রবিবার ২৪ নভেম্বর, ২০২৪


পঞ্চাশে প্রাণের তরঙ্গ পঞ্চাশে ভাবনার জোয়ার।

।। ৫০ সৃষ্টির দশক।।

সত্তরের দশক যদি মুক্তির দশক হয়ে থাকে, তাহলে পঞ্চাশের দশক নিঃসন্দেহে সৃষ্টির দশক। ১৯৫১ সালে সদ্যপ্রয়াত বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর ইছামতী উপন্যাসের জন্য পেলেন রবীন্দ্র পুরস্কার। ইংরেজি ও ফরাসি ভাষায় অনূদিত হল পথের পাঁচালি। ‘৫৬ সালে তারাশঙ্করের আরোগ্য নিকেতন সাহিত্য অ্যাকাডেমি পুরস্কার পেল। তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের আবার অমলকান্তির আশুতোষ কলেজেরই প্রাক্তনী। কার্ল মার্কসের শ্রেণি সংগ্রাম তত্ত্ব আর ফ্রয়েডের মনোবিশ্লেষণ প্রতিফলিত হল মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচনায়। বাংলা সাহিত্যে এক শক্তিশালী লেখক এর আগমন ঘটল তাঁর নাম সমরেশ বসু।

—‘৫৯-র ৬ ডিসেম্বর লক্ষ মানুষের উপস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী নেহেরুজির আমন্ত্রণে বৈদ্যুতিক হাতল টেনে পাঞ্চেৎ বাঁধের উদ্বোধন করলেন শ্রমজীবি সাঁওতাল মহিলা বুধনি মেঝেন। ১৯৪৮ থেকে ১৯৬২ মানে গোটা পঞ্চাশের দশক ও আগে-পরে আর দুটি বছর মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের রূপকার ভারতরত্ন ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়।
ফুটবলে এ দশক মোহনবাগানের। ৫০-এ ডুরান্ড কাপ- ৫৪ থেকে ৫৬ লিগ। ৫৪-য় লিগের সঙ্গে আইএফএ শিল্ড। ৫৫-য় লিগের সঙ্গে রোভার্স কাপ। মোহনবাগানে তখন ৫১-র সোনাজয়ী ভারতীয় দলের অধিনায়ক শৈলেন মান্না, চুনী গোস্বামী, কেম্পিয়া সাত্তার বদ্রু বন্দ্যোপাধ্যায়, জার্নেল সিং। ক্রিকেটেও জয়জয়কার। ৫২-র ফেব্রুয়ারি এক ইনিংস ৮ রানে লেন হাটনের ইংল্যাণ্ডকে হারিয়ে প্রথম টেস্ট জয় ভারতের। ওই মাদ্রাজেই ’৫৫-’৫৬তে পঙ্কজ রায়-ভিনু মাঁকড় জুটি ৪১৩ রানের বিশ্বরেকর্ড গড়লেন।

