শুক্রবার ২২ নভেম্বর, ২০২৪


সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে মাধবী মুখোপাধ্যায় প্রথম কাজ করেন ‘মহানগর’ ছবিতে। তখন মাধবী থাকতেন কাশি মিত্র ঘাট স্ট্রিটের কাছে। সত্যজিৎবাবুর প্রোডাকশন ম্যানেজার অনিল চৌধুরী এবং সাউন্ড রেকর্ডিস্ট দুর্গাদা একদিন হঠাৎ মাধবীর বাড়িতে এসে হাজির। জানালেন সত্যজিৎবাবুর সঙ্গে দেখা করতে। তাঁর তখনকার বাড়ির ঠিকানা ছিল ৩, লেক টেম্পল রোড। মাধবী থাকেন উত্তর কলকাতায়।
দক্ষিণের রাস্তাঘাট তেমন চেনেন না। জিজ্ঞাসা করলেন, “রাস্তাটা কোথায়?” উত্তর পেলেন, “মেনকা সিনেমা হল-এর কাছে”। ওরা চলে যাবার পর মাধবী তাঁর মাকে বললেন, “না মা আমি যাব না। হয়তো কাজটা পাবো না। মাঝখান থেকে ট্যাক্সি ভাড়াটা জলে যাবে।” মা আশ্বস্ত করে বললেন, “না না কথা যখন দিয়েছো তখন তোমার যাওয়া উচিত।” ইতিমধ্যে ওই ভদ্রলোক দু’জন হঠাৎ এসে বললেন, “এই ট্যাক্সি ভাড়াটা রেখে দিন।” মাধবী ভারী লজ্জায় পড়লেন। কিন্তু ওরা জোর করে ভাড়ার টাকা রেখে গেলেন।
নির্দিষ্ট দিনে মাধবী সত্যজিৎ রায়ের বাড়িতে গেলেন। উনি জানালেন, “আমি এখন আউটডোর শুটিং-এর কাজে বাইরে যাচ্ছি। ফিরে এসে খবর দেব।” আসলেই “খবর দেবো” শুনতে শুনতে মাধবী এত অভ্যস্ত ছিলেন যে পরে খবর দেবো, এই পরে আর আসে না। কিন্তু না সত্যি সত্যি ফিরে এসে ডেকে নিলেন মাধবীকে। প্রথমেই ‘মহানগর’ ছবি স্ক্রিপ্ট পড়ে শোনালেন। পড়া তো হল। তখনও মাধবী বুঝে উঠতে পারছিলেন না সত্যজিৎ রায় আদৌ তাঁকে নেবেন কিনা। কিন্তু যখন স্ক্রিপ্টটা মাধবীর হাতে দিলেন তখন মাধবী বিশ্বাস করলেন যে তিনি কাজটা করছেন।
আরও পড়ুন:

পর্দার আড়ালে, পর্ব-১৯: হিন্দি ‘মমতা’ ছবির শুটিংয়ে সুচিত্রা’র সংলাপ মুখস্ত করার ঘটনা ছিল অসাধারণ

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-১১: ভাগ্যের ফেরে হাস্যকর ‘লাখ টাকা’ [১০/০৭/১৯৫৩]

খাই খাই: রাতে নিরামিষ পদে স্বাদ বদল চাই? বানিয়ে ফেলুন তেল পটল

এর পরে স্ক্রিন টেস্ট নেওয়া হল। নানা ভঙ্গিতে ছবি তুললেন ওই ছবির ক্যামেরাম্যান সুব্রত মিত্র। শুটিং চলাকালীন সত্যজিৎবাবু বলেই রেখেছিলেন, “পান খাওয়া চলবে না”। সেই নির্দেশ অমান্য করার জন্য একদিন বকুনিও খেয়েছিলেন। ছবিতে মাধবীর স্বামী হয়েছেন অনিল চট্টোপাধ্যায়। ননদের ভূমিকায় জয়া ভাদুড়ী। জয়ার প্রথম ছবি।
আরও পড়ুন:

দশভুজা: আমার উড়ান— শোনো এক মাটির মেয়ের গল্প তবে…

ষাট পেরিয়ে, পর্ব-১৪: বয়স্কদের ইউরোলজিক্যাল সমস্যা, অনেক ক্ষেত্রেই আড়ালে থাকে যায়

বাঙালির মৎস্যপুরাণ, পর্ব-৩৩: খালেবিলে, ধানখেতে, পুকুরে, নদীতে ঘুরে বেড়ানো ‘ম্যাজিশিয়ান’ জেব্রা ফিশ ভবিষ্যতে রোগ নিরাময়ে নতুন দিশা দেখাবে

একদিনের ঘটনার কথায় আসা যাক। খাটের উপর শট। মাধবী অনিল শোবেন সেই খাটে। সত্যজিৎ অনিলকে জিজ্ঞাসা করলেন, “রাত্রিবেলায় মেয়েরা চুলটা কি করে বলতো?” অনিল মাথা চুলকে বললেন, “রাত্রিবেলা তো, তাই খেয়াল করিনি। “এ কথা শুনে পরিচালক হো হো করে হেসে উঠলেন। বললেন, “ঠিক আছে চুলটা তাহলে বেঁধেই শোয়া হোক।” সত্যজিৎ রায়, সুব্রত মিত্র, ফটিকবাবু (যিনি ক্যামেরায় ফোকাস করেন) এঁরা সকলেই খাটের উপর বসলেন। মাধবী আর অনিল ফ্লোরে দাঁড়িয়ে সংলাপ ঠিক করছেন।
এমন সময় খুব জোরে একটা শব্দ শোনা গেল ফ্লোর এর মধ্যে। সবাই চমকে উঠেছেন। মাধবী অনিল দেখলেন খাটটা মাঝখান দিয়ে ভেঙ্গে পড়েছে। সেই মাঝখানের ফাঁকে পড়ে আছেন সত্যজিৎ রায়, সুব্রত মিত্র, ফটিকবাবু। উপস্থিত সবাই তাড়াতাড়ি এসে তিনজনকে ভাঙা খাটের মাঝখান থেকে তুলে ধরলেন। অনিল চট্টোপাধ্যায় মাধবীর দিকে তাকিয়ে ইশারা করলেন, না হাসবার জন্য।

ফটিকবাবু মজার মানুষ ছিলেন। ভাঙ্গা খাট থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, “এটা অবিশ্বাসী খাট”। অবশেষে খাট বদল করে শুটিং করা হল। এমন মজাদার ঘটনা আমাদের মাধবী মুখোপাধ্যায় স্বয়ং জানিয়েছেন তাঁর লেখা ‘মাধবী কানন’ গ্রন্থে।

Skip to content