বুধবার ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৪


ছবি প্রতীকী

এবার আসছে বিয়ের মরসুম। প্রতিটা মেয়ের জীবনে বিয়ের দিনটা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। বিয়ের আসরে কনে সবার মধ্যমণি হয়ে থাকে। এদিন সবাই শুধু তার দিকেই তাকিয়ে থাকে। তাই প্রতিটা মেয়েই চায় বিয়ের দিনে সবচেয়ে সুন্দর করে সাজবে। কিন্তু সেই স্বপ্ন পূরণে বাদ সাধে তাঁর অতিরিক্ত শারীরিক ওজন।
কিছুদিন আগে পুজো গিয়েছে। এই সময় প্রায় প্রত্যকেই প্রচুর অনিয়ম, দেদার খাওয়া-দাওয়া, রাত জেগেছেন। এরপর বিয়ের কেনাকাটার সঙ্গে পড়াশোনা বা অফিসের কাজ চলছে জোরকদমে। এত ছোটাছুটির মধ্যে নিজের যত্ন নেওয়ার আলাদা সময় পাওয়া বড়ই মুশকিল। তাই এই একটা মাস বিশেষ ডায়েট প্ল্যান মেনে চলা জরুরি যা শারীরিক মানসিক সব দিক থেকেই বিয়ের কনেকে সুস্থ রাখবে। ত্বক স্বাস্থ্যজ্জ্বল রাখতে যথাসম্ভব মশলাযুক্ত খাবার খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দেওয়া দরকার। এতে চেহারায় ক্লান্তির ছাপ অনেকটা কমে। পাশাপাশি সঠিক খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করলে শরীর অনেকটা ঠিক থাকে। তাই খাদ্য তালিকা শাক-সবজি, ফলমূল সঠিক মাত্রায় রাখা আবশ্যক।

অনেকেই শারীরিক গঠন নিয়ে খুবই চিন্তিত থাকেন। কারও চিন্তা শরীর কিছুটা মোটা হয়ে গিয়েছে। কেউ আবার তাঁকে বড্ড রোগা লাগছে ভেবে চিন্তিত। বিয়ের আগের এই সময়টুকু সামান্য কিছু পরিবর্তন এনে খুব সহজেই ফিট হতে পারেন। এর জন্য মাসখানেক আগে থেকে খাদ্যতালিকায় কিছু পরিবর্তন আনতে হবে। যোগ করতে হবে কিছু খাবার, যা সহজপাচ্য ও সহজলভ্য।

বাইরের খাবার পুরোপুরি বন্ধ করতে হবে। সেই জায়গায় প্রচুর পরিমাণে সবজি ও ফল রাখা বাধ্যতামূলক। ওজন কমানঅই একমাত্র উদ্দেশ্য হওয়া উচিত নয়। এখানে সুস্থ ও উজ্জ্বল থাকাটা বেশি জরুরি। তাই ডায়েট করার সময় চিনি জাতীয় খাবার, বেশি তেল যুক্ত ভাজা পোড়া খাবার, মিষ্টি জাতীয় খাবার, ফাস্টফুড, জাঙ্ক ফুড, অতিরিক্ত স্টার্চযুক্ত খাবার, সিরাপ জাতীয় খাবার, রিফাইন্ড খাবার, খাদ্য তালিকা থেকে পুরোপুরি বর্জন করা উচিত।
সবচেয়ে ভালো হয় বাইরের সমস্ত খাবার পরিত্যাগ করে খাদ্য তালিকায় সবজি, ফল, গ্রিন-টি, শুকনো ফল, প্রোটিন জাতীয় খাবার, পর্যাপ্ত পানীয় জল বা তরল ইত্যাদি রাখা। সেই সঙ্গে শরীর চর্চা সমান গুরুত্বপূর্ণ।
 

বিয়ের আগে এক মাস খাদ্য তালিকায় ফলমূল ও শাকসবজি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে এর মধ্যে কয়েকটির গুনাগুন এখানে আলোচনা করা হল—

 

রসুন শরীরকে সজীব রাখে

রসুন রক্ত প্রবাহ সঠিক রেখে শরীরকে সজীব করে তোলে। এতে উপস্থিত এলিসিন শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
 