চিত্র ও ভাস্কর্যে নন্দলাল বসু, যামিনী রায়, রামকিংকর, বিনোদবিহারী, চিন্তামণি কর… বিজ্ঞান চর্চায় মেঘনাথ সাহা, সত্যেন্দ্রনাথ বসু, প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশ। সঙ্গীতের জগতেও নক্ষত্রের সমাবেশ— শান্তিদেব ঘোষ, দেবব্রত বিশ্বাস, সুচিত্রা মিত্র, সলিল চৌধুরী, সবিতাব্রত দত্ত, হেমাঙ্গ বিশ্বাস, নির্মলেন্দু চৌধুরী। পঞ্চাশের শুরুতে হেমন্ত মুখোপাধ্যায় বোম্বেতে প্রতিষ্ঠা পেতে শুরু করেছেন। পঞ্চান্ন সালে ‘শাপমোচন’ এর গান তৈরির সঙ্গে সঙ্গে শুরু হল এক ম্যাজিক। ভীষণ জনপ্রিয়তা পেল উত্তম কুমারের লিপে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গাওয়া গান। চুয়ান্ন সালের শেষদিকে মুক্তি পেয়েছিল অগ্নিপরীক্ষা —আশাপূর্ণা দেবীর গল্প। আর সেই ছবিতে সুরকার অনুপম ঘটক গানের সুর রচনায় এক অদ্ভুত এক্সপেরিমেন্ট করলেন যেটা বাংলাতে আগে কখনও হয়নি। সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের গাওয়া “গানে মোর কোন ইন্দ্রধনু” রোমান্টিকতার এক নতুন দিগন্ত সৃষ্টি করলেও অগ্রদূতের বিভূতি লাহার নাকি প্রাথমিকভাবে এই গানটি পছন্দ হয়নি। ‘অগ্নিপরীক্ষা’ থেকেই জনপ্রিয় বাংলা ছবি পেল এক সর্বকালের প্রেমিক জুটিকে। ‘৫৭ সালে মুক্তি পেল পথে হল দেরি। গল্প প্রতিভা বসু, সুর রবীন চট্টোপাধ্যায়। গানে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। “এ শুধু গানের দিন এ লগন গান শোনাবার” —গান শুরুর আগেই মিষ্টি অ্যাকর্ডিয়ানের প্রি-ল্যুড বা “কিছুক্ষণ আরও না হয় রহিতে কাছে”— এ গানের আবেদন চিরকালীন হয়ে থাকল।

১৯৫২ সাল থেকে ক্রমাগত চেষ্টা করে ১৯৫৫-র ২৬শে আগস্ট মুক্তি পেল সত্যজিৎ রায়ের ‘পথের পাঁচালী’। সাতান্ন-র গোড়ায় কান চলচ্চিত্র উৎসবে পুরষ্কৃত হল। তারপর একে একে অপরাজিত পরশপাথর জলসাঘর অপুর সংসার…এই দশকেই দেখা মিলল তপন সিংহ, রাজেন তরফদার, ঋত্বিক ঘটক, মৃণাল সেনের। ১৯৫২ সালে এই কলকাতা শহরে প্রথম আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব হয়ে গিয়েছে। পঞ্চাশের দশকে পেশাদার ও অপেশাদার মঞ্চে নাটক সাফল্য পেল। শিশিরকুমারের শ্রীরঙ্গম পরিণত হল বিশ্বরূপায়। মিনার্ভায় উৎপল দত্তের লিটল থিয়েটার গ্রুপের নাটক শুরু হল। রঙমহল-এর আদর্শ হিন্দু হোটেল উল্কা কবি মায়ামৃগ এ সবের সফল প্রযোজনা। থিয়েটার সেন্টারের তরুণ রায়-দীপান্বিতা রায় করলেন এক মুঠো আকাশ এক পেয়ালা কফি। বিমল মিত্রের লেখা সাহেব বিবি গোলাম একইসঙ্গে চলচ্চিত্র ও মঞ্চে সফল। বিশ্বরূপায় আরোগ্য নিকেতন ক্ষুধা সেতু। এই দশকেই একে একে বহুরূপী রূপকার সুন্দরম শৌভনিক নান্দীকার।
আরও পড়ুন:

পর্ব-৪৮: বসুন্ধরা এবং…

ঋতুস্রাবের সময় মেজাজ বিগড়ে যায় মহিলাদের, তবে তার আগে কেন আনন্দে থাকেন তাঁরা?

