থার: লেভ ইয়াসিন
আবার অবিবাহিতের জীবন সংকট যে মানে দাঁড়াক না কেন তাও যেন কখনও বাঙালির চিরকালীন হজমযোগ্য আবেদনের বিপরীতে গিয়ে না দাঁড়ায়। উত্তম কুমারের আবির্ভাবের আগে পর্যন্ত বেশিরভাগ সামাজিক বাংলা ছবিতে বৈবাহিক জীবনের সংকটকে বড় করে দেখানো হতো।
‘পথের পাঁচালী’-ও এর ব্যতিক্রম ছিল না। কিন্তু ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ ছবিতে উত্তম-সুচিত্রার অবিবাহিত জীবনের সংকট যুবমানসে মায় দর্শকমানসে এমন দাগ কেটে দিয়েছিল যে, সেই বিশেষ থিমটাকে এনলার্জ করে ছবি বানানোর একটা আলাদা রীতিই তৈরি হয়েছিল। এ ব্যাপারটি একেবারেই যে প্রথম তা নয় কিন্তু। শরৎচন্দ্র, বঙ্কিমচন্দ্রের আদর্শে তৈরি বাঙালি মানস নিজেদের অনেকটা বিবর্তনের সাক্ষী করবে বলে পথ পরিবর্তন করেছিল। আমরা তার প্রথম স্বাক্ষর জনপ্রিয়ভাবে দেখতে পাই গত শতকের চল্লিশের দশকে ‘উদয়ের পথে’ ছবির মাধ্যমে। যেখানে সামাজিক সংকটকে মূলধন করে পারিবারিক সংকট আবর্তিত হচ্ছে এবং সেই আবর্তনের সাক্ষী হিসেবে নায়ক নায়িকা পারস্পরিক মিলনের যাত্রায় উত্তরণ ঘটাচ্ছে।
‘উদয়ের পথে’ ছবিতে যে যাত্রাপথের ঘোষণা হয়েছিল তার পূর্ণাঙ্গ বিকাশ ঘটেছিল সুচিত্রা উত্তমের হাত ধরে পঞ্চাশের দশক জুড়ে।
এর প্রভাব উত্তম যখন মধ্য বয়সে তখনও চলেছিল। তার সাক্ষী ‘অমানুষ’ এবং ‘আনন্দ আশ্রম’ ছবি দুটি। যেখানে মধ্যবয়স্ক উত্তম অনেক অল্প বয়সী নায়িকার সঙ্গে অবিবাহিত জীবনের সংকটকে চিত্রায়িত করেছেন। বয়সের ভার যেখানে ক্যামেরা দিয়ে মুছে ফেলা হচ্ছে সেখানে বেমানান শব্দটিকে সচেতনভাবে দূরে রেখে শুধু উত্তমথেরাপি দিয়ে ছবি হিট করানোর একটা মশলা যোগানো হয়েছে। সাফল্যের খতিয়ানে সেখানে ছবি হয়তো হিট হয়েছে কিন্তু ছবির সারস্বত মর্যাদা অনেক অংশে হানি ঘটেছে।
‘পথের পাঁচালী’-ও এর ব্যতিক্রম ছিল না। কিন্তু ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ ছবিতে উত্তম-সুচিত্রার অবিবাহিত জীবনের সংকট যুবমানসে মায় দর্শকমানসে এমন দাগ কেটে দিয়েছিল যে, সেই বিশেষ থিমটাকে এনলার্জ করে ছবি বানানোর একটা আলাদা রীতিই তৈরি হয়েছিল। এ ব্যাপারটি একেবারেই যে প্রথম তা নয় কিন্তু। শরৎচন্দ্র, বঙ্কিমচন্দ্রের আদর্শে তৈরি বাঙালি মানস নিজেদের অনেকটা বিবর্তনের সাক্ষী করবে বলে পথ পরিবর্তন করেছিল। আমরা তার প্রথম স্বাক্ষর জনপ্রিয়ভাবে দেখতে পাই গত শতকের চল্লিশের দশকে ‘উদয়ের পথে’ ছবির মাধ্যমে। যেখানে সামাজিক সংকটকে মূলধন করে পারিবারিক সংকট আবর্তিত হচ্ছে এবং সেই আবর্তনের সাক্ষী হিসেবে নায়ক নায়িকা পারস্পরিক মিলনের যাত্রায় উত্তরণ ঘটাচ্ছে।
