অলঙ্করণ: পাপিয়া দেবনাথ।
‘তরুণ, আজ সাড়ে ছ’টায় নয়, সাড়ে সাতটায় এসো। সোজা বাড়ি চলে যাব। বাবার কাছে আজ আর যাব না।’
সুমি ম্যামের এই কথায় একটু খুশিই হল বলা যায় তরুণ। সে মোবাইল ফোন তাকের ওপর রেখে দিয়ে তনয়াকে বলল, ‘ও তনু, শুনছ…আজ একটু সুবিধেই হল শেষমেশ বোধহয়। শুভ্রাকে নিয়ে যেতে পারব মেলায়।’
একরত্তি মেয়ে শুভ্রা সেই বিকেল থেকে বাবাকে বারবার করে বলে যাচ্ছিল, ‘বাবা আমায় মেলায় নিয়ে চলো না, মেলায় নিয়ে চলো না।’ কিন্তু তখন ঘড়িতে সাড়ে পাঁচটা বাজে। কিছুক্ষণ পর তাকে সাড়ে ছ’টায় স্টেশনে চলে যেতে হবে। সুতরাং এই আধঘণ্টা সময় মেয়েকে মেলা থেকে ঘুরিয়ে আনার জন্যে যথেষ্ট নয়।
বিনয়পুরের রথের মেলাটা খুব জমজমাট। বলতে গেলে, পুরো জেলার লোক আসে। আজ উল্টো রথের দিন। কাল থেকে অমন আর জমবে না মেলা। আজকেই তো সার বেঁধে বসা দোকানগুলোতে লোক এটা ওটা কেনার জন্য ভিড় করবে। আর মেলায় লোক না থাকলে সে মেলা ভালো লাগে? কত কিছুর দোকান বসেছে। মনোহারির দোকান, জিলিপি-গজার দোকান, ঘুগনি, চানা, ফুচকা, হাওয়াই মিঠাই, খই-বাদাম। এ তো গেল খাবারের দোকানের তালিকা। এছাড়া আছে কত কী রাইড। ইলেকট্রিকের নাগোরদোলা থেকে শুরু করে কাঠের হাতে চালানো নাগোরদোলা, কাঠের ঘোড়া, এরোপ্লেন, স্লিপার, আরও কত কিছু। আর তার সঙ্গে গৃহস্থালীর প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দোকান তো আছেই।
তনয়া বলে দিয়েছিল, যদি মেয়েকে নিয়ে তরুণ মেলায় যায় তাহলে তার জন্যে একটা ভালো ছোটমতো বঁটি কিনে আনতে। রিকশা চালিয়ে স্বল্প আয় হলেও বউয়ের বলে দেওয়া জিনিসটা, মেয়ের বায়নার কিছু খেলনা আর খাবারের টাকা তার কাছে ছিলই। সুতরাং আর্থিক দিক থেকে অসুবিধা ছিল না। অসুবিধা ছিল অন্য জায়গায়।
সেটা হল, সাড়ে ছ’টায় সুমি ম্যামকে আনতে গেলে সেই একেবারে রাত সাড়ে ন’টায় তাকে ঘরে ফিরতে হতো। কারণ, সুমি ম্যাম বলে দিয়েছিলেন, তিনি নাকি সাড়ে ছ’টায় তার রিকশা করে ওঁর বাবার বাড়িতে যাবেন। সেখানে পৌঁছতে পৌঁছতে প্রায় সাড়ে সাতটা বেজে যেতে। তারপর সেখানে এক ঘণ্টা থেকে বাড়ি ফিরবেন তরুণেরই রিকশা করে। মানে ম্যামকেই হয়তো ন’টার মধ্যে তাঁর বাড়িতে পৌঁছে দিতে পারত না সে।
কিন্তু ম্যাম আজ সাড়ে সাতটায় যেতে বলেছেন। মানে সাতটা অবধি সময়টা একেবারে তার নিজের। এই ভেবে তরুণ মেয়েকে বলল, ‘মা, এখন ছ’টা বাজে। রেডি হয়ে নে তাড়াতাড়ি। মেলায় যাব।’
সুমি ম্যামের এই কথায় একটু খুশিই হল বলা যায় তরুণ। সে মোবাইল ফোন তাকের ওপর রেখে দিয়ে তনয়াকে বলল, ‘ও তনু, শুনছ…আজ একটু সুবিধেই হল শেষমেশ বোধহয়। শুভ্রাকে নিয়ে যেতে পারব মেলায়।’
