শুক্রবার ২২ নভেম্বর, ২০২৪


অবশেষে দীর্ঘ রজনীর অবসান হল। দেখা হল রাজারানির। প্রণয়ীযুগল একে অপরের কাছে এলেন কত ঝড় কতই না দুঃসময়ের শেষে। সে যেন এক গল্পকথার অবসান! একের চেহারা অতি মলিন! আর অপরজন কদর্যদেহী। কিন্তু এতদিনের বিরহভরা অপেক্ষা আরও কাছের করেছে দুজনকেই। বাইরের সৌন্দর্য সেখানে নিতান্ত আপেক্ষিক। রাজারানি দুজনেই দুজনকে চিনলেন। দুজনেরই দুজনকে দেখে চোখে জল। বাকহারা দুজনেই।
নীরবতা ভেঙে সর্বপ্রথম দময়ন্তীই বলে ওঠেন, ‘দেবতাদের ছেড়ে তোমায় বরণ করেছিলাম, রাজন! তোমায় ভরসা করে তোমার হাত ধরে পথের কষ্ট বরণ করেছিলাম। সেই তুমি কেন আমায় ছেড়ে গেলে?’ শোকার্ত্ত রাজা এতকাল পরে প্রেয়সী দময়ন্তীকে কাছে পাওয়ার আনন্দে বাষ্প গদগদ কণ্ঠে বলে ওঠেন, ‘আমি যে নিজের বশে ছিলাম না , রানি! দুষ্ট কলি আমায় ভর করেছিল। তার দ্বারা চালিত হয়েই আমি রাজ্যহারা হয়েছি। তোমাকে হারিয়েছি আমি। আজ কলি আমায় ছেড়ে গিয়েছে। আর আমি এসেছি, শুধু তোমার আশায়। ‘রাজা সখেদে বলে ওঠেন, ‘কিন্তু, হে দময়ন্তী! এ কেমন সংবাদ শুনি? তুমি নাকি দ্বিতীয়বার বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হবে? এ কি শুনি, রানী? এ সংবাদ তোমার দূতেরা দিকে দিকে প্রচার করছে। তাই তো তোমার মতন রমণীরত্নকে পাওয়ার আশায় ঋতুপর্ণরাজাও ছুটে এসেছেন।’
আরও পড়ুন:

শারদীয়ার গল্প-৩: আলোকসংশ্লেষ

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৩৬: শারদীয় সংখ্যায় লিখে পাওয়া অর্থ বন্যাপীড়িত মানুষের কল্যাণে

দময়ন্তী রাজার ভুল ভাঙাতে বলে ওঠেন, ‘রাজা, এ সব তোমায় পাওয়ার আশায়। কারণ, আমি জানতাম, এমন অল্পসময়ে তুমি ছাড়া কেউই বিদর্ভরাজ্যে পৌঁছতে পারবে না। তোমার কদর্য রূপের জন্য আমার দূত তোমায় সনাক্ত করতে পারেনি। কিন্তু তোমার গুণ আমার কানে পৌঁছেছে রাজা। তাই তোমায় আনার জন্য এত আয়োজন, এত ছল!’ সূর্য চন্দ্র আর বায়ু এই তিন প্রত্যক্ষ দেবতাও যেন অযাচিতভাবে সেখানে হাজির হয়ে দময়ন্তীর কথাকে সমর্থন করলেন। সকলের সম্মিলিত চাওয়াতে নলের পূর্ব জীবন ফিরে পাওয়ার ইচ্ছা দৃঢ় হল। তিনি কর্কোটক নাগকে স্মরণ করতেই আবার আগের শরীর ফিরে পেলেন। আর তারপর! দময়ন্তী পতিকে স্বরূপে দেখতে পেয়ে উচ্ছ্বসিত হয়ে কেঁদে উঠলেন। নলরাজা তাঁকে বাহুপাশে বদ্ধ করলেন। স্বর্গের দেবতারাও এমন আশ্চর্য মিলনের সাক্ষী হলেন। খবর পৌঁছল দময়ন্তীর পিতামাতার কাছে। সাদরে জামাতাকে অভ্যর্থনা করলেন তাঁরা।
আরও পড়ুন:

আপনার সন্তানের কোনও কাজেই মন বসে না? কী দেখে বুঝবেন? কী করণীয়?

একটানা দীর্ঘক্ষণ কম্পিউটারের সামনে কাজ? আরগনোমিক্সের এই নিয়মগুলি মানছেন তো?

এদিকে ঋতুপর্ণরাজাও সব ঘটনা শুনে অত্যন্ত খুশি হলেন। বাহুকের গুণমুগ্ধ ছিলেন তিনি। তিনি জানতেন, বাহুক নিতান্ত সাধারণ কোন মানুষ নন। আজ সে সন্দেহ দূর হল। তিনি ফিরে গেলেন নিজ রাজ্যে। নলরাজা আজ কলির পাশমুক্ত। উপরন্তু অক্ষবিদ্যাবিশারদ ও বটে। তিনি পুষ্কররাজাকে গিয়ে বললেন, ‘ইরাজা, আবার পাশাখেলার আয়োজন করো। আর যদি তাতে তুমি রাজি না হও, তবে যুদ্ধে যেতেও প্রস্তুত আমি।’ নলপুষ্করের সে পাশাখেলায় নলরাজা সহজেই জয়লাভ করলেন। পুষ্করের প্রাণ হরণ করলেন না তিনি। কারণ তিনি জানতেন, পুষ্কররাজাও কলির অধীন ছিলেন। নলরাজা পুষ্করকে তাঁর রাজ্যের অংশটুকু ফিরিয়ে দিলেন। আর নিজে ফিরে গেলেন নিজের রাজধানীতে, প্রিয় পারিষদ আর রাজ্যবাসীদের মাঝে। —চলবে

Skip to content