বুধবার ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৪


ছবি প্রতীকী

বয়স্করা যাঁরা ফুসফুস, হার্ট, কিডনি বা অন্য কোনও শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন তাঁরা শীতকালে নিজেদের কীভাবে সুরক্ষিত রাখবেন সে সব বিষয় নিয়ে আজ আলোচনা করব। এখানে মূলত প্রবীণ নাগরিকদের কথাই বলতে চাইছি। এই সময় সব থেকে বেশি দেখা যায় ভাইরাস ঘটিত বিভিন্ন ধরনের ফুসফুসের রোগ। যেমন ইনফ্লুয়েঞ্জা, প্যারা ইনফ্লুয়েঞ্জা ইত্যাদি। আবার কারও কারও জীবাণু ঘটিত নিউমোনিয়া হয়। এস সব থেকে কারও কারও শ্বাসকষ্টও বাড়তে পারে। বিশেষত যাঁরা অ্যাজমা বা ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিসে ভুগছেন তাঁরা নিয়মিত যে পাম্প বা ইনহেলার ব্যবহার করছেন, সেগুলি নিয়মিত ব্যবহার করুন। শীতকালে অনেক সময় শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায় বলে কোনও কোনও ক্ষেত্রে ইনহেলারের ডোজ বাড়াতে হয়। তবে মনে রাখবেন, কখনই নিজের মতো করে ডোজ বাড়েনো বা কমানোর সিদ্ধান্ত নেবেন না। যদি মনে মনে হয়, ইনহেলারের ডোজ বাড়াতে বা কমাতে হতে পারে সেক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
 

রক্তচাপের সমস্যায়

শীতকালের আরও একটি সমস্যা হয়। মূলত যাঁরা ব্লাড প্রেশারের সমস্যায় ভোগেন তাঁদেরই এই সমস্যা বেশি হয়। এ সময় অনেকেরই রক্তচাপ বেড়ে যায়। যদিও কারও রক্তচাপ বেড়ে যায়, তাহলে ওষুধের ডোজ বাড়াতে হতে পারে। আবার অনেক সময় পরিবর্তন করতে হতে পারে। তবে নিজের মতো করে বাড়ানো বা কমানো যাবে না। ডোজ বাড়াতে হোক বা ওষুধ পরিবর্তন করতে হোক সবই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েই করতে হবে।
 

রক্তচাপের সমস্যায় খাদ্যাভ্যাস

এই সময় রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে হলে নুন খাওয়া কমাতেই হবে। অর্থাৎ বাড়তি নুন খাওয়ার কথা বলছি। যেমন ধরুন— কাঁচা নুন, নোনতা, বিস্কুট, চানাচুর, বাইরের ফাস্টফুড প্রভৃতিতে খুব নুন থাকে। এই সব খাবার এড়াতে হবে। তাহলেই রক্তচাপ অনেকটা নিয়ন্ত্রণে থাকবে। তবে এর পরেও ব্লাড প্রেশারের ওষুধ পরিবর্তন বা ডোজ ঠিক করতে হতে পারে।

 

ভ্যাকসিনের খুঁটিনাটি

ভ্যাকসিন দু’রকমের হয়। একটি ইনফ্লুয়েঞ্জার ভ্যাকসিন, অন্যটি হল নিউমোনিয়ার ভ্যাকসিন। ইনফ্লুয়েঞ্জার ভ্যাকসিন সাধারণত সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বরের মধ্যে প্রতি বছর নিতে হয়। যাঁদের বয়স ৬০ বছর বা তার বেশি তাঁদের প্রতি বছরই এই ভ্যাকসিন নিতে হবে। তবে এখনও যাঁদের ভ্যাকসিন নেওয়া হয়নি তাঁরা অবশ্যই ডিসেম্বরের মধ্যে নিয়ে নিন। এতেও কিন্তু অনেকটা সুরক্ষিত থাকা যাবে। এছাড়া প্রতি ৫ বছর অন্তর নিউমোনিয়ার ভ্যাকসিন নিতে হবে। আর কোভিডের ভ্যাকসিন তো নিয়েইছেন।

আরও পড়ুন:

ডায়াবিটিস ধরা পড়েছে? হার্ট ভালো রাখতে রোজের রান্নায় কোন তেল কতটা ব্যবহার করবেন? দেখুন ভিডিয়ো

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-১৬: সংসার সুখের হয় ‘চাঁপাডাঙার বৌ’-র গুণে

ইংলিশ টিংলিশ: জানেন কি ‘night owl’ বা ‘early bird’ কাকে বলে? কিংবা তিনতলাকে কেন ‘second floor’ বলে?

 

শীত পোশাক

এছাড়া যাঁরা শ্বাসকষ্ট, কিডনি বা হার্টের সমস্যায় ভোগেন তাঁরা এ সময় বাইরে বেরোলেই সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। চেষ্টা করতে হবে যাতে ঠান্ডা না লেগে যায়। সোয়েটার, টুপি বা মাফলার ব্যবহার করুন।
 