একরত্তি মেয়ে শুভ্রা সেই বিকেল থেকে বাবাকে বারবার করে বলে যাচ্ছিল, ‘বাবা আমায় মেলায় নিয়ে চলো না, মেলায় নিয়ে চলো না।’ কিন্তু তখন ঘড়িতে সাড়ে পাঁচটা বাজে। কিছুক্ষণ পর তাকে সাড়ে ছ’টায় স্টেশনে চলে যেতে হবে। সুতরাং এই আধঘণ্টা সময় মেয়েকে মেলা থেকে ঘুরিয়ে আনার জন্যে যথেষ্ট নয়।
বিনয়পুরের রথের মেলাটা খুব জমজমাট। বলতে গেলে, পুরো জেলার লোক আসে। আজ উল্টো রথের দিন। কাল থেকে অমন আর জমবে না মেলা। আজকেই তো সার বেঁধে বসা দোকানগুলোতে লোক এটা ওটা কেনার জন্য ভিড় করবে। আর মেলায় লোক না থাকলে সে মেলা ভালো লাগে? কত কিছুর দোকান বসেছে। মনোহারির দোকান, জিলিপি-গজার দোকান, ঘুগনি, চানা, ফুচকা, হাওয়াই মিঠাই, খই-বাদাম। এ তো গেল খাবারের দোকানের তালিকা। এছাড়া আছে কত কী রাইড। ইলেকট্রিকের নাগোরদোলা থেকে শুরু করে কাঠের হাতে চালানো নাগোরদোলা, কাঠের ঘোড়া, এরোপ্লেন, স্লিপার, আরও কত কিছু। আর তার সঙ্গে গৃহস্থালীর প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দোকান তো আছেই।
তনয়া বলে দিয়েছিল, যদি মেয়েকে নিয়ে তরুণ মেলায় যায় তাহলে তার জন্যে একটা ভালো ছোটমতো বঁটি কিনে আনতে। রিকশা চালিয়ে স্বল্প আয় হলেও বউয়ের বলে দেওয়া জিনিসটা, মেয়ের বায়নার কিছু খেলনা আর খাবারের টাকা তার কাছে ছিলই। সুতরাং আর্থিক দিক থেকে অসুবিধা ছিল না। অসুবিধা ছিল অন্য জায়গায়।
সেটা হল, সাড়ে ছ’টায় সুমি ম্যামকে আনতে গেলে সেই একেবারে রাত সাড়ে ন’টায় তাকে ঘরে ফিরতে হতো। কারণ, সুমি ম্যাম বলে দিয়েছিলেন, তিনি নাকি সাড়ে ছ’টায় তার রিকশা করে ওঁর বাবার বাড়িতে যাবেন। সেখানে পৌঁছতে পৌঁছতে প্রায় সাড়ে সাতটা বেজে যেতে। তারপর সেখানে এক ঘণ্টা থেকে বাড়ি ফিরবেন তরুণেরই রিকশা করে। মানে ম্যামকেই হয়তো ন’টার মধ্যে তাঁর বাড়িতে পৌঁছে দিতে পারত না সে।
কিন্তু ম্যাম আজ সাড়ে সাতটায় যেতে বলেছেন। মানে সাতটা অবধি সময়টা একেবারে তার নিজের। এই ভেবে তরুণ মেয়েকে বলল, ‘মা, এখন ছ’টা বাজে। রেডি হয়ে নে তাড়াতাড়ি। মেলায় যাব।’
মেয়েকে মেলা থেকে ঘুরিয়ে নিয়ে এসে একেবারে সাতটায় তরুণ রিকশা নিয়ে বার হয়ে গেল।
সুমি ম্যামের ডিউটি করতে করতে সে একেবারে পাকা পাংচুয়াল হয়ে গিয়েছে। একদম ঘড়ি ধরে চলা যাকে বলে।
দেড় বছর আগে এক সন্ধ্যায় সুমি ম্যাম অফিস থেকে ফিরছিলেন। রেলস্টেশনে নেমে সবে রিকশা স্ট্যান্ডের দিকে পা বাড়িয়েছেন। এমনসময় মাথা ঘুরে পড়ে গেলেন। আশেপাশে লোক বলতে এই তরুণই ছিল। সে তাড়াতাড়ি এসে ম্যামের মাথায় মুখে জল দিয়ে তাঁকে সুস্থ করে তুললেন। তারপর নিজের রিকশায় বসিয়ে বাড়ি নিয়ে এলেন।
সুমি ম্যাম স্বাভাবিক হয়ে বললেন, ‘তুমি না থাকলে কী হতো যে আমার!’
