এহেন চোখকে ভালো রাখার জন্য পুষ্টিযুক্ত খাদ্যাভ্যাসের দরকার। চোখের সুস্বাস্থ্যের জন্য রোজকার খাদ্যতালিকায় কী কী খাবার রাখতে হবে এই প্রতিবেদনে সেসব নিয়ে আলোচনা করব।
ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড
ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড ইপিএ (EPA) এবং ডিএইচএ (DHA) চোখের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত সামুদ্রিক মাছের মধ্যে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড বেশি পরিমাণে পাওয়া যায়৷ ম্যাকরেল, সার্ডিন এবং টুর্না মাছে পর্যাপ্ত পরিমাণ ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড আছে, কিন্তু এই সব মাছ যেহেতু খুব একটা সহজলব্ধ নয়, তাই আমরা এর পরিবর্তে পমফেট, ইলিশ মাছ খেতে পারি। আর যাঁরা মাছ খান না তাঁরা ফ্ল্যাক্স সিডস, চিয়া সিডস ও আখরোট খেতে পারেন।
ভিটামিন-এ
ভিটামিন-এ-এর ঘাটতি অন্ধত্বের অন্যতম কারণ। এই ভিটামিনটি চোখের আলো-সংবেদনশীল কোষগুলিকে বজায় রাখার জন্য অপরিহার্য। এটি ফটোরিসেপ্টর নামেও পরিচিত। এই ভিটামিনের অভাবে ‘জেরোফথালমিয়া’-এর মতো সমস্যাও হতে পারে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে, যাঁদের শরীরে ভিটামিন-এ-এর ঘাটতি নেই, তাঁদের ছানি এবং বয়সজনিত ‘ম্যাকুলার’ অবক্ষয়ের ঝুঁকি কমে যায়। তাই শরীরকে ভিটামিন-এ জোগাতে রোজকার খাদ্যতালিকায় গাজর, মিষ্টি আলু, কুমড়ো, লাল, হলুদ ক্যাপসিকাম, লিভার এবং দুগ্ধজাত দ্রব্য, ডিমের কুসুম, পালংশাক ইত্যাদি রাখুন।
ভিটামিন-সি
ভিটামিন-সি চোখের বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি কমায়। তাই প্রতিদিন খাবারের তালিকায় ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ খাবার থাকা বাঞ্ছনীয়। দিনে একটি কমলা, আঙুর, লেবু বা বাতাবিলেবু খাওয়াই যথেষ্ট। জামেও প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন-সি থাকে। স্ট্রবেরি, ব্ল্যাকবেরি, ব্লুবেরি, কালো জাম, আম, পেঁপেতেও ভিটামিন-সি যথেষ্ট পরিমাণে রয়েছে।
ভিটামিন-ই
অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে ভরপুর ভিটামিন-ই ক্ষতিকারক ফ্রি রাডিক্যালের বিরুদ্ধে চোখকে সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করে। একাধিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, উচ্চমাত্রার ভিটামিন-ই যুক্ত খাবার বয়সজনিত কারণে হওয়া ছানি প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে।
তাই পাতে রাখুন ভিটামিন-ই যুক্ত খাবার যেমন বাদাম, বীজ, সালমন, অ্যাভোকাডো, সবুজ শাকসবজি প্রভৃতি।
লুটেইন এবং জিক্সানথিন
লুটেইন এবং জেক্সানথিন হল হলুদ ক্যারোটিনয়েড অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা ম্যাকুলার পিগমেন্ট নামেও পরিচিত। লুটেইন এবং জেক্সানথিন যুক্ত খাবার ঠিকমতো খেলে চোখের বিভিন্ন ধরনের অসুস্থতার ঝুঁকি কমাতে পারে, যেমন ম্যাকুলার ডিজেনারেশন এবং ছানি।
লুটেইন এবং জেক্সানথিন সবুজ শাকসবজি, যেমন পালংশাক, ব্রকোলি, মটর এবং লেটুস, ডিমের কুসুম, গম, ভুট্টা প্রভৃতিতে পাওয়া যায়।
জিঙ্ক
জিঙ্ক হল একটি মিনারেল যা রেটিনা, কোষের ঝিল্লি এবং চোখের প্রোটিন গঠনে সাহায্য করে। তাই শরীরে জিঙ্কের ভারসাম্য ঠিক রাখতে মটরশুঁটি, বাদাম, কাঁকড়া, গলদা চিংড়ি, গোটা শস্য খেতে হবে। আর প্রাতরাশের খাদ্যতালিকায় রাখুন সিরিয়াল এবং দুগ্ধজাত খাবার।
পর্যাপ্ত পরিমাণ জলপান
চোখ ভালো রাখতে সারাদিনে প্রচুর পরিমাণে জল খাওয়া প্রয়োজন। অন্য কোনও শারীরিক সমস্যা না থাকলে রোজ অন্তত ৬ থেকে ৮ গ্লাস জল খেতেই হবে। এতে একদিকে যেমন চোখ ভালো থাকবে, তেমনি ডিহাইড্রেশনেরও চিন্তা থাকবে না।
চোখের জন্য উপকারী বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান সাধারণত সুষম খাবারেই থাকে৷ সুষম খাদ্য শুধুমাত্র চোখের জন্য নয়, সুস্থ শরীরের জন্যও বিশেষভাবে প্রয়োজন।
যোগাযোগ: ৯৪৩৩৯৯১৭১৫