সেকালের দম্পতি। ছবি: সংগৃহীত।
প্রবন্ধ লেখা কিন্তু খুব সহজ কাজ নয়। শব্দগুলোকে প্রকৃষ্ট রূপে বাঁধার জন্য শব্দের বুদ্ধিদীপ্ত প্রয়োগ প্রয়োজন। সেই কাজটাই অনায়াসে করে ফেললেন উনিশ শতকের এক অন্তঃপুরচারিণী। তখন ১৮৬৩ সাল। কৈলাসবাসিনী দেবীর প্রবন্ধের বই প্রকাশিত হল। এর আগে বামাসুন্দরী দেবীর আড়াই হাজার শব্দের একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছিল। সেই দিক থেকে কৈলাসবাসিনী দেবী দ্বিতীয় মহিলা প্রাবন্ধিক। কৈলাসবাসিনীর যখন বিয়ে হয়, তখন তিনি নিরক্ষর ছিলেন। মেয়েদের লেখাপড়া শেখার বিষয়টি তিনি তখন ঘৃণা করতেন। তাঁর জীবনে আশীর্বাদ হয়ে এলেন তাঁর স্বামী দুর্গাচরণ গুপ্ত এবং তাঁর গুপ্ত প্রেস। গুপ্ত প্রেস পঞ্জিকা এখনও প্রকাশিত হয়। মানুষ পঞ্জিকা আজও পড়েন, কিন্তু কয়েক প্রজন্ম আগের কৈলাসবাসিনী দেবীকে মনে রেখেছেন কজন?
আজ বলি সেই কৈলাসবাসিনী দেবীর কথা। কৈলাসবাসিনী মানে দুর্গা। তাঁর স্বামীর নামেও রয়েছে দুর্গা। দুর্গার মতোই দশহাতে এই দম্পতি সরস্বতীর আরাধনা করেছেন। দুর্গাচরণ ছিলেন সেই আমলের ব্রাহ্ম যুবক। ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার জন্য তাঁর মনে একটি এনলাইটেন্ট পার্টনারের স্বপ্ন ছিল নিশ্চয়ই। নিরক্ষর, লেখাপড়ায় বিমুখ স্ত্রীকে উপেক্ষা না করে তাঁকেই লেখাপড়া শেখানোর কাজটি ব্রত হিসেবে নিলেন দুর্গাচরণ।
দুর্গাচরণ নিজে শুধু একজন লেখক ছিলেন না, প্রকাশকও ছিলেন। কাজেই কৈলাসসুন্দরীর লেখকজীবন রাসসুন্দরীদের মতো সমস্যাসঙ্কুল হয়নি। কৈলাসবাসিনীর নিজের মনের বাধা অতিক্রম করার পরই তাঁর লেখকজীবনের জয়যাত্রা শুরু হল। দুর্গাচরণ কলকাতায় ছাপাখানা খুললেন এবং অনেক বই প্রকাশিত হতে শুরু হল। তিনি একজন বিপণন বিশেষজ্ঞ ছিলেন।
দুর্গাচরণ নিজে শুধু একজন লেখক ছিলেন না, প্রকাশকও ছিলেন। কাজেই কৈলাসসুন্দরীর লেখকজীবন রাসসুন্দরীদের মতো সমস্যাসঙ্কুল হয়নি। কৈলাসবাসিনীর নিজের মনের বাধা অতিক্রম করার পরই তাঁর লেখকজীবনের জয়যাত্রা শুরু হল। দুর্গাচরণ কলকাতায় ছাপাখানা খুললেন এবং অনেক বই প্রকাশিত হতে শুরু হল। তিনি একজন বিপণন বিশেষজ্ঞ ছিলেন।
