মঙ্গলবার ৯ জুলাই, ২০২৪


ছবি: প্রতীকী। সংগৃহীত।

মনঃসংযোগ বাড়ানোর সবথেকে সহজ উপায় হল, শরীরচর্চা বা যোগাভ্যাস। এর কোনও বিকল্প নেই। মনঃসংযোগ বাড়াতে, অশান্ত মনকে প্রশান্ত করতে, একাগ্রতা বাড়াতে, মস্তিষ্কের অবসাদ দূর করতে, মানসিক চাপ কমাতে, দুশ্চিন্তামুক্ত হতে, স্মরণশক্তিহীনতায়, শরীর সতেজ রাখতে যোগাভ্যাসের গুরুত্ব অপরিসীম। এক একটি ব্যায়াম একাধিক শারীরিক ও মানসিক সমস্যার মুশকিল আসান করে। এই প্রতিবেদনে সেইসব যোগাভ্যাস নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে যেগুলি নিয়ম মেনে ও নিয়মিত করলে সহজেই মনঃসংযোগ বাড়বে।
 

অর্ধকূর্মাসন

পদ্ধতি: হাঁটু গেড়ে পায়ের পাতার ওপর বসুন। হাঁটু দুটি জোড়া থাকবে। এবার হাত দুটি সোজা করে ওপরে তুলে নমস্কারের ভঙ্গিতে জোড় করুন। হাত কানের সঙ্গে ঠেকে থাকবে। এরপর সামনে ঝুঁকে প্রণাম করুন। পেট ও বুক ঊরুর সঙ্গে এবং কপাল মাটিতে লেগে থাকবে। লক্ষ রাখবেন, নিতম্ব যেন গোড়ালির সঙ্গে লেগে থাকে। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে মনে মনে কুড়ি থেকে ক্রমশ বাড়িয়ে তিরিশ গুনুন। তারপর হাত ওই অবস্থায় রেখে উঠুন। শবাসনে বিশ্রাম নিন। এরূপ তিনবার অভ্যাস করুন।
উপকারিতা: মনঃসংযোগ বৃদ্ধিতে, মানসিক চাপ কমাতে, একাগ্রতা বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়াও অজীর্ণ, অম্বল, কোষ্ঠকাঠিন্য, পেটের অসুখ, আমাশা, ডায়াবেটিস, ক্ষুধামান্দ্য, বাত, হাঁপানি, লিভারের দোষ ও কোলাইটিস প্রভৃতি সমস্যায় অত্যন্ত উপকারী।

 

বিপরীতকরণী মুদ্রা

পদ্ধতি: চিত হয়ে শুয়ে পড়ুন। পা-দুটো জোড় করে ওপরের দিকে তুলুন এবং নিতম্ব দু-হাতের চেটো দিয়ে ঠেলে ধরুন। হাতের দু-কনুই দেহ বরাবর কাছাকাছি রাখুন। কোমর থেকে পা সোজা থাকবে।
অনেকে ভারসাম্যের জন্য মাথার দিকে দু-পা সামান্য হেলিয়ে অভ্যাস করেন। মুদ্রাতে বিশেষ শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যবস্থা আছে। প্রশিক্ষকের নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাসে মনে মনে দশ থেকে ক্রমশ বাড়িয়ে তিরিশ পর্যন্ত গুনুন।
উপকারিতা: মনঃসংযোগ বৃদ্ধিতে, মানসিক চাপ কমাতে, একাগ্রতা বাড়াতে, মস্তিষ্কের অবসাদে খুব কাজ দেয়। তবে মাথা ঘোরা, নার্ভাস, চিন্তা, লো ব্লাড প্রেশার প্রভৃতিতেও আসনটি অতি ফলদায়ক। এছাড়া হার্নিয়া ও কোষ্ঠকাঠিন্যেও বিশেষ উপকার পাওয়া যায়।
 

শশঙ্গাসন

পদ্ধতি: বজ্রাসনের ভঙ্গিতে বসে হাতের বুড়ো আঙুল বাইরের দিকে রেখে দু-হাত দিয়ে দু-পায়ের গোড়ালি ধরুন। সামনের দিকে ঝুঁকে হাতের তালু হাঁটুর সামনে মাটিতে রাখুন। কপাল হাঁটুতে ঠেকে থাকবে। ডিগবাজি খাওয়ার ভঙ্গিতে নিতম্ব ওপর দিকে তুলুন (কিন্তু ডিগবাজি খাবেন না)। এ অবস্থায় স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাসে মনে মনে দশ থেকে ক্রমশ বাড়িয়ে তিরিশ পর্যন্ত গুনুন এবং শবাসনে বিশ্রাম নিন। তিনবার অভ্যাস করুন।
উপকারিতা: মনঃসংযোগ বৃদ্ধিতে, মানসিক চাপ কমাতে, একাগ্রতা বাড়াতে, স্মরণশক্তিহীনতা, মস্তিষ্কের অবসাদ দূরীকরণে এর বিকল্প নেই। তবে সর্দিকাশি, টনসিলের দোষ, উচ্চতা বৃদ্ধি, নিদ্রাহীনতা, মৃগী, কর্ণপ্রদাহ, নাকের ভিতর পলিপাস, মাথাধরা, স্বরভঙ্গ, সাইনুসাইটিস ও হাঁপানিতে এই আসন বেশ কাজের।

আরও পড়ুন:

হুঁকোমুখোর চিত্রকলা, পর্ব-৭: বিপৎকালে দেখতে পাই, রাখাল ছাড়া বন্ধু নাই…

সারা-সোনমেরও পিসিওডির সমস্যা রয়েছে, আপনি সুস্থ থাকতে কী খাবেন, আর কোনগুলি এড়িয়ে চলবেন?