তরুণ বলল, ‘সত্যি ওখানে ওই সময় কেউই ছিল না। তবে মানুষ হিসেবে আমার কর্তব্য মনে করে আমি আপনার কাছে ছুটে যাই।’
সেই থেকে সুমি ম্যাম তরুণকে এই চাকরিটা দিয়েছেন। সকালে স্টেশনে নিয়ে যাওয়া আর সন্ধেয় স্টেশন থেকে বাড়ি আনা। মাস গেলে ছ’হাজার টাকা বেতন। ম্যামের বাড়ি থেকে স্টেশনের দূরত্ব অনেক। প্রায় পাঁচ কিলোমিটার। এর আগে অবশ্য সুমি তরুণের রিকশায় দু’-একবার এসেছেন। তবে তরুণকে চিনতেন না।
সুমি আগে বাড়ির পিছন থেকে কোনওদিন অটো ধরে, কোনওদিন রিকশা ধরে স্টেশনে যেতেন। একই ভাবে কোনওদিন অটোতে, কোনওদিন রিকশাতে রেলস্টেশন থেকে সন্ধেয় বাড়ি ফিরতেন। তিনি ইচ্ছে করলেই একটা অটো বা একটা ট্যাক্সি রিজার্ভ করে রাখতে পারতেন, যেটা তাঁকে বাড়ি আর স্টেশনের মধ্যেকার পথটা যাতায়াত করাবে। কিন্তু তিনি একটু খামখেয়ালি গোছের। ভাবেন, রোজ এক গাড়িতে গেলে ভালো লাগবে না। তাই যখন যেমন ভাবে ইচ্ছে তিনি স্টেশনে যেতে আর সেখান হতে বাড়ি ফিরতেন। কিন্তু আজ কপাল গুণে তরুণ ওঁর নিয়মিত ড্রাইভার হয়ে গেল।
মাস গেলে ছ’হাজার টাকা মানে অনেক। এতে করে তনয়া খুব খুশি। সে বলে, ‘একদম সময় ধরে চলবে। ম্যাম যেন কখনও তোমার ওপর রেগে না যান। ম্যামের ঠিক সময়ে অফিসে পৌঁছতে হবে। বড় চাকরি করেন উনি।’
সুমি ম্যামের ডিউটি করতে করতে সে একেবারে পাকা পাংচুয়াল হয়ে গিয়েছে। একদম ঘড়ি ধরে চলা যাকে বলে।
দেড় বছর আগে এক সন্ধ্যায় সুমি ম্যাম অফিস থেকে ফিরছিলেন। রেলস্টেশনে নেমে সবে রিকশা স্ট্যান্ডের দিকে পা বাড়িয়েছেন। এমনসময় মাথা ঘুরে পড়ে গেলেন। আশেপাশে লোক বলতে এই তরুণই ছিল। সে তাড়াতাড়ি এসে ম্যামের মাথায় মুখে জল দিয়ে তাঁকে সুস্থ করে তুললেন। তারপর নিজের রিকশায় বসিয়ে বাড়ি নিয়ে এলেন।
সুমি ম্যাম স্বাভাবিক হয়ে বললেন, ‘তুমি না থাকলে কী হতো যে আমার!’