অন্যদিকে সেই যুগে নারীশিক্ষা সোনার পাথরবাটি ছিল। অন্তঃপুরে স্ত্রীকে গোপনে লেখাপড়া শেখানোর মতো পদক্ষেপ দুর্গাচরণের মতো সেকালের যুবকরা নিয়েছিলেন বলেই আজকের মেয়েরা শিক্ষার আলো দেখতে পেরেছেন। কৈলাসসুন্দরী আর দুর্গাচরণের গল্প সত্যিই অন্ধকার সময়ে আলোর মতো। গল্প নয়, সত্যি! ১৮৪৯ সালের আগস্ট মাস। নারীশিক্ষা নিয়ে তখন সমাজ তোলপাড়। ঈশ্বরগুপ্ত নিয়মিত নারীশিক্ষার বিপরীতে কথা বলে চলেছেন।
‘আগে মেয়েগুলো সব ছিল ভালো, ব্রতধর্ম কোর্তো সবে। /একারবেথুন এসে শেষ কোরেছে, আর কি তাদের তেমন পাবে? /যত ছুঁড়িগুলো তুড়ি মেরে, কেতাব হাতে নিচ্ছে যবে। /তখন এবি শিখে বিবি সেজে বিলাতি বোল কবেই কবে।’
এমন ব্যঙ্গের প্রতিকূলে দুর্গাচরণ তৈরি করছিলেন তাঁর স্ত্রীকে। কৈলাসবাসিনী সারাদিনের কাজের শেষে ঘুমে প্রায় ঢুলে পড়তেন, কিন্তু দুর্গাচরণ তখনই শুরু করতেন তাঁকে শিক্ষা দেওয়ার কাজ। আত্মীয় স্বজনদের চোখের আড়ালে শুরু হয়েছিল কৈলাসবাসিনীর সাধনাপর্ব। বিয়ের সময় যে মেয়েটি অক্ষর চিনতেন না, তিনিই তেরো-চোদ্দ বছরের মধ্যে বই লিখতে শুরু করলেন। দুর্গাচরণও হয়তো ভাবতে পারেন কৈলাসবাসিনীর এতটা পারদর্শিতার কথা। এক গভীর রাতে তপস্যা সিদ্ধ হল। কৈলাসবাসিনী স্বামীকে পড়ে শোনালেন একটি সম্পূর্ণ লেখা। তাঁর মনের কথা পেল অক্ষরের অবলম্বন। দুর্গাচরণ একজন প্রকাশক। জহুরি জহর চিনলেন। সঙ্গে সঙ্গে সিদ্ধান্ত নিলেন লেখা প্রকাশের। কৈলাসবাসিনী যদি ভালো না লিখতেন তাহলে হয়তো দুর্গাচরণ এমন সিদ্ধান্ত নিতেন না।
‘আগে মেয়েগুলো সব ছিল ভালো, ব্রতধর্ম কোর্তো সবে। /একারবেথুন এসে শেষ কোরেছে, আর কি তাদের তেমন পাবে? /যত ছুঁড়িগুলো তুড়ি মেরে, কেতাব হাতে নিচ্ছে যবে। /তখন এবি শিখে বিবি সেজে বিলাতি বোল কবেই কবে।’
এমন ব্যঙ্গের প্রতিকূলে দুর্গাচরণ তৈরি করছিলেন তাঁর স্ত্রীকে। কৈলাসবাসিনী সারাদিনের কাজের শেষে ঘুমে প্রায় ঢুলে পড়তেন, কিন্তু দুর্গাচরণ তখনই শুরু করতেন তাঁকে শিক্ষা দেওয়ার কাজ। আত্মীয় স্বজনদের চোখের আড়ালে শুরু হয়েছিল কৈলাসবাসিনীর সাধনাপর্ব। বিয়ের সময় যে মেয়েটি অক্ষর চিনতেন না, তিনিই তেরো-চোদ্দ বছরের মধ্যে বই লিখতে শুরু করলেন। দুর্গাচরণও হয়তো ভাবতে পারেন কৈলাসবাসিনীর এতটা পারদর্শিতার কথা। এক গভীর রাতে তপস্যা সিদ্ধ হল। কৈলাসবাসিনী স্বামীকে পড়ে শোনালেন একটি সম্পূর্ণ লেখা। তাঁর মনের কথা পেল অক্ষরের অবলম্বন। দুর্গাচরণ একজন প্রকাশক। জহুরি জহর চিনলেন। সঙ্গে সঙ্গে সিদ্ধান্ত নিলেন লেখা প্রকাশের। কৈলাসবাসিনী যদি ভালো না লিখতেন তাহলে হয়তো দুর্গাচরণ এমন সিদ্ধান্ত নিতেন না।
