অলঙ্করণ: লেখক।
চার বছর পরপর আসে, একটি অতিরিক্ত দিন সঙ্গে থাকে। এমনিতে ভগবানের সব দিন সমান। তাই এদিনেও নিয়ম করে সূর্য ওঠে আর অস্ত যায়। তবুও… এই দিন রোজ আসে না। এই বছরে এসেছে এমন একটা আস্ত দিন, ফেব্রুয়ারির ঊনত্রিশ তারিখ।
তাই এই দিনেই হয়তো ভুল করে ঠিক স্টেশন পার হয়ে গাড়ি এসে থামতে পারে নতুন কোনও অজানা ইস্টিশনে।
তাই এই দিনেই হয়তো ভুল করে ঠিক স্টেশন পার হয়ে গাড়ি এসে থামতে পারে নতুন কোনও অজানা ইস্টিশনে।
শোনা যায়, আদিকালে ফেব্রুয়ারি মাস বছরের শেষে ছিল। তার দিনসংখ্যা ছিল তিরিশটাই। পরে রাজারাজড়ার ইচ্ছায় তার দিন খসে পড়ে। বছরের শেষে সব ধুলো ঝেড়ে শুদ্ধ হওয়ার মাস ছিল এটা। এমনিতেই সিট খালি হয়েছিল, লিপিয়ারের হিসাব মেলাতে অতিরিক্ত একটি দিন সেখানেই ঠাঁই পেতে লাগল।
অজস্র জল্পনা চলতেই থাকে এই দিনে কী করা যেত বা যেত না। এমনিতেই জন্ম-মৃত্যু-বিবাহ নাকি বিধাতার ইচ্ছাধীন, এই দিনে যদি এমন কিছু ঘটে? তবে তাকে ফিরে পেতে পেতে তো চারটি বছরের অপেক্ষা। তবে হ্যাঁ, ফিরে পাওয়ার নানা উপায় আর বিভিন্ন ক্যালেন্ডারের হিসেব আছেই। তবে, ওই আর কী!
অজস্র জল্পনা চলতেই থাকে এই দিনে কী করা যেত বা যেত না। এমনিতেই জন্ম-মৃত্যু-বিবাহ নাকি বিধাতার ইচ্ছাধীন, এই দিনে যদি এমন কিছু ঘটে? তবে তাকে ফিরে পেতে পেতে তো চারটি বছরের অপেক্ষা। তবে হ্যাঁ, ফিরে পাওয়ার নানা উপায় আর বিভিন্ন ক্যালেন্ডারের হিসেব আছেই। তবে, ওই আর কী!
আরও পড়ুন:
হুঁকোমুখোর চিত্রকলা, পর্ব-৩২: কলি কলিং
এই দেশ এই মাটি, ত্রিপুরা: আজ কাল পরশুর গল্প, পর্ব-১: রাজমালা ও ইতিহাসের আলোকে ত্রিপুরা
এমনিতেই ফেব্রুয়ারি মাসে দুই থেকে তিনদিন বাঁচানো যায়। যে ক্যালেন্ডারে আপিস-কাছারি চলে সেখানে মাসে বড়জোর একত্রিশটি দিন থাকে। ভাবতে রোমাঞ্চ হয়, বত্রিশ দিনে কোনো কোনো বাংলা মাসের অবসান ঘটে, আপিসের ক্যালেন্ডার যদি এটা মানতো তাহলে কী হতো অথবা, তিরিশটা দিন ধরে কেউ ব্যাকরণ পড়ছে, তার ব্যাকরণ পড়া শেষ হল, বৈয়াকরণ বললেন অপবর্গে তৃতীয়া, অপবর্গ হল ফললাভ। মাসব্যাপী ব্যাকরণের ব্রীজ কোর্স করে সার্টিফিকেট নিয়ে বাড়ি যাও। তিরিশ দিন হম্বিতম্বি করে করে যিনি ছাত্রদের ব্যাকরণ শেখান কিংবা আঁক কষান, ধরা যাক প্রতিমাসেই তিনি এটা করেন, ফেব্রুয়ারিতে দুটো দিন কম হলে আর কখনো কখনো একটা দিন বেশি হলে তাঁর হতাশা আর আনন্দের অনুপাত কষে, তার লাভ ক্ষতির চক্রবৃদ্ধির মাপ কেউ কষে দেখেছে কখনো?
