সোমবার ২৫ নভেম্বর, ২০২৪


ছবি প্রতীকী, সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে।

আজ আপনাদের সঙ্গে যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব তা হল ফ্যাটি লিভার। ফ্যাটি লিভার কথাটি কমবেশি সকলেরই জানা। সাধারণত কোনও কারণে আল্ট্রাসোনোগ্রাফি পরীক্ষা করলে ফ্যাটি লিভার সম্পর্ককে জানা যায়।

শরীরে মেদ বৃদ্ধি হলে পেটের ভিতরে যে অঙ্গগুলি আছে অর্থাৎ লিভার, প্যাংক্রিয়াস এগুলির আশপাশে ধীরে ধীরে মেদ বা চর্বি জমতে থাকে। পেটে যে মেদ হয় তার প্রধান কারণ, অনিয়ন্ত্রিত কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইড। আর এই মেদ বৃদ্ধির জন্যই লিভারে চর্বির পরিমাণও বেড়ে যায়। ফলস্বরূপ শরীরে দেখা দেয় নানান সমস্যা।

ফ্যাটি লিভার হলে কী কী সমস্যা হতে পারে?
প্রধানত যে উপসর্গ হিসেবে দেখা যায়, পেটের ওপরের ডানদিকে একপ্রকার চিনচিন ব্যথা অনুভব হয়। অসহ্যকর না হলেও মৃদু ব্যথা হতে পারে। পেটের ডানদিকটা ভারী ভারী ভাব মনে হয়। অনেকসময় হজমের সমস্যাও হতে পারে।

ফ্যাটি লিভার কোন কোন রোগ ডেকে আনতে পারে?
লিভারের অ্যাডভান্সড স্টেজে সিরোসিস নামক একটি রোগ আছে। সিরোসিসের অনেক কারণও আছে। সিরোসিস কথাটির অর্থ হল লিভার সংকুচিত হয়ে যাওয়া। লিভার সংকুচিত হয়ে গেলে সে তার কার্যক্ষমতা হারায়। লিভার শরীরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ। কারণ, লিভার ‘মেটাবলিজম’-এ সহায়তা করে। আমরা যে ফ্যাট বা কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার খাই তা প্রথমে আমাদের অন্ত্র থেকে লিভারে যায়। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, আমাদের শরীরের ‘প্রোটিন সিন্থেসিস’ করে। বিশেষত সেই প্রোটিনগুলি যেগুলি আমাদের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। আমাদের কোনও জায়গায় কেটে গেলে সঙ্গে সঙ্গে রক্ত যে জমাট বাঁধে এবং সেই জমাট বাঁধার জন্য কতকগুলি কেমিকেল দরকার হয়। সেই কেমিকেলগুলিও আমরা লিভার থেকেই পেয়ে থাকি। যেই মুহূর্তে লিভারটি সংকুচিত হয়ে যাবে তখন এই সমস্ত সমস্যা দেখা দেবে। আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাবে। কারণ, রোগ প্রতিরোধকারী প্রোটিনগুলি শরীরে উৎপন্ন হবে না৷ ফলে কেটে গেলে রক্ত যে জমাট বাঁধার জন্য কেমিকেলের প্রয়োজন লিভার তা উৎপন্ন করতে পারবে না। এছাড়াও আমাদের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় জল জমতে পারে। পেটের মধ্যে জল জমতে পারে, পা ফুলে যেতে পারে। এগুলি হল সিরোসিসের লক্ষণ। সিরোসিস হওয়ার অনেক কারণ আছে। মূলত এই সিরোসিস হেপাটাইটিস ভাইরাস থেকে হয়। বিশেষত হেপাটাইটিস-বি এবং সি ভাইরাস থেকে। এছাড়া অন্যান্য রোগ যেমন বিলিয়ারি সিরোসিস, অটোইমিউন হেপাটাইটিস।

অতীতে যখন এত পরীক্ষা-নিরীক্ষা হত না তখন কিছু কিছু সিরোসিস পাওয়া যেত যেগুলির কোনও কারণ খুঁজে পাওয়া যেত না। তখন বলা হত অজানা কারণে সিরোসিস অব লিভার হয়েছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে এই অজানা কারণের অন্যতম প্রধান কারণ হল এই ফ্যাটি লিভার।
লিভারের ফ্যাটকে দু’ভাগে ভাগ করা যায়
অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ।
নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ।
আজকের আলোচনা হচ্ছে মূলত নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ নিয়েই। অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজের চিকিৎসা একটাই, তা হল অ্যালকোহল বন্ধ করা। মধ্যপ্রদেশ বা ভুঁড়ি বেড়ে যাওয়ার একটা পরিমাপ আছে। নাভির কাছ থেকে যদি পুরুষের ক্ষেত্রে ১০২ সেন্টিমিটার ও মহিলাদের ক্ষেত্রে ৮৮ সেন্টিমিটারের বেশি হয় তাহলে তাকে বলা হবে সেন্ট্রাল ওবেসিটি। এই সেন্ট্রাল ওবেসিটি দেখা দিলে আমাদের খুব সজাগ হতে হবে। আমরা যদি এটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি তাহলেই আমাদের ফ্যাটি লিভারটি নিয়ন্ত্রণে আসবে৷ তখন সিরোসিসের সম্ভাবনাও কমবে। এই ফ্যাটি লিভারের সঙ্গে থাকতে পারে ডায়াবেটিস। ডায়াবেটিস এবং কোলেস্টেরল-ট্রাইগ্লিসারাইডের সমস্যা, ইউরিক আ্যসিডের সমস্যা, ব্লাড প্রেশারের সমস্যা এই সমস্ত রোগগুলি একে অপরের সঙ্গে জড়িত। অর্থাৎ আমাদের যদি কোলেস্টেরল-ট্রাইগ্লিসারাইড বেশি থাকে এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকে তাহলে ফ্যাটি লিভার হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। প্রথমদিকে সঠিকভাবে চিকিৎসা করা না গেলে সিরোসিসের দিকে যাবার সম্ভাবনাও থাকে।

এক্ষেত্রে আমাদের প্রধান করণীয় হল শরীরের ওজনকে নিয়ন্ত্রণে রাখা৷ অর্থাৎ ভুঁড়িটি যাতে না বাড়ে। এর জন্য প্রয়োজন নিয়মিত শরীরচর্চা। হাঁটা এবং পেটের জন্য কিছু ব্যায়াম করা। শরীরে কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা কমাতে হবে। খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন করতে হবে। তেল, ঘি, মাখন, অতিরিক্ত ভাজাভুজি, ফাস্টফুড এগুলি বন্ধ করতে হবে। এতেও যদি কোলেস্টেরল ট্রাইগ্লিসারাইড না নিয়ন্ত্রণে আসে তাহলে ওষুধ খেতে হবে। ডায়াবেটিস, ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। ডাক্তারবাবুর পরামর্শ নিতে হবে। যে যে কারণে ফ্যাটি লিভার হয় সেই কারণগুলিকে ধরে যদি আমরা চিকিৎসা করতে পারি তাহলেই আমরা ফ্যাটি লিভারের সমস্যা থেকে মুক্তি পাব। ভবিষ্যতেও আমরা সিরোসিসের মতো মারণরোগ থেকেও নিজেদেরকে বাঁচাতে পারব।

Skip to content