আরও পড়ুন:
দশভুজা, সরস্বতীর লীলাকমল, পর্ব-২: রাসসুন্দরী দেবী—বাংলার প্রথম আত্মজীবনী রচয়িতা
দশভুজা, শক্তিরূপেন সংস্থিতা, পর্ব-১: তিনকন্যা
কৈলাসবাসিনীর বাংলা গদ্য ছিল দৃপ্ত ও অত্যন্ত উন্নতমানের। কৈলাসবাসিনী দুর্গাচরণকে বসিয়েছিলেন গুরুর স্থানে। তাঁর তৃতীয় বই ‘বিশ্বশোভা’ তিনি উৎসর্গ করেছিলেন দুর্গাচরণকে, কবিতার আকারে। অর্থাৎ কৈলাসসুন্দরীর সাহিত্যিক প্রতিভা ছিল বহুমুখী। কৈলাসবাসিনীর শিক্ষা অবশ্যই প্রয়োগমূলক ছিল। তাঁর মনের অনেক না বলা কথাকে ভাষারূপ দিতে পেরেছিলেন নির্ভয়ে। দুর্গাচরণ কিন্তু মনে করতেন লেখকের কোনও লিঙ্গ থাকা উচিত নয়। তাই কৈলাসবাসিনীকে তিনি ‘গ্রন্থকার’ বলেছিলেন। কৈলাসবাসিনীর প্রথম বইটি পড়ে অনেকে মনে করেছিলেন এটি কোনও পুরুষের লেখা। পরের বইটিতে আনন্দচন্দ্র বিদ্যাবাগীশ ভূমিকা লিখে সকল সন্দেহ নিরসন করেন।
কৈলাসবাসিনীর প্রথম বই ছিল—‘হিন্দুমহিলাগণের হীনাবস্থা’! বইটিতে সেকেলে মেয়েদের জীবনের কিছু সমস্যা আর তার সমাধানের কথা লিখেছেন কৈলাসবাসিনী। কুসংস্কার, সম্পর্কের জটিলতা, নারী শিক্ষা ইত্যাদি সবরকম সমস্যার সমাধানমূলক লেখা ছিল এই বইতে, যা একালেও বড়ই প্রাসঙ্গিক। কুসংস্কার এবং নারী পুরুষ সম্পর্ক নিয়ে লিখিতভাবে মনের কথা প্রকাশ করার স্পর্ধা সব মেয়েদের মধ্যে শুধু নয়, প্রতিষ্ঠিত পুরুষ লেখকদের মধ্যেও ছিল না। এইখানে কৈলাসবাসিনী সকলের চেয়ে বিচ্ছিন্ন এবং সাহসিনী ছিলেন। ব্রহ্মসমাজের উদ্যোগে প্রকাশিত ‘বামাবোধিনী’ পত্রিকায় তখন কিছু মেয়ের লেখা প্রকাশিত হচ্ছিল। কিন্তু কৈলাসবাসিনীর লেখার গভীরতাই ছিল আলাদা, বিচ্ছিন্ন। তিনি লক্ষ করেছিলেন, জন্মলগ্ন থেকে মা বাবার চোখেও ছেলে ও মেয়ের পার্থক্য সুস্পষ্ট। বিশেষ করে মেয়েদের শিক্ষিত না করার প্রবণতা সমাজে মেয়েদের ছেলেদের তুলনায় অপেক্ষাকৃত নিম্নে স্থানান্তরিত করে। তাঁর লেখায় মেয়েদের নানা সমস্যা আলোচিত হয়েছে। যেমন বাল্যবিবাহ, কৌলিন্য প্রথা ইত্যাদি। বিয়ের পর মেয়েদের নিজের ঘর ছেড়ে চলে যাওয়ার বিষয়টিকে কৈলাসবাসিনী ভালো চোখে দেখেননি। রাসসুন্দরীর মতো তিনিও নিজেকে ‘পিঞ্জরবদ্ধ বলে মনে করতেন। বিধবাবিবাহ বিষয়েও কৈলাসবাসিনীর মতো অত্যন্ত স্পষ্ট ছিল।
