‘শ্রীবৎস চিন্তা’ নাটকের অভিনয়ের পর পৌরাণিক নাটক অভিনয়ের যুগ শেষ হয়। এই যুগে নাটকের নৃত্য গীত আগের থেকে অনেক বেড়ে গিয়েছিল এবং অভিনয়ের কতটা পরিবর্তন ঘটেছিল। অমৃতলাল বসু বলেছিলেন, “এই যুগ দর্শকদের রুচি পরিবর্তনের একটা মহাসন্ধি স্থল”। তারপর ‘চৈতন্য লীলা’র অভিনয় থেকেই হরিনামের যুগ আরম্ভ হয়। এই যুগেই গিরিশচন্দ্রের ‘প্রহ্লাদ চরিত’, ‘নিমাই সন্ন্যাস’, ‘প্রভাসযজ্ঞ’, ‘বিল্বমঙ্গল’, ‘রূপ সনাতন’ নাটকগুলোর অভিনয় হতে থাকে।
‘রূপ সনাতন’ নাটকের প্রথম অভিনয় হয়েছিল ১৮৮৭ সালের ২১ মে বিডন স্ট্রিটের স্টার থিয়েটারে। প্রথম দিনের অভিনয় রজনীতে যেসব শিল্পীরা অভিনয় করেছিলে। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন মহাপ্রভুর চরিত্রে অমৃতলাল মুখোপাধ্যায়, রূপের চরিত্রে উপেন্দ্রনাথ মিত্র, সনাতনের চরিত্রে অমৃত লাল মিত্র, ঈশানের চরিত্রে মহেন্দ্র নাথ চৌধুরী, সুবুদ্ধি চরিত্রে অমৃতলাল বসু, হোসেন শাহের চরিত্রে অঘোরনাথ পাঠক, মেসির খান হয়েছিলেন শ্যামাচরণ কুন্ডু, অলকার চরিত্রে বনবিহারিনী, চৌবে বালকের ভূমিকায় ভূষণ কুমারী, করুণা চরিত্রে গঙ্গা মণি, বিশাখা চরিত্রে কিরণবালা।
আরও পড়ুন:
নাট্যকার গিরিশচন্দ্রের সন্ধানে, পর্ব-৩২: গুর্মুখ হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে থিয়েটার ছাড়তে বাধ্য হতে হয়
পর্দার আড়ালে, পর্ব-২৯: অমরগীতি ছবিতে রাজাবাবু চরিত্রে তরুণ মজুমদারের প্রথম পছন্দ ছিলেন ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায়
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-২৯: সুরের আকাশে ঘটালে তুমি স্বপ্নের ‘শাপমোচন’
‘বিল্বমঙ্গল ঠাকুর’ এমন কি ‘বেল্লিক বাজার’ পর্যন্ত নাটক দর্শক সমাজে যেরকম উৎসাহ ও আনন্দের উচ্চতরঙ্গ তুলেছিল ‘রূপ সনাতন’ যদিও তা করতে পারেনি তথাপি এই নাটক রচনায় গিরিশচন্দ্র তাঁর বিশেষ শক্তিমত্তার পরিচয় দিয়েছিলেন। সুদক্ষ অভিনেতা অভিনেত্রীদের অভিনয়ও উৎকৃষ্ট হয়েছিল। এই নাটক প্রসঙ্গে একটা ঘটনার কথা অবশ্যই উল্লেখ করতে হয়। ‘রূপ সনাতন’ নাটকে চতুর্থ অংকের দ্বিতীয় গর্ভাঙ্কের একটি দৃশ্য রয়েছে যেখানে কাশীধামে রূপ, অনুপম ও বৈষ্ণব ভক্তপরিপূর্ণ চন্দ্রশেখরের বাড়িতে চৈতন্যদেব কর্তৃক ভক্তগণের পদধূলি গ্রহণ গিরিশচন্দ্র দেখিয়েছিলেন। দ্বিতীয় বৈষ্ণবের সংলাপ ”প্রভু করছেন কি?” চৈতন্যদেব “আমি কৃষ্ণ বিরহে বড় কাতর। এই ভক্তবৃন্দের পদরজ অঙ্গে ধারণ করছি। ভক্তের কৃপা হবে।”
আরও পড়ুন:
চেনা দেশ অচেনা পথ, পর্ব-১২: বাইগা রিসর্ট ও বস্তি
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৫৬: কবির ভালোবাসার পশুপাখি
পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-৭: ওখানে কে?
এমন দৃশ্যের অভিনয় দেখে কোনও কোনও বৈষ্ণব গোস্বামী অত্যন্ত বিরক্ত হন এবং মহাপ্রভুর এরকম ভক্ত পদধূলি অঙ্গে গ্রহণে বিরক্তি প্রকাশ করেন। এমনকি গিরিশচন্দ্র ঘোষকে নানান রকম কটুক্তিও করেন। গিরিশচন্দ্র এতে এতটুকু বিরক্ত হননি। বলেছিলেন, “আমি যে স্বচক্ষে পরমহংসদেবকে ভক্ত পদধূলি গ্রহণ করতে দেখেছি।” তিনি আরও বললেন, “আমি স্বয়ং বিশ্বাস রূপে উপলব্ধি না করে কোনও কথা লিখি না।”
আরও পড়ুন:
হেলদি ডায়েট: ঘি খেতে ভালোবাসেন? ঘিয়ের এই ১০টি গুণ জানতেন?
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি
বিশ্বসেরাদের প্রথম গোল, পর্ব-১১: ফুটবলের ব্ল্যাক প্যান্থার: লেভ ইয়াসিন
একদিন কোনও এক ভক্তের বাড়িতে ভগবত প্রসঙ্গ সংকীর্তনের পর রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব সেই স্থানের ধুলি নিয়ে গায়ে মাখতে শুরু করলেন। ভক্তগণ ব্যস্ত হয়ে তাঁকে বাধা দিতে গেলে, নিবারণ করতে গেলে ঠাকুর বললেন, ”কি জানো বহু ভক্তের সমাগমে এবং ঈশ্বরের কথা ও নাম সংকীর্তন পবিত্র হয়েছে এই স্হান। হরিনাম হলে হরি স্বয়ং তা শুনতে আসেন। ভক্ত স্পর্শে এই স্থানের মাটি পর্যন্ত পরম পবিত্র হয়েছে।” ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ যেখানে এত বড় কথা বলতে পারেন, সেখানে ‘রূপ সনাতন’ নাটকে গিরিশচন্দ্র যে কোন অন্যায় করেননি সে কথা তিনি জোর করেই বলতে পারেন। এমনই দৃঢ়তা ছিল গিরিশচন্দ্র ঘোষের।
* নাট্যকার গিরিশচন্দ্রের সন্ধানে (Girish Chandra Ghosh – Actor – Theatre) : ড. শঙ্কর ঘোষ (Shankar Ghosh) বিশিষ্ট অধ্যাপক ও অভিনেতা।