আশা ও পঞ্চম। ছবি: সংগৃহীত।
পঞ্চমকে এতদিনে কর্মসূত্রে কিশোর, আশা এবং লতা মঙ্গেশকরের সঙ্গে বহুবার মিলিত হতে হয়েছে। সে গান সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনারকারণেই হোক অথবা রিহার্সাল কিংবা রেকর্ডিং এর কারণে। কিশোরের কথা তো বলাই বাহুল্য। পঞ্চমের কিন্তু এতদিনে বাকি দুজন, অর্থাৎ আশা এবং লতার সঙ্গেও একটি বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। তাই কাজের গণ্ডির বাইরেও এঁরা মাঝেমধ্যেই মিলিত হতেন। কখনও নিজেদের বাড়িতে, কখনও বা চায়ের আসরে। আবার কখনও বা নির্ভেজাল আড্ডায়। বয়েসের নিরিখে লতা পঞ্চমের থেকে অনেকটাই বড়। তাই তাঁকে পঞ্চম ‘লতা দিদি’ বলে সম্বোধন করতেন।
লতার প্রতি তাঁর শ্রদ্ধা ছিল অগাধ। তাই লতার জন্য কোনও গানে সুর প্রদান করার সময় সবসময় মাথায় রাখতেন লতার ব্যক্তিত্বের বিষয়টি। সিরিয়াস অথবা রাগ ভিত্তিক কোনও গানের ক্ষেত্রে পঞ্চমের প্রথমেই মনে পড়ত তাঁর লতাদিদির কথা। শুধু তাই নয়, যদি তিনি বুঝতেন গানের দৃশ্যে নায়িকাকে একটু সংযতভাবে দেখানো হবে, কিংবা নায়িকার প্রাণোচ্ছলতা অথবা দুষ্টুমিকে অনেকাংশে সংযত করে দেখাতে চাইছেন নির্দেশক, বেশিরভাগই সেই সব ক্ষেত্রে পঞ্চম বেছে নিতেন লতা মঙ্গেশকরকে। কিন্তু আশা ভোঁসলের ক্ষেত্রে তিনি সেই গণ্ডি অতিক্রম করতেন স্বচ্ছন্দে। রাগভিত্তিক গানই হোক অথবা দুষ্টুমিষ্টি কোনও ক্যাবারে ভিত্তিক গান সব ক্ষেত্রেই পঞ্চমের পছন্দ ছিলেন আশা। অনেক ক্ষেত্রে সিরিয়াস কিছু গানেও আশাকে বেছে নিয়েছিলেন পঞ্চম, হয়তো দৃশ্যের দাবি মেনে।
কিছু উদাহরণ হয়তো উপরোক্ত কথাগুলির সত্যতা বহন করে। যেমন ‘ছোটে নওয়াব’ ছবির ‘ঘর আজ ঘির আই’, ‘বাহারো কে স্বপ্নে’ ছবির ‘কেয়া জানু সাজান’, ‘অভিলাষা’ ছবির ‘ওয়াদিয়া মেরা দমন’, ‘কটি পতঙ্গ’ ছবির ‘না কই উমাং হ্যায়’, ‘দা ট্রেন’ ছবির ‘কিস লিয়ে ম্যায়নে প্যায়ার কিয়া’, ‘অমর প্রেম’ ছবির ‘রয়না বিত যায়ে’, ‘সীতা আউর গীতা’ ছবির ‘কই লড়কি মুঝে কাল রাত’ প্রভৃতি গানে পঞ্চম বেছে নিয়েছিলেন লতাকে। কিন্তু অন্য দিকে খেয়াল করে দেখুন ‘তিসরি মঞ্জিল’ ছবির ‘আজা আজা ম্যায় হুঁ প্যায়ার তেরা’, ‘ও হাসিনা জুলফো ওয়ালি জানে জাঁহা ‘, ‘ও মেরে সোনারে’, ‘কটি পতঙ্গ’ ছবির ‘মেরা নাম হ্যায় শবনম’, ‘দা ট্রেন’ ছবির ‘ও মেরি যান ম্যায়নে কাহা’, ‘পারায়া ধন’ ছবির ‘আশা গেই ঊষা গেই’, ‘ক্যারাভ্যান’ ছবির ‘পিয়া তু আব তো আজা’ প্রভৃতি গানে পঞ্চমের প্রথম পছন্দই ছিল আশা। বহু ক্ষেত্রে এমনও হয়েছে, একই ছবিতে পঞ্চম লতা-আশা দু’জনকে দিয়েই গাইয়েছেন। এই সিদ্ধান্ত নির্ভর করেছে গানের ধরন, দৃশ্য এবং গানের ‘মুড’-এর উপর। কোনও ডুয়েট গানে পুরুষকণ্ঠ যদি হয় কিশোরের, তবে নারীকণ্ঠটি কার হবে, অর্থাৎ লতার না আশার, সেটিও নির্ভর করত উপরোক্ত স্থিতিমাপগুলির উপর।
লতার প্রতি তাঁর শ্রদ্ধা ছিল অগাধ। তাই লতার জন্য কোনও গানে সুর প্রদান করার সময় সবসময় মাথায় রাখতেন লতার ব্যক্তিত্বের বিষয়টি। সিরিয়াস অথবা রাগ ভিত্তিক কোনও গানের ক্ষেত্রে পঞ্চমের প্রথমেই মনে পড়ত তাঁর লতাদিদির কথা। শুধু তাই নয়, যদি তিনি বুঝতেন গানের দৃশ্যে নায়িকাকে একটু সংযতভাবে দেখানো হবে, কিংবা নায়িকার প্রাণোচ্ছলতা অথবা দুষ্টুমিকে অনেকাংশে সংযত করে দেখাতে চাইছেন নির্দেশক, বেশিরভাগই সেই সব ক্ষেত্রে পঞ্চম বেছে নিতেন লতা মঙ্গেশকরকে। কিন্তু আশা ভোঁসলের ক্ষেত্রে তিনি সেই গণ্ডি অতিক্রম করতেন স্বচ্ছন্দে। রাগভিত্তিক গানই হোক অথবা দুষ্টুমিষ্টি কোনও ক্যাবারে ভিত্তিক গান সব ক্ষেত্রেই পঞ্চমের পছন্দ ছিলেন আশা। অনেক ক্ষেত্রে সিরিয়াস কিছু গানেও আশাকে বেছে নিয়েছিলেন পঞ্চম, হয়তো দৃশ্যের দাবি মেনে।
কিছু উদাহরণ হয়তো উপরোক্ত কথাগুলির সত্যতা বহন করে। যেমন ‘ছোটে নওয়াব’ ছবির ‘ঘর আজ ঘির আই’, ‘বাহারো কে স্বপ্নে’ ছবির ‘কেয়া জানু সাজান’, ‘অভিলাষা’ ছবির ‘ওয়াদিয়া মেরা দমন’, ‘কটি পতঙ্গ’ ছবির ‘না কই উমাং হ্যায়’, ‘দা ট্রেন’ ছবির ‘কিস লিয়ে ম্যায়নে প্যায়ার কিয়া’, ‘অমর প্রেম’ ছবির ‘রয়না বিত যায়ে’, ‘সীতা আউর গীতা’ ছবির ‘কই লড়কি মুঝে কাল রাত’ প্রভৃতি গানে পঞ্চম বেছে নিয়েছিলেন লতাকে। কিন্তু অন্য দিকে খেয়াল করে দেখুন ‘তিসরি মঞ্জিল’ ছবির ‘আজা আজা ম্যায় হুঁ প্যায়ার তেরা’, ‘ও হাসিনা জুলফো ওয়ালি জানে জাঁহা ‘, ‘ও মেরে সোনারে’, ‘কটি পতঙ্গ’ ছবির ‘মেরা নাম হ্যায় শবনম’, ‘দা ট্রেন’ ছবির ‘ও মেরি যান ম্যায়নে কাহা’, ‘পারায়া ধন’ ছবির ‘আশা গেই ঊষা গেই’, ‘ক্যারাভ্যান’ ছবির ‘পিয়া তু আব তো আজা’ প্রভৃতি গানে পঞ্চমের প্রথম পছন্দই ছিল আশা। বহু ক্ষেত্রে এমনও হয়েছে, একই ছবিতে পঞ্চম লতা-আশা দু’জনকে দিয়েই গাইয়েছেন। এই সিদ্ধান্ত নির্ভর করেছে গানের ধরন, দৃশ্য এবং গানের ‘মুড’-এর উপর। কোনও ডুয়েট গানে পুরুষকণ্ঠ যদি হয় কিশোরের, তবে নারীকণ্ঠটি কার হবে, অর্থাৎ লতার না আশার, সেটিও নির্ভর করত উপরোক্ত স্থিতিমাপগুলির উপর।
লতা এবং আশার নিজস্ব গায়কী, সব সময়ই সচেতন ভাবে কাজে লাগাতেন পঞ্চম। গানের বিষয়বস্তু, প্রবাহ, দৃশ্য, গভীরতা এই সবকিছুকে মাথায় রেখে নির্বাচন করতেন গায়িকাকে। অর্থাৎ লতা অথবা আশা। এই করতে গিয়ে আশার সঙ্গে পঞ্চমের বন্ধুত্বের যে সম্পর্ক তৈরি হয় সেটি ধীরে ধীরে গাঢ় হয়ে উঠতে থাকে। পঞ্চম ও আশার তালমিল ছিল সন্দেহাতীত। পঞ্চম যেন আশাকণ্ঠকে নিয়ে একের পর এক গবেষণা করে যেতেন। এ ক্ষেত্রে পূর্ণ সহযোগিতা পেতেন আশার কাছ থেকেও। দু’ জনে একসঙ্গে বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা নতুন কিছু জন্ম দেওয়ার নেশায় মেতে থাকতেন। উদ্যোক্তা অবশ্যই পঞ্চম। তবু আশাও অনেক ক্ষেত্রে তাঁকে নতুন নতুন ধারণা দিতেন, যখন যেমন তাঁর মনে হতো। ফলস্বরূপ, দু’ জনের বোঝাপড়া কোথাও গিয়ে মিলে যেত। একে অপরের সঙ্গে সুর সঙ্গীত সংক্রান্ত বিষয়ে খোলা মনে কথা বলতে পারতেন। ‘এক্সচেঞ্জ অব আইডিয়া’ বলতে যা বোঝায়, সেটি ছিল উচ্চ পর্যায়ের। আর তাই তাঁদের বন্ধুত্বের সম্পর্কও গাঢ় থেকে গাঢ়তর হয়ে উঠছিল দিনের পর দিন।
সাল ১৯৭৮। ‘ফান্দেবাজ’ ছবিতে কিশোরকে দিয়ে পঞ্চম গাওয়ান ‘দুলহান খুবসুরত হ্যায়’ এবং আশাকে দিয়ে গাওয়ান ‘তেরা দিমাগ আউর মেরা সাবাব’। প্রথম গানটিতে আবার কিশোরের সেই মনমাতানো কণ্ঠাভিনয়। এ ক্ষেত্রে যেন সেটি আরও বেশি মাত্রায় কানে ধরা দেয়। দ্বিতীয় গানটি খুব সঙ্গত কারণেই আশাকে দিয়ে গাওয়ান পঞ্চম। গানের ধরন এবং প্রবাহ যেনও আশাকেই চাইছিল। শুনলেই বুঝবেন।
‘চোর হো তো অ্যায়সা’ ছবির ‘গুসসে মে তানকে চল’ গানটির ক্ষেত্রে আবারও সেই আশা। কারণ দুটি। প্রথমত গানটির প্রবাহ এবং দ্বিতীয়ত হল নায়িকার খুনসুটি। তাই পঞ্চমের আশাকেই চাই। ঠিক একই কারণে আশাকে দিয়ে গাওয়ানো হয় এই ছবিরই ‘পিয়া আগর অভি না’ গানটি। শুনলে আপনারা ঠিক ধরতে পারবেন।