তরুণ বলল, ‘সত্যি ওখানে ওই সময় কেউই ছিল না। তবে মানুষ হিসেবে আমার কর্তব্য মনে করে আমি আপনার কাছে ছুটে যাই।’
সেই থেকে সুমি ম্যাম তরুণকে এই চাকরিটা দিয়েছেন। সকালে স্টেশনে নিয়ে যাওয়া আর সন্ধেয় স্টেশন থেকে বাড়ি আনা। মাস গেলে ছ’হাজার টাকা বেতন। ম্যামের বাড়ি থেকে স্টেশনের দূরত্ব অনেক। প্রায় পাঁচ কিলোমিটার। এর আগে অবশ্য সুমি তরুণের রিকশায় দু’-একবার এসেছেন। তবে তরুণকে চিনতেন না।
সুমি আগে বাড়ির পিছন থেকে কোনওদিন অটো ধরে, কোনওদিন রিকশা ধরে স্টেশনে যেতেন। একই ভাবে কোনওদিন অটোতে, কোনওদিন রিকশাতে রেলস্টেশন থেকে সন্ধেয় বাড়ি ফিরতেন। তিনি ইচ্ছে করলেই একটা অটো বা একটা ট্যাক্সি রিজার্ভ করে রাখতে পারতেন, যেটা তাঁকে বাড়ি আর স্টেশনের মধ্যেকার পথটা যাতায়াত করাবে। কিন্তু তিনি একটু খামখেয়ালি গোছের। ভাবেন, রোজ এক গাড়িতে গেলে ভালো লাগবে না। তাই যখন যেমন ভাবে ইচ্ছে তিনি স্টেশনে যেতে আর সেখান হতে বাড়ি ফিরতেন। কিন্তু আজ কপাল গুণে তরুণ ওঁর নিয়মিত ড্রাইভার হয়ে গেল।
মাস গেলে ছ’হাজার টাকা মানে অনেক। এতে করে তনয়া খুব খুশি। সে বলে, ‘একদম সময় ধরে চলবে। ম্যাম যেন কখনও তোমার ওপর রেগে না যান। ম্যামের ঠিক সময়ে অফিসে পৌঁছতে হবে। বড় চাকরি করেন উনি।’
আরও পড়ুন:
পর্ব-৪৯: বসুন্ধরা এবং…
শারদীয়ার গল্প-৬: পর্সতার
অণুগল্প: সৎকার
শারদীয়ার গল্প-৩: আলোকসংশ্লেষ
তরুণ বলতে গেলে আজ অবধি একটা দিনের জন্যও ওর কর্তব্যে শিথিলতা প্রদর্শন করেনি। এজন্য ম্যাম ওর ওপর খুশিই বলা চলে। মাঝে মাঝে বলেন, ‘তরুণ তুমি তো ভারি পাংচুয়াল! একদম ঠিক সময়ে চলে আসো!’
তরুণ হে হে করে হাসে আর বলে, ‘তা নাহলে যে আপনার অফিস যেতে লেট হয়ে যাবে ম্যাম।’
সুমি ম্যামের লেট হয় মাঝে মাঝে। কোনও কোনও দিন অফিস যেতে ভালো লাগে না তাঁর। মন বিষণ্ণ হয়ে থাকে। এভাবে একটা বাড়িতে একা থাকলে মন কার ভালো থাকে। শাশুড়ি নিচতলায় থাকেন। তাঁকে দেখার জন্য অভয়া আছে। অভয়া এই বাড়িতেই
সুচরিতাদেবীর কাছেই থাকে সারাক্ষণ। রাত হলে বাড়ি যায়। অভয়ার কেউ নেই। এক মেয়ে ছিল। বিয়ে হয়ে গেছে। স্বামী মারা গিয়েছেন একটা রোড অ্যাকসিডেন্টে। অভয়ার বয়েস তখন চল্লিশের ওপর। এই বয়েসে আর কি সংসার পাতা ভালো দেখায়? মেয়ে এত বড় হয়ে গেল। ক্লাস নাইনে পড়ছে। ক’দিন পর বিয়েদিতে হবে। এই ভেবে অভয়া মেয়েকে নিয়েই রয়ে গিয়েছিল। তারপর এক ছেলে দেখে মেয়ের বিয়ে দিয়ে এখন সুচরিতাদেবীর আয়া হয়ে দিন পার করছে। অভয়ার নিজের বাড়িটা জামাই সারিয়ে-সুরিয়ে ভাড়ায় দিয়েছে। মাস গেলে কিছু আসে। সেটা অভয়ারই থাকে।
সুমির স্বামী একটা অর্থপিশাচ। সুমি তো তাই বলে। দিল্লিতে থাকে। বিশাল ব্যবসা সেখানে। কনস্ট্রাকশনের ব্যবসা। তাছাড়া শেয়ার মার্কেটেও নাকি টাকা ঢালে। কেন, এখানে থেকে বিজনেস করা যায় না? সুমি তো ফোনে প্রায়শই বলে। অভিরূপ যুক্তি দেখায়, ‘এখানে আমার একটা বিজনেস চেইন আছে, যেটা কলকাতায় নেই। তাই এখানে আমাকে থাকতেই হবে।’
সুমি পালটা যুক্তি দেখায়, ‘কেন, কলকাতায় এসে চেইন তৈরি করা যায় না?’
