বুধবার ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৪


টালিগঞ্জ স্টুডিওপাড়া এনটি ওয়ান। ছবি; সংগৃহীত।

।।স্বেচ্ছা-নির্বাসন।।

বসুন্ধরা ভিলায় নিজেকে মানিয়ে নিতে ঝকঝকে রুপোলি গ্ল্যামারের দুনিয়া থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেবার সিদ্ধান্ত নিয়ে সুরঙ্গমা দুবার ভাবেনি। সুরঙ্গমা ভীষণ ভালো রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইত। সেটা বসুন্ধরা আর স্বর্ণময়ী সেদিনই প্রথম জানতে পেরেছিল। বসুন্ধরা ভিলায় এসেও স্বয়ং শ্বশুরমশাই বিনয়কান্তির অনুরোধ রাখতেই প্রতিবছর বিজয়াদশমীর পারিবারিক আসর ছাড়া আর কখনও গান করেনি সুরঙ্গমা।

সুরঙ্গমার কাছ থেকেই মায়ের বসুন্ধরা ভিলায় আসার গল্প শুনেছে ছেলে সুবর্ণকান্তি। বসুন্ধরার সঙ্গে বিনয় বা স্বর্ণময়ীর সঙ্গে অমলকান্তির সম্পর্কের মতোই, সহজ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল সুরঙ্গমা আর তার ছেলে সুবর্ণকান্তির।

বসুন্ধরার ভবিষ্যৎবাণী সত্যি হয়েছিল। বসুন্ধরা গ্রুপ অব কোম্পানিজ বসুন্ধরা ভিলার পরিচয়ে নয়। সাহিত্যিক হিসেবে জনপ্রিয়তাই অমলকান্তি দত্তকে পরিচিতি দিয়েছিল। অনেকে বলতেন, সাহিত্যিক অমলকান্তি দত্ত বসুন্ধরা ভিলায় থাকেন। তারক নিয়োগী অমলকান্তি দত্তকে আলাদা করে শ্রদ্ধা করতেন। বিনয়কান্তির সন্তান বা বসুন্ধরা ভিলার সদস্য বলে নয়, একজন খুব জনপ্রিয় এবং সফল সাহিত্যিক হিসেবে। বলতেন—

‘বসুন্ধরা ভিলার ঐশ্বর্য বৈভব কিছুই আপনাকে স্পর্শ করে না। আপনি সেই অচিন নক্ষত্র। আপনার উজ্জ্বলতায় আমরা আশপাশের সবাই আলোকিত। এক কক্ষচ্যুত নক্ষত্র আপনি।’

সুরঙ্গমা অমলকান্তির দুটি সন্তান। মেয়ে বড় নাম সানন্দা। সে ডাক্তার। আর ছোট আমি সুবর্ণকান্তি। আমি ইঞ্জিনিয়ারিং পড়েছি। বাবা আদর করে বলতেন ‘সা’ আর ‘সু’।