কৈলাসবাসিনীর প্রথম বই ছিল—‘হিন্দুমহিলাগণের হীনাবস্থা’! বইটিতে সেকেলে মেয়েদের জীবনের কিছু সমস্যা আর তার সমাধানের কথা লিখেছেন কৈলাসবাসিনী। কুসংস্কার, সম্পর্কের জটিলতা, নারী শিক্ষা ইত্যাদি সবরকম সমস্যার সমাধানমূলক লেখা ছিল এই বইতে, যা একালেও বড়ই প্রাসঙ্গিক। কুসংস্কার এবং নারী পুরুষ সম্পর্ক নিয়ে লিখিতভাবে মনের কথা প্রকাশ করার স্পর্ধা সব মেয়েদের মধ্যে শুধু নয়, প্রতিষ্ঠিত পুরুষ লেখকদের মধ্যেও ছিল না। এইখানে কৈলাসবাসিনী সকলের চেয়ে বিচ্ছিন্ন এবং সাহসিনী ছিলেন। ব্রহ্মসমাজের উদ্যোগে প্রকাশিত ‘বামাবোধিনী’ পত্রিকায় তখন কিছু মেয়ের লেখা প্রকাশিত হচ্ছিল। কিন্তু কৈলাসবাসিনীর লেখার গভীরতাই ছিল আলাদা, বিচ্ছিন্ন। তিনি লক্ষ করেছিলেন, জন্মলগ্ন থেকে মা বাবার চোখেও ছেলে ও মেয়ের পার্থক্য সুস্পষ্ট। বিশেষ করে মেয়েদের শিক্ষিত না করার প্রবণতা সমাজে মেয়েদের ছেলেদের তুলনায় অপেক্ষাকৃত নিম্নে স্থানান্তরিত করে। তাঁর লেখায় মেয়েদের নানা সমস্যা আলোচিত হয়েছে। যেমন বাল্যবিবাহ, কৌলিন্য প্রথা ইত্যাদি। বিয়ের পর মেয়েদের নিজের ঘর ছেড়ে চলে যাওয়ার বিষয়টিকে কৈলাসবাসিনী ভালো চোখে দেখেননি। রাসসুন্দরীর মতো তিনিও নিজেকে ‘পিঞ্জরবদ্ধ বলে মনে করতেন। বিধবাবিবাহ বিষয়েও কৈলাসবাসিনীর মতো অত্যন্ত স্পষ্ট ছিল।
আরও পড়ুন:
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৭৬: রবীন্দ্রনাথ চা নয়, প্রতিদিন সকালে কফি খেতেন
এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-২৬: সুন্দরবনের গবাদি-পশুরক্ষক মানিক পীর
১৮৫৯ সালে বিধবাবিবাহ আইন তো পেশ হয়ে যায়, কিন্তু বিধবাদের বিয়ে করতে ইচ্ছুক তরুণের বড়ই অভাব ছিল তখন। কৈলাসবাসিনী বিধবা বিবাহকে সমর্থন জানিয়েছিল। খুব বাস্তববাদী ছিলেন তিনি। বইতে লিখেছিলেন, কমবয়সে বৈবাহিক সম্পর্কের বোঝাপড়া কম হয়। সেই আমলে দাঁড়িয়ে তিনি দৃপ্ত ভঙ্গিতে প্রণয়ঘটিত বিবাহের পক্ষে কথা বলতে পেরেছিলেন। এই মনের জোর বিদ্যাচর্চাই তাঁকে দিয়েছে।
