রবিবার ১৭ নভেম্বর, ২০২৪


রিভিউ: মিসেস চ্যাটার্জি ভার্সেস নরওয়ে
বিভাগ: হিন্দি লিগাল ড্রামা
পরিচালনা: অসীমা ছিবার
কাহিনি ও চিত্রনাট্য: সমীর সতিজা, অসীমা ছিবার, রাহুল হন্ডা।
অভিনয়: রানি মুখোপাধ্যায়, অনির্বাণ ভট্টাচার্য, জিম সার্ভ, বরুণ চন্দ, বোধিসত্ত্ব মজুমদার, শাশ্বতী গুহ ঠাকুরতা, নীনা গুপ্ত, মিঠু চক্রবর্তী প্রমুখ।


সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত এই ছবিতে এক ভারতীয় দম্পতিকে দেখানো হয়েছে, যাঁদের ছোট ছেলেমেয়েকে নরওয়ে সরকার না জানিয়ে নিজেদের হেফাজতে নেয়। গল্প আবর্তিত হয় কীভাবে মুখ্য চরিত্র দেবিকা চ্যাটার্জি (রানি মুখোপাধ্যায়) দীর্ঘ লড়াইয়ের পর নরওয়ে চাইল্ড ওয়েলফেয়ার সার্ভিসেস থেকে নিজের সন্তানদের অভিভাবকত্ব ফিরে পান। দেবিকা কলকাতা থেকে নরওয়ে গিয়ে তাঁর স্বামী অনিরুদ্ধ, ছেলে শুভ এবং পাঁচ মাসের মেয়ে শুচিকে নিয়ে থাকতে শুরু করেন। এর মধ্যেই বাচ্চাদের ঠিকঠাক দেখাশোনা হচ্ছে কিনা দেখার জন্য নরওয়ে চাইল্ড ওয়েলফেয়ার সার্ভিসেসের দুই কর্মচারী সিয়া ও মাটিল্ডা ঘন ঘন তাদের বাড়িতে আসতে শুরু করেন, দীর্ঘ সময় কাটান, রিপোর্ট লেখেন এবং একসময় দেবিকা, অনিরুদ্ধকে না জানিয়ে (যখন তাঁরা ওপরের ঘরে কথোপকথনে ব্যস্ত সেই সময়) তাঁদের সন্তানদের নিয়ে চলে যান।
হতবাক অনিরুদ্ধ ও দেবিকা অনেক ছোটাছুটির পর জানতে পারেন যে, তাঁরা তাঁদের সন্তানদের নিজেদের কাছে রাখতে পারবেন না। কারণ তাঁরা সন্তান প্রতিপালনে অদক্ষ। দেবিকা নরওয়ে সরকারের বিরুদ্ধে গিয়ে লড়াইয়ের সিদ্ধান্ত নেন। কেস চলাকালীন দেবিকার সামনে ভয়ঙ্কর সত্য উদঘাটিত হতে থাকে, যার থেকে তিনিও চূড়ান্ত পদক্ষেপ নেন। ঘটনা কোন দিকে মোড় নেয় সেটাই এখানে দেখার।
আরও পড়ুন:

চেনা দেশ অচেনা পথ, পর্ব-১২: বাইগা রিসর্ট ও বস্তি

পঞ্চমে মেলোডি, পর্ব-৪: পঞ্চমকে সিনেমা হলে বসিয়েই বেরিয়ে যান রীতা

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-২৮: পূর্ণ অপূর্ণ-র মাঝে পথ দেখায় ‘দেবত্র’

রানি মুখোপাধ্যায় দেবিকা চ্যাটার্জির ভূমিকায় অসামান্য দক্ষতার সঙ্গে অভিনয় করেছেন। দুই বাচ্চার মা, ঘর গুছিয়ে উঠতে না পারা মা, স্বামীর সঙ্গে বনিবনা না হওয়া একজন মায়ের কাছ থেকে (হাতে করে বাচ্চাদের খাওয়ানো, স্বামী-স্ত্রীর বিছানায় বাচ্চাদের শোয়ানো, কাজলের টিপ পরানোর অছিলায়) দুই সন্তানকে কেড়ে নিলে তাঁর যে মানসিক অবস্থা, তাঁর যে অস্থির আঙ্গিক, বাচিক প্রকাশ হতে পারে সেই সবের প্রকাশে তিনি সার্থক। ভালো করে হিন্দি, ইংরেজি বলতে না পারা, সরলতা, হতাশা, হাহাকার, প্রায় উন্মাদ অবস্থা, মনের কোণে বাচ্চাদের ফিরে পাওয়ার আশা নিয়ে বেঁচে থাকা দেবিকা চ্যাটার্জিকে রক্তমাংসের মানুষে পরিণত করেছে রানির বলিষ্ঠ অভিনয়। যদিও চরিত্রটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত।
আরও পড়ুন:

এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-১২: ঘাম কমাতে পাউডার ব্যবহার করেন?

