ছবি: সত্রাগ্নি।
স্ত্রী আর বাচ্চাদের নিয়ে গৌরব চলে গেল। তার মাকে বলল—
— দেখ মা তোমার সিদ্ধান্ত তোমার নিজের। তুমি বসুন্ধরা ভিলাতে থেকেছো। দাদা বসুন্ধরা ভিলাতে থাকে। আমি থাকিনি। ছোটবেলা থেকে হোস্টেলে হোস্টেলে কেটেছে। ইউকেতে কেটেছে। বসুন্ধরা ইন্ডাস্ট্রিজ জয়েন করবার পরে বিয়ের আগে থেকেই আমি রেন্টেড ফ্লাটে কমফোর্টেবল ছিলাম। আমি চাইবো তুমি ও দাদা তোমরা অস্ট্রেলিয়ায় চলে এসো। হ্যাঁ, তোমার এখানে বসুন্ধরা ফ্যাশন আছে। দাদা হয়তো কলকাতা ছেড়ে যেতেই চাইবে না। তোমাদের দু’জনকেই আমি কোনও জোর করব না। তবে তোমরা ওখানে আমার সঙ্গে একসঙ্গে থাকলে আমাদের ভালো লাগবে। এখন এটা পুরোটাই তোমাদের ওপর।
— দেখ মা তোমার সিদ্ধান্ত তোমার নিজের। তুমি বসুন্ধরা ভিলাতে থেকেছো। দাদা বসুন্ধরা ভিলাতে থাকে। আমি থাকিনি। ছোটবেলা থেকে হোস্টেলে হোস্টেলে কেটেছে। ইউকেতে কেটেছে। বসুন্ধরা ইন্ডাস্ট্রিজ জয়েন করবার পরে বিয়ের আগে থেকেই আমি রেন্টেড ফ্লাটে কমফোর্টেবল ছিলাম। আমি চাইবো তুমি ও দাদা তোমরা অস্ট্রেলিয়ায় চলে এসো। হ্যাঁ, তোমার এখানে বসুন্ধরা ফ্যাশন আছে। দাদা হয়তো কলকাতা ছেড়ে যেতেই চাইবে না। তোমাদের দু’জনকেই আমি কোনও জোর করব না। তবে তোমরা ওখানে আমার সঙ্গে একসঙ্গে থাকলে আমাদের ভালো লাগবে। এখন এটা পুরোটাই তোমাদের ওপর।
কথাগুলো মায়ের সামনেই পিসিমণির ঘরে হচ্ছিল। তাঁর উত্তর শুনেই মা বুঝতে পারলেন গৌরবের ঘটনা পিসিমণির ওপর প্রভাব ফেলেছিল। হাজার হোক সন্তানের অপমান কোন মা মেনে নিতে পারেন? পিসিমণি বলেছিলেন—
— দেখ বুবু- মায়ের শরীর একদমই ভালো না। বাবাও শরীরে মনে লড়াই করছেন। তোর বাবা চলে যাওয়ার পর ওরা আমাকে দুহাত দিয়ে আগলে রেখেছিলেন। সেদিন আমার কোনও সহায় ছিল না আজ তুই নিজের পায়ে দাঁড়িয়েচিস বলে দুম করে তোর সঙ্গে চলে গেলে ওরা দুজনেই দুঃখ পাবেন। আরও কিছুদিন যাক তুই বিদেশে গিয়ে গুছিয়ে বস। তখন তোর কাছেই তো যাবো। বাবুর কথা বলতে পারব না। সে কারও কথা শোনে না। আমার কথা তো ধর্তব্যের মধ্যেই আনে না।
— দেখ বুবু- মায়ের শরীর একদমই ভালো না। বাবাও শরীরে মনে লড়াই করছেন। তোর বাবা চলে যাওয়ার পর ওরা আমাকে দুহাত দিয়ে আগলে রেখেছিলেন। সেদিন আমার কোনও সহায় ছিল না আজ তুই নিজের পায়ে দাঁড়িয়েচিস বলে দুম করে তোর সঙ্গে চলে গেলে ওরা দুজনেই দুঃখ পাবেন। আরও কিছুদিন যাক তুই বিদেশে গিয়ে গুছিয়ে বস। তখন তোর কাছেই তো যাবো। বাবুর কথা বলতে পারব না। সে কারও কথা শোনে না। আমার কথা তো ধর্তব্যের মধ্যেই আনে না।
আরও পড়ুন:
দুই বাংলার উপন্যাস: বসুন্ধরা এবং..., ৩য় খণ্ড, পর্ব-৮: গৌরব বসুন্ধরা গ্রুপ ছেড়ে অস্ট্রেলিয়া উড়ে যাচ্ছে সিটি গ্রুপ যোগ দিতে
এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৪০: স্বভাবে অনন্য সুন্দরবনের বাঘ
গৌরবের চলে যাওয়ায় বসুন্ধরা গ্রুপ এবং বসুন্ধরা ভিলা দুই জায়গাতেই প্রণয়কান্তি কোণঠাসা হয়ে পড়লো। সে চেয়েছিল গৌরবকে একটা ধাক্কা দিতে। কিন্তু সেই ধাক্কাতে গৌরব তার হাতের নাগালের বাইরে চলে গেল। বসুন্ধরা গ্রুপ থেকে গৌরবকে একটা বড়সড়ো ফেয়ারওয়েল দেওয়া হলো। দাদু বিনয়কান্তি চেয়েছিলেন নিজে উপস্থিত থাকতে। কিন্তু শারীরিক অসুস্থতার কারণে যেতে পারেননি। গৌরব যতদিন ছিল মেজজ্যাঠামণি বিকাশকান্তির ওপর কাজের চাপটা অনেক কম ছিল। গৌরব চলে যাবার পর কাজের চাপ ভীষণভাবে বেড়ে গেল। গৌরব একা গ্রুপের অনেকটা কাজ দেখতো। সেটা এখন ভাগভাগি করে দেওয়া হলো।
আরও পড়ুন:
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৫৮: কোন অজানায় ‘পথে হল দেরী’
দশভুজা, সরস্বতীর লীলাকমল, পর্ব-১৫: রবি ঠাকুরের বড় মেয়ে— যিনি লেখক হতে চেয়েছিলেন!