খুব আধুনিক মানসিকতা ছিল তাঁর পরিবার সম্পর্কে। সদ্য বধূ হয়ে আসা একটি মেয়ের অন্য কোনও গুণ প্রাধান্য পায় না ঘরের কাজ ছাড়া। তাদের ঘটা করে বরণ করা হয় বটে, কিন্তু তারপর একটুও সময় না দিয়ে তাদের সমালোচনা শুরু হয়। একথা সেই সময় কৈলাসবাসিনী বলেছেন। এত বছর গড়িয়ে গিয়েছে। এখনও কি সমাজে সব পরিবারে উচ্চশিক্ষার বা অন্য কোনও গুণের মূল্য সেইভাবে দেওয়া হয়? কৈলাসবাসিনী তো প্রশ্ন করেছিলেন, বিয়ের সময় ‘দাসী আনতে যাওয়া’র সুভাষণকে সত্যি ভেবে গৃহবধূকে গৃহপরিচারিকা কেন ভাবা হয়? কৈলাসবাসিনী সম্পর্কের মধ্যে পারস্পরিক মর্যাদাকে গুরুত্ব দিয়েছিলেন।
খুব আধুনিক মানসিকতা ছিল তাঁর পরিবার সম্পর্কে। সদ্য বধূ হয়ে আসা একটি মেয়ের অন্য কোনও গুণ প্রাধান্য পায় না ঘরের কাজ ছাড়া। তাদের ঘটা করে বরণ করা হয় বটে, কিন্তু তারপর একটুও সময় না দিয়ে তাদের সমালোচনা শুরু হয়। একথা সেই সময় কৈলাসবাসিনী বলেছেন। এত বছর গড়িয়ে গিয়েছে। এখনও কি সমাজে সব পরিবারে উচ্চশিক্ষার বা অন্য কোনও গুণের মূল্য সেইভাবে দেওয়া হয়? কৈলাসবাসিনী তো প্রশ্ন করেছিলেন, বিয়ের সময় ‘দাসী আনতে যাওয়া’র সুভাষণকে সত্যি ভেবে গৃহবধূকে গৃহপরিচারিকা কেন ভাবা হয়? কৈলাসবাসিনী সম্পর্কের মধ্যে পারস্পরিক মর্যাদাকে গুরুত্ব দিয়েছিলেন।
আরও পড়ুন:
আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-২৩: ঠাকুর সন্নিধানে সারদার কল্যাণব্রতে দীক্ষা
ক্যাবলাদের ছোটবেলা, পর্ব-২৬: স্বপ্নে আমার মনে হল
কৈলাসবাসিনী বাঙালি মেয়েদের পোশাক নিয়েও কথা বলেছিলেন। পোশাকের বদল প্রয়োজন বলে মনে করেছিলেন। সব সীমাবদ্ধতা কৈলাসবাসিনীও কাটিয়ে উঠতে পারেননি। কিন্তু শিক্ষা তাঁকে উদারতা দিয়েছিল। কৈলাসবাসিনী বুঝেছিলেন, সেকালের পুরুষ মনোরঞ্জনের জন্য নারীশিক্ষা চেয়েছিলেন। কিন্তু মেয়েদের নিজেদের উন্নতি? তা কেমন করে সম্ভব? কৈলাসবাসিনী নারী পুরুষ উভয়েরই গৃহকর্ম করলে ভালো, এমন কথাও লিখেছেন। না জেনেই ফেমিনিজমের আসল তত্ত্ব বলে ফেলেছিলেন কৈলাসবাসিনী। এই হল শিক্ষা ও ভাবনার আধুনিকতা।
