রাজকন্যা লোপামুদ্রা নিতান্ত নাবালিকা ছিলেন না। তিনি বুঝলেন, অগস্ত্যের যখন এমন ভাবে আগমন ঘটেছে, তখন অগস্ত্যের সঙ্গে বিবাহই তাঁর ভবিতব্য। তিনি পিতামাতাকে আশ্বস্ত করলেন। বুদ্ধিমতী কন্যার কথায় পিতামাতা আশ্বস্ত হলেন। যথাসময়ে অগস্ত্য আর লোপামুদ্রার বিবাহ সম্পন্ন হল। এ দিকে বিবাহের পর অগস্ত্যের কথামতো লোপামুদ্রা যাবতীয় সুখস্বাচ্ছন্দ্য বিসর্জন দিয়ে বল্কলবসন ধারণ করে যথার্থ সহধর্মিণীরূপে স্বামীর ধর্মকার্যে সহায়ক হলেন। এমন করে বেশ কিছু সময় পার হয়ে গেল। অগস্ত্য কেবল তপোকার্যেই ব্যস্ত থাকেন। লোপামুদ্রাও বিরক্ত করেন না স্বামীকে। স্বামীর প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে পাশটিতে থেকে তাঁর কাজে সাহায্য করাই যেন তাঁর জীবনের ব্রত। আর কিছু নয়। সেদিন সুন্দরী আয়তচক্ষু লোপামুদ্রা স্নান সেরে রোজকার মতো বল্কলবাসেই গৃহকার্যে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন। অগস্ত্যমুনি বুঝি বা কিছুটা অন্যমনস্কই ছিলেন। নিত্যদিনের কাজের ফাঁকে আনমনেই দেখলেন লোপামুদ্রাকে। রোজই তো দেখেন। পাশেই থাকেন তিনি। আজকাল যেন লোপামুদ্রার অভ্যাস হয়ে গিয়েছে তাঁর জীবনে। হঠাৎ লোপামুদ্রাকে দেখে তাঁর মনে কামনার উদ্রেক হল। এমনটা এই প্রথম। নয় নয় করে বিয়ে হওয়ার পর বেশ কটি বছর পেরিয়ে গিয়েছে। একে অপরের জীবনে অপরিহার হয়ে উঠেছেন। দাম্পত্যসুখ ভোগের ইচ্ছা এই প্রথম। অগস্ত্য লোপামুদ্রাকে নিজের মনের কথা খুলে বললেন।
এতদিনের ব্রহ্মচর্য ভেঙে স্বামী তাঁর প্রতি মুখ তুলে চেয়েছেন, এ দেখে লোপামুদ্রা মনে মনে খুশিই হলেন। কিন্তু মুখে সে ভাব প্রকাশ করলেন না। তিনি বললেন, ‘হে স্বামিন্! আমি আপনার বিবাহিতা স্ত্রী। তাই আপনার কামনা সর্বতোভাবে যুক্তিযুক্ত। তবে একটি শর্তে আমি আপনার কাছে আসতে পারি।’ অগস্ত্য সে কথা শুনে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকান লোপামুদ্রার দিকে। লোপামুদ্রা বলে ওঠেন, এই বল্কলবাস অঙ্গে ধারণ করে আমি আপনার কাছে যেতে রাজি নই। কারণ, এতে এই পোশাকেরও অমর্যাদা হয়। উপযুক্ত বেশভূষা করে আর নানান অলঙ্কারে সেজে বহুমূল্য শয্যায় আমি আপনার সঙ্গে মিলিত হতে চাই।’ একথা শুনে অগস্ত্য ফাঁপরে পড়েন। তিনি বলেন, সে কী করে সম্ভব? আমার কাছে তেমন ধন কোথায়? লোপামুদ্রা তাঁকে বলেন, ‘আপনি মহাতপস্বী। চাইলে বিশ্বের সমস্ত ধন আপনার করায়ত্ত হতে পারে।’
আরও পড়ুন:
