সোমবার ২৫ নভেম্বর, ২০২৪


আরডি, অমিতাভ ও কিশোর।

‘সত্তে পে সত্তা’ ছবির ‘জিন্দেগি মিলকে বিতায়েঙ্গে’ গানটির কথা নতুন করে কিছু বলার অপেক্ষা রাখে না। সাত ভাইয়ের নিজেদের ভালোবাসার বন্ধনের এক উৎকৃষ্টতম নিদর্শন এই গানটি। গানের বিষয়বস্তুটি শোনার পর পঞ্চমের ভাবনায় এই সুরটিই উঁকি দিয়েছিল। যথারীতি সুরটি গুলশন বাওড়া রচিত এই গানে প্রয়োগ করতে দেরি করেননি পঞ্চম।
কিশোর কুমার, স্বপন চক্রবর্তী, ভূপিন্দের সিং-এর সঙ্গে ‘জিন্দেগি মিলকে বিতায়েঙ্গে’ গানটি গেয়েছেন পঞ্চম স্বয়ং। জায়গা বুঝে হারমোনিকা, ভায়োলিন এবং স্যাক্সোফোনের ব্যবহার ছন্দ ও গানটির সার্বিক আবেদনকে বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। যতই মন খারাপ থাকুক, এই গান সেই মনকে চাঙ্গা করবেই এক নিমেষে।
আরও পড়ুন:

পঞ্চমে মেলোডি, পর্ব-৩৮: জানা অজানা পথে চলেছি…

এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-২৪: সুন্দরবনের রাজমাতা দেবী নারায়ণী

‘দিলবার মেরে কব তক মুঝে’ গানটির ক্ষেত্রে অভিনবত্বের ছোঁয়া রয়েছে বইকি! মাইনর স্কেলে সুরটি রচনা করার পর ইন্টারলুডগুলিকে নিজের মতো করে সাজিয়েছেন পঞ্চম। বিশেষ করে দ্বিতীয় ইন্টারলুডে, যেখানে একটি সংক্ষিপ্ত নারীকণ্ঠ এবং তারপরেই স্যাক্সোফোনের মনমাতানো একটি পিস শুনতে পাওয়া যায়, গানটির আবেদন কোথায় পৌঁছয় একটিবার ভাবুনতো?
‘দুক্কি পে দুককি হো’ গানটি আরও একটি পঞ্চমের অনবদ্য সৃষ্টির নিদর্শন। বাঁধনহারা খুশির আমেজ পুরো গানটিতে জিইয়ে রেখে দ্রুত একটি ছন্দের আশ্রয়ে গানটি নির্মিত হয়েছে। বিশেষ বিশেষ কিছু অংশে কোরাস এবং হার্মনাইসেশন গানটিকে করে তুলেছে অনবদ্য। অত্যন্ত ধীর গতির একটি ছন্দ ব্যবহার করে এমন একটি মজার গান তৈরি করা? এও কি সম্ভব? হ্যাঁ, সম্ভব। বুঝতে পারলেন না তো? আমি ‘পেয়ার হামে কিস মোড় পে লে আয়া’ গানটির কথা বলছি।
আরও পড়ুন:

বৈষম্যের বিরোধ-জবানি, পর্ব-৪১: রিল জীবিকা বনাম জীবিকার বাজারে মেয়েরা

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৫২: সব ঘরই ‘তাসের ঘর’

‘পেয়ার হামে কিস মোড় পে লে আয়া’ গানটির সুর এবং অ্যারেঞ্জমেন্ট আপনার চারপাশে একটি সাসপেন্সের আবহ তৈরি করবে। অথচ কি অদ্ভুতভাবে মধ্যরাতে চুপিসারে সাত ভাইয়ের মধ্যে চলা বাক্যালাপকে সুরের মাধ্যমে মজা করে উপস্থাপিত করা হয়েছে। কিশোরের কণ্ঠকে একাধিকবার একেবারে খাদে পৌঁছে যেতে শুনতে পাওয়া যায়। সঙ্গে কানে আসে ভুপিন্দর সিং, স্বপন চক্রবর্তী, পঞ্চম এবং স্বয়ং লেখক গুলশন বাওয়ার কণ্ঠও। বেস গিটারের উপস্থিতি গানটিকে করে তুলেছে আরও রোমাঞ্চকর। এই গানটি পঞ্চমের বহু সফল গবেষণার মধ্যে একটি। এইরকম একটি দ্বিতীয় কোনও গান বলিউড মিউজিকের ইতিহাসে আর আছে কিনা সেটি আমার জানা নেই।
পঞ্চমের সুরসৃষ্টির পদ্ধতি এবং বৃত্তান্তের ব্যাখ্যা করা কঠিন তো বটেই কিছু ক্ষেত্রে হয়তো অসম্ভবও। এ সবের সঠিক ব্যাখ্যা একমাত্র সংগীত বিশেষজ্ঞের পক্ষেই সম্ভব। তবুও, পঞ্চমের সৃষ্টি যখন আমাদের কর্ণেন্দ্রিয়কে স্পর্শ করে সটান পৌঁছে যায় হৃদয়ে, তখন সত্যিই মনে হয় যে সুরগুলির অন্তরালে এমন কিছু নিশ্চিত ভাবে রয়েছে যা চুম্বকের মতো আকৃষ্ট করে। আমার হৃদয় কে নাড়া দেয়। আরও বেশি করে সংগীত মনষ্ক করে তোলে। ফলস্বরূপ, তাঁর সৃষ্টিগুলি বারবার শুনতে মন চায়। কখনও একঘেয়ে মনে হয় না।
আরও পড়ুন:

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-২১: শ্রীমার ঠাকুরের প্রতি যত্ন

বাঙালির মৎস্যপুরাণ, পর্ব-৮২: কীভাবে একসঙ্গে ক্লোরেলা এবং রোটিফারের চাষ করবেন?

ছুটির দিনের ঝকঝকে সকাল, শীতের অলস দুপুর, বৃষ্টিভেজা বিকেল, কালবৈশাখীর সন্ধ্যে অথবা চাঁদনী রাত, এমন কি দীর্ঘ কোনও যাত্রাপথ—যে কোনও পরিস্থিতিতে সেই সব সুর মাদকতায় ভরিয়ে রাখে আমাদের। যে কোনও অনুভূতি অথবা পারিপার্শ্বিকতা পঞ্চমের কোনও এক বা একাধিক সুর আপনি ঠিক পেয়ে যাবেন। এই হল পঞ্চমের মেলোডি ম্যাজিক। তাই তাঁর সৃষ্টি আজও প্রাসঙ্গিক। আমার বিশ্বাস তেমনটি থেকে যাবে আগামীতেও।—চলবে।
* পঞ্চমে মেলোডি (R D Burman): সৌম্য ভৌমিক, (Shoummo Bhoumik) সঙ্গীত শিল্পী।

Skip to content