প্লাস্টার খোলার পরও চলাফেরা করতে কষ্ট হচ্ছে? এই বিষয়গুলি মাথায় রাখুন

আর ঠিক এই সময়টাই অমলকান্তির সৃষ্টির রসদ। একসঙ্গে সর্বক্ষেত্রে এত পরীক্ষা-নিরীক্ষা এত সৃজনী শক্তি এত সাফল্যের খতিয়ান —সব কিছুতেই প্রাণের তরঙ্গ ভাবনার জোয়ার। সবাই নতুনভাবে কিছু করতে চাইছে। দ্বন্দ্ব আছে, কিন্তু তা যুক্তির, দৃষ্টিভঙ্গির। তাই প্রতিযোগিতা থাকলেও তা সভ্যতা-শালীনতার মধ্যে থেকে। এই সময় থেকেই অমলকান্তির লেখাজোকার শুরু। চারপাশে চিন্তাভাবনার অজস্র রসদ। কফি হাউসে কফির পেয়ালায় তুফান। গ্রাজুয়েট হবার আগে থেকেই গল্প-উপন্যাসের আঙিনায় অমলকান্তি দত্তের নাম পরিচিতি পেতে শুরু করেছে। ১৯৬১ সালে ইংরেজি সাহিত্যে এমএ পাশ করার পরে পরেই অধ্যাপনার সুযোগ এসে গেল। ৫৫-তে গড়ে ওঠা দক্ষিণের সিটি কলেজ (ডে) বা হেরম্বচন্দ্র কলেজ-এ। তার আগে আগে ৫৯ থেকে ৬১র মধ্যে অমলকান্তির চার চারটি উপন্যাস বেশ সাড়া ফেলে দিয়েছে। চেনাজানা সকলেই ভেবেছিল অমলকান্তি অধ্যাপনার চাকরিটা নিয়ে নেবে। কিন্তু মা স্বর্ণময়ী জানতেন ছেলেকে। তাই তাঁর মনে সন্দেহ ছিল। তিনি জিজ্ঞেস করলেন

‘কলেজের চাকরিটা কি তুই নিচ্ছিস?’
মায়ের চোখে চোখ রেখে কয়েক মুহূর্ত অপলক তাকিয়ে ছিল অমলকান্তি।
‘তুমি খুশি হবে?’
স্বর্ণময়ী হেসে উত্তর দিয়েছিলেন
‘তুই যাতে খুশি হবি আমি তাতেই খুশি।’

‘দেখ মা ভালো শিক্ষক হতে গেলে ভাল করে ছাত্র পড়াতে গেলে অনেক পড়াশোনা করতে হবে। অনেক ভেবে দেখলুম, পড়াশোনা যদি করি তাহলে নিজের লেখার জন্য পড়ব। যে কাজটা আমি ভালোবাসি চব্বিশটা ঘণ্টা নয় সেই কাজেই ব্যয় করব। তাই শুধু শুধু আরেকজনের চাকরি পাওয়ার রাস্তাটা বন্ধ রেখে লাভ কী? আর সকলে বলে আমি সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মেছি, ভবিষ্যতে অসুবিধে হলে নয় চামচটা বেচে দেব।’
ছেলের রসিকতায় মা ছেলে দুজনেই হাসতে থাকে। হঠাৎ হাসি থামিয়ে অমলকান্তি মাকে বলে,
আরও পড়ুন:

গৃহিণীদের মধ্যে বইয়ের নেশা বাড়াতে কাঁধে ঝোলা নিয়ে ঘুরে বেড়ান রাধা, ‘চলমান পাঠাগার’ তাঁর পরিচয়!

একই হেয়ার স্টাইলে একঘেয়েমি? ফ্যাশনে চুলের বাহার আনতে জেনে নিন কোনটা আপনার?

ত্বকের পরিচর্যায়: ত্বক শুষ্ক হয়ে যাচ্ছে? যত্নে কী কী করবেন? জেনে নিন ত্বক বিশেষজ্ঞের জরুরি পরামর্শ

‘আচ্ছা মা, এই যে আমি এত ভালো নম্বর নিয়ে এমএ পরীক্ষায় পাশ করলুম। তুমি মানে তোমরা আমায় কোন প্রাইজ দেবে না। তোমার কাছে গল্প শুনেছি বাবা মেট্রিকুলেশন পরীক্ষায় জলপানি পেয়েছিলেন বলে গিরিজা শঙ্কর গুহ সোনার মেডেল দিয়েছিলেন। এমনকি, তোমার বিয়েতেও উনি একখানা সোনার মেডেলওলা হার দিয়েছিলেন।’

