ছবি সংগৃহীত।
বিরাধ রাক্ষস তার মুক্তিকালে রামকে জানিয়ে গিয়েছিল, এই গভীর, ভয়াল দণ্ডকারণ্যে নিরাপদ, নির্ভয় আশ্রয়ের ঠিকানা — শরভঙ্গ মুনির আশ্রম। সেখান থেকে সার্ধ যোজন দূরত্ব তার। রাম উপলব্ধি করলেন এই দুর্গম অরণ্যে লক্ষ্যহীন ভাবে পথ চলা দুষ্কর। কাজেই শরভঙ্গ মুনির আশ্রমেই যাবেন তাঁরা। কিন্তু বিরাধ রাক্ষসের অতর্কিত আক্রমণে, শারীরিক নিগ্রহে দেহে-মনে বিপর্যস্ত হয়ে আছেন সীতা। রাম আশ্বস্ত করলেন তাঁকে। কাছে টেনে নিয়ে সস্নেহে দিলেন সান্ত্বনার চন্দনস্পর্শ। লাঞ্ছনা, অপমানবোধ কাটিয়ে উঠলেন সীতা ধীরে ধীরে। এবার রাম, লক্ষ্মণ, সীতা পা বাড়ালেন শরভঙ্গমুনির আশ্রমের উদ্দেশ্যে।
শরভঙ্গ মুনির আশ্রমের কাছে আসতেই তাঁরা এক অদ্ভূত দৃশ্য দেখতে পেলেন। আশ্রমে উজ্জ্বল বেশভূষায় সুসজ্জিত, অলংকৃত, অনলপ্রভ এক পুরুষ ভূমি স্পর্শ না করে শরভঙ্গ মুনির সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। তাঁরই মতো আরো অনেক দিব্যকান্তি পুরুষ তাঁর পরিচর্যায় ব্যস্ত। রূপে তাঁরা সকলেই যেন পঁচিশ বছরের যুবাপুরুষ। সেই পরমসুন্দর তেজস্বী পুরুষের মাথার উপর বিচিত্র মালায়, সোনার আভূষণে সজ্জিত শ্বেতকান্তি ছত্র, যেন মনে হচ্ছে, আকাশে পূর্ণ চাঁদের শোভা। দুই দিব্যকান্তি সেবিকা তাঁর দুই দিকে দাঁড়িয়ে মহামূল্য চামরে বাতাস করছে। অন্তরীক্ষলোকে বহু মহর্ষি, গন্ধর্ব, দেবতারা তাঁর স্তব করছেন।
শরভঙ্গ মুনির আশ্রমের কাছে আসতেই তাঁরা এক অদ্ভূত দৃশ্য দেখতে পেলেন। আশ্রমে উজ্জ্বল বেশভূষায় সুসজ্জিত, অলংকৃত, অনলপ্রভ এক পুরুষ ভূমি স্পর্শ না করে শরভঙ্গ মুনির সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। তাঁরই মতো আরো অনেক দিব্যকান্তি পুরুষ তাঁর পরিচর্যায় ব্যস্ত। রূপে তাঁরা সকলেই যেন পঁচিশ বছরের যুবাপুরুষ। সেই পরমসুন্দর তেজস্বী পুরুষের মাথার উপর বিচিত্র মালায়, সোনার আভূষণে সজ্জিত শ্বেতকান্তি ছত্র, যেন মনে হচ্ছে, আকাশে পূর্ণ চাঁদের শোভা। দুই দিব্যকান্তি সেবিকা তাঁর দুই দিকে দাঁড়িয়ে মহামূল্য চামরে বাতাস করছে। অন্তরীক্ষলোকে বহু মহর্ষি, গন্ধর্ব, দেবতারা তাঁর স্তব করছেন।
