নখ আমাদের শরীরের একটা গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। নিয়ম মেনে নখের যত্ন অনেকেই নেন। কিন্তু যতই যত্ন নেওয়া হোক নখের সমস্যা যেন পিছু ছাড়তে চায় না। স্বাস্থ্য হোক বা সৌন্দর্য, নারী হোক বা পুরুষ নখ সবার জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। অনেকে আবার শরীরের যত্ন ঠিকমতো নিলেও নখের যত্ন খুব একটা নেন না। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, আমাদের শারীরিক স্বাস্থ্য অনেক সময় নখের মাধ্যমে ফুটে ওঠে।
নিয়মিত নখের যত্ন নিলে বা নিয়মিত ম্যানিকিউর করলেই যে নখ খুব সুন্দর থাকবে এমন কোনও কথা নেই। আমাদের স্বাস্থ্য যদি ঠিক না থাকে তাহলে নখের স্বাস্থ্য ঠিক থাকবে না। নখ কতটা শক্ত হবে, কতটা পাতলা হবে, কতটা মোটা হবে তা অবশ্যই জিনগত ব্যাপার। তবে পুষ্টিকর খাবারদাবার মাধ্যমেও নখের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটানো যেতে পারে।
শরীর খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পুষ্টি না পেলে যতই নখের যত্ন নিন, তার স্বাস্থ্য ভালো হবে না। খেয়াল রাখতে হবে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকা অবশ্যই যেন ক্যালশিয়াম সমৃদ্ধ হয়। তা ছাড়াও ভিটামিন-এ, সি জাতীয় খাবারও তালিকায় রাখতে হবে। পালং শাক, দুধ, দই, ছানা, মিষ্টি আলু, মিষ্টি কুমড়ো, ব্রকলি, ডিম, মাছ, গাজর ইত্যাদি খাদ্য তালিকায় রাখলে অনেক উপকার পাবেন।
প্রতিদিনের ডায়েটে কী কী রাখবেন?
আয়রন সমৃদ্ধ খাবার
● আয়রন জাতীয় খাবারের অভাবে প্রধানত নখ দুর্বল ও ভঙ্গুর হয়ে যায়। তাই এই আয়রনের চাহিদা পূরণ করার জন্য পালং শাক, শিম, গুড়, কিসমিস বিভিন্ন সব্জি ও ফলমূল খাদ্য তালিকায় পর্যাপ্ত পরিমাণে রাখতে হবে।
আমন্ড
● আমন্ড বাদাম নখের স্বাস্থ্য রক্ষায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমন্ডে পাওয়া যায় ম্যাগনেশিয়াম ও ওমেগা থ্রিফ্যাটি অ্যাসিড, যা নখের বৃদ্ধিতে ভীষণভাবে সাহায্য করে। আমন্ড খাওয়ার পাশাপাশি আমন্ড অয়েলও নখের জন্য ভালো।
সূর্যমুখীর বীজ
● সূর্যমুখীর বীজ থেকে যে তেল তৈরি হয় অর্থাৎ সানফ্লাওয়ার অয়েল জিঙ্ক, সেলিনিয়াম এবং একাধিক ভিটামিনের উৎকৃষ্ট উৎস। তাই নখের স্বাস্থ্যের জন্য এই বীজ বা বীজ থেকে তৈরি তেল খুবই উপকারী।
কুমড়োর বীজ
● এখন বাজারে পাম্পকিনসিড খুবই প্রচলিত। কুমড়োর বীজ জিঙ্কর ভালো উৎস। জিঙ্ক আমাদের শরীরের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। তবে অনেকের শরীরেই জিঙ্কের ঘাটতি থাকে। এর ফলে আমাদের নখ নরম হয়ে যায়।
তিল
● তিল জিঙ্কের উৎকৃষ্ট উৎস। অনেকেরই নখের উপরে ছোপ ছোপ দাগ পড়ে যায়। কারও কারও নখ একটুতেই ভেঙে যায়। এক্ষেত্রে তিল খুব ভালো কাজ করে। তাই খাবারের তিল রাখলে নখের স্বাস্থ্য ভালো থাকবে।
ওটস