সাল ১৯৭৮। ‘ফান্দেবাজ’ ছবিতে কিশোরকে দিয়ে পঞ্চম গাওয়ান ‘দুলহান খুবসুরত হ্যায়’ এবং আশাকে দিয়ে গাওয়ান ‘তেরা দিমাগ আউর মেরা সাবাব’। প্রথম গানটিতে আবার কিশোরের সেই মনমাতানো কণ্ঠাভিনয়। এ ক্ষেত্রে যেন সেটি আরও বেশি মাত্রায় কানে ধরা দেয়। দ্বিতীয় গানটি খুব সঙ্গত কারণেই আশাকে দিয়ে গাওয়ান পঞ্চম। গানের ধরন এবং প্রবাহ যেনও আশাকেই চাইছিল। শুনলেই বুঝবেন।
‘চোর হো তো অ্যায়সা’ ছবির ‘গুসসে মে তানকে চল’ গানটির ক্ষেত্রে আবারও সেই আশা। কারণ দুটি। প্রথমত গানটির প্রবাহ এবং দ্বিতীয়ত হল নায়িকার খুনসুটি। তাই পঞ্চমের আশাকেই চাই। ঠিক একই কারণে আশাকে দিয়ে গাওয়ানো হয় এই ছবিরই ‘পিয়া আগর অভি না’ গানটি। শুনলে আপনারা ঠিক ধরতে পারবেন।
আরও পড়ুন:
পঞ্চমে মেলোডি, পর্ব-২০: পঞ্চমের সুর আর কিশোর-আশার অনবদ্য উপস্থাপনা, ‘এক ম্যায় অউর এক তু’ গানটি আজও সুপারহিট
লাইট সাউন্ড ক্যামেরা অ্যাকশন, পর্ব-৭: গোদারের ব্রেথলেস ও প্যারিসের শঁসেলিজে
‘ঘর’ ছবির গানগুলিকেএকটু বিশ্লেষণ করলেই বোঝা যাবে, আর ডির গান অনুযায়ী গায়ক-গায়িকা নির্বাচন করার কারণটি। ‘আজকাল পাও জমি পর নেহি পড়তে’ গানটি গেয়েছেন কিশোর এবং লতা। কারণ দৃশ্যে নায়িকা অত্যন্ত ধীরস্থিরভাবে লিপ দিচ্ছেন। ঠিক একই কারণে ‘তেরে বিনা জিয়া যায়ে না’ এবং ‘আপকি আঁখো মে কুছ’ গান দুটির ক্ষেত্রে লতাকে পছন্দ করেন পঞ্চম। কিন্তু ‘বোতল সে এক বাত চলি হ্যায়’ গানটির জন্য রফি সাহেবের সঙ্গে ডুয়েট গাওয়ানো হয় আশাকে। কারণ দৃশ্যে নায়িকার দুষ্টুমিষ্টি আচরণ এবং চঞ্চলতাকে তিনি মাথায় রেখেছিলেন। আর ‘ফির ওহি রাত হ্যায়’ গানটি? কিশোরকণ্ঠ এ ক্ষেত্রে যেন একটি লাইট হাউসের মতো। গানটি এমন একটি সুর এবং কণ্ঠের মেল বন্ধন যে, শত কোলাহলের মাঝেও যদি দূর থেকে গানটি ভেসে আসে, আমরা চারপাশের সব ‘ক্যাকোফোনি’ উপেক্ষা করে গানটির প্রতিই আকৃষ্ট হই। কিশোর কণ্ঠের সঙ্গে গলা মেলাতে শুরু করি নিজেদের অজান্তে। আর নেপথ্যে হয়তো সাফল্যের হাসি হাসেন পঞ্চম। আজও। তাই ‘পঞ্চম্যানিয়া’ অথবা ‘পঞ্চম্যাজিক’ শব্দগুলি অভিধানস্বীকৃত না হলেও তাঁর ক্ষেত্রে নির্দ্বিধায় ব্যবহার করা যায়।
