ছবি প্রতীকী
তাহলে কী করণীয়
বাড়ির আশেপাশে জল জমতে দেওয়া যাবে না। ফুলের টপ, টায়ার, মাটির পাত্র ইত্যাদিতে যাতে জল না জমে সে দিকে নজর রাখতে হবে। পাত্রের জল বারে বারে পরিবর্তন করতে হবে। নর্দমা, ডোবা পরিষ্কার রাখতে হবে। তাহলেই ডেঙ্গির প্রবণতা কমবে।
উপসর্গ
পাশাপাশি ডেঙ্গি হলে ব্লাড প্রেসার কমে যায়। বিশেষত বাচ্চাদের এবং যাদের অন্তত একবার ডেঙ্গি হয়েছে তাদের ক্ষেত্রে ডেঙ্গির এই উপসর্গই দেখা যায়। একে চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় ডেঙ্গি শোক সিনড্রোম বলা হয়। ব্লাড প্রেসার কমে যায়। অর্থাৎ আমাদের শরীরে ক্ষুদ্রাদিক্ষুদ্র যে ধমনীগুলো আছে সেখান থেকে প্লাজমা লিক করে। ব্লাড প্রেসার কমে গেলে বা শোক সিনড্রোম হলে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যেমন কিডনি, লিভার, মস্তিষ্ক, হার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
এছাড়া রক্তের অনুচক্রিকা বা প্লেটলেটের কাউন্ট কমে যেতে পারে। আশ্চর্যের বিষয় হল, জ্বর কমে যাওয়ার পর অর্থাৎ চার থেকে পাঁচ দিনের মাথায় প্লেটলেট কাউন্ট কমতে থাকে। এরকম অবস্থা সাধারণত এগারো দিন পর্যন্ত চলতে পারে।
সাধারণত যদি কোনও রক্তপাত না হয় অর্থাৎ যদি প্রসবের সঙ্গে বা মল বা কাশির সঙ্গে রক্ত না আসে, তাহলে বাইরে থেকে রোগীকে প্লেটলেট দেওয়া হয় না। কিন্তু প্লেটলেট যদি ১০ হাজারের নিচে নেমে যায় এবং সঙ্গে রক্তপাতও হয় সেক্ষেত্রে কিন্তু প্লেটলেট দিতে হবে। সাধারণ আমাদের শরীরে সাধারণ প্লেটলেট কাউন্ট হচ্ছে দেড় লাখ থেকে চার লাখ। ডেঙ্গিতে প্লেটলেট যদি উত্তরোত্তর কমতে থাকে তাহলে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। সেই সঙ্গে ব্লাড প্রেসার কমে যাওয়া, বমি ভাব, খেতে না পারার সমস্যা থাকলেও হাসপাতালে ভর্তি করা উচিত। এইসব সমস্যা না থাকলে উদ্বেগের কোনও কারণ নেই। বাড়িতে রেখেই রোগীর চিকিৎসা করা যায়।
ডেঙ্গি হয়েছে কীভাবে বুঝবেন?