 

হলাসন

প্রথম পদ্ধতি: চিত হয়ে শুয়ে হাত দুটি পাশে রাখুন। পা-দুটি জোড় অবস্থায় মাটি থেকে তুলে আস্তে আস্তে মাথার পেছনে নিয়ে যান এবং পায়ের আঙুলগুলি মাটিতে ঠেকান। দু-হাঁটু যেন না বাঁকে, চিবুক বুকের সঙ্গে লেগে থাকবে।
দ্বিতীয় পদ্ধতি: কেউ কেউ হাত দুটি মাথার ওপর মাটিতে রেখে ডানহাত দিয়ে বাঁ-কনুই এবং বাঁ-হাত দিয়ে ডান-কনুই ধরেন। স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাসে এই অবস্থায় মনে মনে দশ থেকে ক্রমশ বাড়িয়ে তিরিশ গুনুন। তিনবার অভ্যাস করুন। প্রতিবারের পর শবাসনে বিশ্রাম নিন।
উপকারিতা: মনঃসংযোগ বৃদ্ধিতে ও মানসিক চাপ কমাতে এই আসন বেশ ভালো। পাশাপাশি সর্দিকাশি, ব্রঙ্কাইটিস, কানের যন্ত্রণা প্রভৃতিও উপশম হয়। তাছাড়া স্বপ্নদোষ, লো-ব্লাডপ্রেশার, মৃগীরোগ, কানে কম শোনা প্রভৃতিতেও কাজ করে।
 

ভ্রামরী

পদ্ধতি: সুখাসনে বা বজ্রাসনে বসে দু-হাতের আঙুল দিয়ে দু-কানের ছিদ্র বন্ধ করুন। এরপর নাক দিয়ে শ্বাস নেওয়ার পর ভ্রমরের মতো গুঞ্জন করতে করতে নাক দিয়ে শ্বাস ছাড়ুন। ছাড়ার সময় কানের পর্দায় এক কম্পন অনুভূত হবে। শ্বাস নিয়ে গুঞ্জন করে শ্বাস ছাড়াকে একবার বলে। ক্ষমতা অনুযায়ী পাঁচ থেকে তিরিশ সেকেন্ড পর্যন্ত শ্বাস ছাড়া যেতে পারে। পরপর ছ’বার করে শবাসনে বিশ্রাম নিন।
উপকারিতা: একাগ্রতা বৃদ্ধি, মনঃসংযোগ নিয়ন্ত্রণ, মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তায় খুব উপকারী। সেইসঙ্গে কানে কম শোনা, কর্ণপ্রদাহ প্রভৃতিতেও উপকার পাওয়া যায়। তাছাড়া স্বরভঙ্গ ও গলা পরিষ্কার রাখতে সহায়তা করে।

আরও পড়ুন:

রাস্তায় গাড়ি পার্ক করে রাখেন? কোন ৫টি বিষয়ে সতর্ক না থাকলেই সারাইকর্মীর কাছে ছুটতে হতে পারে?

এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৬: নাম দিয়ে যায় চেনা

 

মৎস্যাসন

পদ্ধতি: পদ্মাসন করে দুটি কনুইয়ের সাহায্যে চিত হয়ে শুয়ে পড়ুন। হাত দুটি মাথার দু-পাশে মাটিতে রেখে তার ওপর ভর দিয়ে পিঠটাকে মাটি থেকে তুলুন। ঘাড় হেলিয়ে দিয়ে মাথার তালু মাটির ওপর রাখুন। এবার দু-হাত দিয়ে দু-পায়ের বুড়ো আঙুল ধরে টানুন আর বুক উঁচু করুন। কনুই মাটিতে লাগান। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে মনে মনে দশ থেকে ক্রমশ বাড়িয়ে তিরিশ গুনুন। এরপর হাত মাথার পাশে এনে পিঠ আলগা ও মাথা সোজা করে শবাসনে বিশ্রাম নিন। এরূপ তিনবার।
উপকারিতা: মনঃসংযোগ বৃদ্ধিতে, মস্তিষ্কের অবসাদ, মানসিক চাপ কমাতে, একাগ্রতা বাড়াতে, মস্তিষ্কের অবসাদের জন্য খুব কাজের। তবে ব্রঙ্কাইটিস, হাঁপানি, টনসিল, সর্দিকাশি, পাঁজরার গঠনের দোষ, ফেরিঞ্জাইটিস, স্বরভঙ্গ, কটিবাত, মাথাধরা, অনিদ্রা ও দৃষ্টিশক্তি হীনতায়ও ভালো কাজ পাওয়া যায়।

এই কয়েকটি যোগাভ্যাস যদি নিয়ম মেনে নিয়মিত করা যায় তাহলে অচিরেই তাঁর মনঃসংযোগ বাড়বে। এইসব যোগাভ্যাস করার ক্ষেত্রে বয়স কোনও বাধা নয়।


Skip to content