মহাভারতের আখ্যানমালা, পর্ব-৩৯: ইল্বলদৈত্য আর অগস্ত্যমুনির কথা
ছোটদের যত্নে: হঠাৎই জ্বর, মুখে-হাতে ঘা হচ্ছে শিশুদের! কষ্টকর হলেও ভয়ের কিছু নেই, জেনে নিন কোন রোগের উপসর্গ এগুলি
অগস্ত্য স্ত্রীকে বুঝিয়ে বলেন, তেমনভাবে ধন আহরণ করলে তপস্যার শক্তি বিনষ্ট হয়ে যায়। এত কিছু শুনেও লোপামুদ্রা তাঁর ইচ্ছায় অটল থাকেন। অনন্যোপায় হয়ে অগস্ত্য ধনের সন্ধানে বেরিয়ে পড়েন। তারপর তিনি যে রাজারই কাছে ধনের সন্ধানে যান, সকলেই মহাতপা মুনিকে দেখে ধনদান করতে প্রস্তুত থাকলেও তাঁদের আয় আর ব্যয় সমান এ কথা শুনে মুনির করুণা হয়। তাঁদের কাছ থেকে কোনও প্রকার ধনই নিতে তিনি অস্বীকার করেন। তখন সমস্ত রাজারা একত্রিত হয়ে অগস্ত্যমুনিকে পরামর্শ দেন, ‘হে রাজন! আপনি বরং ইল্বলদানবের কাছে যান। সে-ই সবচেয়ে ধনী। আমরা প্রয়োজনে ইল্বলদানবের কাছে ধন প্রার্থনা করি।’ এরপর রাজারা সকলে মিলে অগস্ত্যমুনিকে পথ দেখিয়ে ইল্বল দানবের কাছে উপস্থিত হলেন। ইল্বলদানব রাজাদের সঙ্গে অগস্ত্যমুনিকে দেখতে পেয়ে সাদরে আপ্যায়ন করল। এরপর পূর্ব অভ্যাসবশতঃ বাতাপিকে ছাগে রূপান্তরিত করে সেই ছাগমাংস রেঁধে অতিথিসত্কা র করতে প্রস্তুত হল। রাজারা সবটাই বুঝতে পারলেন। আর বুঝতে পেরে বিষণ্ণ হলেন। অগস্ত্যমুনি ত্রিকালদর্শী মুনি ছিলেন। রাজারা মুখ ফুটে বিপদের কথা না বললেও তিনি বুঝতে পারলেন রাজাদের উদ্বেগের কারণ। রাজাদের আশ্বস্ত করলেন তিনি।
আরও পড়ুন:
ত্বকের পরিচর্যায়: ত্বক শুষ্ক হয়ে যাচ্ছে? যত্নে কী কী করবেন? জেনে নিন ত্বক বিশেষজ্ঞের জরুরি পরামর্শ
গৃহিণীদের মধ্যে বইয়ের নেশা বাড়াতে কাঁধে ঝোলা নিয়ে ঘুরে বেড়ান রাধা, ‘চলমান পাঠাগার’ তাঁর পরিচয়!
ইল্বল অতি যত্নে মধ্যাহ্নভোজনের আয়োজন করে সকলকে আহ্বান করল। নিজের হাতে সকলকে পরিবেশন করলে সে। ইল্বলের লক্ষ্য ছিলেন অগস্ত্যমুনি। কারণ, তিনিই ছিলেন একমাত্র ব্রাহ্মণ। তাঁকে বিশেষ আসনে বসানো হয়েছিল। ছাগরূপী বাতাপীর মাংস সবটুকুই অগস্ত্যমুনিকে পরিবেশন করা হয়েছিল। তিনি জেনেশুনেই সমস্ত মাংস ভক্ষণ করলেন। ইল্বল প্রতিবারের মতো তৈরি হয়েই ছিলে। ভোজনকার্য শেষ হওয়ামাত্র সে বাতাপির নাম ধরে জোরে ডেকে উঠল। কিন্তু মহাতপা মুনির উদরে ছাগরূপী বাতাপি ততক্ষণে জীর্ণ হয়ে গিয়েছে। তাই বারংবার ডাকাডাকিতেও সে আর ফিরল না। ইল্বল দৈত্য যথেষ্ট বুদ্ধিমান ছিল। সে বুঝতে পারল, এই ব্রাহ্মণ আর পাঁচজন ব্রাহ্মণদের মতো সাধারণ কেউ নন। ভাইয়ের মৃত্যুতে বিষণ্ণ হল সে।
