শুক্রবার ২২ নভেম্বর, ২০২৪


ছবি প্রতীকী, সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে।

রাষ্ট্রবিজ্ঞান কী?
রাষ্ট্রবিজ্ঞান হল এমন একটা বিষয় যেখানে আমরা রাষ্ট্রকে পড়ি, সরকারকে পড়ি, সরকারের বিভিন্ন বিভাগগুলোকে বিস্তারিত পড়ি, যেমন, বিচার বিভাগ, আইন বিভাগ, শাসন বিভাগকে নিয়ে বিস্তারিত পড়াশোনা করি। রাষ্ট্রবিজ্ঞান যে শুধু সরকার, রাষ্ট্রকেই পড়ে এমনটা নয়। রাষ্ট্রবিজ্ঞান ব্যক্তি এবং সমাজের যে মিথস্ক্রিয়া সেটাকে অধ্যয়ন করে। রাষ্ট্রবিজ্ঞান বা রাজনীতি একটি সামাজিক বিজ্ঞান যা শাসন ও ক্ষমতার ব্যবস্থা এবং রাজনৈতিক কার্যকলাপ রাজনৈতিক চিন্তা রাজনৈতিক আচরণ এবং সংবিধান ও আইনের বিশ্লেষণ করে। পুরাতনকালে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা শুধু রাষ্ট্র ও সরকারকে পড়ত। পরবর্তী পর্যায়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান থেকে অনেকগুলো বিষয় উঠে এসেছে যেগুলিকে আলাদা আলাদা ভাবে পড়া যায় বা যেগুলি নিয়ে গবেষণা করা যায়। যে রকম, তুলনামূলক রাজনীতি, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং রাজনৈতিক তত্ত্ব। পলিটিক্যাল সায়েন্স থেকে উঠে আসা আরেকটি বিষয় হল জনপ্রশাসন। তাহলে খুব সংক্ষেপে আমরা বলতে পারি যে রাষ্ট্রবিজ্ঞান হল একটি সামাজিক অধ্যয়ন যা সিদ্ধান্ত গ্রহণের সঙ্গে ক্ষমতা বরাদ্দ এবং সরকার, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলির ভূমিকা এবং ব্যবস্থা রাজনৈতিক আচরণ এবং জননীতি এইসবের মূল্যায়ন।

দশম শ্রেণি পাশ করার পরই ছাত্র-ছাত্রীদের কলা বিভাগ, বিজ্ঞান বিভাগ ও কমার্স বিভাগের মধ্যে বাছাই করতে হয়। যারা কলা বিভাগের ছাত্রছাত্রী, তারা বেশিরভাগ সময়ই রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে তাদের পাঠ্য করে নেয় এবং তাদের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়টি নিয়ে একটি সার্বিক ধারণা হয়ে থাকে। কিন্তু যারা সায়েন্স বা কমার্স শাখা থেকে আসে দ্বাদশ শ্রেণি অতিক্রম করে, তাদের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে ধারণা থাকে না। স্কুল লেভেলে আইসিএসসি বোর্ড থেকে যেসব ছাত্র-ছাত্রীদের দশম শ্রেণির পরীক্ষা দিয়ে থাকে, তাদের ইতিহাসের সঙ্গে সিভিকস নামক একটি বিষয়ও পড়ানো হয়, যা রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত। এইসব ছাত্র-ছাত্রীর রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে ধারণা থাকে। রাষ্ট্রবিজ্ঞান স্কুল লেভেলে একটি কম্পালসারি বিষয় করলে বোধহয় ভালো হয় কারণ এই বিষয়ে তাহলে সবাই একটা ধারণা পেতে পারে। যারা রাষ্ট্রবিজ্ঞান পাঠরত তাদের ভবিষ্যতে রাজনীতিতে যোগদানের সম্ভাবনা থেকেই যায়৷

রাষ্ট্রবিজ্ঞান পড়লে কী কী সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যেতে পারে