● আমরা অনেকেই ব্রেকফাস্টে বা সন্ধ্যেবেলায় ওটস খেয়ে থাকি। ওটসে যেমন ফাইবার রয়েছে, তেমনি জিঙ্ক, ম্যাঙ্গানিজ, কপার, ভিটামিন-বি কমপ্লেক্স আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে। নখের জন্য এই পুষ্টিকর উপাদানগুলি ভীষণভাবে প্রয়োজনীয়।
দুধ, দই, ছানা ও পনির
● দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার ক্যালশিয়াম, প্রোটিন, ভিটামিনের খুব ভালো উৎস। বায়োটিন ও ক্যালশিয়াম নখকে শক্তিশালী করে। নখকে যাতে সহজে ভেঙে যেতে দেয় না। তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় দুধ, দুই, ছানা, পনির রাখলে নখ অনেক শক্তশালী হবে।
ডিম
● ডিম প্রোটিন ভিটামিনে ভরপুর। প্রাণিজ প্রোটিনের মধ্যে ডিম উৎকৃষ্ট। ডিম নখের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। নখকে মোটা ও শক্তিশালী করে। ক্যালশিয়াম তো বটেই, এ ছাড়া ভিটামিন বি ১২, আয়রন, বায়োটিনের মতো গুরুত্বপূর্ণ উপাদানের সমৃদ্ধ উৎস ডিম। নখ মজবুত রাখতে এই উপাদানগুলি দারুণ কাজ করে। ডিমের সাদা অংশে বায়োটিন বেশি মাত্রায় পাওয়া যায়, যা নখের জন্য বেশি প্রয়োজনীয়। তবে ডিম থেকে যথাযথ উপকার পেতে অবশ্যই ডিম সিদ্ধ করে খেতে হবে।
মাংস
● মুরগি, হাঁস, খাসি ইত্যাদি প্রাণীর মাংসে আয়রনের পরিমাণ বেশি থাকে। আয়রন সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় অর্গান মিটে। মেটেতেও আয়রন রয়েছে। এই আয়রন নখকে শক্তপোক্ত করতে সাহায্য করে।
সামুদ্রিক মাছ
● সামুদ্রিক মাছে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড, বিভিন্ন রকমের খনিজ লবণ যেমন সালফার ও ফসফরাস প্রভৃতি থাকে। প্রোটিনও রয়েছে বেশিমাত্রায়। ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড নখের গোড়া শক্ত করে ভেঙে যাওয়া রোধ করে। তাছাড়াও ফসফরাস ও সালফার নখকে পুরু ও শক্ত করে। তাই বিশেষ কোনও শারীরিক সমস্যা না থাকলে নখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সামুদ্রিক মাছ বা মাছের তেল প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রাখা যেতে পারে।
আরও জানলে ভালো
● নিয়মিত নখ কাটতে এবং পরিষ্কার রাখতে হবে।
● কিউটিকল অয়েল বা অলিভ অয়েল বা পেট্রোলিয়াম জেলি দিয়ে নখ মাসাজ করলে উপকার মিলবে।
● রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে নিয়মিতভাবে ময়েশ্চারাইজার লাগাতে হবে।
● ভালো সংস্থার নেলপলিশ ব্যবহার করতে হবে। কারণ কম দামের নেলপালিশে সিসা বেশি পরিমাণে থাকে, যা নখের জন্য ক্ষতিকর।
● প্রতিবার সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার পর নিয়মিতভাবে নখে ময়শ্চারাইজার, নারকেল তেল, অলিভ অয়েল, পেট্রোলিয়াম জেলির মধ্যে কোনও একটি লাগানো প্রয়োজন।
যোগাযোগ: ৯৮৩০৭৬৮১৫২
* হেলদি ডায়েট (Healthy Diet): সুতনুকা পাল (Sutanuka Paul), পুষ্টিবিদ, ডায়েট-টু-ফাইট।