সোমবার ২৫ নভেম্বর, ২০২৪


ছবি প্রতীকী

ব্রণ একটি সাধারণ ত্বকের সমস্যা যেখানে ত্বকের ছিদ্রগুলি চুল, সিবাম (একটি তৈলাক্ত পদার্থ), ব্যাকটেরিয়া এবং মৃত ত্বকের কোষ দ্বারা অবরুদ্ধ হয়ে গিয়ে ব্রণ সৃষ্টি করে। আপনার যদি ব্রণ হয়ে থাকে তবে জেনে রাখুন আপনি একা নন। এটি খুবই সাধারণ একটি ত্বকের সমস্যা। অনেকেরই হয়। দেখা গিয়েছে, সাধারণত ১১ থেকে ৩০ বছর বয়সী ৮০ শতাংশ মানুষের ব্রণ থাকে।
 

কী কারণে ব্রণ হয়?

ব্রণ মূলত একটি হরমোনজনিত সমস্যা, যা অ্যান্ড্রোজেন হরমোন দ্বারা চালিত হয়। সাধারণত কিশোরী-কিশোরী থেকে তরুণ-তরুণীদের সক্রিয় হয়ে ওঠে। এই হরমোনগুলির প্রতি সংবেদনশীলতা ত্বকের পৃষ্ঠের ব্যাকটেরিয়া এবং তৈলাক্ত গ্রন্থির ফ্যাটি অ্যাসিডের সঙ্গে মিলিত হওয়ার ফলে ব্রণ সৃষ্টি হয়।

বেশ কিছু বিষয় আছে যেগুলি ব্রণ তৈরিতে সাহায্য করে। শুধু তাই নয়, এগুলি আবার কখনও কখনও পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে তোলে। যেমন:
একজন মহিলার পিরিয়ডের সময় হরমোনের ওঠানামা।
ব্রণের ঘায়ে পিকিং করা।
অপরিচ্ছন্ন ত্বক।
তৈলাক্ত বা চর্বিযুক্ত প্রসাধনী সামগ্রী ব্যবহার করা, যেমন: ভারী লোশন, ক্রিম ইত্যাদি।
সিনথেটিক পোশাকের ব্যবহার।
বায়ু দূষণ এবং নির্দিষ্ট আবহাওয়া, বিশেষ করে উচ্চ আর্দ্রতা।
মানসিক চাপ বা অবসাদ, ঘুমের অভাব ইত্যাদি কর্টিসল হরমোন বাড়ায়, ব্রণ হওয়ার পরিবেশ তৈরি করে দেয়।
কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসাবেও ব্রণ হয়।
বংশানুক্রমেও এই সমস্যা হতে পারে।

 

ব্রণ বিভিন্ন ধরনের হতে পারে

ব্ল্যাকহেডস: ত্বকে কাল রঙের ব্রণ যা অতিরিক্ত তেল এবং মৃত ত্বকে ভরা থাকে।
হোয়াইটহেডস: ব্রণ, যা তেল এবং মৃত ত্বকে বন্ধ অবস্থায় থাকে।
প্যাপিউলস: ছোট লাল বা গোলাপি বাম্প যা স্ফীত হয়ে যায়।
পাসটুলস: পুঁজযুক্ত ফুসকুড়ি। এগুলি দেখতে লাল রিং দ্বারা বেষ্টিত, হোয়াইটহেডসের মতো দেখতে। এগুলোতে আঘাত করলে দাগের কারণ হতে পারে।
ছত্রাকজনিত ব্রণ (পিটিরোস্পোরাম ফলিকুলাইটিস): অপরিচ্ছন্ন ত্বকে হয়, যা চুলকানি এবং প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে।
নোডুলস: শক্ত ব্রণ, যা আপনার ত্বকের গভীরে থাকে। আকারে বড় হয়। খব কষ্টদায়ক।
সিস্ট: পুঁজ-ভরা বড় আকারের ব্রণ। এগুলোও দাগের কারণ হতে পারে।
 