অভিরূপের কথা, তাতে নাকি অনেক সময় লাগবে। অভি মাসে দু’বার আসে। একদিন থেকে আবার ফিরে যায়। এভাবে থাকতে থাকতে সুমির নাভিশ্বাস উঠে যাচ্ছে যেন দিন-দিন। কিচ্ছুটি যেন ভালো লাগছে না।
কিছুদিন পর বর্ষা নামল। তরুণ কিন্তু ডিউটিতে কোনও গাফিলতি করে না। গায়ে বর্ষাতি চাপিয়ে রিকশা প্যাডেল করে ম্যামকে নিয়ে যায়। আনে।
তরুণ হে হে করে হাসে আর বলে, ‘তা নাহলে যে আপনার অফিস যেতে লেট হয়ে যাবে ম্যাম।’
সুমি ম্যামের লেট হয় মাঝে মাঝে। কোনও কোনও দিন অফিস যেতে ভালো লাগে না তাঁর। মন বিষণ্ণ হয়ে থাকে। এভাবে একটা বাড়িতে একা থাকলে মন কার ভালো থাকে। শাশুড়ি নিচতলায় থাকেন। তাঁকে দেখার জন্য অভয়া আছে। অভয়া এই বাড়িতেই
সুচরিতাদেবীর কাছেই থাকে সারাক্ষণ। রাত হলে বাড়ি যায়। অভয়ার কেউ নেই। এক মেয়ে ছিল। বিয়ে হয়ে গেছে। স্বামী মারা গিয়েছেন একটা রোড অ্যাকসিডেন্টে। অভয়ার বয়েস তখন চল্লিশের ওপর। এই বয়েসে আর কি সংসার পাতা ভালো দেখায়? মেয়ে এত বড় হয়ে গেল। ক্লাস নাইনে পড়ছে। ক’দিন পর বিয়েদিতে হবে। এই ভেবে অভয়া মেয়েকে নিয়েই রয়ে গিয়েছিল। তারপর এক ছেলে দেখে মেয়ের বিয়ে দিয়ে এখন সুচরিতাদেবীর আয়া হয়ে দিন পার করছে। অভয়ার নিজের বাড়িটা জামাই সারিয়ে-সুরিয়ে ভাড়ায় দিয়েছে। মাস গেলে কিছু আসে। সেটা অভয়ারই থাকে।
সুমির স্বামী একটা অর্থপিশাচ। সুমি তো তাই বলে। দিল্লিতে থাকে। বিশাল ব্যবসা সেখানে। কনস্ট্রাকশনের ব্যবসা। তাছাড়া শেয়ার মার্কেটেও নাকি টাকা ঢালে। কেন, এখানে থেকে বিজনেস করা যায় না? সুমি তো ফোনে প্রায়শই বলে। অভিরূপ যুক্তি দেখায়, ‘এখানে আমার একটা বিজনেস চেইন আছে, যেটা কলকাতায় নেই। তাই এখানে আমাকে থাকতেই হবে।’
সুমি পালটা যুক্তি দেখায়, ‘কেন, কলকাতায় এসে চেইন তৈরি করা যায় না?’
অভিরূপের কথা, তাতে নাকি অনেক সময় লাগবে। অভি মাসে দু’বার আসে। একদিন থেকে আবার ফিরে যায়। এভাবে থাকতে থাকতে সুমির নাভিশ্বাস উঠে যাচ্ছে যেন দিন-দিন। কিচ্ছুটি যেন ভালো লাগছে না।
কিছুদিন পর বর্ষা নামল। তরুণ কিন্তু ডিউটিতে কোনও গাফিলতি করে না। গায়ে বর্ষাতি চাপিয়ে রিকশা প্যাডেল করে ম্যামকে নিয়ে যায়। আনে।
আরও পড়ুন:
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৪৪: কবির দরজা সাধারণজনের জন্য সারাক্ষণই খোলা থাকত
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-১৬: সংসার সুখের হয় ‘চাঁপাডাঙার বৌ’-র গুণে
ছোটদের যত্নে: হঠাৎই জ্বর, মুখে-হাতে ঘা হচ্ছে শিশুদের! কষ্টকর হলেও ভয়ের কিছু নেই, জেনে নিন কোন রোগের উপসর্গ এগুলি
ডায়াবিটিস ধরা পড়েছে? হার্ট ভালো রাখতে রোজের রান্নায় কোন তেল কতটা ব্যবহার করবেন? দেখুন ভিডিয়ো
দশভুজা: ‘ওগো তুমি যে আমার…’— আজও তাঁর জায়গা কেউ নিতে পারেনি/২
সেদিন খুব জোরে বৃষ্টি নেমেছিল। ঝরঝর করে হয়েই যাচ্ছিল। সাড়ে ছ’টা বাজে তখন। তরুণ রিকশা নিয়ে একেবারে তৈরি। স্টেশনের পাশে অটো স্ট্যান্ডের ধারে রিকশা দাঁড় করিয়ে সামনের মিষ্টির দোকানের বাইরের শেডের তলায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিল ম্যামের জন্যে।
পাঁচ মিনিট পার হয়ে গেল। ম্যামের আসা নেই। দশ মিনিট হয়ে গেল। তরুণ ভাবল, ‘কী ব্যাপার! ম্যাম তো এই ট্রেনেই ফেরেন। আজ কি ট্রেন মিস করলেন? নাকি কোনও বিপদে পড়লেন?’ পকেট থেকে মোবাইলখানা বার করে কল করতে যাচ্ছিলেন, তখনই দেখলেন, ম্যাম আসছেন।
খয়েরি রঙের শাড়ি পরা ফর্সা সুঠাম শরীরের সুন্দরী মহিলা সুমি হাতে একটা ব্যাগ নিয়ে ছাতা মাথায় ধীরে ধীরে পা ফেলে ফেলে আসছেন।
সুমি রিকশায় উঠে বসলেন।
তরুণ বলল, ‘এত দেরি ম্যাডাম?’
