ছবি প্রতীকী, সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে।
রসায়নবিদ্যার গুরুত্ব
বিজ্ঞান চর্চার প্রধান তিনটি ধারার একটি হল রসায়নবিদ্যা। বৃহত্তর দর্শন-চর্চার যে অংশ পদার্থের ধর্ম এবং বিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করে, সেই শাখাই ক্রমপর্যায়ে বিবর্তিত হয়ে আজকের রসায়নবিদ্যা হিসেবে গড়ে উঠেছে। বিজ্ঞানের অন্যান্য ধারাগুলি থেকে রসায়নবিদ্যার বিশেষত্ব এইখানে যে, নিছক তত্ত্বের গণ্ডি ছাড়িয়ে রসায়নের প্রয়োগ আমাদের জীবনের প্রত্যেকটি ব্যবহারিক ক্ষেত্রে ছড়িয়ে আছে। স্বাভাবিকভাবেই, রসায়নবিদ্যায় পারদর্শী ছাত্র-ছাত্রীর সামনে তুলনামূলকভাবে অনেক কেরিয়ার-অপশন খোলা আছে।
স্নাতকস্তর
একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতে যারা বিজ্ঞান নিয়ে পড়ছে, তাদের সকলেরই স্নাতক স্তরে সাম্মানিক বিষয় (অনার্স) হিসেবে রসায়ন নিয়ে পড়ার সুযোগ আছে। আমাদের রাজ্যের এবং বাকি দেশের প্রথম সারির প্রায় সমস্ত কলেজেই সাম্মানিক বিষয় হিসেবে রসায়নের তিন বছরের পাঠক্রম পড়ানো হয়। বর্তমানে দেশের আইজার (IISER) প্রতিষ্ঠানগুলিতে কেমিক্যাল সায়েন্সে পাঁচ বছরে ইন্টিগ্রেটেড BS-MS কোর্সও পড়ানো হয়। উচ্চমাধ্যমিকে প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে বা প্রবেশিকা পরীক্ষার মাধ্যমে কলেজ বা প্রতিষ্ঠানগুলিতে ভর্তির সুযোগ অর্জন করা যায়।
স্নাতকোত্তরস্তর
রসায়নে স্নাতক হয়ে উচ্চতর স্নাতকোত্তর বিদ্যা অর্জনের জন্যে বিভিন্ন রাজ্যের এবং কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ রয়েছে। কলেজ ছাড়াও, কিছু প্রতিষ্ঠান যেমন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় বা বিশ্বভারতী, অর্থাৎ যারা হোম-ইউনিভার্সিটি, সেখানে প্রথমে স্নাতক এবং পরে স্নাতকোত্তর বিষয় হিসেবে রসায়ন পড়ার সুযোগ রয়েছে। সাধারণত, স্নাতকের নম্বরের ভিত্তিতে বা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটিজ এনট্রান্স টেস্ট (CU-CET)-এর মাধ্যমে কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে দু’বছরের স্নাতকোত্তর পাঠক্রমে ভর্তি নেওয়া হয়। এ ছাড়াও জয়েন্ট অ্যাডমিশন টেস্ট (JAM)-এর মাধ্যমে বিভিন্ন আই-আইটি-তে মাস্টার ডিগ্রি কোর্সে ভর্তি হওয়া যায়। বিভিন্ন গবেষণামূলক প্রতিষ্ঠান, যেমন, যাদবপুরের কাল্টিভেশন অফ সায়েন্স প্রতিষ্ঠানে ইন্টিগ্রেটেড MS-PhD কোর্সে ভর্তি হওয়ারও সুযোগ রয়েছে।
স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পরে রসায়নের ছাত্রদের কাছে আরেকটি সুযোগ রয়েছে চার বছরের B-Tech এবং পরে দু’বছরের M-Tech কোর্স পড়ার। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে যেমন, কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সুযোগ আছে, তেমনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, কেমিক্যাল টেকনোলজি এবং পলিমার সায়েন্সে বি-টেক পড়ার সুযোগ আছে। এছাড়াও, মৌলানা আবুল কালাম আজাদ ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজি (MAKAUT)-তে ম্যাটেরিয়াল সায়েন্সে BSc এবং MSc পড়ার সুযোগ রয়েছে।