ইতিমধ্যে বহু নিরীহ ব্রাহ্মণকে সে হত্যা করেছে। আর সেই কাজ সে সজ্ঞানেই করেছে। তাই অগস্ত্যের এমন আচরণে তার বলবার কিছুমাত্র অবশিষ্ট ছিল না। মন্ত্রীদের সঙ্গে আলোচনা করে অগস্ত্যমুনি আর অন্যান্য রাজাদের আগমনের কারণ জানতে চাইল সে। অগস্ত্য তাকে বললেন, ‘হে ইল্বল, তুমি ধনী। আমার সঙ্গে যে রাজারা এসেছেন, তাঁদের এবং বিশেষত আমার ধনের প্রয়োজন। তাই তুমি সামর্থ্য অনুসারে আমাদের দান করো।’ ইল্বলের তখনও অগস্ত্যের ক্ষমতা নিয়ে সন্দেহ ছিল। তাই মুনিকে সে জিজ্ঞেস করল, ‘যদি আপনি বলতে পারেন, যে আমি আপনাদের কী পরিমাণ ধন দান করব বলে স্থির করেছি, তবে আমি অবশ্য আপনাদের মনের ইচ্ছে পূরণ করব।’ অগস্ত্য ইল্বলের দানধর্মিতার কথা জানতেন, ব্রাহ্মণদের প্রতি ইল্বলের রাগের কারণও জানতেন। ইল্বলের মনের কথা অনুমান করা তাঁর মতো ত্রিকালদর্শী পুরুষের পক্ষে কঠিন কাজ ছিল না। অগস্ত্যের অলৌকিক ক্ষমতার পরিচয় পেয়ে ইল্বল যা ভেবেছিল, সকলকে তার চেয়েও অধিক ধন দান করল।
ইল্বলের রাজ্য থেকে সকলে নিজের নিজের রাজ্যে ফিরে গেলেন। অগস্ত্য লোপামুদ্রার সকল ইচ্ছে পুরণ করলেন। যথাসময়ে অগস্ত্য আর লোপামুদ্রার সন্তান ইধ্মবাহ পৃথিবীর আলো দেখলেন।
ইতিমধ্যে বহু নিরীহ ব্রাহ্মণকে সে হত্যা করেছে। আর সেই কাজ সে সজ্ঞানেই করেছে। তাই অগস্ত্যের এমন আচরণে তার বলবার কিছুমাত্র অবশিষ্ট ছিল না। মন্ত্রীদের সঙ্গে আলোচনা করে অগস্ত্যমুনি আর অন্যান্য রাজাদের আগমনের কারণ জানতে চাইল সে। অগস্ত্য তাকে বললেন, ‘হে ইল্বল, তুমি ধনী। আমার সঙ্গে যে রাজারা এসেছেন, তাঁদের এবং বিশেষত আমার ধনের প্রয়োজন। তাই তুমি সামর্থ্য অনুসারে আমাদের দান করো।’ ইল্বলের তখনও অগস্ত্যের ক্ষমতা নিয়ে সন্দেহ ছিল। তাই মুনিকে সে জিজ্ঞেস করল, ‘যদি আপনি বলতে পারেন, যে আমি আপনাদের কী পরিমাণ ধন দান করব বলে স্থির করেছি, তবে আমি অবশ্য আপনাদের মনের ইচ্ছে পূরণ করব।’ অগস্ত্য ইল্বলের দানধর্মিতার কথা জানতেন, ব্রাহ্মণদের প্রতি ইল্বলের রাগের কারণও জানতেন। ইল্বলের মনের কথা অনুমান করা তাঁর মতো ত্রিকালদর্শী পুরুষের পক্ষে কঠিন কাজ ছিল না। অগস্ত্যের অলৌকিক ক্ষমতার পরিচয় পেয়ে ইল্বল যা ভেবেছিল, সকলকে তার চেয়েও অধিক ধন দান করল।
ইল্বলের রাজ্য থেকে সকলে নিজের নিজের রাজ্যে ফিরে গেলেন। অগস্ত্য লোপামুদ্রার সকল ইচ্ছে পুরণ করলেন। যথাসময়ে অগস্ত্য আর লোপামুদ্রার সন্তান ইধ্মবাহ পৃথিবীর আলো দেখলেন।