‘উদয়ের পথে’ ছবিতে যে যাত্রাপথের ঘোষণা হয়েছিল তার পূর্ণাঙ্গ বিকাশ ঘটেছিল সুচিত্রা উত্তমের হাত ধরে পঞ্চাশের দশক জুড়ে।
এর প্রভাব উত্তম যখন মধ্য বয়সে তখনও চলেছিল। তার সাক্ষী ‘অমানুষ’ এবং ‘আনন্দ আশ্রম’ ছবি দুটি। যেখানে মধ্যবয়স্ক উত্তম অনেক অল্প বয়সী নায়িকার সঙ্গে অবিবাহিত জীবনের সংকটকে চিত্রায়িত করেছেন। বয়সের ভার যেখানে ক্যামেরা দিয়ে মুছে ফেলা হচ্ছে সেখানে বেমানান শব্দটিকে সচেতনভাবে দূরে রেখে শুধু উত্তমথেরাপি দিয়ে ছবি হিট করানোর একটা মশলা যোগানো হয়েছে। সাফল্যের খতিয়ানে সেখানে ছবি হয়তো হিট হয়েছে কিন্তু ছবির সারস্বত মর্যাদা অনেক অংশে হানি ঘটেছে।
‘বিধিলিপি’ ছবিটি উক্ত বিভাজনের দ্বিতীয় পর্যায়ভুক্ত। যেখানে নায়ক-নায়িকার বৈবাহিক সম্বন্ধের মাধ্যমে মিলনের সংকটকে বড় করে দেখানো হয়নি বরং বৈবাহিক জীবনে ঘটে যাওয়া সংকটকে বড় করে দেখানো হয়েছে। আর এজন্য একদম প্রয়োজনীয় মুখ সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায় কে পরিচালক-প্রযোজক, অনেক বিচার বিবেচনা করে মনোনয়ন করেছিলেন। সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়ের সামগ্রিক যে উপস্থাপন রীতি তা কখনোই সুচিত্রা সেন জনোচিত নয়,
আটপৌরে বাঙালির হেঁসেলের যে ওঠাপড়া তার সঙ্গে মানানসই গৃহবধুর একটি সমান্তরাল দৃশ্যকে অঙ্কন করা সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায় ছাড়া কখনোই সম্ভব ছিল না।
কাহিনির ঘনঘটায় সে সময়ে বিবাহিত জীবনের বহির্ভূত নারী চরিত্র হিসাবে আবশ্যিকভাবে উপস্থিত হতেন অনুভা গুপ্তা। কিন্তু এবার পরিচালক অত্যন্ত মায়াময় একটি মুখ যাকে দর্শক ভেবে দেখবেন এবং কাহিনির চূড়ান্ত সংকটকে মানুষের মনে গেঁথে দেওয়া যাবে সে সব ভেবেই পরিচালক প্রযোজক সন্ধ্যা রানিকে মনোনয়ন করলেন।
আর এই বাজিতেই ছবি মাত হয়ে গেল। একদিকে ‘শাপমোচন’ ছবির কাহিনি ও সঙ্গীতের যুগলবন্দিতে মানুষ যেমন উদ্বেলিত। অনুরূপভাবে আদর্শ পরায়ণ, গৃহস্বামী হিসাবে দায়িত্ব পালনকারী উত্তমকুমারকে দর্শক মাথায় তুলে নিলেন।