সুমি বললেন, ‘একটু শপিংয়ে গিয়েছিলাম।‘
সাঁ সাঁ করে বাতাস বইছে। ঝিরঝির করে বৃষ্টি পড়ছে। মন্দ লাগছে না। ম্যম রিকশায় বসে আছেন। সামনে এক সুন্দর চেহারার সুশ্রী যুবক তাঁকে রিকশা চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। রাস্তার হলুদ আলোয় মাথায় ঝাঁকড়া চুলের লম্বা শ্যামবর্ণের ছেলে তরুণকে আজ দেখে সুমির মনটা কেমন হয়ে গেল। কোনও এক বন্য আবেগ তাঁর শরীরে ক্রিয়া করতে আরম্ভ করে দিয়েছে। বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে রইলেন সুমি ওর পিঠ আর চওড়া কাঁধের দিকে। শুনশান রাস্তা দিয়ে রিকশা করে ওঁকে নিয়ে যাচ্ছে এই তরুণ।
ম্যামের নীরবতা তরুণকে কিছু বলতে যেন নির্দেশ দিল। ও বলল, ‘ম্যাম, ভাবছিলাম আপনার আবার কিছু হল না তো? দেরি হচ্ছে বলে। খুব চিন্তা হচ্ছিল।’
‘আমার জন্য চিন্তা হয় তোমার তরুণ?’
‘হ্যাঁ, ম্যাম কেন হবে না? আপনার চাকরি যে করি আমি।’
‘না, শুধু চাকরি করো বলে? আর কিছু না?’
‘আর কী হবে ম্যাম?’ আমি তো সবসময় দেখি আপনি যাতে ঠিক সময়ে ট্রেন ধরতে পারেন। ঠিক সময়ে বাড়ি ফিরতে পারেন।’
‘বাড়ি ফিরে কী হবে ঠিক সময়ে?’
‘ওকথা কেন বলছেন ম্যাম?’
‘তুমি জানো না? একজন বিবাহিত মেয়ের স্বামী বাড়ি না থাকলে তার কী কষ্ট?’
‘হ্যাঁ ম্যাম। বুঝি।’
পাঁচ মিনিট পার হয়ে গেল। ম্যামের আসা নেই। দশ মিনিট হয়ে গেল। তরুণ ভাবল, ‘কী ব্যাপার! ম্যাম তো এই ট্রেনেই ফেরেন। আজ কি ট্রেন মিস করলেন? নাকি কোনও বিপদে পড়লেন?’ পকেট থেকে মোবাইলখানা বার করে কল করতে যাচ্ছিলেন, তখনই দেখলেন, ম্যাম আসছেন।
খয়েরি রঙের শাড়ি পরা ফর্সা সুঠাম শরীরের সুন্দরী মহিলা সুমি হাতে একটা ব্যাগ নিয়ে ছাতা মাথায় ধীরে ধীরে পা ফেলে ফেলে আসছেন।
সুমি রিকশায় উঠে বসলেন।
তরুণ বলল, ‘এত দেরি ম্যাডাম?’
