স্কেচ: গৌতম চট্টোপাধ্যায়।
দীর্ঘ ডাক্তারি জীবনে কত অভিজ্ঞতারই না সম্মুখীন হতে হয়। কোনও রোগীকে প্রেসক্রিপশনে একটা ওষুধ লিখলাম তিনি দোকানে গিয়ে দেখলেন এক্সপায়ারি আর মাত্র একমাস পর। তিনি ধরেই নিলেন, ওষুধের কার্যকারিতা অনেক কমে গিয়েছে, কাজেই এটায় কোনও উপকার হবে না। আবার ফিরে এলেন আমার কাছে, বললেন, এই দোকানে তো ওষুধটা এক্সপায়ার করে যাচ্ছে, যদি চেঞ্জ করে দেন। আমি রোগীকে দিয়ে সেই ওষুধ দোকান থেকে আনিয়ে রহস্য উদঘাটন করলাম। বললাম, আপনি নিশ্চিন্তে খান। এমনকি এক্সপায়ার করার পরেও আরও এক বছর খেয়ে যেতে পারেন। রোগী শুনে চোখ কপালে তুললেন!
এক্সপায়ারি ডেট অর্থাৎ ওষুধের মৃত্যুদিন অর্থাৎ সেই নির্দিষ্ট ডেটের পরে ওষুধ আর কোনওভাবেই কাজ করবে না, এমনকি দেহের ক্ষতিসাধনও করতে পারে। এমনটাই ভাবেন সবাই। একটা উন্নত মানের তরতাজা ওষুধ এক্সপায়ারি ডেটের এক মিনিট পরেই কি করে অব্যবহারযোগ্য হয়ে যায়, কে জানে! এমনকি ম্যাজিকাল কেমিক্যাল পরিবর্তন হয় তার মধ্যে!
আরও পড়ুন:
এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-৪২: অ্যান্টিবায়োটিক খেলেই গন্ডগোল?
কলকাতার পথ-হেঁশেল, পর্ব-১১: আমার নাম, তোমার নাম— তুং নাম, তুং নাম!
আসলে এই সবকিছুই বহুজাতিক ওষুধ কোম্পানিগুলোর সূচতুর ব্যবসায়িক চাল। কখনও দেখেছেন, ওষুধের বোতলে বা স্ট্রিপে এমন কথা লেখা থাকে, এক্সপায়ারি ডেট অফ দিস ড্রাগ… অর্থাৎ এই ওষুধটি এই তারিখের পর মৃত ঘোষিত হবে। কখনওই থাকে না। আসলে এই তারিখটি হল, ওই ওষুধটির লাইসেন্সের মেয়াদের শেষ দিন।
আরও পড়ুন:
এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-১৯: সুন্দরবনের জঙ্গল-জননী বিশালাক্ষী
ইতিহাস কথা কও, পর্ব-১৫: দেবদেউল কথা ও গোসানিমারি কামতেশ্বরী মন্দির
এক্সপায়ারি ডেট অফ লাইসেন্স ফর মার্কেটিং দি পার্টিকুলার প্রোডাক্ট..। শুনে আশ্চর্য হবেন, আমেরিকার ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বলেছেন, ওষুধের যদি কোনও বিকৃতি না ঘটে, তাহলে এক্সপায়ারি ডেটের পরেও অন্তত পাঁচ বছর নিশ্চিন্তে ওষুধটি খাওয়া চলে।
আপনি কি করে বুঝবেন, ওষুধটি নষ্ট হয়েছে কিনা! যে কোনও ওষুধ খাবার আগে একটু ভালো করে দেখে নেবেন, সেগুলোতে কোনও ছত্রাক বা ফাঙ্গাস জন্মেছে কিনা, তরল ওষুধের রঙের পরিবর্তন হয়েছে কিনা, কিছু ভাসছে কিনা, ক্যাপসুল বা ট্যাবলেট নরম হয়ে গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে গিয়েছে কিনা ইত্যাদি। আর ইনজেকটেবল ওষুধের বেলায় তো অ্যাম্পুলটা চোখের সামনে ধরলেই পরিষ্কার বোঝা যায় কোনও গন্ডগোল আছে কিনা!
আরও পড়ুন:
ঠাকুরবাড়ির বিজয়া, রবীন্দ্রনাথের বিজয়া
শারদীয়ার গল্প-৪: সীমানা ছাড়ায়ে…
বাজে কোয়ালিটির ওষুধ হলে এক্সপায়ারি ডেটের অনেক আগেই এমন হতে পারে। কিন্তু যে কোনও ভালো কোম্পানির ভালো কোয়ালিটির ওষুধ এক্সপায়ারি ডেটের পরেও দীর্ঘদিন অবিকৃত থাকে। আমি নিজের জীবনে বহুবার এক্সপায়ারি ডেটের এক দু’মাস পরের ওষুধও খেয়েছি। আমার তো কোনও অসুবিধা হয়নি। উল্টে যেমন উপকার পাওয়ার কথা, সেটাই পেয়েছি। শেষ কথা হল, এই ব্যাপারে মনে কোনও প্রশ্ন জাগলে, ওষুধটি নিয়ে সরাসরি আপনার ডাক্তারবাবুর সঙ্গে কথা বলে নেবেন।
যোগাযোগ: ৯৮৩০২১৭৯২৮
যোগাযোগ: ৯৮৩০২১৭৯২৮
* এগুলো কিন্তু ঠিক নয় (Health Tips): ডাঃ অমিতাভ ভট্টাচার্য (Amitava Bhattacharrya), বিশিষ্ট স্বাস্থ্য বিজ্ঞান লেখক। পেশায় কান নাক গলা (ক্যানসার) বিশেষজ্ঞ হলেও মানুষটি আদতে ভীষণ আড্ডাবাজ এবং নাটক প্রাণ। এ পর্যন্ত ছোট বড় মিলিয়ে শতাধিক নাটক লিখেছেন। পরিচালনা করেছেন ৩০টিরও বেশি নাটক। দূরদর্শন এবং আকাশবাণীর অভিনয় পুরস্কার পেয়েছেন। বেলঘরিয়া থিয়েটার আকাডেমি নামে নিজে একটি নাটকের দল পরিচালনা করেন। দে’জ পাবলিশিং থেকে এ পর্যন্ত প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৫২। নানা সামাজিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে রাখেন বছর ভর।