শুক্রবার ২২ নভেম্বর, ২০২৪


 

দহাড়

কাহিনি: ক্রাইম থ্রিলার
ভাষা: হিন্দি
সৃজন: রিমা কাটগি, জোয়া আখতার
কাহিনি চিত্রনাট্য সংলাপ: রিমা কাটগি রিতেশ শাহ এবং জোয়া আখতার
পরিচালনা: রিমা কাটগি, রুচিকা ওবেরয়
অভিনয়েঃ সোনাক্ষী সিনহা, গুলশন দেবাইয়া, বিজয় ভার্মা সোহম শাহ প্রমুখ
পর্ব: ৮টি
রেটিং: ৮.৫/১০
ওটিটি প্ল্যাটফর্ম: অ্যামাজন প্রাইম ভিডিয়ো

দহাড় মানে গর্জন। জোয়া আখতার ও রিমা কাটগির ওয়েব সিরিজ ‘দহাড়’-এ দাপটের সঙ্গে গর্জন করেছেন সোনাক্ষী সিনহা। বড়পর্দায় চোখের ব্যবহার খুব জরুরি তাই নিজের নামের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সোনাক্ষীর কেরিয়ারের শুরু থেকেই তাঁর দীঘল চোখের জন্যেই ‘স্ক্রিন প্রেজেন্স’ নজর কাড়ে। ২০০৫ এ ‘মেরা দিল লেকে দেখো’ ছবির কস্টিউম ডিজাইনার হিসেবে জীবন শুরু করে ২০১০ এ দবং ছবিতে লাজবন্তীর ভূমিকায় নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেন সোনাক্ষী। তারপর হিট ফ্লপ সুপার ফ্লপ মাঝারি হিট এরকম নানান চড়াই উতরাই পেরিয়ে নিজের একটা কমিক্যাল রোম্যান্টিক ইমেজ গড়ে তুলেছেন। এরমধ্যে পিরিয়ড ছবি ‘লুটেরা’, ‘মিশন মঙ্গল’ বা ‘দবং’ ছবিতে সোনাক্ষীর অভিনয় নজর কাড়ে।
কিন্তু জোয়া আখতার রিমা কাটগির সঙ্গে ‘দহাড়’ ওয়েব সিরিজের ‘সাব ইন্সপেক্টর অঞ্জনা ভাট্টি’র চরিত্র অভিনেত্রী সোনাক্ষী সিনহার ক্যারিয়ারে একটি উল্লেখযোগ্য মোড়। দহাড়ের পরবর্তী সিজনের কথা ঘোষণা করেছেন জোয়া আখতার। অপেক্ষায় রয়েছে ওয়েব দুনিয়া। এরই মধ্যে নির্মিত হচ্ছে সঞ্জয় লীলা বনশালির সঙ্গে সোনাক্ষির নতুন ওয়েব সিরিজ ‘হীরামান্ডি’।
আরও পড়ুন:

রিভিউ: তাজ, সিজন-২: কেন্দ্রীয় চরিত্রে নজর কেড়েছে সৌরসেনীর অভিনয়

পর্দার আড়ালে, পর্ব-৪৫: উমা নাম জপতে জপতে বাঘের কাছে গিয়ে সাহসের পরিচয় দিয়েছিলেন রবি ঘোষ

গত বাইশে ফেব্রুয়ারি ২০২৩ বার্লিন ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভালে প্রিমিয়ার হয়েছিল এই ওয়েব সিরিজের। রাজস্থানের একটি ছোট্ট গ্রাম মান্ডোয়া। সেখানেই এক তরুণীর অন্তর্ধানের কেস এসে পড়ে। তদন্তে এসে জানা যায় সারা রাজ্যজুড়ে প্রায় ২৭টি তরুণীর কোনও খোঁজখবর নেই। এই তদন্তের শুরুতে কোন সূত্রই পাওয়া যায় না। কিন্তু সাব ইন্সপেক্টর অঞ্জলি ভাট্টি বা অঞ্জলি মেঘয়াল হাল ছেড়ে দেবার পাত্রী নন। রাজস্থানের দলিত সম্প্রদায়ের মেয়ে মধ্য ৩০-এর অঞ্জলি অনেক লড়াই করে এখানে পৌঁছেছে। অঞ্জলির বাবা পদবি বদলে ভাট্টি করেছিলেন। যাতে মেয়ের জীবনে জাতিগত সমস্যা না হয়। মা মেয়ের বিয়ে নিয়ে প্রায়ই দুশ্চিন্তা করেন। অঞ্জলির তাতে ভ্রুক্ষেপ নেই। সে নিজেকে একজন শক্তপোক্ত পুলিশ অফিসার হিসেবেই দেখতে চায়।
আরও পড়ুন:

এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-৪৮: সকালবেলাই হাঁটতে হবে?

এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-২৪: সুন্দরবনের রাজমাতা দেবী নারায়ণী

এই সাতাশ জন হারিয়ে যাওয়া তরুণীর মধ্যে বেশ কিছু মিল আছে। তারা নিম্নবিত্ত দলিত পরিবারের মেয়ে। বরপক্ষের মোটা অংকের পণের দাবি মেটাতে না পারায় তারা অবিবাহিতা। আর এদের যোগাযোগের মাধ্যম ফোন। ক্রমশ প্রকাশ পেতে থাকে এই সব তরুণীদের খুন করা হয়েছে। খুন করা হয়েছে বিষাক্ত সায়ানাইডের সাহায্যে। এ ভাবে অঞ্জলির সামনে জট খুলতে থাকে। খুনিকে খুঁজে না পেলেও খুনের ধরন প্রায় একরকম। এবং এত হিসাবনিকেশ কষে খুন করা হয়েছে যাতে খুনি কোনও প্রমাণ ছেড়ে যায়নি। অঞ্জলির কাছে প্রায় স্পষ্ট হয় যে খুনগুলো একজনের করা এবং সে একজন সিরিয়াল কিলার।

দহাড় সিরিজটি একটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে তৈরি হয়েছে। কর্নাটকে সিরিয়াল কিলার মোহন কুমার কুড়িটি তরুণীকে সায়ানাইড বিষ প্রয়োগে হত্যা করেছিল। মোহন কুমার বা সায়ানাইড মোহন সিম বদলে আগে খুন করা মেয়েদের মোবাইল ফোন ব্যবহার করত। আর এ ভাবেই মোহন ধরা পড়ে গেল।
আরও পড়ুন:

পরিযায়ী মন, পর্ব-১৭: জয়রামবাটির জগদ্ধাত্রীপুজো

রকম-রকম, হুঁকোমুখোর চিত্রকলা, পর্ব-২৩: চল্ রে চল্ সবে…

এই কাহিনির পটভূমি রাজস্থানের একটি ছোট্ট গ্রাম। সে গ্রামের গলিঘুঁজি রাস্তাঘাট ঘরদুয়ার এতো ভালোভাবে স্পষ্ট করা হয়েছে যে চোখ বেঁধে দিলেও মানুষ যেন সেখানে পৌঁছে যাবেন।

ভালো নির্দেশকেরা ছবিতে খুব স্বাভাবিক কিন্তু অসাধারণ কিছু মূহূর্ত তৈরি করতে জানেন। দক্ষ অভিনেতা অভিনেত্রীরা সেইসব অনবদ্য দৃশ্যে নিজেদের সেরাটুকু ঊজাড় করে দেন। সোনাক্ষী এর আগে যত চরিত্রে অভিনয় করেছেন সাব-ইন্সপেক্টর অঞ্জলি তাদের সবার চেয়ে আলাদা একেবারে অন্য ঘরানার একটি চরিত্র। বিজয় ভার্মা এই জাতীয় চরিত্রে বহু পরিচালকের প্রথম পছন্দ।
বিজয় এই মূহুর্তে ভারতীয় চলচ্চিত্রে এক উজ্জ্বল আবিষ্কার। গুলশন দেবাইয়ার ওসি দেবী সিং বিশেষভাবে প্রশংসনীয়। সিরিজে গ্রামের থানার পুলিশ প্রসিডিওরের দিকটায় বেশ নজর রাখা হয়েছে। আজকাল সমাজমাধ্যমে যথেচ্ছ যোগাযোগ ও বন্ধুত্বের প্রভাবের বিপদের দিকগুলিতে আলোকপাত করা হয়েছে। দাম্পত্যে থেকেও ক্ষণিকের অন্যায় চিন্তার প্রভাব বা সাময়িক দূর্বলতায় বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক সবই এসেছে পরিমিতভাবে, মূল কাহিনির অভিমুখে সেই সাবপ্লট বা উপকাহিনি কোনও বাড়তি মেদ জমতে দেয়নি। ওয়েব সিরিজ দেখার নেশা থাকলে ‘দহাড়’ দেখতেই হবে।
* ফিল্ম রিভিউ: জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’। দ্বিতীয় খণ্ড লিখেছেন।

Skip to content