শুক্রবার ২২ নভেম্বর, ২০২৪


ছবি প্রতীকী

অনেকেই টনসিলের সমস্যায় ভোগেন। সাধারণত ঠান্ডা লেগে স্বরতন্ত্রীতে প্রদাহ হলে টনসিল হতে পারে। এই সমস্যায় ভুগলে সাধারণত ঢোক গিলতে ব্যথা বা কথা বলতে কষ্ট হয়। এর থেকে মুক্তি পেতে চিকিৎসকের পরামর্শই নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। তবে কিছু ঘরোয়া উপায়ের পাশাপাশি হোমিওপ্যাথিতে এর ভালো চিকিৎসা রয়েছে।
 

টনসিল ঠিক কি?

টনসিল লিমফয়েড টিমের সংগ্রহ, যা শরীরের ইমিউন সিস্টেমের অংশ। টনসিল গ্রন্থির গলা এবং তালুতে তাদের অবস্থানের কারণে, তারা মুখ বা নাক দিয়ে জীবাণু বা ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করা বন্ধ করতে পারে। এছাড়াও টনসিলে প্রচুর পরিমাণে শ্বেত রক্তকণিকা থাকে, যা জীবাণু হত্যা করতে পারে।
 

বিভিন্ন ধরণের টনসিল

প্যালাটাইন টনসিল
অ্যাডিনয়েডস (ফ্যারিঞ্জিয়াল টনসিল)
লিঙ্গুয়াল টনসিল দুটি প্যালাটাইন টনসিল গলার পিছনের ডান এবং বাঁদিকে থাকে। এটি একমাত্র টনসিল, যা আপনি আপনার মুখ খুললে দেখতে পাবেন। অ্যাডিনয়েডগুলি গলার উপরে, নাকের পিছনে পাওয়া যায় এবং শুধু রাইনোস্কোপি মাধ্যমে দেখা যায়। লিঙ্গুয়াল টনসিল জিহ্বার গোড়ায়, তার পিছনের পৃষ্ঠে অনেক পিছনে অবস্থিত।

এই সমস্ত টনসিলের গঠনগুলিকে ওয়াল্ডেয়ারের রিং বলা হয়। কারণ তারা মুখ এবং নাক থেকে গলা পর্যন্ত খোলার চারপাশে একটি বলয় তৈরি করে। এই অবস্থান তাদের মুখ বা নাক দিয়ে শরীরে প্রবেশ করা থেকে ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার মতো জীবাণু প্রতিরোধ করতে দেয়। গলার পাশে ওয়ালডেয়ারের রিংয়ের পিছনে আরও ইমিউন সিস্টেম কোষ রয়েছে।

প্যালাটাইন টনসিল স্ফীত হলে তাকে টনসিলাইটিস বলা হয়। টনসিল ফুলে ওঠে এবং খুব লাল হয়ে যায়। তাদের প্রায়ই হলুদ দাগ থাকে। সবচেয়ে সাধারণ উপসর্গ হল গলা ব্যথা এবং জ্বর। প্যালাটাইন টনসিল এবং অ্যাডিনয়েড বড় হয়ে যেতে পারে, বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে। এতে শ্বাস নিতে কষ্ট হয় এবং ঘুমের সমস্যা হয়। এই সমস্যাগুলির কারণে, কখনও কখনও টনসিল অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দেওয়া হয়।

 

টনসিলাইটিস কি ?

টনসিলের একটি সাধারণ সংক্রমণ যার ফলে এগুলি ফুলে লাল হয়ে যায়। টনসিলাইটিস বেশ অস্বস্তিকর। অনেক সময় বাড়াবাড়ি হলে পুঁজও জমতে পারে। তবে বেশির ভাগ মানুষই কয়েক দিনের মধ্যে টনসিলাইটিস থেকে সেরে উঠেন। বেশিরভাগ উপসর্গ ৭-১০ দিনের মধ্যে সেরে যায়।
 

টনসিলাইটিসের সাধারণ উপসর্গ

গলা ব্যথা এবং গেলার সময় ব্যথা অনুভব।
টনসিল লাল এবং স্ফীত হয়ে যায়। এমনকী পুঁজও জমতে পারে।
জ্বর ও মাথাব্যথা
কানে ও ঘাড়ে ব্যথা
মুখ খুলতে অসুবিধা
ক্লান্তি
ঘুমোতে অসুবিধা
কাশি
ঠান্ডা লাগা
লসিকা গ্রন্থি ফুলে যাওয়া

 

আরও কিছু লক্ষণ

পেট ব্যাথা ও বমি বমি ভাব
গলার স্বর পরিবর্তন
মুখে দুর্গন্ধ ইত্যাদি।
 

হোমিওপ্যাথিতে টনসিলাইটিসের চিকিৎসা

হোমিওপ্যাথি টনসিলাইটিসের সমস্যা হওয়ার প্রবণতা কমাতে এবং সম্পূর্ণ নিরাময়ে খুবই কার্যকরী। হোমিওপ্যাথি ওষুধ লক্ষণ সাদৃশ্যের উপর নির্ভর করে রোগীর উপর প্রয়োগ করা হয়। তাই এক একটি ওষুধ এক এক জন রোগীর উপর ভালো কাজ করে। তবে কিছু ওষুধ অ্যাকিউট টনসিলাইটিসের সমস্যায় ব্যবহার করা হয়, যা রোগের লক্ষণ ও সংক্রমণ কমাতে খুবই কার্যকর। যেমন —
ফাইটোলাককা
হিপার সালফিউরিকাম
সোরাইনাম
বেলেডোনা
লেক কেনাইনাম
বেরাইটা কার্ব ইত্যাদি।
 

টনসিলাইটিস হলে যা করণীয়

টনসিলাইটিসের কারণ যাই হোক না কেন, আপনার সন্তানকে ভালো রাখতে কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখুন।
আপনার শিশু যেন পর্যাপ্ত সময় বিশ্রাম পায়।
প্রচুর পরিমাণে জলপান করতে হবে।
গিলেতে ব্যথা হলে নরম খাবার খাওয়ার চেষ্টা করা।
গলা প্রশমিত করার জন্য গরম জল দিতে পারেন।
লবণ জল দিয়ে গার্গল করে একটি লজেঞ্জ চুষে নিতে হবে। তবে চার বছরের কম বয়সী বাচ্চাদের সেগুলি একদমই দেবেন না।
ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ ফল-সবজি খেতে উৎসাহিত করতে হবে।

যোগাযোগ: ৭০০৫৩৫৮৯১৬


Skip to content