‘কাসমে ওয়াদে’ ছবিতে গুলশন বাওড়ার লেখায় সুর দেন পঞ্চম। ‘আতে রহেঙ্গে বাহারে’ গানটিতে কণ্ঠদান করেন আশা, কিশোর এবং কিশোর-পুত্র অমিত কুমার। গানটির মেলোডির কথাটি একবার ভাবুন! এই ত্রয়ীর কণ্ঠে গানের রূপ যেন কয়েকগুণ বেড়ে গিয়েছে। এ ক্ষেত্রে পঞ্চম একটু ব্যতিক্রমী। কেন? কারণ গানটির দৃশ্যে নায়িকা রাখি খুব সংযত। তবুও আশাকে দিয়েই গানটি গাওয়ানো হয়েছে। কিন্তু ‘গুমসুম কিউ হ্যায় সনম’ গানটি আশা গেয়েছেন নায়িকার খুনসুটিকে তুলে ধরতে। এ ক্ষেত্রেও যে মেলোডি আমাদের মাতিয়ে রাখে তার জন্য সবটুকু কৃতিত্বই আরডি-র। সেই সঙ্গে লক্ষ্য করুন, ‘কাসমে ওয়াদে নিভায়েঙ্গে হাম’ গানটিতে কিশোরের সঙ্গে গেয়েছেন লতা। কেন? আমি জানি, আপনারা কারণটি এতক্ষণে ধরে ফেলেছেন। পুরো গানটি জুড়েই নায়িকা যে অখুবই সংযত! তাঁর মধ্যে কোনও উচ্ছলতা চোখে পড়ে না। নায়িকা যেন খুব শান্ত। তাই তো এ ক্ষেত্রে পঞ্চমের চাই তাঁর লতাদিদির জাদু।
খুব সহজ সরল একটি মেলোডির সঙ্গে মিলেমিশে যাওয়া একটি মজার প্রেমের গানের রসাস্বাদন করতে চান? তাহলে শুনে নিন আশা-কিশোরের গাওয়া ‘হীরালাল পান্নালাল’ ছবির ‘ঢল গেই রং মে তেরে’ গানটি। সঙ্গে উপরি পাওনা গায়ক-গায়িকার কণ্ঠাভিনয়। একদম দেশজ বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করে জন্ম দেওয়া হয়েছে এই গানটির। কারণ নায়ক-নায়িকা দু’ জনেই দেশজ বেশভূষায় আবৃত। কত খুঁটিনাটি বিষয় মাথায় রেখেই না সুর রচনা করতেন পঞ্চম! ভাবলে সত্যিই অবাক হতে হয়।
‘কাসমে ওয়াদে’ ছবিতে গুলশন বাওড়ার লেখায় সুর দেন পঞ্চম। ‘আতে রহেঙ্গে বাহারে’ গানটিতে কণ্ঠদান করেন আশা, কিশোর এবং কিশোর-পুত্র অমিত কুমার। গানটির মেলোডির কথাটি একবার ভাবুন! এই ত্রয়ীর কণ্ঠে গানের রূপ যেন কয়েকগুণ বেড়ে গিয়েছে। এ ক্ষেত্রে পঞ্চম একটু ব্যতিক্রমী। কেন? কারণ গানটির দৃশ্যে নায়িকা রাখি খুব সংযত। তবুও আশাকে দিয়েই গানটি গাওয়ানো হয়েছে। কিন্তু ‘গুমসুম কিউ হ্যায় সনম’ গানটি আশা গেয়েছেন নায়িকার খুনসুটিকে তুলে ধরতে। এ ক্ষেত্রেও যে মেলোডি আমাদের মাতিয়ে রাখে তার জন্য সবটুকু কৃতিত্বই আরডি-র। সেই সঙ্গে লক্ষ্য করুন, ‘কাসমে ওয়াদে নিভায়েঙ্গে হাম’ গানটিতে কিশোরের সঙ্গে গেয়েছেন লতা। কেন? আমি জানি, আপনারা কারণটি এতক্ষণে ধরে ফেলেছেন। পুরো গানটি জুড়েই নায়িকা যে অখুবই সংযত! তাঁর মধ্যে কোনও উচ্ছলতা চোখে পড়ে না। নায়িকা যেন খুব শান্ত। তাই তো এ ক্ষেত্রে পঞ্চমের চাই তাঁর লতাদিদির জাদু।