কলা শরীরকে শক্তিশালী করে

কলা শরীরকে শক্তিশালী ও সজীব রাখে। এতে পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন-বি৬-এর উপস্থিতি ক্লান্তি দূর করে।
 

তরমুজ রক্তনালী ভালো রাখে

তরমুজে উপস্থিত ভিটামিন-এ রক্তনালী ঠিক রাখতে সাহায্য করে। এতে প্রচুর জল থাকে। এছাড়াও ক্যালোরির পরিমাণ খুব কম হওয়ায় ওজন বাড়ার সম্ভাবনা থাকে না।
 

পালং শাক ফলিক অ্যাসিডে ভরপুর

পালং শাকে উপস্থিত ম্যাগনেসিয়াম ও ফলিক অ্যাসিড রক্তনালীর সক্রিয়তা বজায় রাখে।
 

ফিট থাকার জন্য এই ধরনের খাদ্য তালিকা মেনে চললে কম সময়ে যেমন ফিট থাকা যাবে তেমন ত্বকের উজ্জ্বলতাও বৃদ্ধি পাবে।

 

সারাদিনের রুটিন

 

সকালের জলখাবার

দুধ ও চিনি ছাড়া চা, সবজি সিদ্ধ একবাটি, স্যালাড ১ বাটি, আটার রুটি একটি।
 

দুপুরের খাবার

একটা গোটা ফল।
 

দুপুরের খাবার

৫০ গ্রাম চালের ভাত। সবজি দিয়ে মাছ বা মাংসের ঝোল এক বাটি। স্যালাড এক বাটি। ছোট একবাটি ডাল। ঘরে পাতা টক দই আড়াইশো গ্রাম।
 

বিকালের খাবার

দুধ ও চিনি ছাড়া চা বিস্কুট দুটি বা মুড়ি একবাটি।
 

রাতের খাবার

এক টুকরো মাংস , সবজি সিদ্ধ এক বাটি।
 

শোবার আগে

এক কাপ ডবল টোনড দুধ।

আরও পড়ুন:

পেট ফাঁপা ও বদহজমের সমস্যায় ভুগছেন? এই ঘরোয়া উপায়গুলি ম্যাজিকের মতো কাজ করবে

ছোটদের যত্নে: কোন সময় গর্ভধারণ করলে সুসন্তান লাভ সম্ভব? নব দম্পতির মা হওয়ার আগের প্রস্তুতির পরামর্শে ডাক্তারবাবু

শাশ্বতী রামায়ণী, পর্ব ২০: আকস্মিক অভিঘাত-আনন্দের পাত্রে বিষাদবিষ

ইংলিশ টিংলিশ: জানো কি ‘বাজি ফাটানো’ কিংবা ‘মোমবাতি জ্বালানো’র ইংরেজি কী?

 

বিয়ের দিন রোগা লাগার থেকেও জরুরি ঝকঝকে চেহারা তাই অবশ্যই ডায়েটে থাকতে হবে স্বাস্থ্যকর খাবার। উপরোক্ত ডায়েট প্ল্যান মেনে চলার সঙ্গে সঙ্গে আরঅ কিছু নিয়ম মেনে চলা জরুরি—

 

জাঙ্ক ফুড বা ফাস্ট ফুড সম্পূর্ণই বাদ

জাঙ্ক ফুড বা ফাস্ট ফুড সম্পূর্ণই বাদ দিয়ে চলুন। প্রতিদিনের খাবারে চিনি বন্ধ করে দিন। কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ কমিয়ে আনুন। সম্ভব হলে সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিন।
 

পর্যাপ্ত পরিমাণ জলপান

প্রতিদিন কমপক্ষে তিন থেকে সাড়ে তিন লিটার অর্থাৎ প্রায় আট গেলাস জল খান। জল দেহের মেটাবলিজম বাড়ায়। ফলে ওজন কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও জল শরীর থেকে টক্সিন বার করে দেয় ফলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বজায় থাকে।
 

পরিমাণ মতো শাক-সবজি ও ফলমূল

শাক-সবজি ও ফলমূল ফাইবার ও বিভিন্ন ভিটামিন ও খনিজ লবণসমৃদ্ধ। এতে কার্বোহাইড্রেট ও ফ্যাট খুব কম ফাইবারের বেশিমাত্রায় থাকে ফলে ওজন বৃদ্ধি পায় না এবং শরীরের উজ্জ্বলতা বজায় থাকে।
 