আমি ষাট টপকেছি। চুল পেকেছে। পারিবারিক ব্যবসায় দায়িত্বপূর্ণ জায়গায় ছিলাম কোরোনার প্রকোপে গৃহবন্দি। একঘেয়েমি থেকে বাবার পরেরজন তরুণকান্তি আমাদের ন’কাকা। নেতাজির অন্তর্ধান এর পরে পরেই জন্মেছিলেন। নেতাজির লেখা ‘তরুণের স্বপ্ন’ থেকেই ঠাম্মি স্বর্ণময়ী নাম রাখেন তরুণকান্তি। ন’কাকা খুব শান্ত স্বভাবের মানুষ। শিবপুর বি ই কলেজ থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেন। হালে এটি কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনস্থ বিশ্ববিদ্যালয় আই আই ই এস টি, শিবপুর। ন’কাকার হবি ছবি আঁকা। জল বা তেল রং দুটোতেই স্বচ্ছন্দ। যদিও সেটা ভালো লাগাই থেকে গিয়েছে। তরুণকান্তি বছর পাঁচেক আগে মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েন। ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাকে কোমাতে চলে যান। ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠলেও এখনও নিজের দু-পায়ে দাঁড়াবার জোর পান না। নার্স ছাড়াও হালে তরুণকান্তির পুত্রবধূ বাবলি সর্বক্ষণ তাঁর খেয়াল রাখে। তরুণকান্তি এখন হুইল চেয়ারে বসেই ইজেলে ছবি আঁকেন। ফুলকাকা বিমলকান্তি বিদেশ থেকে ন’দার জন্যে বিশেষভাবে তৈরি করা হাইট অ্যাডজাস্টেবল স্বয়ংক্রিয় ইজেল পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। যাতে হুইল চেয়ারে বসে ছবি আঁকতে ন’কাকার অসুবিধে না হয়। তবু ন’কাকা ভালো নেই। ভালো নেই স্ত্রী সুজাতা আর সন্তান প্রণয়কান্তির জন্য। সুজাতা আমার ন’কাকিমা আর প্রণয় আমার খুড়তুতো ভাই। কিন্তু তাদের প্রসঙ্গ তো এড়াতে পারব না। এড়াতে পারব না এমন অনেক ইতিহাস যা সর্বসমক্ষে না এলেই হয়ত ভালো হতো।

তাই তরুণকান্তির বিশদ কাহিনীতে পরে আসব। তার আগে ফুলকাকা বিমলকান্তির কথা…
ষাটের দশকে ডাক্তারিতে ভর্তি হবার জন্য স্কুলের পরীক্ষার প্রাপ্ত নম্বরের উপর জেলাভিত্তিক কোটায় ছাত্র-ছাত্রী বাছাই হতো। এ জন্য যে ইন্টারভিউ হতো, সেটাও ছিল ভীষণ কঠিন। জেলাভিত্তিক নির্বাচনের কারণে কলকাতা থেকে ছেলেমেয়েদের কম্পিটিশন ছিল খুব। ১৯৬৬ সালে নিয়মে বদল এল। ক্যালকাটা মেডিকেল কলেজ আরজিকর হাসপাতাল আর এনআরএস হাসপাতালের জন্যে কমন এন্ট্রান্স টেস্ট শুরু হল। সত্তর সাল থেকে এগারো ক্লাসের হায়ার সেকেন্ডারির পর ইঞ্জিনিয়ারিং ও মেডিকেল জয়েন্ট এন্ট্রাস পরীক্ষা চালু হল। বারো ক্লাসের হায়ার সেকেন্ডারি আমাদের আমলে। তবে ফুলকাকা বিমলকান্তি খুব ভাল ছাত্র ছিল প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে কেমিস্ট্রি অনার্স নিয়ে বিএসসি পাশ করার পর প্রাপ্ত নম্বরের নিরিখে মেডিকেল কলেজে ডাক্তারি পড়া শুরু করলেন ১৯৬০ সালে। সে সময়ে ফার্স্ট ইয়ারের শুরুতেই ছিল প্রি-মেডিকেল কোর্স। অ্যানাটমি ফিজিওলজি আর বায়োকেমিস্ট্রির পরীক্ষা হতো সেকেন্ড ইয়ারের শেষে। ফার্মাকোলজির পরীক্ষা থার্ড ইয়ারের শেষে। ফোর্থ ইয়ারের চাপটা খুব।
বছর শেষে প্যাথলজি প্যারাসিটোলজি ব্যাকটেরিওলজি, ফরেন্সিক প্রিভেন্টিভ আর সোশ্যাল মেডিসিনের পরীক্ষা। ফাইনাল ইয়ারে মেডিসিন সার্জারি অবস্টেট্রিকস বা ধাত্রীবিদ্যা আর গাইনোকোলজি। ডাক্তারি পাশ করে কিছুদিন সরকারি হাসপাতালে চাকরি করার পরেই ৬৭-তে ফুলকাকা চলে গেলেন আয়ারল্যান্ডে। রিচমন্ড সার্জিক্যাল হস্পিট্যালে পাঁচ বছর হার্ট সার্জারি নিয়ে কাজ করার পর এফআরসিএস হলেন ফুলকাকা। সেখানেই সহকর্মিণী ডাক্তার কীরা রায়ান-এর সঙ্গে পরিচিতি-প্রেম ও বিবাহ ১৯৭১-এ। বাহাত্তরে জন্মাল গোলাপকুঁড়ির মত সুন্দর কন্যাসন্তান নাম রোসিন। আমার মায়ের কাছে ছবি পাঠিয়েছিল ফুলকাকা। তার দু’বছর পর এল শ্যানন।