প্রেক্ষাগৃহে তখন দুটি ধারা প্রচলিত হলো। যাঁরা ‘শাপমোচন’-এ অবিবাহিত উত্তমকে নায়কের স্তরে তথা মহানায়কের স্তরে উত্তরণ ঘটিয়ে কাঙ্খিত মিলনের দিকে এগিয়ে দিয়েছিলেন তাঁরা যখন ‘বিধিলিপি’-র উত্তমকুমারকে দেখলেন তখন যেন তাঁদের মনের আশা সব দিক দিয়ে পূর্ণ হয়েছিল।
আটপৌরে বাঙালির হেঁসেলের যে ওঠাপড়া তার সঙ্গে মানানসই গৃহবধুর একটি সমান্তরাল দৃশ্যকে অঙ্কন করা সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায় ছাড়া কখনোই সম্ভব ছিল না।
কাহিনির ঘনঘটায় সে সময়ে বিবাহিত জীবনের বহির্ভূত নারী চরিত্র হিসাবে আবশ্যিকভাবে উপস্থিত হতেন অনুভা গুপ্তা। কিন্তু এবার পরিচালক অত্যন্ত মায়াময় একটি মুখ যাকে দর্শক ভেবে দেখবেন এবং কাহিনির চূড়ান্ত সংকটকে মানুষের মনে গেঁথে দেওয়া যাবে সে সব ভেবেই পরিচালক প্রযোজক সন্ধ্যা রানিকে মনোনয়ন করলেন।
আর এই বাজিতেই ছবি মাত হয়ে গেল। একদিকে ‘শাপমোচন’ ছবির কাহিনি ও সঙ্গীতের যুগলবন্দিতে মানুষ যেমন উদ্বেলিত। অনুরূপভাবে আদর্শ পরায়ণ, গৃহস্বামী হিসাবে দায়িত্ব পালনকারী উত্তমকুমারকে দর্শক মাথায় তুলে নিলেন।
প্রেক্ষাগৃহে তখন দুটি ধারা প্রচলিত হলো। যাঁরা ‘শাপমোচন’-এ অবিবাহিত উত্তমকে নায়কের স্তরে তথা মহানায়কের স্তরে উত্তরণ ঘটিয়ে কাঙ্খিত মিলনের দিকে এগিয়ে দিয়েছিলেন তাঁরা যখন ‘বিধিলিপি’-র উত্তমকুমারকে দেখলেন তখন যেন তাঁদের মনের আশা সব দিক দিয়ে পূর্ণ হয়েছিল।
আরও পড়ুন:
মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৪: অপবাদ এবং রামচন্দ্রের সুশাসনের রামরাজত্ব
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৫৭: কবির লেখা, লেখার গল্প
বাঙালির মৎস্যপুরাণ, পর্ব-৪৯: মিশ্র মাছচাষ পদ্ধতিতে শুধু ফলন বাড়েনি, মাছের বৈচিত্রের সমাহারও নজর কেড়েছে
কারণ ‘বিধিলিপি’-র কাহিনি দায়িত্বপরায়ণ, আদর্শবান, গৃহস্বামীর সার্বিক উত্তরণ ভিত্তি করে। ছবির কাহিনি এরকম : ভাগ্যবিড়ম্বিতা শকুন্তলা, সাত বছর বিয়ে হয়েছে আজও তবু সন্তানহীনা। মাতৃত্বের আকাঙ্ক্ষা তার পূর্ণ হবে কিনা কে জানে, রাতের বেলা শকুন্তলা লুকিয়ে চলে যায় ঠাকুর ঘরে। রাধা মাধবের সামনে কাঁদে আর বলে তুমিই তো মা যশোদার কোল আলো করেছিলে। তাহলে আমার উপর এমন নিষ্ঠুর হলে কেন ঠাকুর?
