পরিচালকটি তখন থাকেন দক্ষিণ কলকাতার এক মেস বাড়িতে। চক্রবেড়িয়ার সেই মেসে থাকাকালীন তিনি সেখানে কিছু বিচিত্র স্বভাবধারী লোকজনদের সঙ্গে পরিচিত হতে পেরেছিলেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ বারান্দায় এসে নাক ঝাড়তেন। তো কেউ কেউ কথায় কথায় ‘বোম কালি’ বলে হেঁকে উঠতেন।
এমপি প্রোডাকশনসের ব্যানারে মুরলিধর চট্টোপাধ্যায় যখন এই পরিচালককে বিজন ভট্টাচার্যের একটি গল্প দিয়ে বললেন এর থেকে চিত্রনাট্য দাঁড় করিয়ে ছবি করতে, তখন সেই ছবিতে অর্থাৎ যে মেসবাড়ি সেটি তিনি যে মেসবাড়িতে ছিলেন সেই ছবিটি ফুটে উঠল। এমপি স্টুডিওতে যে অন্নপূর্ণা বোর্ডিং হাউজের সেট বানানো হয়েছিল সেটাও ওই মেসবাড়ির আদলেই তৈরি হয়েছিল।
আরও পড়ুন:
পর্দার আড়ালে, পর্ব-৪২: গুণমুগ্ধ দিলীপ কুমার তাঁর ছবিতে বিনা পরিশ্রমিকেই অভিনয় প্রস্তাব দিয়েছিলেন
হুঁকোমুখোর চিত্রকলা, পর্ব-১৯: হিমসিম খাও কেন এসো বোসো আহা রে! / খাওয়াব এমন খাওয়া এগ কয় যাহারে
সুরকার অনিল বিশ্বাস কলকাতা এসে উঠতেন ওই পরিচালকের কাছে। সেই সময় অনেক উঠতি গায়কদের আনাগোনা লেগেই ছিল এই পরিচালকের কাছে। মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায় প্রতি রবিবার সেই পরিচালকের দুই মেয়েকে গান শেখাতেন। শুটিং এর সময় আরও অভিনেতার দরকার পড়লে তাঁদের সকলকেই ছবিতে নেওয়া হয়। সেই যুগের সব তাবড় তাবড় কৌতুক অভিনেতাদের পাশাপাশি অভিনয় করলেন তিন গায়ক শ্যামল মিত্র মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায় ও সনৎ সিংহ। উত্তম কুমার এবং সুচিত্রা সেন জুটির সূত্রপাত কিন্তু ঘটল ওই ছবিকে কেন্দ্র করে।
আরও পড়ুন:
রিভিউ: ২০০ কোটি টাকার চোখ-ধাঁধানো দক্ষিণী অ্যাকশন ছবি ‘থুনিবু’
পঞ্চমে মেলোডি, পর্ব-৩২: শুধু কি গানে, আবহসঙ্গীতেও তাঁর কাজ অসামান্য
যে ছবির কথা বলছি সে ছবির নাম ‘সাড়ে চুয়াত্তর’, আর পরিচালকের নাম হল নির্মল দে। ছবি তো বাম্পার হিট এবং ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখের সংলাপ ‘মাসীমা মালপোয়া খামু’ তো সকলের মুখে মুখে ফিরল। জনপ্রিয়তায় এই ছবি সবাইকে যেন হার মানিয়ে দিল অনায়াসে। এই ছবিতে বিরাট স্টার কাস্টিং। উত্তম কুমার এবং সুচিত্রা সেন তো আছেনই। কিন্তু প্রধান দুটি ভূমিকায় অভিনয় করলেন তুলসী চক্রবর্তী ও মলিনা দেবী। এঁদের পাশাপাশি ছিলেন ভানু বন্দোপাধ্যায়, জহর রায়, অজিত চট্টোপাধ্যায়, নবদ্বীপ হালদার, শ্যাম লাহা, গুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, পদ্মা দেবী, পঞ্চানন ভট্টাচার্য, হরিধন মুখোপাধ্যায়-সহ বহু শিল্পী।
নির্মল দের হাতে ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ ছাড়াও আমরা আরও যে দুটি সাড়া জাগানো ছবি পেয়েছিলাম তার একটি হল ‘বসু পরিবার’ এবং অপরটি হল ‘চাপাডাঙ্গার বউ’। নির্মল দের প্রশংসা করতে গিয়ে সত্যজিৎ রায় একটি কথা বলেছিলেন, “আজকের দিনে বাংলা ছবিকে যদি হিন্দির সঙ্গে সংগ্রাম করে বেঁচে থাকতে হয় তাহলে এই জাতের অনেক ছবি হওয়া দরকার। শুধু আর্ট করে ইন্ডাস্ট্রি বাঁচবে না। আর বম্বাইয়ের অনুসরণ করতে গেলে বাংলা ছবির হবে না এদিক না ওদিক। নির্মল দের মতো কাজ জানা লোক আজ আর কজন আছে সেটা একটা প্রশ্ন বটে।
* পর্দার আড়ালে (Behind the scenes) : ড. শঙ্কর ঘোষ (Shankar Ghosh) বিশিষ্ট অধ্যাপক ও অভিনেতা।