‘আচ্ছা বেশ বাবাকে বলবো’খন তোকেও একটা মেডেল প্রাইজ দেওয়া হবে।’
‘মেডেল আমার পছন্দ মত হওয়া চাই!’
পকেটে রাখা বাদামি খাম থেকে একটা সাদা কালো ছবি বের করে।
‘এই যে! এই রকম!!’
স্বর্ণময়ী অবাক হয়ে দেখল, একটা মিষ্টি চেহারার মেয়ের ছবি- জিজ্ঞেস করল
‘কে?’
‘ভালো করে দেখ, হয়তো চিনতেও পারো’
হ্যাঁ দ্বিতীয় বার দেখে চেনা চেনা লাগছে বটে, খুব চেনা!! কিন্তু মনে করতে পারছে না স্বর্ণময়ী। আচমকা ঝলকের মতো মনে হল চেহারাটা কিছুদিন আগেই সিনেমাতে দেখেছে রবীন্দ্রনাথের ‘মাল্যদান’। কুড়ানির ভূমিকায়…নামটা মনে পড়েছে। সুরঙ্গমা… সুরঙ্গমা সেনগুপ্ত।
‘সিনেমা করে। সুরঙ্গমা সেনগুপ্ত। মাল্যদানের কুড়ানি। এর ছবি তোর কাছে কেন?’
‘রবীন্দ্রনাথের আরও দুটো গল্পের নায়িকা। মনিহারা আর শুভা, তুমি বোধহয় দেখনি। আর রবিঠাকুরের “প্রতিবেশিনী”র নাম বদলে “১৯ নম্বর” নাম দিয়ে একটা ছবির শুটিং, নিউ থিয়েটার্স স্টুডিওতে শুরু হয়েছে।’

‘তুই এতসব কোত্থেকে জানলি?’
‘কি আশ্চর্য? মাল্যদান এর ডিরেক্টর সুরজিৎ লাহিড়ীই তো আমার নতুন উপন্যাস “বন্ধ দরজার ওপারে” নিয়ে ছবি করবেন।’
‘ও তোর সেই মানসিক হাসপাতাল নিয়ে উপন্যাস?’
‘তুমি আমার লেখার এত মনোযোগী পাঠক মা?’
স্বর্ণময়ী হাসেন।
আরও পড়ুন:

শিশুকে নিয়ে বেড়াতে যাচ্ছেন? কোন কোন বিষয়ে সতর্কতা প্রয়োজন? কী কী ওষুধ সঙ্গে রাখবেন? রইল পরামর্শ

হেলদি ডায়েট: কিডনির সমস্যা? নজর দিন রোজকার খাদ্যাভ্যাসে, পাতে কী কী থাকবে, আর কোনগুলি এড়াবেন? দেখুন ভিডিয়ো

ডায়েট ফটাফট: না খেয়ে নয়, বরং খেয়েই কমান ওজন! কী কী খেলে মেদ ঝরবে? দেখুন ভিডিয়ো

‘তাতে বুঝি এই মেয়েটা অভিনয় করবে? তাপসীর চরিত্র?’
‘একদম ঠিক।’
‘বুঝলাম। কিন্তু তুই আমাকে বল। এই ছবিটা তুই আমার কাছে নিয়ে এসেছিস কেন? ছবি হলে সিনেমায় দেখব।’
অমলকান্তি মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে বলে।
‘কথাটা তুমি না বুঝে থাকলে আমার কিছু বলার নেই। সে ক্ষেত্রে আমায় নিজের মুখে বলতে হবে। এই হল আমার এমএ পাশের মেডেল। আমি সুরঙ্গমাকে বিয়ে করব মা।’