ড্রাই ফ্রুটস

প্রতিদিন ড্রাই ফ্রুটস অন্তত কিছুটা খাদ্য তালিকায় রাখা উচিত। এটা ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্য বজায় রাখে।
 

হাতের কাছে হালকা স্ন্যাকস

নির্দিষ্ট সময় অন্তর অর্থাৎ তিন থেকে চার ঘণ্টা অন্তর হালকা কোনও স্ন্যাকস রাখা উচিত।
 

সঠিক ব্যবধানে খাবার

দুটি প্রধান খাদ্যের মাঝে অনেক সময়ের ব্যবধান রাখা উচিত নয়। এতে আদতে ওজন কমে না বরং বাড়ে।

আরও পড়ুন:

ত্বকের পরিচর্যায়: শীতে কি আপনার ত্বক শুকিয়ে যায়? মেনে চলুন ত্বক বিশেষজ্ঞের এই পরামর্শগুলি

যোগা-প্রাণায়াম: বাহু ও পিঠে বেশ ফ্যাট জমছে? ছিপছিপে থাকতে নিয়মিত যোগাভ্যাস করুন

বাইরে দূরেঃ দেখব এবার জগৎটাকে, পর্ব-১০: জলপথে আমাজন অরণ্যের গহনে

খাই খাই: কালীপুজোয় তৈরি করে ফেলুন ভিন্ন স্বাদের লোভনীয় নিরামিষ এই পদ, রইল রেসিপি

 

মদ্যপান থেকে বিরত

মদ্যপানের অভ্যাস থাকলে বিয়ের অন্তত ৬ মাস আগে থেকে ত্যাগ করুন। মদ্যপান ত্বকে অনেক বলি রেখার সৃষ্টি করে তাই বিয়ের দিনের উজ্জ্বলতা নষ্ট হয়ে যায়।
 

ব্রেকফাস্ট গুরুত্বপূর্ণ

ব্রেকফাস্ট খাদ্য তালিকা থেকে কখনওই বাদ দেওয়া উচিত নয়। ব্রেকফাস্ট আমাদের শরীরের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা গ্রহণ করে। এটা বাদ দিলে শরীরের পক্ষে খুবই ক্ষতিকর।
 

ডায়েটের সঙ্গে ব্যায়াম

প্রতিদিনের ডায়েট চার্ট-এর সঙ্গে হালকা ব্যায়াম বা শারীরচর্চা করা উচিত। বেশি ভারী ব্যায়াম কখনওই করা দরকার নেই। এতে আঘাত পেতে পারেন যা বিশেষ দিনের মুড নষ্ট করে দেয়। প্রতিদিন ৪৫ মিনিট থেকে এক ঘণ্টা হালকা ব্যায়াম করা যেতে পারে।
 

পর্যাপ্ত ঘুম

শরীরকে সুস্থ রাখতে প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা ঘুম জরুরি। এতে চোখের চারপাশে ডার্ক সার্কেল তৈরি হতে দেয় না।
 

কোল্ড ড্রিংকস

কোল্ড ড্রিংকস কার্বনেটেড পানীয় যা শরীরের জন্য একদমই ভালো নয়। তাই যতই চেষ্টা পাক না কেন ফলের রস, গ্রিন-টি, জল ইত্যাদি পান করুন। কিন্তু কখনওই কোল্ড ড্রিংকস পান করবেন না।
 

কফি

কফি অনেক ভালো গুণ থাকলেও কফি শরীরকে ডি-হাইড্রেট করে। তাছাড়া অতিরিক্ত কফি পান করলে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে।

আরও পড়ুন:

মাইগ্রেনের মুক্তি সঠিক ডায়েটেই, রোজকার খাদ্যতালিকায় রাখুন এই খাবারগুলি

হোমিওপ্যাথি: কনজাংটিভাইটিসের ভয়? মিথ ভুলে এই সব সতর্কতা মেনে চলুন

‘ব্রহ্মাস্ত্র ২’-এ বিজয় দেবেরাকোন্ডাকে দেখা যাবে? কোন চরিত্রের জন্য ভাবা হচ্ছে এই দক্ষিণী সুপারস্টারকে