ন’ছেলের বিদেশে থেকে যাওয়া সেখানেই বিয়ে করা উদারমনস্ক হলেও ঠাম্মি স্বর্ণময়ী সেগুলো খুব একটা ভাল মনে নেননি। অথচ তাঁর শাশুড়ি আমাদের বড় ঠাম্মি বসুন্ধরা তখন ৮১ খালি চোখে খবরের কাগজ পড়তেন। তবে দূরের জন্যে চশমা লাগত। হ্যাঁ, ছেলের বউভাতের দিন পিটারসন সাহেবের সঙ্গে ইংরিজিতে কথা বলতে না পেরে একরকম জেদ ধরেই আমার ঠাম্মির কাছে ইংরিজি শিখে, বড়ঠাম্মি ইংরিজি কাগজ পড়তেন। তিনি পুত্রবধূকে বলতেন,

‘সময়টা বদলে গিয়েছে স্বর্ণ বদলগুলো সহজভাবে মেনে নে, না হলে তোর কষ্টই বাড়বে। জগত সংসার তো তোর ইচ্ছে অনুযায়ী চলবে না।’
আরও পড়ুন:

পর্ব-৫০: বসুন্ধরা এবং…

চেনা দেশ অচেনা পথ, পর্ব-১: ছুটি ও ছোটা ছুটি

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-১৮: দেখা-অদেখা চেনা-অচেনায় ‘মরণের পরে’

নাতনিদের ছবি দেখে বোধ হয় কষ্ট হত ঠাম্মি স্বর্ণময়ীর। ৭৫ সালে পুজোতে সপরিবারের এসেছিল ফুলকাকা। ওই একবারই। বড় নাতনি রোসিন-এর নামের মানে জানতেন গোলাপ-কুঁড়ি। ছোট নাতনির নামের মানে জানার পর বেশ মনক্ষুণ্ণ হয়েছিলেন। শ্যানন মানে ওয়াইজ রিভার নদীর নামে নাম রাখলে অকল্যাণ হয় । ঠাম্মি এসব খুব বিশ্বাস করত। বড়দের আলোচনার মধ্যে ঘাপটি মেরে শুয়ে থেকে এই ইতিহাস আমার সংগ্রহ। আমি তখন ১৩। অষ্টমীর দিন দুপুরে দোতলার একটা ঘরের সামনে পোড়া পোড়া গন্ধ পেয়ে ভেজানো দরজায় চোখ রেখে রেখেছিলাম। আমাদের কীরা কাকিমা দু’ আঙ্গুলের ফাঁকে ধরা বাদামি সিগারেটে সুখটান দিচ্ছে আর ভুস ভুস করে ধোঁয়া ছাড়ছে। ভয়ে কাউকে বলিনি। পরে জেনেছিলাম ওটাকে সিগার বলে।

এর ঠিক তিন বছর পর ফুলকাকা আর কীরা কাকিমার সেপারেশান হয়ে গেল। আমি সেইবার মাধ্যমিক পাশ করলাম। রোসিন আর শ্যানন কীরা কাকিমার কাছে থাকল। কাকিমা তখন রিচমন্ড হাসপাতাল থেকে হাতবদল হওয়া ডাবলিনের নতুন বিউমন্ট হসপিট্যালে। আর পেডিয়াট্রিক হার্ট সার্জারিতে স্পেশালাইজেশন করে ডাবলিন থেকে ৫০০ কিলোমিটার দূরে আইরিশ সাগরের ওপারে ব্রিস্টলে চলে গেছেন ফুলকাকা।
আরও পড়ুন:

জ্যোতির্লিঙ্গ যাত্রাপথে, পর্ব-১: চলার পথে খানিক ভণিতা

অনন্ত এক পথ পরিক্রমা, পর্ব-১: অমৃতের সন্ধানে…

স্বাদে-গন্ধে: একঘেয়ে চিকেন কারি আর ভালো লাগছে না? বাড়িতেই রেস্তোরাঁর মতো বানিয়ে ফেলুন মুর্গ মালাই হান্ডি

জানিয়েছিলেন। ফুলকাকা ব্রিস্টল থেকে পৌনে দু-ঘণ্টা ড্রাইভ করে আমায় হিথরো এয়ারপোর্টে নিতে এসেছিলেন। ভাগ্যিস এসেছিলেন প্রথমবার প্লেন চড়া। বাড়িতে ব্যবসার কাজে জেঠুরা বা জ্যাঠতুতো দাদারা প্রায়ই দেশে নানান শহরে যেত বিদেশেও গিয়েছে ব্যবসার কাজে। কিন্তু বিদেশে পড়তে যাওয়ার আগে আমার কখনও প্লেনে যাবার সুযোগ হয়নি। দমদম বা বম্বের সান্তাক্রুজ এয়ারপোর্টের কোথায় কী আমায় বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সঙ্গে এয়ারপোর্ট সাইনেজ ব্যাপারটাও বলা হয়েছিল। মানে এয়ারপোর্টে এমন ভাবেই লেখা দিকনির্দেশ থাকে যে নতুন আসা কারও কোনও অসুবিধা হবার কথা নয়। দেশের মধ্যে ব্যাপারটা সড়গড়। কিন্তু হিথ্রোতে নামার পর বাঁশবনে ডোমকানা অবস্থা। সারসার লোকজন এদিক থেকে ওদিকে ছুটছে। অসংখ্য গেট। বিশাল এয়ারপোর্ট চত্বর। যাই হোক – আমাকে নির্দিষ্ট একটা জায়গায় দাঁড়াতে বলা হয়েছিল। টার্মিনাল ফাইভ সাউথ মিটিং পয়েন্ট। সেখানে পৌঁছেই দেখি ফুলকাকা দাঁড়িয়ে আছে।

ব্রিস্টলে ফুলকাকা যে হাসপাতালে কাজ করত তখন সেটা ছিল সেন্ট মাইকেল হিলস-এ। নাম ছিল হসপিটাল ফর সিক চিল্ড্রেন। পুরনো আমলের গথিক গির্জাছাঁদের বাড়ি। ব্রিস্টলের মেন বাস স্টেশন থেকে একটু দূরে। পরে ২০০১ সালে সেই হাসপাতাল আরও বড় হয়ে হল ব্রিস্টল রয়্যাল হসপিটাল ফর চিল্ড্রেন। সেটা শুনেছি বাস স্টেশনের কাছাকাছি।