স্বামী শচীকান্ত, ফটিকজলের জমিদার। বলে কেন এত অবুঝ হচ্ছো কুন্তলা, বিধিলিপির উপর কারো হাত নেই। তবু সন্তানবঞ্চিতা মায়ের মন গোপনে গুমরে মরে। শচীকান্তের মায়ের মনে কিন্তু ক্ষোভের অন্ত নেই। বৌমার ছেলেপুলে হল না। এত বড় জমিদারবংশটা কি তবে লোক পাবে? বংশে বাতি দিতে কেউ থাকবে না পুত্রবধূর প্রতি তার তিক্ত অনুভব চাপা থাকে না। শকুন্তলা আহত হয় মনে মনে, তারপর একদিন কঠিন অসুখে পড়ে।
চিকিৎসায় ত্রুটি হল না। শকুন্তলা প্রাণ ফিরে পেল কিন্তু চরম মূল্য দিয়ে শকুন্তলা হয়ে গেল অন্ধ। ডাক্তার বললেন, যে প্রদীপ নিভে গেছে তা আর জ্বলবার নয়। মা ছেলেকে একদিন বললেন, বৌমার যদি কখনও সন্তান হয় তবে সে অন্ধ হয়ে জন্মাবে। এত বড় বংশটাকে আমি অন্ধের বংশ হতে দেব না তুই আবার বিয়ে কর। শশীকান্ত বলে তা হয় না শকুন্তলাকে আমি ত্যাগ করতে পারবো না।
মা ডেকে পাঠালেন নায়েব মুকুন্দ চক্রবর্তীকে, কর্তার আমলের লোক। অত্যন্ত বিশ্বাসী, চতুর এবং করিৎকর্মা মুকুন্দ আশ্বাস দিয়ে বললে কিছু ভাববেন না মা, মুকুন্দ চক্রবর্তী সব পারে, পারে না শুধু মরা মানুষ বাঁচাতে।
স্বামী শচীকান্ত, ফটিকজলের জমিদার। বলে কেন এত অবুঝ হচ্ছো কুন্তলা, বিধিলিপির উপর কারো হাত নেই। তবু সন্তানবঞ্চিতা মায়ের মন গোপনে গুমরে মরে। শচীকান্তের মায়ের মনে কিন্তু ক্ষোভের অন্ত নেই। বৌমার ছেলেপুলে হল না। এত বড় জমিদারবংশটা কি তবে লোক পাবে? বংশে বাতি দিতে কেউ থাকবে না পুত্রবধূর প্রতি তার তিক্ত অনুভব চাপা থাকে না। শকুন্তলা আহত হয় মনে মনে, তারপর একদিন কঠিন অসুখে পড়ে।
চিকিৎসায় ত্রুটি হল না। শকুন্তলা প্রাণ ফিরে পেল কিন্তু চরম মূল্য দিয়ে শকুন্তলা হয়ে গেল অন্ধ। ডাক্তার বললেন, যে প্রদীপ নিভে গেছে তা আর জ্বলবার নয়। মা ছেলেকে একদিন বললেন, বৌমার যদি কখনও সন্তান হয় তবে সে অন্ধ হয়ে জন্মাবে। এত বড় বংশটাকে আমি অন্ধের বংশ হতে দেব না তুই আবার বিয়ে কর। শশীকান্ত বলে তা হয় না শকুন্তলাকে আমি ত্যাগ করতে পারবো না।
মা ডেকে পাঠালেন নায়েব মুকুন্দ চক্রবর্তীকে, কর্তার আমলের লোক। অত্যন্ত বিশ্বাসী, চতুর এবং করিৎকর্মা মুকুন্দ আশ্বাস দিয়ে বললে কিছু ভাববেন না মা, মুকুন্দ চক্রবর্তী সব পারে, পারে না শুধু মরা মানুষ বাঁচাতে।
আরও পড়ুন:
রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-৮: ‘বাইরে বেরুলেই বিপদ!’
রহস্য রোমাঞ্চের আলাস্কা, পর্ব-১১: কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই দু’ একটি ছবি তুলতে না তুলতেই হাত অসাড় হয়ে যাচ্ছিল
ডায়েট ফটাফট: তরতাজা থাকতে নিয়মিত প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট খান? বড়সড় বিপদ এড়াতে এই সব নিয়ম মেনে চলছেন তো?