শিক্ষকতা
স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানোর সুযোগ আছে। যেসব স্কুলে উচ্চমাধ্যমিক রয়েছে সেসব স্কুলে পলিটিক্যাল সায়েন্স কলা বিভাগে থাকবে। এসএসসি পরীক্ষা অতিক্রম করে স্কুলে পড়ানো যায় এবং যারা প্রাইভেট ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়াতে আগ্রহী তারাও রাষ্ট্রবিজ্ঞান পড়ে তারপর শিক্ষকতায় আসতে পারে। অবশ্য স্কুলে শিক্ষকতার জন্য বি.এড থাকাটা খুব দরকারি। কলেজে শিক্ষকতা করার জন্য রাষ্ট্রবিজ্ঞানে পোস্ট গ্র্যাজুয়েশনে ন্যূনতম ৫৫ পার্সেন্ট মার্কস পেতে হবে এবং তারপর নেট সেটের মতন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় পাশ করার পর কলেজে অধ্যাপনা করতে পারে।

গবেষণা
রিসার্চ বা গবেষণা করতে চাইলে পলিটিক্যাল সায়েন্সে যথেষ্ট পরিমাণে সুযোগ রয়েছে। পলিটিক্যাল সায়েন্সের কোনও বিষয় নিয়ে কেউ যদি পরবর্তীকালে রিসার্চ বা পিএইচডি করতে চায় তাহলে সে অনায়াসেই করতে পারে। তাছাড়া রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবেও নিজেকে নিযুক্ত করতে পারে।

সিভিল সার্ভিস
সিভিল সার্ভিসে আসার জন্য পলিটিক্যাল সায়েন্স একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যারা সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা দিতে চায় তাদের জন্য পলিটিক্যাল সায়েন্স একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমাদের সংবিধান জানা যেমন খুব জরুরি তেমনি সংবিধানের ধারাগুলিও। সংবিধান থেকে অনেক প্রশ্ন আসে। একজন আইএএস, আইপিএস বা আইএফএস অফিসার হওয়া ভারতের সবচেয়ে সম্মানজনক পেশার মধ্যে গণ্য করা হয়। যদি ইউপিএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ কেউ করতে চায় তবে রাষ্ট্রবিজ্ঞান জ্ঞান আবশ্যক এবং স্নাতক স্তরে বিষয়টি অধ্যয়ন প্রার্থীদের অত্যন্ত সাহায্য করতে পার। যারা ডব্লুবিসিএস দিতে চায় তাদের জন্য হিস্ট্রি এবং পলিটিক্যাল সায়েন্স একত্রে নিলে বিশেষ সুবিধা হতে পারে।

সাংবাদিকতা
সাংবাদিকতায় আসার জন্য পলিটিক্যাল সায়েন্স একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বিষয়। যেহেতু পলিটিক্যাল সায়েন্সের ছাত্রছাত্রীরা কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স নিয়ে অবগত থাকে তাই তারা জার্নালিজম বা সাংবাদিকতায় অনায়াসে আসতে পারে।

নীতি বিশ্লেষক
নীতি বিশ্লেষকদের কাজ হল একটি নীতির প্রভাবগুলি মূল্যায়ন করা এবং বিষয়টি ব্যবহার করে যুক্তি তৈরি করা যা বাস্তব। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের স্নাতকদের জন্য একটি দুর্দান্ত কর্মজীবন বা বিকল্প কাজ।

আইন
রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে স্নাতক করার পর অনেকেই আইন নিয়ে পড়াশোনা করে থাকে। এটি তাদের অতিরিক্ত জ্ঞান দেবে এবং ছাত্রীদের আইন অনুসরণ করার জন্য গড়ে তুলবে।

রাজনীতি
অবশেষে বলি অনেকেই যারা রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে পড়ে তারা পরবর্তীকালে রাজনীতিতে যোগদানে অনীহা প্রকাশ করে। এটি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক৷ কারণ, আজকের দিনে দাঁড়িয়ে আমাদের এমন রাজনৈতিক নেতৃত্ব দরকার যার প্রেক্ষাপটে পলিটিক্যাল সায়েন্স এর সঠিক ভিত বর্তমান।

রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং কেরিয়ারের ক্ষেত্রে প্রচুর দরজা খুলে দেয় ছাত্র-ছাত্রীদের।


Skip to content