রহস্য রোমাঞ্চের আলাস্কা, পর্ব-১০: ব্যস্ত পৃথিবী ছাড়িয়ে কোথায় যেন চলে এলাম উত্তরমেরুর জনমানবহীন এই জঙ্গলে, যেখানে এখন শুধুই রাত

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৫৫: নৌকো উল্টে সত্যেন্দ্রনাথের আইসিএস পড়তে যাওয়া বানচাল হতে বসেছিল

অনিরুদ্ধ চ্যাটার্জির (দেবিকা স্বামী) ভূমিকায় অভিনয় করেছেন অনির্বাণ ভট্টাচার্য। চাকরির সূত্রে নরওয়েবাসী তাঁর প্রধান চিন্তা সেখানকার নাগরিকত্ব নিয়ে। ছেলেমেয়েকে সরকার থেকে নিয়ে গিয়েছে সরকারই ফেরত দেবে বারবার এমন মুখভঙ্গি, অঙ্গভঙ্গির প্রকাশে, প্রত্যয়ে অনির্বাণ অনবদ্য। নিজের লক্ষ্যে স্থির।

রানি মুখোপাধ্যায় ও অনির্বাণ ভট্টাচার্যের পর যার চরিত্র সবচেয়ে বেশি উল্লেখযোগ্য তিনি জিম সার্ভ। তাঁর অভিনীত চরিত্রের নাম ড্যানিয়েল সিং কিউপেক। জিম বলিষ্ঠ অভিনেতা তবে নরওয়ের উকিলের ভূমিকায় তিনি আরও ভালো করতে পারতেন।
আরও পড়ুন:

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-৭: ওখানে কে?

বিধানে বেদ-আয়ুর্বেদ, বাতরক্ত বা গাউটে ভুগছেন? ঘরে বসেই মুক্তির উপায় জানুন

বিশ্বসেরাদের প্রথম গোল, পর্ব-১০: রেমন্ড কোপা এক কিংবদন্তি ফুটবল বাদশা

মিঠু চক্রবর্তী (দেবিকার শাশুড়ি), সৌম্য মুখোপাধ্যায়ের (দেবিকার দেওর) অভিনয় দর্শক হৃদয়ে নতুন করে আশঙ্কা, দৈনতা সৃষ্টি করে। ছোট চরিত্রে তাঁরা যথাযথ অভিনয় করেছেন। বোধিসত্ত্ব মজুমদার, শাশ্বতী গুহঠাকুরতা দেবিকার বাবা-মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ভূমিকায় বরুণ চন্দের অভিজাত ভাব ও অভিনয় যথাযথ। এমন চরিত্রে ওঁকে মানায়।

সঙ্গীত পরিচালনা অমিত ত্রিবেদীর, যা উল্লেখযোগ্য নয়, গল্প অনুসারী। অসীমা ছিবারের দুর্বল পরিচালনা ও চিত্রনাট্য মাঝেমাঝে এক ঘেয়েমি এনেছে। তবে ছবি চলাকালীন বিভিন্ন সময়ে করতালি প্রমাণ দিয়েছে এই ছবি একেবারে ব্যর্থ নয়।
* চলচ্চিত্র সমালোচনা (Film Review) : ড. বিদিশা মিশ্র (Bidisha Misra), সহকারী অধ্যাপক, সংস্কৃত বিভাগ, লেডি ব্রেবোর্ন কলেজ। বিদিশা বাঙালি নৈয়ায়িক চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য্যের গ্রন্থ কাব্যবিলাসের উপর গবেষণা করেছেন। দেশের বিভিন্ন প্রদেশের পত্রিকায় তাঁর শোধপত্রগুলো প্রকাশিত হয়েছে।

Skip to content