কে এই দ্যুতিমান পুরুষ? বিস্ময়ে আবিষ্ট হয়ে তাঁরা আরও এগিয়ে এসে দেখতে পেলেন, আকাশপথে একটি রথ। রথের ঘোড়াগুলি হরিৎ বর্ণের। তাহলে ইনি নিশ্চয়ই দেবরাজ ইন্দ্র, অনুমান করলেন রাম। তবুও সংশয়ের ঘোর কাটে না। সীতার সঙ্গে লক্ষ্মণকে অপেক্ষা করতে বলে আশ্রমে গিয়ে বিষয়টি জেনে আসতে চাইলেন রাম। কিন্তু দেবরাজ ইন্দ্র ততক্ষণে জেনে নিয়েছেন রামের উপস্থিতির কথা। তিনি জানেন, এরপর রামের জন্য অপেক্ষা করছে অতি দুষ্কর কাজ। সে কাজ দেবতাদের পক্ষেও দুঃসাধ্য। অরি দমন করে অরিন্দমরূপী বিজয়ী বীর রামের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন তিনি। বজ্রধারী ইন্দ্র শরভঙ্গ মুনির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলেন।
রাম সে দৃশ্য দেখতে পেয়ে লক্ষ্মণ ও সীতাকে সঙ্গে নিয়েই প্রবেশ করলেন আশ্রমে। সেখানে সসম্মানে সমাদরে অভ্যর্থনা পেলেন তাঁরা। রাম মুনির কাছে জানতে চাইলেন, ইন্দ্রের আগমনের কারণ। প্রত্যুত্তরে মুনি জানালেন, কঠোর তপস্যা করেছিলেন তিনি। সে তপস্যার বলে ব্রহ্মলোক জয় করেছেন। স্বয়ং দেবরাজ এসেছিলেন সেখানে তাঁকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। কিন্তু তাহলে গেলেন না কেন মুনিবর? শরভঙ্গ জানালেন, তিনি যোগবলে জানতে পেরেছিলেন, রাম আসবেন তাঁর আশ্রমে। প্রিয় অতিথির সঙ্গে সাক্ষাৎ না করে যে যেতে ইচ্ছা হল না তাঁর। উগ্র তপঃশক্তিতে বহু লোক জয় করেছেন মুনি।
রাম সে দৃশ্য দেখতে পেয়ে লক্ষ্মণ ও সীতাকে সঙ্গে নিয়েই প্রবেশ করলেন আশ্রমে। সেখানে সসম্মানে সমাদরে অভ্যর্থনা পেলেন তাঁরা। রাম মুনির কাছে জানতে চাইলেন, ইন্দ্রের আগমনের কারণ। প্রত্যুত্তরে মুনি জানালেন, কঠোর তপস্যা করেছিলেন তিনি। সে তপস্যার বলে ব্রহ্মলোক জয় করেছেন। স্বয়ং দেবরাজ এসেছিলেন সেখানে তাঁকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। কিন্তু তাহলে গেলেন না কেন মুনিবর? শরভঙ্গ জানালেন, তিনি যোগবলে জানতে পেরেছিলেন, রাম আসবেন তাঁর আশ্রমে। প্রিয় অতিথির সঙ্গে সাক্ষাৎ না করে যে যেতে ইচ্ছা হল না তাঁর। উগ্র তপঃশক্তিতে বহু লোক জয় করেছেন মুনি।
আরও পড়ুন:
শাশ্বতী রামায়ণী, পর্ব-৪০: নরমাংসলোলুপ রাক্ষস না কি সুরলোকের অভিশপ্ত গন্ধর্ব?
মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৪: অপবাদ এবং রামচন্দ্রের সুশাসনের রামরাজত্ব
মহাভারতের আখ্যানমালা, পর্ব-৫৮: দেবতাদের আশীর্বাদে আর অর্ব্বাবসুর প্রার্থনায় যবক্রীত বেদজ্ঞান লাভ করলেন
রামকে উপযুক্ত মনে করে তাঁকে স্নেহভরে দিতে চাইলেন সেই শতশত বছরের সঞ্চিত সুকৃত ফল। সর্বশাস্ত্রবিদ রাম বিনীতভাবে বললেন, “ব্রহ্মন, আমি নিজেই নিজের সামর্থ্য বলে উপযুক্ত লোকসমূহ অর্জন করব। আমরা আপনার অতিথিসৎকারে অভিভূত। আপনি শুধু এই গভীর অরণ্যের মধ্যে বসবাসের উপযুক্ত স্থান আমাদের জানিয়ে দিন। শরভঙ্গ মুনি তাঁদের যেতে বললেন, সুতীক্ষ্ণ ঋষির আশ্রমে। তপোধন সুতীক্ষ্ণই তাঁদের আবাস স্থল নির্দেশ করে দেবেন। মন্দাকিনী নদীর প্রবাহের বিপরীত দিকে গেলে পৌঁছনো যাবে তাঁর আশ্রমে।
আশ্রম ছেড়ে যাওয়ার আগে রামের প্রতি শরভঙ্গ মুনির অনুরোধ ক্ষণকাল অপেক্ষার। কিন্তু কেন? জীর্ণ শরীরটি ছেড়ে চলে যাবেন মুনিবর। সাপ যেমন তার পুরনো খোলস ত্যাগ করে, এ ও ঠিক তেমনই। রামের সামনেই সে দৃশ্য ঘটল। মন্ত্রোচ্চারণ করে জ্বলন্ত অগ্নিশিখায় আহুতি প্রদান করে তার মধ্যে নিজেই প্রবেশ করলেন মুনিবর। আগুনের দীপ্ত শিখা ঘিরে ধরল তাঁর জপে-তপে জীর্ণ শরীরটি। দগ্ধ হল তাঁর রোম, কেশরাজি, ত্বক, অস্থি, মাংস, তাঁর স্থূলশরীর। আর আগুনের মধ্য থেকে উঠে এলেন অগ্নিসম দীপ্তিময় এক কুমার। ঋষিলোক ও দেবলোক অতিক্রম করে তিনি তারও উর্দ্ধে মিলিয়ে গেলেন ব্রহ্মলোকে।
আশ্রম ছেড়ে যাওয়ার আগে রামের প্রতি শরভঙ্গ মুনির অনুরোধ ক্ষণকাল অপেক্ষার। কিন্তু কেন? জীর্ণ শরীরটি ছেড়ে চলে যাবেন মুনিবর। সাপ যেমন তার পুরনো খোলস ত্যাগ করে, এ ও ঠিক তেমনই। রামের সামনেই সে দৃশ্য ঘটল। মন্ত্রোচ্চারণ করে জ্বলন্ত অগ্নিশিখায় আহুতি প্রদান করে তার মধ্যে নিজেই প্রবেশ করলেন মুনিবর। আগুনের দীপ্ত শিখা ঘিরে ধরল তাঁর জপে-তপে জীর্ণ শরীরটি। দগ্ধ হল তাঁর রোম, কেশরাজি, ত্বক, অস্থি, মাংস, তাঁর স্থূলশরীর। আর আগুনের মধ্য থেকে উঠে এলেন অগ্নিসম দীপ্তিময় এক কুমার। ঋষিলোক ও দেবলোক অতিক্রম করে তিনি তারও উর্দ্ধে মিলিয়ে গেলেন ব্রহ্মলোকে।
আরও পড়ুন:
চেনা দেশ অচেনা পথ, পর্ব-১২: বাইগা রিসর্ট ও বস্তি
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-২৯: সুরের আকাশে ঘটালে তুমি স্বপ্নের ‘শাপমোচন’