মানুষের মন মানুষের জীবন বিচিত্র। কখনও কখনও ক্ষণিকের দুর্বলতা ক্ষণিকের প্রশ্রয় পদসখলনের কারণ হয়। আবার হঠাৎই কোন বিশেষ ঘটনায় এক মুহূর্তে মানুষ নিজেকে বদলে ফেলতে পারে। মল মাস জন্ম মাস এসব করে তনু দাদার সঙ্গে ঋতুর বিয়েটা ভয়ানক হুড়োহুড়ি করে হয়েছিল। বিয়ের পরেই একটা ছয় মাসের লম্বা হানিমুন। মধুচন্দ্রিমা বাড়িতে আসা। আর তারপর বছর না ঘুরতেই কিছুদিন বাদে ঋতু সন্তানসম্ভবা। নিয়তি কেন বাগদাতে তনু দাদা গেল বিদেশে একদিকে ঋতুর পুত্র সন্তান জন্মানোর সুখবর অন্যদিকে কীরা কাকিমা মারফত তনু দাদার ভয়ংকর বিমান দুর্ঘটনার দুঃসংবাদ।
অনেকগুলো দিন একেবারে চুপ করে গিয়েছিল ঋতু। অনেকেই নার্ভাস ব্রেক ডাউনের ভয় পেয়েছিল। সে সময় মুমু মানে মৃন্ময়কান্তির ঘনিষ্ঠতা আবার ঋতুকে স্বাভাবিক করে তুলল। কলেজে ঘনিষ্ঠতা ছিল। মৃন্ময়কান্তির বহিমিয়ান নেচার তাকে স্থিতু হতে দেয়নি। মুমু কখনও হয়তো ঋতুর সঙ্গে সম্পর্কটা সিরিয়াসলি নেয়নি। যদি নিতো তাহলে ঋতুর সঙ্গে বিয়েটা হয়ত মুমুর হতো। কিন্তু ঝড়ের মতো বিবাহিত জীবন সন্তান আর তারপরে পরেই আচমকা বৈধব্য ঋতুকে উদ্ভ্রান্ত করে দিয়েছিল। ওই মানসিক অবস্থায় ছোট্ট শিশুকে নিয়ে দিশাহীন হয়ে পড়েছিল ঋতু। ঠিক তখনি তার সন্তানের মুমুর প্রতি অতিনির্ভরতা ঋতুকেও হারিয়ে দিয়েছিল। স্ত্রীর বৈধব্যের আগল ভেঙে নারীদেহের স্বাভাবিক চাহিদার কাছে মূহুর্তের দূর্বলতায় ভেসে গিয়েছিল হয়ত। কিন্তু তারপরের কঠিন পরিণতি পরিস্থিতি মুমু বা ঋতু দু’জনকেই সংযত হতে শিখিয়েছে।
অনেকগুলো দিন একেবারে চুপ করে গিয়েছিল ঋতু। অনেকেই নার্ভাস ব্রেক ডাউনের ভয় পেয়েছিল। সে সময় মুমু মানে মৃন্ময়কান্তির ঘনিষ্ঠতা আবার ঋতুকে স্বাভাবিক করে তুলল। কলেজে ঘনিষ্ঠতা ছিল। মৃন্ময়কান্তির বহিমিয়ান নেচার তাকে স্থিতু হতে দেয়নি। মুমু কখনও হয়তো ঋতুর সঙ্গে সম্পর্কটা সিরিয়াসলি নেয়নি। যদি নিতো তাহলে ঋতুর সঙ্গে বিয়েটা হয়ত মুমুর হতো। কিন্তু ঝড়ের মতো বিবাহিত জীবন সন্তান আর তারপরে পরেই আচমকা বৈধব্য ঋতুকে উদ্ভ্রান্ত করে দিয়েছিল। ওই মানসিক অবস্থায় ছোট্ট শিশুকে নিয়ে দিশাহীন হয়ে পড়েছিল ঋতু। ঠিক তখনি তার সন্তানের মুমুর প্রতি অতিনির্ভরতা ঋতুকেও হারিয়ে দিয়েছিল। স্ত্রীর বৈধব্যের আগল ভেঙে নারীদেহের স্বাভাবিক চাহিদার কাছে মূহুর্তের দূর্বলতায় ভেসে গিয়েছিল হয়ত। কিন্তু তারপরের কঠিন পরিণতি পরিস্থিতি মুমু বা ঋতু দু’জনকেই সংযত হতে শিখিয়েছে।
আরও পড়ুন:
আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৩৭: শ্যামাসুন্দরী দেবীর লোকান্তর গমন