বাস্তুবিজ্ঞান, পর্ব-১৬: উচ্চমানের জমি বাছাইয়ে অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও ভূমির শ্রেণিবিভাগ জানা খুবই জরুরি /২

 

দুধ, দই, ছানা, পনির

বিয়ের দিন সমস্ত মেয়েরাই খুব টেনশনে থাকে। ফলে অ্যাসিড ও গ্যাস হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। দুধ ও দুগ্ধ জাতীয় প্রোডাক্ট সহজপাচ্য হয় না। এটা সহজেই গ্যাস তৈরি করে। তাই বিয়ের আগের দিন দুধ ও দুধের প্রোডাক্ট না খাওয়াই ভালো।
 

তেল, ঝাল, মশলা

বিয়ের আগের এক মাস তেল ঝাল মশলা জাতীয় খাবার সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়াই ভালো। যতই লোভনীয় খাবার হোক তেল ঝাল মশলা কখনওই সহজে হজম হয় না। তা ছাড়াও এর থেকে বমি ও পেট খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। ত্বকের ওপর যার প্রভাব পড়ে যা একদমই কাম্য নয়।
 

ক্রাশ ডায়েট নয়

হেয়ার স্টাইলে শরীরে আচমকা পরিবর্তন দেখা যায়, যা মনের উপর তৈরি করে। অন্যান্য কিছু সমস্যাও দেখা দিতে পারে। ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্যও বিঘ্নিত হয়। দীর্ঘমেয়াদে ক্রাশ ডায়েট স্বাস্থ্যের জন্য উপযোগী নয়।
 

মরসুমি ফল ও সবজি

প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় বিশেষ কোনও ফল বা সবজি না রাখলেও হবে। নির্দিষ্ট মরসুমে যে ফল বা সবজি পাওয়া যায় তাই-ই ডায়েটে রাখলে বেশি উপকার ও পুষ্টি পাওয়া যাবে।
 

রিফাইন্ড খাবার এড়িয়ে চলুন

রিফাইন্ড খাবার যেমন ময়দা, চিনি, পালিশ করা চাল ইত্যাদি সহজেই আমাদের ওজন বাড়িয়ে দেয়। কারণ এতে ফাইবার একদমই থাকে নাম যা আমাদের শরীর ও স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়।
 

স্যালাড

স্যালাডে প্রচুর পরিমাণ ফাইবারের থাকে। তাই স্যালাড খেলে পেট অনেকক্ষণ ভর্তি থাকে এবং পুষ্টিও অনেক পাওয়া যায়। স্যালাডে আন্টিঅক্সিডেন্ট প্রচুর পরিমাণে রয়েছে। তাই প্রতিদিন নিজের পছন্দমতো সবজি যেমন শসা, টম্যাটো, গাজর, বাঁধাকপি, কড়াইশুঁটি, বিট ইত্যাদি দিয়ে স্যালাড বানিয়ে খেলে যেমন পুষ্টি পাওয়া যাবে, তেমন ত্বক হবে স্বাস্থ্যজ্জ্বল।

তবে মনে রাখা জরুরি, বিয়ের আগে রোগা হতে গিয়ে এমন কোনও পন্থা অবলম্বন করা উচিত নয় যা আপনার ত্বক ও স্বাস্থ্য উভয়ের পক্ষেই ক্ষতিকারক। তেমন ক্ষেত্রে অবশ্যই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। সবার শারীরিক গঠন ও চাহিদা এক হয় না। নির্দিষ্ট ব্যক্তির শারীরিক গঠন, ওজন ও চাহিদা অনুযায়ী আলাদা আলাদা ডায়েট চার্ট তৈরি করতে হবে। এই লেখায় উল্লিখিত ডায়েট চার্ট একটি উদাহরণ হিসেবেই আলোচনা করা হয়েছে। তাই নির্দিষ্ট ভাবে কোনও ব্যক্তির ডায়েট চার্টের জন্য বিশেষজ্ঞের পুষ্টিবিদ বা ডায়েটিশিয়ানের পরামর্শ নেওয়া দরকার। তাহলেই ফল মিলবে হাতে-নাতে।

যোগাযোগ: ৯৮৩০৭৬৮১৫২


Skip to content