সোমবার ২৫ নভেম্বর, ২০২৪


ছবি প্রতীকী

গোদের উপর বিষ ফোঁড়ার মতো অবস্থা। পরিবেশ এখন এমনিই ভয়াবহ দূষিত, ধোঁয়ায় কলুষিত হয়ে আছে। তার উপর দিনে দিনে বাড়ছে বিড়ি–সিগারেট খাবার প্রবণতা। এই সব ধোঁয়াতে এমন কিছু ক্ষতিকর রাসায়নিক থাকে, যা ফুসফুসের মধ্যে দিয়ে যাওয়ার সময় সেখানে প্রদাহ তৈরি করতে করতে যায়। যত বেশি দিন এই ধোঁয়ার মুখোমুখি হবেন, তত বেশি প্রদাহ বাড়তে থাকবে। যার ফলস্বরূপ ‘ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ’ বা সিওপিডি নামের শ্বাসকষ্টের অসুখ দেখা যায়।
তবে কার কতটা প্রদাহ হবে, কত দিনে হবে সে সম্পর্কে নিশ্চিত করে বলা যায় না। দিনে ১০–১২টা সিগারেট খেলে ৫–৭ বছরের মধ্যে সিওপিডি হওয়া স্বাভাবিক৷ ঘন ঘন টান দিয়ে বিড়ি জ্বালিয়ে রাখতে হয় বলে আমাদের শরীরে বিড়ি থেকে ভয়ংকর ক্ষতিকর রাসায়নিক বেশি ঢোকে৷
প্রথম দিকে ঘুম থেকে ওঠামাত্র কাশি হতে থাকে। কাশতে কাশতে কিছুটা কফ উঠলে কষ্ট কমে। তার পর যত দিন যায় দুটো–চারটে করে ফুসফুসের কোষ অকেজো হতে শুরু করে। ফুসফুসের মধ্যে দিয়ে বাতাস চলাচলে ব্যঘাত হতে থাকে। এরপর দেখা দেয় সিওপিডি। যে সব কোষ অকেজো হয়ে যায় তারা আর ঠিক হয় না৷ ফলে রোগ যতখানি এগিয়ে গেছে তাকে আর পিছিয়ে আনা যায় না। তবে আশার কথা হল, বিড়ি–সিগারেট ছেড়ে দিয়ে চিকিৎসার মধ্যে থাকলে বাড়াবাড়ি কিছু হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
সিওপিডি–র শুরুতে লাগাতার কাশি ও অল্পস্বল্প শ্বাসকষ্ট হতে থাকে। বেশি খাটাখাটনি করলে তা আরও বাড়ে। পরের দিকে কাজকর্ম না করলেও দমের ঘাটতি হতে থাকে। ফুসফুসের প্রতিরোধ ক্ষমতা কমতে শুরু করে। ঋতু পরিবর্তনের সময় ঠান্ডা লেগে, বুকে কফ বসে শুরু হয় প্রবল শ্বাস কষ্ট। প্রথম দিকে সেই কষ্ট ওষুধের দ্বারা কমে যায়৷ পরে কেবল ওষুধে আর কাজ হয় না, তখন হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা করানো ছাড়া আর উপায় থাকে না।
আরও পড়ুন:

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৪: ধীরে চলো ‘ওরে যাত্রী’ [০২/০২/১৯৫১]

ইংলিশ টিংলিশ: চলুন আজ পুজো নিয়ে মজার ছলে কিছু শব্দ শিখে নিই

 

চিকিৎসা

পালমোনারি ফাংশন টেস্ট বা পিএফটি করে রোগটা সিওপিডি কি না তা নির্ধারণ করা যায়। এমনকি, রোগটি কোন পর্যায়ে আছে তাও জানা যায় এই পরীক্ষা থেকে। মৃদু ও মাঝারি অসুখে সালবুটামল, লং অ্যাকটিং কর্টিকোস্টেরয়েড ও লং অ্যাকটিং অ্যান্টিকলিনার্জিক ইনহেলার ব্যবহার করতে হতে পারে৷ স্টেরয়েড যেহেতু পাফের মাধ্যমে সরাসরি ফুসফুসে প্রবেশ করানো হয়, তাই এর কোনও খারাপ প্রতিক্রিয়া হয় না। বাড়াবাড়ি হলে অ্যান্টিবায়োটিক খেতে হয়৷ চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে স্টেরয়েডও খেতে হতে পারে৷ অনেক সময় নেবুলাইজেশন দিতে হয়। অর্থাৎ যন্ত্রের সাহায্যে ইনহেলার ড্রাগ বেশি মাত্রায় সরাসরি ফুসফুসে প্রবেশ করাতে হয়। এতে কাজ না হলে হাসপাতালে ভর্তি করে কৃত্রিম শ্বাসযন্ত্রের সাহায্য নিতে হয়।

আরও পড়ুন:

শাশ্বতী রামায়ণী, পর্ব ১৯: রাজ্যাভিষেকের অপেক্ষায় অধীর অযোধ্যাবাসী

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৩৬: শারদীয় সংখ্যায় লিখে পাওয়া অর্থ বন্যাপীড়িত মানুষের কল্যাণে

 

শরীরচর্চা ও খাদ্যাভ্যাস

ফুসফুসের কার্যকারিতা বাড়াতে নিয়মিত হাঁটাহাটি ও হালকা ব্যায়াম করা জরুরি। বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে ব্রিদিং এক্সারসাইজ করা দরকার নিয়মিত। রোগ বেড়ে গেলে পাঁচ বছর অন্তর নিউমোনিয়া ভ্যাকসিন নিন। ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিন নিন অক্টোবর–নভেম্বর মাসে। রোগ চেপে ধরলে স্বাভাবিক ভাবেই ওজন কমতে থাকে। কাজেই প্রোটিনসমৃদ্ধ সুষম খাবার খান৷ সঙ্গে খান ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবার— যেমন, টাটকা রঙিন শাকসব্জি ও ফল, শুকনো ফল, বাদাম। ধোঁয়া, ধুলো যথাসম্ভব এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন। প্রয়োজনে মাস্ক পরে নিন। বিড়ি–সিগারেট ছেড়ে দিন। কোনও ভাবে প্যাসিভ স্মোকিংও চলবে না। রাস্তাঘাটে কেউ ধূমপান করলে হয় তাকে এড়িয়ে চলুন নয়তো নাকে চাপা দিন। মশার ধূপ থেকে এই অসুখ হয় কি না তা নিয়ে গবেষণা চলছে। তবে অসুখ থাকলে এই ধোঁয়া থেকে দূরে থাকাই ভালো।


Skip to content