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৮১: কবির ‘গানের ভাণ্ডারী’ দিনেন্দ্রনাথ বৈষয়িক-কারণে শান্তিনিকেতন ত্যাগ করেছিলেন
ঋতুর সে কঠিন সংযমে আত্মগ্লানির তীব্র দাহ এনে দিল তনুদাদার বিশাল টাকার ইনস্যুরেন্স। ঋতমের নিশ্চিত ভবিষ্যতের জন্য হয়ত যা জরুরি। ঋতু নিজে বাবা-মার একমাত্র সন্তান। তারা নিঃসন্দেহে নাতির জন্য সবকিছু করতে প্রস্তুত। কিন্তু ঋতু সে সাহায্য নেবার আগে তার স্বামীর অস্তিত্বমাখা সম্বলকেই আঁকড়ে ধরতে। তাই তার এ ভীষণ অন্তর্দাহ। নিজের বিবেকের কাছে ঘৃণিত হবার যন্ত্রণা।
ঋতু সন্ন্যাস নেবার কঠিন সিদ্ধান্ত নিল। ঋতমকে বোর্ডিংয়ে পাঠিয়ে পুরোদস্তুর সন্ন্যাসিনীর জীবনকে বেছে নিল। তনুদাদার ইন্সিওরেন্সের পুরো টাকাটা তার নামে ব্যাঙ্কে রাখল অপারেট করবে মুমু। এছাড়াও দাদু ঋতু আর ঋতমের নামে একটা মোটা টাকা ট্রান্সফার করে দিয়েছিলেন। ছেলের টাকাটা ছেলের নামে করে দিল ঋতু। নিজের টাকা দিয়ে ‘তন্ময়কান্তি মেমোরিয়াল স্কলারশিপ’ চালু করল। ফুটপাথের বাচ্চাদের জন্য স্কলারশিপ। সানন্দার জানা এনজিও এ সবে সাহায্য করত।
বড়জেঠিমার বাপের বাড়ি বেলেঘাটার মিত্রবাড়ির বলদেব-রেবতীর মন্দিরে একজন সাত্ত্বিক মানুষের বাচ্চাদের জন্য অনাথ আশ্রম ছিল। ঋতু সেখানে গিয়ে কাজ করত। বাড়ির পুজোপাঠের সব দ্বায়িত্ব সামলাত। একেবারে বদলে গেল মেয়েটা। পরিবারের কোথাও কোন আনন্দ অনুষ্ঠানে সামিল হত না। যেন সকলের অজান্তে বাকি জীবনটা প্রায়শ্চিত্তে কাটানোর অঙ্গীকার করেছিল মনে মনে। —চলবে।
ঋতু সন্ন্যাস নেবার কঠিন সিদ্ধান্ত নিল। ঋতমকে বোর্ডিংয়ে পাঠিয়ে পুরোদস্তুর সন্ন্যাসিনীর জীবনকে বেছে নিল। তনুদাদার ইন্সিওরেন্সের পুরো টাকাটা তার নামে ব্যাঙ্কে রাখল অপারেট করবে মুমু। এছাড়াও দাদু ঋতু আর ঋতমের নামে একটা মোটা টাকা ট্রান্সফার করে দিয়েছিলেন। ছেলের টাকাটা ছেলের নামে করে দিল ঋতু। নিজের টাকা দিয়ে ‘তন্ময়কান্তি মেমোরিয়াল স্কলারশিপ’ চালু করল। ফুটপাথের বাচ্চাদের জন্য স্কলারশিপ। সানন্দার জানা এনজিও এ সবে সাহায্য করত।
বড়জেঠিমার বাপের বাড়ি বেলেঘাটার মিত্রবাড়ির বলদেব-রেবতীর মন্দিরে একজন সাত্ত্বিক মানুষের বাচ্চাদের জন্য অনাথ আশ্রম ছিল। ঋতু সেখানে গিয়ে কাজ করত। বাড়ির পুজোপাঠের সব দ্বায়িত্ব সামলাত। একেবারে বদলে গেল মেয়েটা। পরিবারের কোথাও কোন আনন্দ অনুষ্ঠানে সামিল হত না। যেন সকলের অজান্তে বাকি জীবনটা প্রায়শ্চিত্তে কাটানোর অঙ্গীকার করেছিল মনে মনে। —চলবে।
* জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’। এখন লিখছেন বসুন্ধরা এবং…এর ৩য় খণ্ড।