সুমি বললেন, ‘একটু শপিংয়ে গিয়েছিলাম।‘
সাঁ সাঁ করে বাতাস বইছে। ঝিরঝির করে বৃষ্টি পড়ছে। মন্দ লাগছে না। ম্যম রিকশায় বসে আছেন। সামনে এক সুন্দর চেহারার সুশ্রী যুবক তাঁকে রিকশা চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। রাস্তার হলুদ আলোয় মাথায় ঝাঁকড়া চুলের লম্বা শ্যামবর্ণের ছেলে তরুণকে আজ দেখে সুমির মনটা কেমন হয়ে গেল। কোনও এক বন্য আবেগ তাঁর শরীরে ক্রিয়া করতে আরম্ভ করে দিয়েছে। বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে রইলেন সুমি ওর পিঠ আর চওড়া কাঁধের দিকে। শুনশান রাস্তা দিয়ে রিকশা করে ওঁকে নিয়ে যাচ্ছে এই তরুণ।
ম্যামের নীরবতা তরুণকে কিছু বলতে যেন নির্দেশ দিল। ও বলল, ‘ম্যাম, ভাবছিলাম আপনার আবার কিছু হল না তো? দেরি হচ্ছে বলে। খুব চিন্তা হচ্ছিল।’
‘আমার জন্য চিন্তা হয় তোমার তরুণ?’
‘হ্যাঁ, ম্যাম কেন হবে না? আপনার চাকরি যে করি আমি।’
‘না, শুধু চাকরি করো বলে? আর কিছু না?’
‘আর কী হবে ম্যাম?’ আমি তো সবসময় দেখি আপনি যাতে ঠিক সময়ে ট্রেন ধরতে পারেন। ঠিক সময়ে বাড়ি ফিরতে পারেন।’
‘বাড়ি ফিরে কী হবে ঠিক সময়ে?’
‘ওকথা কেন বলছেন ম্যাম?’
‘তুমি জানো না? একজন বিবাহিত মেয়ের স্বামী বাড়ি না থাকলে তার কী কষ্ট?’
‘হ্যাঁ ম্যাম। বুঝি।’
আরও পড়ুন:
বাইরে দূরে: পাহাড়ের উপর ছবির মতো সুন্দর শ্রবণবেলাগোলা— চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের এক অজানা অধ্যায়
খাই খাই: বড়দিনের ডিম ছাড়া স্পেশাল ফ্রুট কেক এ বার বাড়িতেই! কী ভাবে বানাবেন? রইল সহজ রেসিপি
মহাভারতের আখ্যানমালা, পর্ব-৪৭: রামকথা শ্রবণ— তীর্থে বাসের পুণ্যলাভ করলেন পাণ্ডবেরা
শাশ্বতী রামায়ণী, পর্ব ২৮: অযোধ্যাবাসীরাও কি সঙ্গী বনযাত্রায়?
‘তুমি আমাকে ভালোবাসো তরুণ?’
‘কেন ভালোবাসব না? মানুষ হয়ে তো মানুষকে ভালোবাসতেই হবে। আপনাকে যেমন ভালোবাসি, শ্রদ্ধাও তেমন করি।’
‘না তরুণ, আমি ও ভালোবাসার কথা বলছি না।’
‘তাহলে কী ম্যাম?’