ডেঙ্গির প্রধানত চার রকম ভাইরাস আছে। সেগুলি হল — ডিএন-১, ডিএন-২, ডিএন-৩ এবং ডিএন-৪। এর মধ্যে কোনও একটি ভাইরাসে একবার আক্রান্ত হলে সেই ভাইরাসে থেকে দ্বিতীয় বার ডেঙ্গু হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। কিন্তু অন্য ভাইরাস থেকে ডেঙ্গি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যেমন ধরুন ২০১৫ সালে কারও ডিএন-১ ভাইরাস থেকে ডেঙ্গি হয়েছিল, সে সময় তাঁর শরীরে ডেঙ্গির যে অ্যান্টিবডি আছে তাকে বলা হয় আইজিজি। এটা কিন্তু ডিএন-১ ভাইরাসের বিপক্ষে কাজ করবে। কিন্তু কাউকে যদি ডিএন-৩ ভাইরাস আক্রমণ করে, তাহলে কিন্তু তাঁর আবার ডেঙ্গি হতে পারে। সুতরাং যেহেতু ডেঙ্গির ভাইরাস চার রকমের, তাই কারও সর্বাধিক চারবার পর্যন্ত ডেঙ্গি হতে পারে।
এবার এর উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা করতে হবে। ব্যথার কোনও ওষুধ বা অ্যান্টিবায়োটিক কখনওই খাওয়ানো যাবে না। প্যারাসিটামল ছাড়া অন্য কোনও ওষুধ এ সময় খাওয়া উচিত নয়। শরীরের তাপমাত্রা কমানোর জন্য ওজন অনুযায়ী ৬০০ থেকে ৬৫০ ক্ষমতার (পাওয়ার) ওষুধ দেওয়া হয়। দিনে চার থেকে পাঁচবার খাওয়ানো যেতে পারে। মাথায় জল পট্টি দিতে হবে, স্নান করাতে হবে।
ডেঙ্গির সঙ্গে অন্যান্য ভাইরাল জ্বরের পার্থক্য
সর্দি, কাশি, হাঁচি, গলা ব্যথা— এই উপসর্গগুলি ডেঙ্গিতে খুব একটা হয় না। জ্বর, গা-হাত-পায়ে ব্যথা, গাঁটে গাঁটে তীব্র যন্ত্রণা এগুলোই ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে বেশি দেখা যায়।
আইজিজি এবং আইজিএম
ব্লাডে এনএস-১ অ্যান্টিজেন বলে এক ধরনের পরীক্ষা হয়। এই পরীক্ষা করলে বোঝা যায় ডেঙ্গি হয়েছে কিনা। জ্বর শুরু হওয়ার সাত দিনের মাথায় যদি ‘আইজিএম অ্যান্টিবডি’ পজিটিভ হয় বুঝতে হবে ডেঙ্গি হয়েছে। এবং জ্বর শুরু হওয়ার সাত দিনের মাথায় ‘আইজিএএম’ অ্যান্টিবডি পজিটিভ হয়। আইজিএএম মানে এখনকার ডেঙ্গি। আর কারও যদি ‘আইজিজি’ পজিটিভ হয়ে থাকে তাহলে বুঝতে হবে তাঁর আগেও একবার ডেঙ্গি হয়েছিল। আবার জ্বর শুরু হওয়ার সাত দিনের মাথায় ‘আইজিএম’ পরীক্ষা করে যদি পজিটিভ রিপোর্ট আসে তাহলে বুঝতে হবে আগে ডেঙ্গির চার রকম ভাইরাসের মধ্যে থেকে একটা হয়েছে। এবার অন্য আরেকটা ভাইরাস থেকে হয়েছে বলে ‘আইজিএম’ পজিটিভ এসেছে।
ডেঙ্গি হলে প্রচুর পরিমাণে জল খাওয়াতে হবে। দিনে অন্ততপক্ষে পাঁচ থেকে ছয় লিটার জল খাওয়াতে হবে। কারণ জ্বর হলে প্রচুর ডিহাইড্রেশন হয়। এ সময় অল্প অল্প করে বারবার খেতে হবে। ওআরএস-এর পাশাপাশি ফলের রস ও ডাবের জল খেলে শরীরের পক্ষে ভালো। মনে রাখবেন, জ্বর কমলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে একদিন অন্তর ‘প্লেটলেট কাউন্ট’ চেক করতে হবে। এসব মেনে চললে বাড়িতে থেকেই ডেঙ্গির চিকিৎসা করা যেতে পারে।
কখন হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে
রোগী খেতে পারছে না, বমি বমি ভাব, ব্লাড প্রেসার কমে যাচ্ছে এবং প্লেটলেট কমে গেলে পায়ের লাল লাল ছোপ ছোপ র্যা স বেরলে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। পায়ের লাল লাল ছোপ ছোপ র্যা সকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় বলা হয় পারপিউরা। এছাড়াও মল, প্রস্রাব বা কাশির সঙ্গে রক্ত পড়লেও তৎক্ষণাৎ হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা শুরু করতে হবে। সাধারণত ৫ থেকে ১০ শতাংশ ক্ষেত্রে ডেঙ্গিতে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। তবে যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা করলাম সেগুলি মেনে চললে ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ ক্ষেত্রেই রোগীকে বাড়িতে রেখেই চিকিৎসা করা সম্ভব। কোনও উদ্বিগ্ন হওয়ার দরকার নেই।
ছবি: সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে
যোগাযোগ: ৯৮৩১৬৭১৫২৫