গুলজারের সঙ্গে।
গুলজারের নির্দেশনায় আসে ‘নমকিন’ ছবিটি। স্বাভাবিক ভাবেই ছবির গানগুলি লেখেন গুলজার স্বয়ং। বলার অপেক্ষা রাখে না, যথারীতি তাঁর লেখায় সুরারোপ করতে ডাক পড়ে পঞ্চমের। ‘ফির সে আইও বদ্রা বিদেশি’ লেখাটি আসে পঞ্চমের হাতে। শুরু হয় গবেষণা। কঠিন গবেষণা বললেও ভুল হবে না। দৃশ্যে নায়িকা শাবানা আজমি একটি পাহাড়ি অঞ্চলে গানটিতে লিপ দেবেন। এই গুরুপাক লেখায় এমন একটি সুর ব্যবহার করতে হবে যেটি একাধারে যেমন সেই পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাবে, তেমনই নায়িকার ব্যক্তিত্বের সঙ্গেও মিলে যাবে। শুধু তাই নয়। গুলজারের পছন্দ হতে হবে।
এই তিনটি চ্যালেঞ্জ তখন পঞ্চমের সামনে। বলা বাহুল্য, শেষ হাসি পঞ্চমই হেসেছিলেন। দিন রাত এক করে তৈরি করে ফেলেন সুর। আশাকে নিয়ে বার কয়েক অনুশীলন করার পর গুলজারকে শোনানো হয় গানটি। কোনও কথা বলতে পারেননি গুলজার। আনন্দে লাফিয়ে ওঠেন তিনি। তারপরই সম্পন্ন হয় ফাইনাল রেকর্ডিং। অসাধারণ সেই গান? খুব সামান্য কিছু ইনস্ট্রুমেন্টকে কাজে লাগিয়ে আশাকণ্ঠের প্রাধান্য বাড়িয়ে যে গানের সৃষ্টি হয় সেটি আজও আমাদের মন কাড়ে। গভীর রাতে, যখন চারিদিক নিস্তব্ধ, তখন এই গানটির আবেদন হয়তো সবচেয়ে বেশি মাত্রায় অনুভূত হয়।
আরও পড়ুন:
পঞ্চমে মেলোডি, পর্ব-৪০: জন্মান্তরের সুরসাধক আরডি বর্মণ
হুঁকোমুখোর চিত্রকলা, পর্ব-২৪: মাটি তোদের ডাক দিয়েছে…
‘বড়ি দেড় সে মেঘা বর্ষা’র মতো একটি লেখাকে সেমি ক্লাসিক্যাল সুরে ঢেলে সাজান পঞ্চম। কাজটি কোনও মতেই সহজ ছিল না। কিন্তু গানটির কথা এবং দৃশ্য এই দুইয়ের কথা মাথায় রেখে সুরের জন্ম দেন তিনি। গানটি গাওয়ার ভার দেন আশাকে। এই ক্ষেত্রেও গুলজার হয়ে গিয়েছিলেন বাকরুদ্ধ। এটি এমনই অসামান্য একটি গান। জায়গা বিশেষে সেতার, সারেঙ্গী এবং এসরাজের ব্যবহার আপনাকে মোহিত করবেই। সার্বিকভাবে যথার্থই একটি মিষ্টি গান।
কোনও এক পাড়াগাঁয়ে তিন মহিলা মিলে ধান ভানছেন এবং মজার ছলে গাইছেন ‘আঁকি চলি বাকি চলি’ গানটি। যেমন লেখা তেমন সুর। দুটিই দুটির পরিপূরক। এই গান আপনারা সবাই শুনেছেন, আমি নিশ্চিত। আশা সেই আবার অপ্রতিরোধ্য। গীতিকার, সুরকার এবং গায়িকা তিনজনেই যদি নিজেদের একশো ভাগ উজাড় করে দেন তাহলে সেই গান কি এত জনপ্রিয় না হয়ে পারে?
কোনও এক পাড়াগাঁয়ে তিন মহিলা মিলে ধান ভানছেন এবং মজার ছলে গাইছেন ‘আঁকি চলি বাকি চলি’ গানটি। যেমন লেখা তেমন সুর। দুটিই দুটির পরিপূরক। এই গান আপনারা সবাই শুনেছেন, আমি নিশ্চিত। আশা সেই আবার অপ্রতিরোধ্য। গীতিকার, সুরকার এবং গায়িকা তিনজনেই যদি নিজেদের একশো ভাগ উজাড় করে দেন তাহলে সেই গান কি এত জনপ্রিয় না হয়ে পারে?
আরও পড়ুন:
এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-২৬: সুন্দরবনের গবাদি-পশুরক্ষক মানিক পীর
এই দেশ এই মাটি, অসমের আলো-অন্ধকার, পর্ব-১: প্রকৃতি অসমকে সাজাতে কোনও কার্পণ্যই করেনি
এক ট্রাক চালক ট্রাক নিয়ে পাহাড়ি রাস্তা দিয়ে এগিয়ে চলেছেন নিজের গন্তব্যে। অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে রাস্তার দিকে। হাতে স্টিইয়ারিং। দু’ পাশের গহন বন। সুগভীর খাদগুলি একের পর এক পিছনে ফেলে ছুটে চলেছে ট্রাক। পিছনে তাকাবার অবকাশ নেই চালকের। তার নজর শুধু সামনের দিকে। ট্রাকের নিচ দিয়ে ঠিক যেন জলের স্রোতের মতো একেবেকে বয়ে চলেছে পথ। আর এই ট্রাক চালক সঞ্জীব কুমারের সফরকে কি অসাধারণ ভাবেই না ব্যাখ্যা করেছেন গুলজার, ‘রাহ পে রেহেতে হ্যায়’ গানটির মাধ্যমে।
আরও পড়ুন:
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৫৪: সে যেন অন্য এক ‘পূনর্মিলন’
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৭৫: রাণুর মধ্যে মাধুরী
প্রতিটি পংক্তি একটি দূরপাল্লার ট্রাক চালকের জীবনপ্রবাহকে সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরতে সক্ষম। আর এই গানটির সুরের কথা আলাদা করে কি আর বলল। খেয়াল করে দেখেবেন, ট্রাকটি যেহেতু গোটা দৃশ্য জুড়ে চলমান, ছন্দটিও ঠিক সেই ধাঁচে ব্যবহার করেছেন পঞ্চম। চোখ বন্ধ করে গানটি শুনলেও সেই চলমান ট্রাকটি যেন আমরা দেখতে পাই, আমাদের মানসচক্ষুর মাধ্যমে। এখানেই পঞ্চমের সার্থকতা। এখানেই লুকিয়ে রয়েছে পঞ্চমের সাফল্যের চাবিকাঠি। শুধু সাফল্য বললে হয়তো অনেকটাই কম বলা হবে। পঞ্চমের প্রতিটি গানের অন্তরালে এত কিছু শেখার উপাদান রয়েছে যে, সেগুলিকে সঙ্গীতশিক্ষার পাঠ্যক্রমেও বোধহয় অনায়াসেই অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।
* পঞ্চমে মেলোডি (R D Burman): সৌম্য ভৌমিক, (Shoummo Bhoumik) সঙ্গীত শিল্পী।