পঞ্চমে মেলোডি, পর্ব-৪: পঞ্চমকে সিনেমা হলে বসিয়েই বেরিয়ে যান রীতা
শরভঙ্গ মুনি পার্থিব লোক ছেড়ে চলে গেলেন। তিনি চলে যাওয়ার পর তাঁর আশ্রমের চারদিক থেকে মুনিরা এসে রামকে ঘিরে ধরলেন। তাঁদের মধ্যে কেউ ফলমূলভোজী বৈখানস, কেউ বালখিল্য, কেউ শুধুই পর্ণ-আহারী বা নিরাহারী। কারও ক্ষতি সাধন করেন না তাঁরা। শুধু জনপদের কোলাহলবর্জিত এই গভীর অরণ্যে নিজেদের তপঃসাধনায় মগ্ন থাকতে চান। কিন্তু এই অরণ্যে রাক্ষসদের হাতে বহু বানপ্রস্থী, তপস্বী নিহত হচ্ছেন প্রতিদিন। পম্পা আর মন্দাকিনীর তীরে, চিত্রকূটে রাক্ষসদের এই উপদ্রব ক্রমে বেড়েই চলেছে।
আরও পড়ুন:
নাট্যকার গিরিশচন্দ্রের সন্ধানে, পর্ব-৩৩: ভক্তের বাড়িতে ভগবত প্রসঙ্গ সংকীর্তনের পর সেই স্থানের ধুলো গায়ে মাখতে শুরু করলেন রামকৃষ্ণদেব
স্বাদে-গন্ধে: একঘেয়ে কাতলা? স্বাদবদল করুন ‘কমলা কাতলা’ রেসিপিতে! রইল সহজ রেসিপি
বিশ্বসেরাদের প্রথম গোল, পর্ব-১১: ফুটবলের ব্ল্যাক প্যান্থার: লেভ ইয়াসিন
হেলদি ডায়েট: ঘি খেতে ভালোবাসেন? ঘিয়ের এই ১০টি গুণ জানতেন?
এই বিপদসংকুল অরণ্যভূমিতে তাঁরা যে বড় অসহায়, অরক্ষিত আজ। তাঁরা জানেন, ইক্ষ্বাকুকুলপুত্র মহাতেজস্বী রাম এসেছেন এই অরণ্যভূমিতে। তাঁর কাছেই আছে প্রাণরক্ষার রক্ষাকবচটি। তিনিই পারবেন, তাঁদের রক্ষা করতে। সকলে মিলে নিলেন তাঁরা রামের শরণাগতি — “রাম, এই অরণ্যে চলতে চলতে তুমি দেখতে পাবে, পড়ে আছে মুনিদের মৃতদেহ। এ নিগ্রহ, এ অত্যাচার আর সহ্য করতে পারছি না আমরা। হে রাঘব, আমরা অসহায় হয়ে তোমার শরণ নিয়েছি। তুমি নিজের বাহুবলে আমাদের রক্ষা করো। রাজার স্বভাবই হল যে বীরত্ব।”
সব শুনে মুনিদের আশ্বস্ত করলেন রাম। তাঁদের সকলকে সঙ্গে নিয়ে তিনি যাত্রা করলেন সুতীক্ষ্ণ মুনির আশ্রমের দিকে। বহুদূর পথ চলতে হবে এবার তাঁদের।—চলবে
সব শুনে মুনিদের আশ্বস্ত করলেন রাম। তাঁদের সকলকে সঙ্গে নিয়ে তিনি যাত্রা করলেন সুতীক্ষ্ণ মুনির আশ্রমের দিকে। বহুদূর পথ চলতে হবে এবার তাঁদের।—চলবে
* শাশ্বতী রামায়ণী (Saswati Ramayani – Ramayana) : ড. অমৃতা ঘোষ (Amrita Ghosh) সংস্কৃতের অধ্যাপিকা, আচার্য ব্রজেন্দ্রনাথ শীল মহাবিদ্যালয়। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও সম্পাদিত গ্রন্থে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর বেশ কিছু গবেষণাধর্মী প্রবন্ধ।