ব্রণ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্ব দিতে হবে জীবনযাত্রায় পরিবর্তনে

পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। নিয়মিত স্নান করতে হবে। বিশেষ করে নিয়মিত মুখ ভালো করে পরিষ্কার করা দরকার।
তৈলাক্ত ও রাসায়নিক যুক্ত প্রসাধনী সামগ্রীর ব্যবহার কমাতে হবে।
ব্রণতে অহেতুক খোঁচাখুঁচি করা থেকে সম্পূর্ণভাবে বিরত থাকতে হবে।
উচ্চ গ্লাইসেমিক সূচকযুক্ত খাবার যেমন প্রক্রিয়াজাত কার্বহাইড্রেট, মিষ্টি জাতীয় খাদ্য বর্জন করা উচিত।
তেলে ভাজা জাতীয় খাদ্য পরিহার করতে হবে।

 

খাদ্যাভ্যাস

সুষম ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাদ্য খাওয়া উচিত। বেশি পরিমাণে মৌসুমী ফল, শাক-সবজি, স্যালাড, গোটা শস্য এবং প্রোটিনের স্বাস্থ্যকর উৎসগুলি খাদ্য তালিকায় যোগ করা উচিত।
এ সবের সঙ্গে প্রতিদিন কমপক্ষে ৩-৪ লিটার জল খেতে হবে।
 

চিন্তামুক্ত থাকার চেষ্টা করতে হবে

চিন্তা, হতাশা, অবসাদ ইত্যাদি কমানোর জন্য জীবনশৈলির পরিবর্তন প্রয়োজন।
নিয়মিত শরীরচর্চা করতে হবে।
পর্যাপ্ত ঘুম যাতে হয়, সে দিকে যত্নবান হতে হবে।
শারীরিক ও মানসিক বিশ্রামের প্রতি নজর দিতে হবে।
 

ব্রণ-র চিকিৎসায় হোমিওপ্যাথি

ব্রণ মারাত্মক কোনও শারীরিক সমস্যা নয়। তবে বেশির ক্ষেত্রে এটি অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। জীবনযাত্রার মানের উপর যথেষ্ট প্রভাব ফেলে। তাই ব্রণর সমস্যায় উপরোক্ত জীবনশৈলির পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় খুব ভালো ফল পাওয়া যায়। নিয়মিত হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা করালে ব্রণ হওয়ার প্রবণতা অনেকটা কমে যায়।
হোমিওপ্যাথি ওষধ আক্রান্তের লক্ষণ বা সাদৃশ্যের উপর নির্ভর করে নির্বাচন করা হয়। তাই বিভিন্ন মানুষের ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা ওষধ কার্যকরী হয়। তবে অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গিয়েছে, কিছু কিছু হোমিওপ্যাথি ওষধ ব্রণের ক্ষেত্রে খুব ভালো কাজ করে। যেমন: ক্যালি ব্রোম, হিপার সালফিউরিকাম, বেলেডোনা, পালসাটিলা, বারবারিস অ্যাকোয়া ইত্যাদি।
তবে কার জন্য কী ওষধ, কত পরিমাণে, কতদিন, কীভাবে খেতে হবে তা একজন সুদক্ষ হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক বলতে পারেন। কারণ নিজের মতো করে ওষুধ খেলে হিতে বিপরীত হতে পারে। এই প্রতিবেদনে ওষুধের নাম উল্লেখ করার কারণ, ব্রণ-র সমস্যায় কী ধরনের ওষুধ হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় রয়েছে তার একটা ধারণা দেওয়া পাঠকদের। সব ক্ষেত্রেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েই ওষুধ খাওয়া উচিত। কারণ আগেই উল্লেখ করেছি, একজন অভিজ্ঞ হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকই সঠিক পরামর্শ দিতে পারেন।

যোগাযোগ: ৭০০৫৩৫৮৯১৬


Skip to content