ফুলকাকা পরদিন আমাকে গ্লাসগো নিয়ে গিয়েছিল। আমরা ট্রেনে গিয়েছিলাম। বোধহয় ঘণ্টা সাতেক লেগেছিল। অবাক কান্ড গ্লাসগো স্টেশনে আমাদের রিসিভ করতে এল কীরা কাকিমা সঙ্গে আমার খুড়তুতো দুই বোন রোসিন আর শ্যানন একজন তখন বছর ১২, অন্যজন ১০। তখন বড় হয়ে গিয়েছি। মুখে কোনও অভিব্যক্তি না এনেও মনে মনে ভাবছি এটা কি করে সম্ভব? এদের দুজনের তো বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছে। তারপরেও আমার সঙ্গে দেখা করার জন্য আয়ারল্যান্ড থেকে উড়ে এসেছেন কীরা কাকিমা! সঙ্গে দুই মেয়ে!! আমি দু’বোনের সঙ্গে গল্প করতে করতেই খেয়াল করছি ফুল কাকা আর কীরা কাকিমা খুব চেনা দুজন মানুষের মতো গল্প করছে হাসছে। অথচ আমি ভাবতে পারছি না এরা যদি এখনও এত সহজ তাহলে এদের সম্পর্কটা ভেঙ্গে গেল কেন? এটা কি আধুনিকমনস্কতা? সত্যি কি এদের দুজনের মধ্যে আর কোন টান নেই। নিছক দুজন পরিচিত মানুষ? হয়তো আমি যে মধ্যবিত্ত ঘরোয়া পরিবেশে মানুষ হয়ে উঠেছি তার জন্য এগুলো অদ্ভুত লেগেছিল। এতদিন বাদে ষাট পেরিয়ে এসে আমার কাছে মানুষের সম্পর্কের টানাপোড়েন বড় অদ্ভুত লাগে।
আরও পড়ুন:

বিশ্বসেরাদের প্রথম গোল, পর্ব-১: চায়ের দোকান থেকে বিশ্বজয়

হেলদি ডায়েট: করলা স্বাদে তেতো হলেও পুষ্টিগুণ কিন্তু মিষ্টি! একঝলকে জেনে নিন রোজ কেন পাতে রাখবেন এই সব্জি

ডায়াবিটিস বাসা বেঁধেছে শরীরে? কী কী লক্ষণ দেখলেই রক্ত পরীক্ষা করাতে হবে? জেনে নিন খুঁটিনাটি

কীরা কাকিমা দুই মেয়েকে নিয়ে বিকেলের ফ্লাইটে ডাবলিন ফিরে গিয়েছিলেন। ফুলকাকা রাতের ট্রেনে ব্রিস্টল ফিরলেন। পৌঁছবেন ভোরবেলায়। ক্রমাগত ক্লাস লাইব্রেরি ডিসার্টেশন মানে প্রজেক্ট পেপার লেখার চাপে কনভোকেশনের আগে পর্যন্ত মাথা তুলতে পারিনি। কনভোকেশনের দিন কীরা কাকিমা একাই এসেছিল। শেষ মুহূর্তে একটা জরুরি অপারেশন পড়ে যাওয়ায় ফুলকাকা আসতে পারেনি। আমাকে আমার সার্টিফিকেট আর ব্যাগপত্র নিয়ে কীরা কাকিমা আমায় ডাবলিনে নিয়ে গেল ওদের সঙ্গে দিন চারেক মজা করে ব্রিস্টল ফিরলাম। ফুলকাকার সঙ্গে দেখা করে সোজা হিথ্রো। এবার একা একা। ব্রিস্টল বাস স্টেশন থেকে ফুলকাকা সি অফ করে দিল। হিথ্রো থেকে দিল্লি হয়ে কলকাতা। আমার বিয়ের পর শ্রীতমাকে নিয়ে সোজা ডাবলিনে গিয়েছিলাম। রোসিন মাস কমিউনিকেশন নিয়ে পড়াশোনা করে। তখন ইউএসএ-তে। সেখানে একটি ছেলেকে বিয়ে করবে। শ্যানন ডাক্তারি পড়ছে। ফেরার পথে ফুলকাকার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম ব্রিষ্টলে। বয়স তখন ৪৮, চুল সাদা, সাদা দাড়ি রেখেছে ফুলকাকা। কিন্তু চেহারায় কর্মঠ সপ্রতিভ যুবক। সকালে ৫ কিলোমিটার সাইকেল চালান। বিকেলে স্কোয়াশ খেলেন নিয়মিত। ফুলকাকা আমাকে আর শ্রীতমাকে লন্ডন বেড়াতে গিয়ে দেখিয়েছিলেন ব্রিক লেনের গলিঘুঁজি। সানডে মার্কেট। ওখানে বিখ্যাত ইন্ডিয়ান রেস্তরাঁয় কারি খাইয়েছিলেন। বাঙালি অধ্যুষিত এলাকা। যেখানে রাস্তার নাম বাংলায় লেখা। চেশায়ার স্ট্রিট, গ্রিমসবি স্ট্রিট বা স্ক্লেটার স্ট্রিট। এটাকে ট্রান্সলিটারেশন বলে। লিপির পরিবর্তন, ট্রান্সলেশন নয়।
আরও পড়ুন:

এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-১: স্নানের আগে রোজ সর্ষের তেল মাখেন?

বৈষম্যের বিরোধ-জবানি, পর্ব-১: নারী কি আলাদা? তাঁরা পুরুষদের সঙ্গে বসতে ভয় পান? তাহলে কি এত আয়োজন শুধু তাঁদের ভয় দেখাতে…

দশভুজা: দু’শো বছর আগে হলে তিনি ইঞ্জিনিয়ারের বদলে সতী হতেন

ফুলকাকা-কীরা কাকিমা দুটি অদ্ভূত মানুষ। হয়তো ব্যক্তিগত কিছু ভুল বোঝাবুঝির কারণে আলাদা আলাদা পথ বেছে নিয়েছেন, কিন্তু যোগাযোগ রয়েছে। দুজনেই একা একা থাকে। কেউ কারও উপর নির্ভর করে না। এতদিনে দুজনেই নতুন কোনও সম্পর্কে জড়ায়নি। কিন্তু নিজেদের পুরনো সম্পর্কটা আবার মেরামত করে নেওয়ারও কোন প্রচেষ্টা করেনি। অনেকবার ইচ্ছে করেছে দুজনের সঙ্গে আলাদা আলাদা করে কথা বলে দেখি সমস্যাটা ঠিক কোথায় ছিল। কিন্তু দু’জনেই এমন একটা ব্যক্তিত্বের মানুষ যাঁরা নিজেরা না চাইলে তাদের বৃত্তে প্রবেশ করা যায় না।—চলবে

সুবর্ণ-র স্মৃতি লন্ডনের ব্রিক লেন ।

চিত্র সৌজন্য: সত্রাগ্নি
 

পরের পর্ব আগামী রবিবার

‘৬৫ সালে বিনয়কান্তি কলকাতার শেরিফ নির্বাচিত হলেন। ভারতে একমাত্র মুম্বই এবং কলকাতায় এই অরাজনৈতিক উপাধি মূলক পদটি রয়েছে। সম্মানের হিসেবে কলকাতা কর্পোরেশনের মেয়র বা মহানাগরিক এর ঠিক পরেই শেরিফের গুরুত্ব। কলকাতার কোন এক শেরিফের একটি অফিস থাকে নিজস্ব কর্মী থাকে কিন্তু নির্বাহী ক্ষমতা থাকে না।
 

গল্প ও উপন্যাস পাঠানোর নিয়ম

‘সময় আপডেটস’-এর এই বিভাগে যাঁরা গল্প ও উপন্যাস পাঠাতে চান তাঁরা ছোটদের ও বড়দের আলাদা আলাদা গল্প পাঠাতে পারেন৷ বুঝতে সুবিধার জন্য ইমেলের ‘সাবজেক্ট’-এ বিভাগের উল্লেখ করবেন৷ ছোটদের গল্পের জন্য ১০০০ শব্দ ও বড়দের গল্পের জন্য ১০০০-১৫০০ শব্দের মধ্যে পাঠাতে হবে ইউনিকোড ফরম্যাটে। সঙ্গে ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বর দিতে ভুলবেন না৷ গল্প বা উপন্যাস নির্বাচিত হলে যোগাযোগ করা হবে৷ ইমেল: samayupdatesin.writeus@gmail.com


Skip to content