অমলকান্তির কথা শুনে মায়ের চোখ কপালে। তবে অমলকান্তির সঙ্গে স্বর্ণময়ীর যে সহজ সম্পর্ক ছিল, সেটা অন্য ছেলেমেয়েদের সঙ্গে হয়ত অতটা ছিল না। বড় দুই ছেলে ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত। একমাত্র মেয়ে বৈধব্যের যন্ত্রণা কাটিয়ে উঠে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। অমলকান্তির পরের তিন ভাই। তরুণ কলেজে। বিমল ইন্টারমিডিয়েট এবং কমল স্কুলে। সাহিত্য স্বর্ণময়ী বরাবরের প্রিয় বিষয়। আর তারই আত্মজ অমলকান্তি একজন পরিচিত সাহিত্যিক। মা-ও বটে আর ছেলের লেখার একনিষ্ঠ পাঠিকাও বটে। এই সম্পর্কটা অনেকটাই বন্ধুর মতো। তার মানে অমলকান্তি বসুন্ধরা ভিলায় প্রেম বিবাহ করতে চায়। বিনয়কান্তি কি মেনে নেবে? এই মুহূর্তে তার পারিবারিক ঐতিহ্য আর একজন চলচ্চিত্র নায়িকাকে পুত্রবধূ হিসেবে মেনে নেওয়া… খুব একটা সহজ হবে বলে স্বর্ণময়ীর মনে হচ্ছে না। বসুন্ধরাকে বলে দেখবে? কিন্তু অমু যা জেদি, অমত করলে হয়তো সে আর বিয়েই করবে না। অমলকান্তির কথার কোন জবাব না দিয়ে স্বর্ণময়ী একতলার ঠাকুরঘরে গেলেন। আরাধ্য দেবতাদের সামনে করজোড়ে নিবেদন জানালেন এ সংকট থেকে মুক্তি দাও তোমরা, যা ভালো তাই যেন হয়।

অধ্যাপক রণেন সেনগুপ্তের সঙ্গে খুব ঘনিষ্ঠতা না হলেও বিনয়কান্তির পরিচয় ছিল। বেঙ্গল ক্লাবের এক অনুষ্ঠানে দু’জনেরই পরিচিত ডাক্তার সুশীল সেনের মধ্যস্থতায় সেদিন আলাপটা আবার নতুন করে হল। কথায় কথায় ডাক্তার জানালেন বিনয়কান্তির ছেলেপুলেরা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আবার রণেন সেনগুপ্তর মেয়েটিও বিবাহযোগ্যা প্রজাপতির ইচ্ছেয় বিয়েটা হয়ে গেলে ডাক্তার সেনের জোরদার ঘটক বিদায় পাওয়ার সম্ভাবনা আছে।

কথায় বলে ঈশ্বরের ইচ্ছেয় জীবনের নির্ঘণ্ট স্থির হয়। রণেন সেনগুপ্তর বাড়ি দেশপ্রিয় পার্ক। বিনয় দুম করে বলে বসল।
আরও পড়ুন:

শাশ্বতী রামায়ণী, পর্ব ২৮: অযোধ্যাবাসীরাও কি সঙ্গী বনযাত্রায়?

জিম-ট্রিম: জিম করে ভুঁড়িকে বাই বাই করতে চান? তাহলে এই ব্যায়ামগুলি করুন

মহাভারতের আখ্যানমালা, পর্ব-৪৬: ভৃগুবংশে জন্ম নিলেন পরশুরাম— চরুবদলের ভুলে ক্ষত্রতেজ পেলেন তিনি

‘চলুন প্রফেসর, আপনার আপত্তি না থাকলে বাড়ি ফেরার পথে আমি আজ আপনার মেয়ের সঙ্গে আলাপ করে যাব।’
ক্লাব থেকেই বাড়িতে ফোন করে দিলেন অধ্যাপক রণেন সেনগুপ্ত। বিনয়কান্তির মেয়েটিকে দেখে খুব ভালো লেগে গেল।

‘দেখুন আমার মা-বা স্ত্রীকে দেখানোর জন্য একটা ছবি যদি পাওয়া যেত। তবে আমার দিক থেকে আমি কথা দিয়ে যাচ্ছি তাঁরা যদি বিশেষ আপত্তি না করেন তাহলে বিয়ে এখানেই হবে। পাত্র আমার সেজছেলে। অমলকান্তি। ইংরেজি নিয়ে এমএ পাস করেছে – একটি কলেজে চাকরি শুরু করার কথা।’

