স্বামীজি, রামকৃষ্ণদেব ও শ্রীমা।
শ্রীরামকৃষ্ণ, শ্রীশ্রীমা জগদম্বার কাছে প্রার্থনা করেছিলেন, “মা, আমাকে শুকনো সাধু করিসনি, রসে বশে রাখিস।” তিনি ছিলেন শুদ্ধ বুদ্ধ মুক্ত স্বভাব। অহেতুক প্রেমের পরাকাষ্ঠা। তিনি ছিলেন ভালোবাসার ঘনীভূত প্রকাশ স্বরূপ। জগতের প্রত্যক্ষ জ্ঞান থাকা সত্ত্বেও তার মধ্যে ছিল অপূর্ব ত্যাগ ও প্রেমের মিশ্রণ। তিনি এক অপূর্ব বন্ধনে জগতের উচ্চ, নীচ, ধনী, দরিদ্র সবাইকে ভালোবাসার বন্ধনে বদ্ধ করেছিলেন।
একবার শ্রী মথুরবাবুর সঙ্গে কাশী, বৃন্দাবন তীর্থ দর্শনীয় জায়গার যাওয়ার কালে বৈদ্যনাথের নিকটবর্তী কোনও গ্রামের ভিতর দিয়ে যাওয়ার সময় গ্রামবাসীর দুঃখ দারিদ্র দেখে শ্রীরামকৃষ্ণের হৃদয় একেবারে করুণায় পূর্ণ হল। মথুরকে বললেন, “তুমি তো মা-র দেওয়ান। এদের একমাথা করে তেল ও একখানা করে কাপড় দাও। আর পেটটা ভরে একদিন খাইয়ে দাও।” মথুরবাবু প্রথম একটু পিছুপাও হলেন, বললেন ‘বাবা, তীর্থে অনেক খরচ হবে, এও দেখছি অনেকগুলি লোক। এদের খাওয়াতে দাওয়াতে গেলে টাকার অনটন হয়ে পড়তে পারে। এ অবস্থায় কী বলেন?’
সে কথা শুনে কে? ঠাকুরের তখন গ্রামবাসীদের দুঃখ দেখে চোখে অনবরত জল পড়ছে, হৃদয়ে অপূর্ব করুণার আবেশ হয়েছে। বললেন, “দূর শালা তোর কাশী, আমি যাব না। আমি এদের কাছেই থাকব। এদের কেউ নেই। এদের ছেড়ে যাবো না।” এই বলে বালকের মতো গোঁ ধরে দরিদ্রদের মধ্যে গিয়ে বসলেন। তাঁর ঐরূপ করা দেখে মথুরবাবু তখন কলকাতা হতে কাপড় আনিয়ে শ্রীশ্রী ঠাকুরের কথা মতো সকল কাজ করলেন। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ গ্রামবাসীদের আনন্দ দেখে আনন্দে আটখানা হয়ে তাদের কছে বিদায় নিয়ে হাসতে হাসতে মথুরের সঙ্গে কাশী গেলেন।
সে কথা শুনে কে? ঠাকুরের তখন গ্রামবাসীদের দুঃখ দেখে চোখে অনবরত জল পড়ছে, হৃদয়ে অপূর্ব করুণার আবেশ হয়েছে। বললেন, “দূর শালা তোর কাশী, আমি যাব না। আমি এদের কাছেই থাকব। এদের কেউ নেই। এদের ছেড়ে যাবো না।” এই বলে বালকের মতো গোঁ ধরে দরিদ্রদের মধ্যে গিয়ে বসলেন। তাঁর ঐরূপ করা দেখে মথুরবাবু তখন কলকাতা হতে কাপড় আনিয়ে শ্রীশ্রী ঠাকুরের কথা মতো সকল কাজ করলেন। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ গ্রামবাসীদের আনন্দ দেখে আনন্দে আটখানা হয়ে তাদের কছে বিদায় নিয়ে হাসতে হাসতে মথুরের সঙ্গে কাশী গেলেন।
আরও পড়ুন:
অনন্ত এক পথ পরিক্রমা, পর্ব-৪৮: প্রেম—একমাত্র প্রেমই আমি প্রচার করিয়া থাকি: স্বামীজি
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৫৬: ভয়ের না ‘অভয়ের বিয়ে’
যিনি সর্বদাই ভগবত প্রেমের আস্বাদন করে থাকেন, তিনিই আজ মানব প্রেমে মজেছেন। যিনি জগতকে শ্রীশ্রী ভবতারিণীর মধ্যে বিলীন হতে দেখেছেন; তিনি আজ জগতের মাকে সকল জনের মধ্যে দেখে করুনায় আপ্লুত হয়ে পড়েছেন। যাঁর চৈতন্যে জগৎ চৈতন্যময়, সেই চৈতন্যকে তিনি সকলের মধ্যে দেখে, তাদের সঙ্গে একাত্ম অনুভব করছেন। শ্রীরামকৃষ্ণদেবের অনুবাদক স্বামী বিবেকানন্দ, এই নববেদান্তের আলোকে উদ্বুদ্ধ হয়ে নতুন সংযোজন করলেন। যিনি জগতে পরিব্যপ্ত তিনি প্রত্যেকের অন্তরে অবস্থান করছেন।