গোপনে পরামর্শ হল তারপর একদিন শচী গেল পলাশডাঙায় মহালে আর অন্ধ শকুন্তলা চোখের জল ফেলে চলে গেল কাঞ্চনপুরে তার দাদা রমানাথ-র ঘরে। শকুন্তলা জানলো স্বামী তার প্রতি বিমুখ বলে তাকে ভাইয়ের বাড়ি পাঠাতে বলেছেন আর শচী জানল শকুন্তলাকে হাতে ধরে না আনলে সে আর আসবে না।
এই বিচ্ছেদ আনল স্বামী-স্ত্রীর মাঝে ভুল বোঝার কাঁটাতারের বেড়া। ওদিকে মুকুন্দকে কলকাতায় পাঠিয়ে মা তার সইয়ের মেয়ে সন্ধ্যার সঙ্গে ছেলের বিয়ের প্রস্তাব করে পাঠালেন। সন্ধ্যার মা মৃণালিনী প্রস্তাব মঞ্জুর করলেন। কিন্তু বিধিলিপির এমনই খেলা যে দেখতে এসে শচী সন্ধ্যাকে বোনের মতোই ভালোবেসে ফেলল আর সন্ধ্যা শচীর প্রতি অসীম শ্রদ্ধায় তার মন ভরে উঠলো। কারণ, মন সে আগেই দিয়েছে তার গানের মাস্টার প্রশান্তকে। শিক্ষিত সচ্চরিত্র যুবক প্রশান্ত দরিদ্র বলে মৃণালিনীর পছন্দ নয়। শচী ও সন্ধ্যার সম্পর্ক যাই দাঁড়াক না কেন দুই মায়ের চক্রান্তে বিয়ের কথা পাকা হয়ে গেল। শকুন্তলা তখন কাঞ্চনপুরে রমানাথের বাড়িতে। শকুন্তলার দেখতে ফুট ফুটে ছেলে হয়েছে। সুন্দর চোখ রমানাথ পত্র লিখে শুভ সংবাদটা ফটিকজলে জমিদারবাড়িতে পাঠালো। কিন্তু চতুর মুকুন্দ, জমিদার গৃহিণীকে বোঝালো, এটা ধাপ্পাবাজি ছাড়া আর কিছুই নয়। রমানাথ নিশ্চয়ই শচীর দ্বিতীয় বিয়ের খবর পেয়েছে তাই এই চাল।
এই বিচ্ছেদ আনল স্বামী-স্ত্রীর মাঝে ভুল বোঝার কাঁটাতারের বেড়া। ওদিকে মুকুন্দকে কলকাতায় পাঠিয়ে মা তার সইয়ের মেয়ে সন্ধ্যার সঙ্গে ছেলের বিয়ের প্রস্তাব করে পাঠালেন। সন্ধ্যার মা মৃণালিনী প্রস্তাব মঞ্জুর করলেন। কিন্তু বিধিলিপির এমনই খেলা যে দেখতে এসে শচী সন্ধ্যাকে বোনের মতোই ভালোবেসে ফেলল আর সন্ধ্যা শচীর প্রতি অসীম শ্রদ্ধায় তার মন ভরে উঠলো। কারণ, মন সে আগেই দিয়েছে তার গানের মাস্টার প্রশান্তকে। শিক্ষিত সচ্চরিত্র যুবক প্রশান্ত দরিদ্র বলে মৃণালিনীর পছন্দ নয়। শচী ও সন্ধ্যার সম্পর্ক যাই দাঁড়াক না কেন দুই মায়ের চক্রান্তে বিয়ের কথা পাকা হয়ে গেল। শকুন্তলা তখন কাঞ্চনপুরে রমানাথের বাড়িতে। শকুন্তলার দেখতে ফুট ফুটে ছেলে হয়েছে। সুন্দর চোখ রমানাথ পত্র লিখে শুভ সংবাদটা ফটিকজলে জমিদারবাড়িতে পাঠালো। কিন্তু চতুর মুকুন্দ, জমিদার গৃহিণীকে বোঝালো, এটা ধাপ্পাবাজি ছাড়া আর কিছুই নয়। রমানাথ নিশ্চয়ই শচীর দ্বিতীয় বিয়ের খবর পেয়েছে তাই এই চাল।
