অলঙ্করণ: লেখক।
অক্টোবর মাসের দ্বিতীয় বেস্পতিবার ‘ওয়ার্ল্ড সাইট ডে’ পালন করা হয়। সাইড দে বলে একে এড়িয়ে গেলে চলবে না। বিশ্বজুড়ে অন্ধত্ব নিবারণ এর মূল উদ্দেশ্য, তবে অন্য কিছু বিধেয় নিয়ে ভাবা যেতে পারে। এমনিতে দেখা, না দেখা, দেখার ভান, নজর দেওয়া, দেখেও না দেখা, না দেখেও দেখেছি বলে দাবি ইত্যাদি বিশেষ ঘোরালো ব্যাপার। ওসবে আমরা নেই। আমরা দেখি, শুনি, জানি এটুকুই। চোখ এড়িয়ে যাওয়া, ঠিক সময়ে না দেখা এ সব আমাদের আত্মস্থ।
চোখের আলোয় চোখের বাইরে গিয়ে দেখা বলতে…আমাদের হাতের দূরবীন, কিংবা হোমসের আতস কাচ। আরেকটু বেশি হলে মাইক্রোস্কোপ। কোনও কোনও মাথার পিছনেও চোখ, কোনও কোনও চোখের মাথা… খেয়ে আলু আর আলুবোখরা কী তাল-তিল এক হয়ে যায়!! দেখা নিয়ে এইসব সাতকাহন যে একালের এমন নয়, বরং মহাভারতীয় বা ধৃতরাষ্ট্রীয় বলা চলে। বেদে খ্যাতনামা দেবতারা কেউ সহস্রচক্ষু, কেউ চারচক্ষু।না না, চারটে চোখ নয়, চরের মাধ্যমে দেখা, রাজ্য চালাতে কাজে লাগে খুব, আজকের শ্রীশ্রী সিসি ক্যাম।
আরও পড়ুন:
হুঁকোমুখোর চিত্রকলা, পর্ব-২০: অক্টোবর মাসের ষোলো, কী হল! কী হল?
এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-২০: সুন্দরবনের বসন্ত রোগ নিরাময়কারী দেবী শীতলা
যাইহোক, দর্শন বলবে, চোখের ওপারেও যে শক্তি আছে, সেটিই ইন্দ্রিয়। দর্শনেন্দ্রিয়। তবে, দেখেও না দেখার যে বিপুল ঐতিহ্য সেই নেত্ররোগ সারানোর কোনও মায়াকাজল আছে? তবে দেখে না দেখার মধ্যে অনেক অনেক সুবিধা। এতে সমাধি অবলম্বন করে বেশ নিশ্চিন্ত থাকা যায়। আরে, অতো জটিল করে ভাববেন না একদম। কালিদাস যতোই বলুন, “শরীরমাদ্যং খলু ধর্মসাধনম্” ইত্যাদি, কিন্তু মুনি ঋষি হতে গেলে তপস্যা দরকার। আর তপস্যায়, শরীরের কথা ভাবলে চলে না।
গরমকালে গরম আর শীতকালে শীত হবে, তার ভয়ে তপস্যা বাদ দিলে চলে না। নিজের ব্যাপারে চোখ বুজে থাকার মাহাত্ম্য আর কিছুতে নেই। নিজের ব্যাপারে নিরাসক্ত থেকে অন্যের শোওয়া বসা এমনকী হাঁচিটা পর্যন্ত গুণে রাখার কৃতিত্ব যাঁরা দেখান, তাঁরাই এজগতের পরম হিতৈষী ও ধীমান, এ বিষয়ে সন্দিহান ব্যক্তি যাদুঘরের উপযুক্ত, শিব্রাম যাকে “মামির বাড়ি” বলেছিলেন।
আরও পড়ুন:
লাইট সাউন্ড ক্যামেরা অ্যাকশন, পর্ব-৮: ইতালিয়ান নিওরিয়ালিজম এবং ডি সিকার বাইসাইকেল থিভস
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৪২: নিজেকে যিনি আড়ালে রেখেছিলেন
কেউ কেউ কানে দেখেন শোনা যায়। অথচ প্রকৃতির নিয়ম তা নয়। দৃশ্য জগতের রূপ থেকে অরূপের দিকে, অন্ধকারের ওপারে “তমসঃ পরস্তাত্” যাওয়ার কথা বলা হয়। জগতের চক্ষু সূর্য, শাস্ত্রচক্ষু মানুষ, জ্ঞানাঞ্জনশলাকায় চক্ষুর উন্মীলক গুরু, ইন্দ্রিয় থেকে জ্ঞানচক্ষু… চোখের পাড়ি চোখের ওপারেও। জগত্-জুড়ে যাঁরা চক্ষুষ্মান, যাঁরা স্নেহান্ধ বা ক্রোধান্ধ কী মোহান্ধ, তাঁদের সেই পুঞ্জীভূত তমিস্রার নিরঞ্জন ঘটুক, এই আলোকপক্ষে।—চলবে।
* হুঁকোমুখোর চিত্রকলা : লেখক: ড. অভিষেক ঘোষ (Abhishek Ghosh) সহকারী অধ্যাপক, বাগনান কলেজ। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগ থেকে স্নাতকস্তরে স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত। স্নাতকোত্তরের পর ইউজিসি নেট জুনিয়র এবং সিনিয়র রিসার্চ ফেলোশিপ পেয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগে সাড়ে তিন বছর পূর্ণসময়ের গবেষক হিসাবে যুক্ত ছিলেন। সাম্বপুরাণের সূর্য-সৌরধর্ম নিয়ে গবেষণা করে পিএইচ. ডি ডিগ্রি লাভ করেন। আগ্রহের বিষয় ভারতবিদ্যা, পুরাণসাহিত্য, সৌরধর্ম, অভিলেখ, লিপিবিদ্যা, প্রাচ্যদর্শন, সাহিত্যতত্ত্ব, চিত্রকলা, বাংলার ধ্রুপদী ও আধুনিক সাহিত্যসম্ভার। মৌলিক রসসিক্ত লেখালেখি মূলত: ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে। গবেষণামূলক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়ে চলেছে বিভিন্ন জার্নাল ও সম্পাদিত গ্রন্থে। সাম্প্রতিক অতীতে ডিজিটাল আর্ট প্রদর্শিত হয়েছে আর্ট গ্যালারিতে, বিদেশেও নির্বাচিত হয়েছেন অনলাইন চিত্রপ্রদর্শনীতে। ফেসবুক পেজ, ইন্সটাগ্রামের মাধ্যমে নিয়মিত দর্শকের কাছে পৌঁছে দেন নিজের চিত্রকলা। এখানে একসঙ্গে হাতে তুলে নিয়েছেন কলম ও তুলি। লিখছেন রম্যরচনা, অলংকরণ করছেন একইসঙ্গে।