অবশ্যই মাস্ক পরুন

করোনা এখন কমে গেলেও মাস্ক পরা জরুরি। কেন না শহরাঞ্চলে প্রচুর দূষণ। এর থেকে আমাদের ফুসফুসের রোগ হতে পারে। আবার কারও কারও শ্বাসকষ্টও হতে পারে। সুতরাং করোনা ভাইরাস না থাকলেও মাস্ক পরতে হবে। যাঁরা বাইরে বেরোতে হয় বা ব্যাংক, শপিং মল, স্কুল, কলেজ, বিয়ে বাড়িতে যাচ্ছেন বা যেখানে লোক সমাগম বেশি এমন জায়গায় গেলে অবশ্যই মাস্ক পরুন। এছাড়া আপনি যেখানে যাচ্ছেন সেখানে হয়তো দু-একজন শ্বাসকষ্ট বা জ্বর, সর্দি-কাশি ভুগছেন এমনও হতে পারে। তাই সাবধানে না থাকলে তাঁদের কাছ থেকে আপনার শরীরে সেই জীবাণু চলে আসতে পারে। কিন্তু মাস্ক পরা থাকলে এ সবের ঝুঁকি অনেকটা কমে যায়। এছাড়া কোভিডের সময় যে সমস্ত নিয়ম মেনে এসেছেন, যেমন প্রতিদিন নিয়ম করে বাইরে থেকে এলে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, স্যানিটাইজ করা ইত্যাদি করতে হবে।

আরও পড়ুন:

খাই খাই: বেগুন ভর্তা তো খেয়েছেন, এবার ঝটপট তৈরি করে ফেলুন লাউপাতার ভর্তা, রইল রেসিপি

শাশ্বতী রামায়ণী, পর্ব ২৭: পিতৃসত্য রক্ষা, নাকি পিতার অনুনয়ে রাজ্যভার গ্রহণ?

মহাভারতের আখ্যানমালা, পর্ব-৪৬: ভৃগুবংশে জন্ম নিলেন পরশুরাম— চরুবদলের ভুলে ক্ষত্রতেজ পেলেন তিনি

 

শীতকালে ধুলোবালি থেকে সাবধানে

যাঁদের অ্যাজমার সমস্যা আছে, তাঁদের শীতকালে ধুলোবালি থেকে সাবধানে থাকতে হবে। শীতের সময় লেপ-কম্বল বার করার সময় বা সেগুলি ঝাড়ার সময় অপেক্ষাকৃত দূরে থাকুন। না হলে অ্যাজমা বা ডাস্ট অ্যালার্জি বেড়ে যেতে পারে। সব থেকে ভালো বাড়তি সুরক্ষার জন্য এ সময় মাস্ক পরুন।
 

বেড়াতে গেলে মাথায় রাখুন

যাঁরা এ সময় বেড়াতে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছেন তাঁরা বেরবার আগে জেনে নিন, আপনি যেখানে যাচ্ছেন সেখানে কোনও রোগ হচ্ছে কিনা। যদিও সেখানে কোনও রোগ হয় তাহলে সেই মতো আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। বুঝে নিন কীভাবে বাড়তি সতর্কতার জন্য সঙ্গে কী প্রতিষেধক বা ওষুধ বা নিয়ম মেনে চলবেন সে সব ভালো করে বুঝে নিন। পাশাপাশি আপনি প্রতিদিন যে ওষুধ খান সেগুলোও নিয়মিত খেয়ে যাবেন। অ্যাজমা বা ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস বা সিওপিডি যাঁরা ভোগেন তাঁদের অনেক সময় ওষুধের ডোজ বাড়াতে বা ঠিক করতে হয়। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া দরকার। তবে একই ওষুধ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অনেকদিন ধরে খেয়ে যাবেন না।

আরও পড়ুন:

বাঙালির মৎস্যপুরাণ, পর্ব-৩৪: বাংলার শুঁটকি মাছের চাহিদা সর্বত্র, এখনকার বিশেষভাবে প্রস্তুত শুঁটকি অনেক বেশি নিরাপদ ও পুষ্টিগুণে ভরা

পর্দার আড়ালে, পর্ব-২২: রাইচরণ চরিত্রটা আমি করতে চাই, আমাকে এই চরিত্রটা করার সুযোগ দিন: উত্তমকুমার

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৪৪: কবির দরজা সাধারণজনের জন্য সারাক্ষণই খোলা থাকত

 

জ্বর-সর্দি-কাশি-শ্বাসকষ্ট হলে

জ্বর হলে প্যারাসিটামল খেতে পারেন। তবে কাশি বা শ্বাসকষ্ট হলে কিন্তু ওষুধ দোকান থেকে নিজের মতো করে কোনও কাফ সিরাপ বা অ্যান্টি হিস্টামিন জাতীয় কিনে খাবেন না। এতে অনেক সময় শ্বাসকষ্ট বেড়ে যেতে পারে। আরেকটি বিষয় হল, কাশি বা শ্বাসকষ্টের রোগ প্রথম দিকে ধরা পড়লে চিকিৎসায় ভালো সাড়া পাওয়া যায়। ভয়ের কিছু থাকে না। তবে দেরি করে ফেললে বাড়াবাড়ির পর্যায়ে পৌঁছে যেতে পারে। তখন হসপিটালে ভর্তি করতে হতে পারে। তাই শুরুতেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে চলুন।
এই প্রতিবেদনে যেসব বিষয়গুলো আলোচনা করলাম সেগুলি মেনে চললে শীতকালের শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা-সহ একাধিক অসুখ-বিসুখ এড়িয়ে সুরক্ষিত থাকা সম্ভব।

যোগাযোগ: ৯৮৩১৬৭১৫২৫

* সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন (health-checkup – Health Tips) : ডাঃ আশিস মিত্র (Dr. Ashis Mitra), বিশিষ্ট মেডিসিন ও ডায়াবিটিস বিশেষজ্ঞ।


Skip to content