অতএব রমানাথের চিঠি ধামাচাপাই রইল। পুরুত এলো দিন দেখতে। কিন্তু শশীকান্ত কঠিন হয়ে বলে এ হতেই পারে না। শকুন্তলাকে আমি কথা দিয়েছি তাকে আমি ত্যাগ করবো না। ছেলের জিদ ভাঙতে না পেরে মা ঠাকুর ঘরে গিয়ে অন্নজল ত্যাগ করলেন। একদিন যায়, দু’ দিন যায়, তিনদিনের দিন শচী এসে মাকে কথা দিল, বিয়ে হবে। সন্ধ্যার বিয়ে নিশ্চয়ই হবে। বিয়ের দিনস্থির হল। ওদিকে সন্ধ্যার মুখে প্রশান্তর কলেজের বন্ধুরা সব শুনে ছুটলো কাঞ্চনপুরে রমানাথকে খবর দিতে। শকুন্তলা উতলা হয়ে উঠল বললে আমি সেখানে যাব আমাকে নিয়ে চলো দাদা। আর খোকাকে নিয়ে বাড়ি এসে পৌঁছল। শচীকান্তের মা স্তম্ভিত। শকুন্তলার সত্যিই খোকা হয়েছে চাঁদের মতো ফুটফুটে ছেলে। তার বংশের প্রদীপ রমানাথের চিঠিখানা কে অবিশ্বাস করে তারা আজকে এ সংকটের মুখে পড়েছে। কিন্তু শচীকান্তকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না অবশেষে সকলের পরিত্রাতা হয়ে শচিকান্ত উপস্থিত হয় এবং সন্ধ্যার সাথে প্রশান্তর বিবাহ হয়ে যায়।
এ কাহিনিকে অবলম্বন করে বিজয় গুপ্তের চিত্রনাট্য যথাযথভাবে নাগরিক সমাজকে উপহার দিয়েছিল বৈবাহিক জীবনের আদর্শের কথা। যা আজও তৎকালীন যুগের মতো আদর্শমান যুবকের চরিত্রে উজ্জ্বল হয়ে আছে উত্তমকুমার নামক একজন ক্ষণজন্মা অভিনেতা।
যাঁরা বলেন, উত্তমকুমার জীবনের শেষ এক দশক শুধু চরিত্রা ভিনেতা হিসাবে নিজেকে প্রকাশ করেছেন বা ‘নায়ক’-র পরই ওঁর এই উত্তরণ ঘটেছে, তাঁদের মনে রাখা দরকার, যদি প্রথম থেকে তার ফিল্মোগ্রাফ বিশ্লেষণ করা যায় তাহলে বোঝা যাবে জীবনের প্রথম ছবি থেকেই উনি নিপাট চরিত্রাভিনেতা হিসাবেই কাজ করেছেন তবেই এধরনের ছবিগুলো উনি করতে পেরেছিলেন।—চলবে
এ কাহিনিকে অবলম্বন করে বিজয় গুপ্তের চিত্রনাট্য যথাযথভাবে নাগরিক সমাজকে উপহার দিয়েছিল বৈবাহিক জীবনের আদর্শের কথা। যা আজও তৎকালীন যুগের মতো আদর্শমান যুবকের চরিত্রে উজ্জ্বল হয়ে আছে উত্তমকুমার নামক একজন ক্ষণজন্মা অভিনেতা।
যাঁরা বলেন, উত্তমকুমার জীবনের শেষ এক দশক শুধু চরিত্রা ভিনেতা হিসাবে নিজেকে প্রকাশ করেছেন বা ‘নায়ক’-র পরই ওঁর এই উত্তরণ ঘটেছে, তাঁদের মনে রাখা দরকার, যদি প্রথম থেকে তার ফিল্মোগ্রাফ বিশ্লেষণ করা যায় তাহলে বোঝা যাবে জীবনের প্রথম ছবি থেকেই উনি নিপাট চরিত্রাভিনেতা হিসাবেই কাজ করেছেন তবেই এধরনের ছবিগুলো উনি করতে পেরেছিলেন।—চলবে
* উত্তম কথাচিত্র (Uttam Kumar – Mahanayak – Actor) : ড. সুশান্তকুমার বাগ (Sushanta Kumar Bag), অধ্যাপক, সংস্কৃত বিভাগ, মহারানি কাশীশ্বরী কলেজ, কলকাতা।