সুমি একটু চাপা গলায় বলেন, ‘চলো না আজ আমার বাড়িতে। কেউ নেই। ওপরতলায় শুধু আমি থাকি। তোমার এই ম্যামের সঙ্গে একটু সময় কাটাবে। আমাকে একটু কাছ থেকে সঙ্গ দেবে। একটু খুশি করে তুলবে আমাকে। একটু আনন্দ দেবে। চলো না প্লিজ।’
তরুণের শরীরের মধ্যে শিহরণ খেলে গেল। আকাশের বিদ্যুৎকে তা যেন হার মানিয়ে দেয়। কী করবে ও আজ। যাবে ম্যামের বাড়ি? সত্যি তো পুরো বাড়ি ফাঁকা। নিচে বৃদ্ধা শাশুড়ি। সারাদিন মৃতের মতো পড়ে। তাহলে বাধা তো কিছুই নেই। আজ এক অন্য অনুভূতির দিন। তীব্র আনন্দ যেন তাকে হাতছানি দিচ্ছে, ‘যা তরুণ যা। নতুন কিছু মিলবে।’
মুহূর্তে তরুণের মনে ভেসে উঠল, তনয়া ঘর ঝাঁট দিচ্ছে আর গুনগুন করে গান গাইছে। রাতে তার সঙ্গে বসে পাশে আর-একটা ঘর বানাবে সেই নিয়ে পরামর্শ করছে। আরও কিছু টাকা জমাতে হবে। তারপর তার আর শুভ্রার জন্য ভাত বাড়তে ছুটে চলে গেল। রাত দশটা যে বেজে গিয়েছে। তরুণ বলছে, ‘আরে ভাত খাওয়া হবে’খন।‘ তনয়া বলছে, ‘সারাদিন খেটে আসো। তাড়াতাড়ি খেয়ে শুয়ে পড়ো। তোমার বিশ্রামের দরকার।’ কখনও মেয়েটির আড়ালে তনয়া তার কপালে একটু চুমু এঁকে দিচ্ছে।
তরুণ বলল, ‘ম্যাম আমাকে ফিরতে হবে। মেয়ের জ্বর।’
সুমি তাই বিশ্বাস করল।
বাড়ি ফিরে তরুণ দেখল, শুভ্রার গায়ে একটা কাঁথা চাপা দিয়ে তনয়া কপালে জলপট্টি দিচ্ছে।
সব কথা আর বলা গেল না তনয়াকে। বলা যাবে না কোনওদিন। কিন্তু মনে মনে সিদ্ধান্ত করে নিয়েছে তরুণ, কালকেই রিকশা বেচে দেবে সে।
‘কেন ভালোবাসব না? মানুষ হয়ে তো মানুষকে ভালোবাসতেই হবে। আপনাকে যেমন ভালোবাসি, শ্রদ্ধাও তেমন করি।’
‘না তরুণ, আমি ও ভালোবাসার কথা বলছি না।’
‘তাহলে কী ম্যাম?’
সুমি একটু চাপা গলায় বলেন, ‘চলো না আজ আমার বাড়িতে। কেউ নেই। ওপরতলায় শুধু আমি থাকি। তোমার এই ম্যামের সঙ্গে একটু সময় কাটাবে। আমাকে একটু কাছ থেকে সঙ্গ দেবে। একটু খুশি করে তুলবে আমাকে। একটু আনন্দ দেবে। চলো না প্লিজ।’
তরুণের শরীরের মধ্যে শিহরণ খেলে গেল। আকাশের বিদ্যুৎকে তা যেন হার মানিয়ে দেয়। কী করবে ও আজ। যাবে ম্যামের বাড়ি? সত্যি তো পুরো বাড়ি ফাঁকা। নিচে বৃদ্ধা শাশুড়ি। সারাদিন মৃতের মতো পড়ে। তাহলে বাধা তো কিছুই নেই। আজ এক অন্য অনুভূতির দিন। তীব্র আনন্দ যেন তাকে হাতছানি দিচ্ছে, ‘যা তরুণ যা। নতুন কিছু মিলবে।’
মুহূর্তে তরুণের মনে ভেসে উঠল, তনয়া ঘর ঝাঁট দিচ্ছে আর গুনগুন করে গান গাইছে। রাতে তার সঙ্গে বসে পাশে আর-একটা ঘর বানাবে সেই নিয়ে পরামর্শ করছে। আরও কিছু টাকা জমাতে হবে। তারপর তার আর শুভ্রার জন্য ভাত বাড়তে ছুটে চলে গেল। রাত দশটা যে বেজে গিয়েছে। তরুণ বলছে, ‘আরে ভাত খাওয়া হবে’খন।‘ তনয়া বলছে, ‘সারাদিন খেটে আসো। তাড়াতাড়ি খেয়ে শুয়ে পড়ো। তোমার বিশ্রামের দরকার।’ কখনও মেয়েটির আড়ালে তনয়া তার কপালে একটু চুমু এঁকে দিচ্ছে।
তরুণ বলল, ‘ম্যাম আমাকে ফিরতে হবে। মেয়ের জ্বর।’
সুমি তাই বিশ্বাস করল।
বাড়ি ফিরে তরুণ দেখল, শুভ্রার গায়ে একটা কাঁথা চাপা দিয়ে তনয়া কপালে জলপট্টি দিচ্ছে।
সব কথা আর বলা গেল না তনয়াকে। বলা যাবে না কোনওদিন। কিন্তু মনে মনে সিদ্ধান্ত করে নিয়েছে তরুণ, কালকেই রিকশা বেচে দেবে সে।
লেখক: মনসুর আলি (Mansur Ali), ইংরাজির শিক্ষক, ধোষা-চন্দনেশ্বর এনসি হাইস্কুল (এইচএস)