সুন্দরবনের অনেক জলাশয়ে এক ধরনের বিপজ্জনক মাছের দেখা মেলে। স্থানীয়রা একে ক্রোকোডাইল ফিশ বা কুমির মাছ বলেন। অন্যত্র এই মাছটি সাকার মাছ নামে পরিচিত। মাছটি দেখতে বেশ সুন্দর। হয়তো সেই কারণেই শহরাঞ্চলে এই মাছটি ছোট অবস্থায় বিভিন্ন অ্যাকোয়ারিয়ামে স্থান পায়। অনেকে সেই কারণে দোকান থেকে এই মাছগুলি কিনে এনে বাড়ির অ্যাকোয়ারিয়ামে অন্য রঙিন মাছের সঙ্গে রাখেন।
ক্রোকোডাইল ফিশ দেখতে শুধু সুন্দরই নয়, সে অ্যাকোয়ারিয়ামের কাচের দেয়াল চেটে পরিষ্কারও করে দেয়! পরে যখন একটু বড় হয়, তখন এর কাঁটাও বড় হয়ে যায়। তখন একে ধরে রাখা মুশকিল। সে কারণে অনেকে অ্যাকোয়ারিয়াম থেকে বের করে একে নিকটস্থ কোনও জলাশয়ে ছেড়ে দেন। এ ভাবে ওই মাছ বিভিন্ন জলাশয়ে বংশবৃদ্ধি করে।
আরও পড়ুন:
বাঙালির মৎস্যপুরাণ, পর্ব-৪৪: সুন্দরবনের সুন্দর কাঁকড়া
অনন্ত এক পথ পরিক্রমা, পর্ব-৯: জলে হরি, স্থলে হরি, হরিময় এ জগৎ
চেনা দেশ অচেনা পথ, পর্ব-৯: মন্দির হয়ে বৌদ্ধবিহার
এরা জলাশয়ে বিভিন্ন প্রজাতির পোনামাছের ডিমপোনা, ধানিপোনা খেয়ে জীবনধারণ করে। ফলে দেশীয় প্রজাতির মাছের সঙ্গে রীতিমতো এক প্রতিযোগিতা শুরু হয় এদের। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল, মাছটি ছোট থেকে বড়, কোনও অবস্থাতেই একে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করা যায় না। অথচ অ্যাকোয়ারিয়ামে এবং দোকানে এরাই চারা মাছের সঙ্গে বন্ধু হিসেবে বিশেষ কদর পায়। এর কারণ এরা মুখ দিয়ে অ্যাকোয়ারিয়ামের দেয়াল পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে।
আরও পড়ুন:
রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-৪: শিকারীর গোপন চোখ
প্রসঙ্গ স্বাস্থ্য বিজ্ঞান, বাড়তি রক্তচাপ চিন্তা বাড়াচ্ছে? উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে কী করবেন, কী করবেন না
হাত বাড়ালেই বনৌষধি, হাঁপানির সমস্যা থেকে ক্যানসার সব রোগের দাওয়াই হলুদ
এদের দেহের নকশা খুবই আকৃষ্ট করে ছোট বড় সবাইকে। মাছটির আকারেও একটু অন্যরকম। দু’ চোখের মাঝখানে একটি ছিদ্র আছে। মাথা ঠিক অবতল আকারের। ক্রমশই এটি নানান জলাশয়ে ছড়িয়ে পড়ছে। সমগ্র সুন্দরবন, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা এবং উত্তর চব্বিশ পরগনা— সর্বত্রই এদের পাওয়া যায়।
আরও পড়ুন:
স্বাদে-আহ্লাদে: ম্যাগি ভালোবাসেন? এই রেসিপি ট্রাই করে দেখেছেন?
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-২৫: আঁধার ভূবনে আবার কে তুমি জ্বেলেছ ‘সাঁঝের প্রদীপ’ খানি
শাশ্বতী রামায়ণী, পর্ব-৩৭: অবশেষে অগ্রজের দেখা মিলল বুঝি…
সম্প্রতি ত্রিপুরার একটি জলাশয়ে ক্রোকোডাইল ফিশেরই আরেকটি প্রজাতির মাছের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। এটি আরও মারাত্মক। আকারেও অনেকটা বড়। কলেজ অব ফিশারিজের অধ্যাপক মৃণাল দত্ত এই সাংঘাতিক ধরণের মাছের ছবি পাঠিয়েছেন। একই রকম ভাবে বাংলাদেশেও এই মাছ সমস্যার সৃষ্টি করছে।
অধ্যাপক মৃণাল দত্ত
বাংলাদেশ সরকার অতিসম্প্রতি এক বিজ্ঞপ্তি জারি করে এই মাছ বিক্রি, ব্যবসা বা কোনওভাবে এর ব্যবহার সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করেছেন। আমাদের নজরদারি কিছুটা দুর্বল হওয়ায় এটি এখনও বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ছে। বিষয়টি বেশ চিন্তার কারণও। যত শীঘ্রই সম্ভব আমাদের মৎস্য দপ্তর এ ব্যাপারে সচেতন হবেন এবং নিষেধাজ্ঞা জারি করবেন ততই মঙ্গল।
* বাঙালির মৎস্যপুরাণ (Bangalir Matsya Purana – Fish) : ড. প্রতাপ মুখোপাধ্যায় (Pratap Mukhopadhyay) অবসরপ্রাপ্ত প্রধান মৎস্যবিজ্ঞানী, ভারতীয় কৃষি অনুসন্ধান পরিষদ, ভারত সরকার।