আরও পড়ুন:
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৭৭: আস্তাবলে সহিসদের রাখি পরাতে রবীন্দ্রনাথ ছুটে গিয়েছিলেন
দশভুজা, শক্তিরূপেন সংস্থিতা, পর্ব-২: একলা চলো রে…
স্বামী বিবেকানন্দ তৎকালীন মাদ্রাজে পদত্ত ‘ভারতের ভবিষ্যৎ’ বক্তব্যে বলছেন, “অবশ্যক চিত্তশুদ্ধি। কীভাবে এই চিত্তশুদ্ধি হইবে? প্রথমে চাই পুজো বিরাটের পুজো; তোমার সম্মুখে-তোমার চারিদিকে যাহারা রহিয়াছেন, তাহাদের পুজো। ইহাদের পুজো করিত হইবে সেবা নহে; ‘সেবা’ বললে আমার অভিপ্রেত ভাব ঠিক বুঝাইবে না। ‘পুজো’ শব্দেই ভাবটি ঠিক প্রকাশ করা যায়। এইসব মানুষ ও পশু, ইহারাই তোমার ঈশ্বর, আর তোমার স্বদেশবাসীগণই তোমার প্রথম উপাস্য। পরস্পরের প্রতি দ্বেষ-হিংসা পরিত্যাগ করিয়া ও পরস্পর বিবাদ না করিয়া প্রথমেই এই স্বদেশবাসিগণের পূজা করিতে হইবে।”
আর এক স্থানে স্বামীজী বলছেন—
“ঈশ্বর কী? তাহলে বলতে হইবে ঈশ্বর প্রেম স্বরূপ।…এরূপ অনাদি অনন্ত ঈশ্বর সর্ব ভূতে বিরাজমান।”
শ্রীশ্রী চণ্ডীতে আছে, “যা দেবী সর্বভূতেষু চেত্যনেত্যভিধীয়তে। নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ।।”
যিনি সর্বভূতে চেতনা রূপে বিরাজমান। সেই জগতের মা কে বারংবার নমস্কার করি।
আর এক স্থানে স্বামীজী বলছেন—
“ঈশ্বর কী? তাহলে বলতে হইবে ঈশ্বর প্রেম স্বরূপ।…এরূপ অনাদি অনন্ত ঈশ্বর সর্ব ভূতে বিরাজমান।”
শ্রীশ্রী চণ্ডীতে আছে, “যা দেবী সর্বভূতেষু চেত্যনেত্যভিধীয়তে। নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ।।”
যিনি সর্বভূতে চেতনা রূপে বিরাজমান। সেই জগতের মা কে বারংবার নমস্কার করি।
আরও পড়ুন:
এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-৫০: কুষ্টি বিচার, না কি রক্ত বিচার! জরুরি কোনটা?
এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-২৭: হিন্দু-মুসলিম মিশ্র দেবতা সত্যনারায়ণ ও সত্যপীর
শ্রীশ্রীমায়ের জগতে প্রত্যেকটি জীবের প্রতি ছিল সন্তান ভাব। শ্রীমায়ের মমতা যেমন মানুষের প্রতি তেমন ভাবে ইতর জীবজন্তুদের প্রতিও সমান ভাবে কাজ করত। গোয়ালে বাছুর যখন পেটের ব্যথার কষ্ট মায়ের হাতের স্পর্শে শান্ত হত অথবা চন্দনা গঙ্গারাম মায়ের হাতের ছোলা জল খাওয়ার জন্য ডাক ‘মা ওমা’; আর শ্রীমায়ের যাই বাবা বলাতে শান্ত হওয়া। সঙ্গে অগণিত ভক্ত সন্তানের চাহিদা পূরণ; সবই শ্রীশ্রী মায়ের মাতৃত্বের এলাকার অন্তর্ভুক্ত। বিশ্বজনীন প্রেমের প্রতিচ্ছবি মায়ের শরীর মন জুড়ে সবসময় বিচরণ করত। শ্রীরামকৃষ্ণ, শ্রীশ্রীমা ও স্বামীজি বিশ্বপ্রেম ধারণের তিন পাত্র বিশেষ। —চলবে।
* অনন্ত এক পথ পরিক্রমা (Ananta Ek Patha Parikrama) : স্বামী তত্ত্বাতীতানন্দ (Swami Tattwatitananda), সম্পাদক, রামকৃষ্ণ মিশন, ফিজি (Fiji)।