খুব সহজ সরল একটি মেলোডির সঙ্গে মিলেমিশে যাওয়া একটি মজার প্রেমের গানের রসাস্বাদন করতে চান? তাহলে শুনে নিন আশা-কিশোরের গাওয়া ‘হীরালাল পান্নালাল’ ছবির ‘ঢল গেই রং মে তেরে’ গানটি। সঙ্গে উপরি পাওনা গায়ক-গায়িকার কণ্ঠাভিনয়। একদম দেশজ বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করে জন্ম দেওয়া হয়েছে এই গানটির। কারণ নায়ক-নায়িকা দু’ জনেই দেশজ বেশভূষায় আবৃত। কত খুঁটিনাটি বিষয় মাথায় রেখেই না সুর রচনা করতেন পঞ্চম! ভাবলে সত্যিই অবাক হতে হয়।
আরও পড়ুন:
এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৬: নাম দিয়ে যায় চেনা
ইতিহাস কথা কও, কোচবিহারের রাজকাহিনি, পর্ব-২: রাজাদের স্থাপত্য-কীর্তি ও রাজধানী
‘ভোলা ভালা’ ছবির ‘ঝুক গেই আঁখে’ গানটি শুনে দেখবেন। সুরের কথা নাই বা বললাম। মৌসুমী-রাজেশ খান্নার লিপে লতা-কিশোর যেন অনবদ্য। নায়ক যখন কাকা (রাজেশ খান্না) তখন কিশোরের উপস্থাপনা তো কিঞ্চিৎ ভিন্ন হতে বাধ্য। আর প্রায় পুরো গানটিতেই ছন্দ ধরে রাখার কাজটি করে গিয়েছে আকস্টিক স্প্যানিশ গিটার।
এক অপ্রতিরোধ্য কিশোরকে খুঁজে পাবেন এই ছবিরই একটি গানে। গানটি হল ‘ওয়াক্ত ওয়াক্ত কি বাত হ্যায়’। এক বার হলেও শুনবেন গানটি। অসাধারণ মেলোডি। পরিমিত ছন্দ। সচেতন ভাবে ইনস্ট্রুমেন্টের ব্যবহার। আর আনন্দ বক্সীর অসাধারণ লেখা। বাজি ধরলাম। একটি নম্বরও কাটতে মন চাইবে না আপনাদের।
‘দেবতা’ ছবির গুলজার রচিত ‘চাঁদ চুরাকে লায়া হুন’ গানটিতে মাইনর স্কেলে যে সুরটি প্রদান করেন পঞ্চম সেটি যেন আজও সবার কানে বাজে। লতা-কিশোরের দ্বৈত কণ্ঠে গানটির উপস্থাপনা এক কথায় অভিনব। শুধু কি তাই? কাঞ্চার মাদলের তালে আমরাও যেন তাল দিতে শুরু করে দিই নিজেদের অজান্তে।
‘গুলমোহর গর তুমহারা নাম হোতা’ গানটির কথা ভাবুন! গুলজার সাহেবের লেখায় যেন মনপ্রাণ ঢেলে সুর বসিয়েছেন পঞ্চম। যেন কোনও স্বর্গীয় সুরের সুবাসে ম ম করে গানটি। প্রেলুড কিছুটা দীর্ঘায়িত। ইন্টারলুড সযত্নে সাজানো। এক সুরের বাগিচা। আর লতা-কিশোরের যৌথ উপস্থাপনা গানটির সার্বিক সৌন্দর্যকে বহু মাত্রায় বর্ধিত করে। এই গান চিরনবীন। এই গান অজেয় অমর।
