শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪


স্বাস্থ্যই সম্পদ। এ সম্পদকে রক্ষা করতে আমাদের বিশেষ যত্নবান হতে হবে। গ্রামাঞ্চল হোক বা শহরাঞ্চল অধিকাংশ বাচ্চাদের মধ্যে দেখা যায়, তারা সাধারণত মাছ খাওয়ার বিষয়ে বিশেষ আসক্ত হয় না। কিন্তু দেখা গিয়েছে, শিশু এবং কিশোরদের পুষ্টিপূরণে মাছের বিশেষ প্রয়োজনীয়তা আছে। তাই তাদের মাছ খাওয়ানো আবশ্যক। বাড়ির ছোটদের মধ্যে মাছ খাওয়া নিয়ে যে অনিহা তা কীভাবে স্বাদ বদলের মাধ্যমে তাদের কাছে আকর্ষণীয় করে তোলা যায় তা দেখা মায়েদের কর্তব্য।

কখনও কখনও মায়েদের মধ্যেও দেখা যায়, তারা সন্তানকে মাছ খাওয়ানো নিয়ে ততটা উৎসাহ দেখান না। কারণ অনুসন্ধানে দেখা গিয়েছে, প্রথমত ছোটদের ভাতের সঙ্গে এক টুকরো মাছ খাওয়াতে মা হিমশিম খেয়ে যান। তার থেকে অনেক সহজ হচ্ছে ডিম বা মাংস দিয়ে যদি তাদের খাওয়ানো হয়। কারণ, ডিম বা মাংস খেতে বাচ্চারা যথেষ্ট উৎসাহ বোধ করছে। তাই অনেক মাও তাই-ই করছেন। দ্বিতীয়ত, মাছে কাঁটা থাকে। কাজেই সন্তানকে মাছ খাওয়াতে গেলে যদি সেই কাঁটা গলায় আটকে যায় সেই ভয় তাঁরা তাঁরা ছোটদের মাছ দেন না।
কিন্তু বিষয়টি হল, মাংস ও ডিম এগুলি যে ভালো প্রোটিনের উৎস এতে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু এই উৎসগুলির মধ্যে কিছু সমস্যাও রয়েছে সেগুল জানতে হবে। যে সমস্যাগুলি আবার মাছে নেই। মাছে প্রোটিন তো রয়েছেই, এছাড়াও রয়েছে আয়োডিন, সেলেনিয়াম ও ক্যালসিয়ামের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক উপাদান। এছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ যে ভিটামিনটি মাছে আছে সেটি হল— ভিটামিন-ডি। মানুষের দৈহিক ওজনকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে এই ভিটামিন-ডি। এছাড়াও এই ভিটামিন রক্তচক্রের নিয়ন্ত্রণ করে। পাশাপাশি মাছে থাকে ফ্যাটি অ্যসিড। যেটি মাছ ছাড়া অন্য কোনও খাবারে পাওয়া যায় না। তাছাড়া মাছ খুবই সহজপাচ্য। শরীর মাংসের মধ্য দিয়ে প্রোটিন যত তাড়াতাড়ি নিতে পারবে, তার থেকে খুব সহজেই নিতে পারবে মাছ থেকে।
আমরা অনেকেই জানি যে, আয়োডিনের অভাবে আমাদের রাজ্যে প্রচুর সংখ্যক মানুষ থাইরয়েড জনিত সমস্যায় ভুগছেন। এই থাইরয়েডের সমস্যা যেহেতু প্রাণঘাতী নয়, তাই এটিকে আমরা ততটা গুরুত্ব দিই না। কিন্তু খাবারের মধ্য দিয়ে যদি আমাদের শরীরে আয়োডিনের ঘাটতি পূর্ণ হয় তাহলে এই সমস্যা থেকে আমরা মুক্তি পাবো। আর এই আয়োডিনের একটি অন্যতম উৎস হল মাছ।

আগেই উল্লেখ করেছি, মায়েরা ছোটদের মাছ খাওয়াতে ভয় পান মূলত মাছে কাঁটা থাকার জন্য। এর উত্তরে বলব, এমন অনেক মাছ আছে যাদের কাঁটা খুবই কম। যেমন ল্যাটা, শিঙি, কই প্রভৃতি। অনেকে ভাবতে পারেন মাছ থেকে এলার্জি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু বিষয় হল, মাছ থেকে কখনওই এলার্জি হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয় না।

তাই ছোটদের খাবারে নিয়মিত মাছ থাকুক এটাই আমাদের কাম্য। মায়েদের কাছেও আবেদন, তাঁরা যেন তাঁদের সন্তানদের মাছ খাওয়ানোর ব্যাপারে বিশেষ যত্নবান হোন। বাড়ন্ত বাচ্চাদের পুষ্টিতে মাছ যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়, এই বিষয়টি তাঁরা যেন অবশ্যই মাথায় রাখেন।

বুদ্ধিদীপ্ত মানুষ ও সুস্বাস্থ্যকর ভারত তৈরি করার জন্য হাসপাতাল ও উন্নত চিকিৎসা পদ্ধতি তৈরি করার পাশাপাশি আমাদের খাদ্যাভ্যাসের দিকেও বিশেষ নজর দিতে হবে। আর এই খাদ্যাভ্যাসের মধ্যে আর যা কিছু অন্তর্ভুক্ত করা হোক না কেন এক টুকরো মাছ যদি অন্তর্ভুক্ত করা যায় সেটি বিশেষ সুবিধা দেবে বলে মনে হয়।

* বাঙালির মৎস্যপুরাণ (Bangalir Matsya Purana – Fish) : ড. প্রতাপ মুখোপাধ্যায় (Pratap Mukhopadhyay) অবসরপ্রাপ্ত প্রধান মৎস্যবিজ্ঞানী, ভারতীয় কৃষি অনুসন্ধান পরিষদ, ভারত সরকার।
 

অনুলিখন: সুমন্ত দাস


Skip to content