তবে কৈলাসবাসিনীর ‘বিশ্বশোভা’ বইটিতে পৃথিবীর কথা এসেছে। ভাষায় লেগেছে আধ্যাত্মিক স্পর্শ। বিশ্বশোভা বইটি শুধু গদ্যে নয়, গদ্যে ও পদ্যে লেখা। কোনও কারণে ভাষার স্বাচ্ছন্দ্যহীনতা শেষ বইটিতে দেখা গিয়েছে। আসলে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জীবন ও ভাবনা জটিল হয়। সেই জটিলতা লেখাতেও প্রভাব ফেলে। সব প্রতিরোধ সামলে লিখে চলা এক গৃহবধূর পক্ষে খুব সহজ কাজ ছিল না। সে যুগে তো নয়ই।
খুব আশ্চর্য ঘটনা কৈলাসবাসিনীর অমন উজ্জ্বল উপস্থিতি ধীরে ধীরে ম্লান হয়ে হারিয়ে গেল। তাঁর এই অকালবৈরাগ্যের কারণ কী, জানা যায় না। আসলে মেয়েদের মন পাহাড়ি পাকদণ্ডী পথের মতো। কোন বাঁকে কোন অভিমান আর কষ্ট অপেক্ষা করে থাকে কেউ জানে না।রহস্যময় তাঁর সাহিত্যজগৎ থেকে হারিয়ে যাওয়ার ঘটনাটি। তবে, কৈলাসবাসিনীর মতো লেখক বাংলাসাহিত্যের এক নক্ষত্র ও যুক্তিবিদ— একথা অস্বীকার করার কোনো জায়গা নেই।
সহায়ক বই
● নারীপ্রগতির একশো বছর, রাসসুন্দরী থেকে রোকেয়া, গোলাম মুরশিদ।
তবে কৈলাসবাসিনীর ‘বিশ্বশোভা’ বইটিতে পৃথিবীর কথা এসেছে। ভাষায় লেগেছে আধ্যাত্মিক স্পর্শ। বিশ্বশোভা বইটি শুধু গদ্যে নয়, গদ্যে ও পদ্যে লেখা। কোনও কারণে ভাষার স্বাচ্ছন্দ্যহীনতা শেষ বইটিতে দেখা গিয়েছে। আসলে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জীবন ও ভাবনা জটিল হয়। সেই জটিলতা লেখাতেও প্রভাব ফেলে। সব প্রতিরোধ সামলে লিখে চলা এক গৃহবধূর পক্ষে খুব সহজ কাজ ছিল না। সে যুগে তো নয়ই।
খুব আশ্চর্য ঘটনা কৈলাসবাসিনীর অমন উজ্জ্বল উপস্থিতি ধীরে ধীরে ম্লান হয়ে হারিয়ে গেল। তাঁর এই অকালবৈরাগ্যের কারণ কী, জানা যায় না। আসলে মেয়েদের মন পাহাড়ি পাকদণ্ডী পথের মতো। কোন বাঁকে কোন অভিমান আর কষ্ট অপেক্ষা করে থাকে কেউ জানে না।রহস্যময় তাঁর সাহিত্যজগৎ থেকে হারিয়ে যাওয়ার ঘটনাটি। তবে, কৈলাসবাসিনীর মতো লেখক বাংলাসাহিত্যের এক নক্ষত্র ও যুক্তিবিদ— একথা অস্বীকার করার কোনো জায়গা নেই।
সহায়ক বই
* ড. মহুয়া দাশগুপ্ত, শিক্ষক এবং লেখক। রবীন্দ্রনাথের দেবলোক, জোড়াসাঁকোর জার্নাল, আমি নারী আমি মহীয়সী, কথানদীর কূলে, লেডিজ স্পেশাল, পথে পুরুষ বিবর্জিত এবং পরীক্ষায় আসবে না তাঁর লেখা একক বই। বাংলা কথকতা নিয়ে একক ভাবে কাজ করছেন।