আরও পড়ুন:
আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৩৫: মা সারদার ভ্রাতৃবিয়োগ
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৮২: রবীন্দ্রনাথ সাহেব-শিক্ষকদের কাছেও পড়েছেন
এই আঠাশ-ঊনত্রিশ দিনে পৃথিবীতে যখন সব থেকে ছোট মাস হচ্ছে, তখন চাঁদে হচ্ছে একটি বছর, আর পৃথিবীতে মাসে মাসে একটি ফোন রিচার্জ করে আঠাশ দিনের ভ্যালিডিটি পেয়ে আপনি যখন নতুন করে ক্যালেন্ডার উল্টেপাল্টে দেখছেন, ছোটবেলাতেই শেখার কিছু গলদ থেকে গিয়েছিল কিনা ভাবছেন, তখন এটাও ভেবে দেখুন আপনি এক বছরের রিচার্জ করে ফেলেছেন, আপনি শুধু ভুল জায়গায় আছেন। কোথায় যেতে হবে বুঝতে পারছেন তো? ছোটবেলা থেকেই আপনার ঘুমে যার নিত্য যাওয়া আসা। আর এটা তো এমন নয় যে, বাসে ম্যানেজ করতে না পারলে ট্যাক্সিতে যান বা রুটি নেই তো কেক খাও… এর মতোই একটা অসাম্যের হাটবাজার, বরং ভাবুন আঠাশ-ঊনত্রিশ দিনের কী মহিমা, মুহূর্তেই আপনাকে চন্দ্রযাপনের সুখ দেবে।
আরও পড়ুন:
মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৫২: রামচন্দ্রের বনবাসগমনের সিদ্ধান্তে নৈতিকতার জয়? নাকি পিতার প্রতি আনুগত্যের জয় ঘোষণা?
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৫১: সেই ‘পৃথিবী আমারে চায়’
আসল ব্যাপার হল পার্সপেক্টিভ। একত্রিশের চেয়ে তিরিশ ভালো, তিরিশের চেয়ে আঠাশ। আবার আঠাশের চেয়ে ঊনত্রিশ ভালো হতে পারে, যদি ঐ দিন পড়ে পাওয়া চোদ্দ আনা পেয়ে যাওয়ার অবসর মেলে, জীবন হঠাত্ করে মুচকি হেসে দেয়, আশা রাখা যায় বাকি দু’ আনার জন্য, ষোলো কলা পূর্ণ হয়ে ষোলো আনা পেয়েও মাঝনদীতে সাঁতরাতে না পেরে সব অপবর্গ-ই মিছে হতে পারে, একটা দিনের যাদুতে। একটা দিনের কম বেশি উল্টেপাল্টে দিতে পারে যতো হিসাবের মাপ, তা সে যতই মনগড়া হোক না কেন! তাই মহাকালের অখণ্ড ব্ল্যাকবোর্ডে একটা করে দিন বেশি ধরে নিয়ে চারটি বছর পর পর হিসেব মেলানোর এই রেখাপাত, এমন দিনে যদি জীবনের কানাগলির রাস্তায় হঠাৎ একটা আকস্মিক নতুন বাঁক চোখে পড়ে?
* ক্যাবলাদের ছোটবেলা (kyablader-chotobela): লেখক: ড. অভিষেক ঘোষ (Abhishek Ghosh) সহকারী অধ্যাপক, বাগনান কলেজ। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগ থেকে স্নাতকস্তরে স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত। স্নাতকোত্তরের পর ইউজিসি নেট জুনিয়র এবং সিনিয়র রিসার্চ ফেলোশিপ পেয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগে সাড়ে তিন বছর পূর্ণসময়ের গবেষক হিসাবে যুক্ত ছিলেন। সাম্বপুরাণের সূর্য-সৌরধর্ম নিয়ে গবেষণা করে পিএইচ. ডি ডিগ্রি লাভ করেন। আগ্রহের বিষয় ভারতবিদ্যা, পুরাণসাহিত্য, সৌরধর্ম, অভিলেখ, লিপিবিদ্যা, প্রাচ্যদর্শন, সাহিত্যতত্ত্ব, চিত্রকলা, বাংলার ধ্রুপদী ও আধুনিক সাহিত্যসম্ভার। মৌলিক রসসিক্ত লেখালেখি মূলত: ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে। গবেষণামূলক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়ে চলেছে বিভিন্ন জার্নাল ও সম্পাদিত গ্রন্থে। সাম্প্রতিক অতীতে ডিজিটাল আর্ট প্রদর্শিত হয়েছে আর্ট গ্যালারিতে, বিদেশেও নির্বাচিত হয়েছেন অনলাইন চিত্রপ্রদর্শনীতে। ফেসবুক পেজ, ইন্সটাগ্রামের মাধ্যমে নিয়মিত দর্শকের কাছে পৌঁছে দেন নিজের চিত্রকলা। এখানে একসঙ্গে হাতে তুলে নিয়েছেন কলম ও তুলি। লিখছেন রম্যরচনা, অলংকরণ করছেন একইসঙ্গে।