গবেষণা
স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের পরে বিভিন্ন যোগ্যতা নির্ণয়ক পরীক্ষা যেমন UGC-CSIR পরিচালিত NET (ন্যাশনাল এলিজিবিলিটি টেস্ট) এবং GATE (গ্র্যাজুয়েট অ্যাপটিটিউড টেস্ট) দেওয়ার সুযোগ রয়েছে PhD করার জন্যে। নেট পরীক্ষায় দুটি যোগ্যতা নির্ধারক মাপকাঠি রাখা হয়েছে। যারা JRF হিসেবে মনোনীত হবে, তারা প্রথম দুই বছর জুনিয়ার রিসার্চ ফেলো এবং পরের তিন বছর সিনিয়ার রিসার্চ ফেলো (SRF) হিসেবে UGC-CSIR প্রদত্ত ফেলোশিপ নিয়ে তাদের পছন্দসই প্রতিষ্ঠান থেকে পিএইচডি করতে পারে। অন্যথায়, যারা কেবল LS অর্থাৎ লেকচারারশিপের জন্যে মনোনীত হবে, তাদের ফেলোশিপ ছাড়া পিএইচডি করতে পারবে। এছাড়াও NET বা আমাদের রাজ্যের SET (স্টেট এলিজিবিলিটি টেস্ট) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে তারা কলেজে বা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করার জন্যে আবেদন করতে পারবে। UGC-CSIR ফেলোশিপ ছাড়াও পিএইচডি করার জন্য কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারের বিভিন্ন ফেলোশিপ স্কিম আছে, যেখানে উপযুক্ত যোগ্যতামান সম্পন্ন ছাত্রছাত্রীরা আবেদন করতে পারে। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, IIT, NIT, IISER এবং অন্যান্য গবেষণামূলক প্রতিষ্ঠানগুলিতে রসায়নের বিভিন্ন বিষয়ের উপরে গবেষণা করানো হয়। Ph. D ডিগ্রির পরে বিভিন্ন ফেলোশিপ নিয়ে দেশে এবং বিদেশে পোস্ট-ডক্টরাল রিসার্চ করার সুযোগ যেমন রয়েছে, তেমনি সুযোগ রয়েছে স্কুল-কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার সুযোগ। বিভিন্ন যোগ্যতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষকতার পেশায় নিযুক্ত হওয়া যায়।
অন্যান্য চাকরির সুযোগ
অন্যান্য বিভিন্ন সরকারি এবং বেসরকারি অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ এবং ক্লারিক্যাল পদে যেমন চাকরির সুযোগ আছে, তেমনি বিশেষ করে রসায়নের ব্যবহারিক দিকগুলি অন্যান্য বিষয়ের তুলনায় অনেক ব্যাপক হওয়ায় রসায়নের ছাত্রছাত্রীদের কাছে বিস্তৃত সুযোগ রয়েছে ONGC বা GSI-এর মতো কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলিতে চাকরি করার। বিভিন্ন রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (R&D) ল্যাবরেটরিগুলিতে, ফার্মাসিউটিক্যাল এবং বায়োকেমিক্যাল, পেট্রোকেমিক্যাল, ফরেনসিক এবং ফুড ইন্ডাস্ট্রি সহ প্রায় সকল ধরনের প্রোডাকশন ইন্ডাস্ট্রিতেই কেমিস্ট এবং এনালিস্টের বিপুল চাহিদা রয়েছে। সামগ্রিকভাবে, রসায়নের ছাত্রছাত্রীদের কাছে অভূতপূর্ব সুযোগ রয়েছে নিজের মনোমতো বিভিন্ন কেরিয়ার বেছে নেওয়ার।