বিনয়কান্তি ক্লাব থেকে ফেরার পর সোজা মায়ের ঘরে গিয়ে ঢুকল। স্বর্ণময়ীর কাছে বিশ্বস্ত কাজের লোক কমলা মারফত খবর এলো— ‘বড়বাবু সেজদাবাবুর বিয়ে ঠিক করে এসেচে। পাত্রীর ছবি এনেছে মা-জননীকে দেখিয়েচে। তাঁর পছন্দ হয়েচে এবার তোমায় ডাকচে।’
পরিস্থিতি ভেবে চমকে ওঠে স্বর্ণময়ী। দুরু দুরু মনে বারবার ঈশ্বরকে স্মরণ করতে করতে স্বর্ণময়ী পৌঁছল বসুন্ধরার ঘরে।
ঘরে পৌঁছতেই বসুন্ধরা বলে উঠলেন।
আরও পড়ুন:

বাইরে দূরে: অযোধ্যা— ইতিহাস ও জনশ্রুতি /২

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৪৪: কবির দরজা সাধারণজনের জন্য সারাক্ষণই খোলা থাকত

সেরা পাঁচ, পর্ব-৩৫: আমাদের পাতে মাছের বৈচিত্র্য থাকুক, আবার মৎস্যজীবিরাও রুই, কাতলার সঙ্গে এদের চাষের আওতায় আনুন

‘দেখ স্বর্ণ। বিনুর কান্ড দেখ। কোন এক বন্ধুর বাড়ি গিয়ে তার মেয়েকে দেখে মোটামুটি অমুর বিয়ের কথা পাকা করে এসেছে। মুখে অবশ্য বলে এসেছে যে তার মা আর বউ কি বলে তার ওপর নির্ভর করছে। মেয়ের ছবি নিয়ে এসছে। এই দেখ!! ’

ছবিটা নেওয়ার আগে স্বর্ণময়ীর খুব খারাপ লাগছিল। সেদিন সকালেই মাত্র অমু তার মনের কথা জানিয়েছে। আর সেটা বিনয়কান্তি বা মাকে জানানোর আগেই সবকিছু এতদূর এগিয়ে গেল !!
‘কী রে? এত ভাবছিস কী? নাকি আমার বিনুর পছন্দের উপর ভরসা নেই তোর।’—চলবে

'পথে হল দেরী' (পোস্টার: সংগৃহীত)।

চিত্র সৌজন্য: সত্রাগ্নি
 

পরের পর্ব আগামী রবিবার

স্বর্ণময়ী বসুন্ধরার কাছে যে স্বাধীনতা পেয়ে এসেছে। বসুন্ধরা ভিলাতে সেই পরম্পরাই চলছে। বৌমাদের কাছে বিনয় বা স্বর্ণময়ী তাদের নিজেদের মা বাবার থেকেও যেন বেশি সহজ। বাড়িতে যে বাধ্যবাধ্যকতার মধ্যে তারা বেড়ে উঠেছে, শ্বশুরবাড়িতে তার লেশমাত্র নেই। ত্রিশের দশকে স্বর্ণময়ী যে অধিকার অর্জন করেছিল সে তার পুত্রবধূদের হাতে তার চেয়েও বেশি অধিকার তুলে দিয়েছে। তাই পরের প্রজন্মের মধ্যে গভীর শ্রদ্ধা আছে অটুট ভালোবাসা আছে। কিন্তু অকারণ অপ্রয়োজনীয় সম্মান সম্ভ্রমের দেখনদারির ঘেরাটোপ নেই।
 

গল্প ও উপন্যাস পাঠানোর নিয়ম

‘সময় আপডেটস’-এর এই বিভাগে যাঁরা গল্প ও উপন্যাস পাঠাতে চান তাঁরা ছোটদের ও বড়দের আলাদা আলাদা গল্প পাঠাতে পারেন৷ বুঝতে সুবিধার জন্য ইমেলের ‘সাবজেক্ট’-এ বিভাগের উল্লেখ করবেন৷ ছোটদের গল্পের জন্য ১০০০ শব্দ ও বড়দের গল্পের জন্য ১০০০-১৫০০ শব্দের মধ্যে পাঠাতে হবে ইউনিকোড ফরম্যাটে। সঙ্গে ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বর দিতে ভুলবেন না৷ গল্প বা উপন্যাস নির্বাচিত হলে যোগাযোগ করা হবে৷ ইমেল: samayupdatesin.writeus@gmail.com

* বসুন্ধরা এবং (Basundhara Ebong-Novel) : জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’।

Skip to content