ছোটবেলায় বাড়িতে সরস্বতী পুজোর দিন সক্কাল সক্কাল পুরোহিত মশাই এসে পড়তেন। ঠাম্মা ভোর থেকেই উঠে সব গোছগাছ করে রাখতেন। পুরোহিত জেঠুকে বলা থাকতো সব্বার আগে আমাদের পুজো করে দিয়ে যেতে, কারণ ছোট্ট আমি বেশিক্ষণ না খেয়ে থাকতে পারতাম না।
খুব নিষ্ঠা ভরে পুজো শেষ করে, এক কাপ চা খেয়ে জেঠু রওনা হতেন। ওঁর যে সেদিন খুব তাড়া! আমার মতো আরও নানান ক্ষুদে সরস্বতীরা যে অপেক্ষা করে রয়েছে অঞ্জলি দেবে বলে! কিন্তু ক্ষুদে তো আর চিরকাল থাকা যায় না।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ঠাকুরের পাশে বসা মানুষরা পাল্টাতে লাগলো। ঠাম্মার খালি হওয়া স্থান প্রথমে মা, তারপর আমি পূরণ করতে শুরু করলাম। জেঠুকেও বার্ধক্য ক্রমে গ্রাস করতে শুরু করলো। এরই মধ্যে কোনও এক বছর জেঠু বেশ অসুস্থ। আমাকে বললেন, “মা, এ বছর তুই পুজো কর, আমি শিখিয়ে দিচ্ছি।” সেই ছিল আমার পৌরহিত্যের হাতেখড়ি!
এই বছর স্কুলে যখন সরস্বতী পুজোর কার্যসূচী নির্ধারিত হচ্ছিল এবং আমাদের নতুন বড়দি নিবেদিতা সাহা প্রস্তাব দিলেন, “ছোটদের দিয়েই পুজো করানো হোক। ওরা পবিত্র মনে যেমন করবে, মা তাতেই সন্তুষ্ট হবেন।” আমার কানে যেন দূর থেকে ভেসে এলো পুরোহিত জেঠুর কথাগুলো, “শুদ্ধ চিত্তে ঈশ্বরকে স্মরণ করা মানেই তো তাঁর পুজো করা। কঠিন মন্ত্র বলতে না পারলেই বা কি? অথবা সব আচার পালন না করলে কি দেবী রুষ্ট হবেন? তাঁকে মন থেকে ডাকলেই তিনি খুশি!”
আরও পড়ুন:
বাণীপুর গভর্নমেন্ট বেসিক কাম মাল্টিপারপাস স্কুলের পচাত্তরে পদার্পণ
ইংলিশ টিংলিশ: জেনে নাও Unseen Comprehension এ কীভাবে পাবে ফুল মার্কস এবং পড়বে কোন Phrasal Verbগুলো
ক্লাসরুম: মাধ্যমিক ২০২৩: পাঠ্যবই খুঁটিয়ে পড়লে বাংলায় বেশি নম্বর পাওয়া কঠিন নয়
বড়দির প্রস্তাবে সকলের উচ্ছ্বসিত সহমতে সেদিনই সিদ্ধান্ত হল, এ বছর আমরা আমাদের মহাশ্বেতাকে আমাদের হৃদয়ের ভালোবাসা এবং নিষ্ঠা দিয়েই উপাসনা করবো। বেছে নেওয়া হল অষ্টম শ্রেণির দু’জন ছাত্র সায়ন এবং মৈনাক এবং দু’জন ছাত্রী নন্দিতা এবং রাধাকে।
একমাস ধরে পুরোহিত মহাশয় তাদের প্রশিক্ষণ দিলেন। বড়দি ওদের নিজের ঘরে প্র্যাকটিস করাতেন, আর ওদের কচি গলার সংস্কৃত মন্ত্রোচ্চারণ দূর থেকে শুনতে পেতাম আমরা। অদ্ভুত এক ভালোলাগায় ভরে উঠতো মন।
আরও পড়ুন:
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৪৯: গুরুদেবের দেওয়া গুরুদায়িত্ব
স্বাদে-গন্ধে: সামনেই জন্মদিন? বিশেষ দিনের ভূরিভোজে বানিয়ে ফেলুন কাশ্মীরি পদ মটন রোগান জোস!
এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-৪: আপনি কি খেয়ে উঠেই শুয়ে পড়বেন? জানেন কী হচ্ছে এর ফলে
আজ সকালে যখন শাঁখ, ঘণ্টা আর কাঁসরের সুরে বীণাপাণির আরাধনায় রত আমাদের ছাত্র ছাত্রীদের দেখছিলাম, ওদের মন্ত্রোচ্চারণের সঙ্গে অঞ্জলি দিচ্ছিলাম, মনে হচ্ছিলো, মা সরস্বতী এই নিষ্পাপ হৃদয়ের নৈবেদ্য না নিয়ে কিছুতেই পারবেন না।
* ক্লাসরুম-ইংলিশ টিংলিশ (Classroom-English Tinglish) : পর্ণা চৌধুরী (Parna Chowdhury) ইংরেজির শিক্ষিকা, গভঃ বেসিক কাম মাল্টিপারপাস স্কুল, বাণীপুর