‘নৌকরি’ ছবির ‘ম্যায়নে তুমকো পিয়া কহে দিয়া’ গানটির ছন্দ খেয়াল করলে দেখবেন, অনেকটাই আলাদা। প্রেলুডটিকে গিটারের ছন্দে একটু দ্রুতগতির করে মূল গানের ছন্দের মাত্রা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। গানটিতে ছন্দ ধরে রাখে তবলা। এখানে সেই লতা। কেন? গানের দৃশ্যটি দেখলেই পরিষ্কার হয়ে যাবে।
১৯৭৮ সালের ব্লক বাস্টার ছবি ‘শালিমার’ পঞ্চমের সঙ্গীত জীবনের আরও একটি মাইলস্টোন হিসেবে ধরা হয়। লতাকে দিয়ে গাওয়ানো হয় ‘আয়না ওহি রহেতে হ্যায়’ আর আশাকে দিয়ে গাওয়ানো হয় ‘মেরা পেয়ার শালিমার’ গানটি। ঊষা আইয়ার গান ‘ওয়ান টু চা চা চা’ গানটি। তিনটি গানই ভিন্ন স্বাদের। এ জন্যই তো তিনজন ভিন্ন গায়িকাকে বেছে নেন আরডি। গানের দৃশ্যগুলি একবার দেখলেই বোঝা যায় কেন পঞ্চম এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। ঊষা আইয়ারের ওই গানটিকে ইস্ট-ওয়েস্ট ফিউশন বলা যেতেই পারে। ওই ধরনের একটি গানের মাঝে সেতারের ব্যবহার সত্যিই অভাবনীয়। এখন আমরা ফিউশন শুনে অনেকটাই অভ্যস্ত। কিন্তু সেই সময় শ্রোতাদের কাছে এই গান কতটা গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠবে সে বিষয়ে পঞ্চমের অবশ্য কোনও চিন্তা ছিল না। আজও কোনও প্রাইভেট অথবা অফিস পার্টি চলাকালীন আমাদের কানে আসে এই গানটি। মনোহারী সিং একবার যথার্থই বলেছিলেন, ‘পঞ্চম তাঁর সময়ের থেকে তিরিশ বছর এগিয়ে রয়েছেন’।
এক অপ্রতিরোধ্য কিশোরকে খুঁজে পাবেন এই ছবিরই একটি গানে। গানটি হল ‘ওয়াক্ত ওয়াক্ত কি বাত হ্যায়’। এক বার হলেও শুনবেন গানটি। অসাধারণ মেলোডি। পরিমিত ছন্দ। সচেতন ভাবে ইনস্ট্রুমেন্টের ব্যবহার। আর আনন্দ বক্সীর অসাধারণ লেখা। বাজি ধরলাম। একটি নম্বরও কাটতে মন চাইবে না আপনাদের।
‘দেবতা’ ছবির গুলজার রচিত ‘চাঁদ চুরাকে লায়া হুন’ গানটিতে মাইনর স্কেলে যে সুরটি প্রদান করেন পঞ্চম সেটি যেন আজও সবার কানে বাজে। লতা-কিশোরের দ্বৈত কণ্ঠে গানটির উপস্থাপনা এক কথায় অভিনব। শুধু কি তাই? কাঞ্চার মাদলের তালে আমরাও যেন তাল দিতে শুরু করে দিই নিজেদের অজান্তে।
‘গুলমোহর গর তুমহারা নাম হোতা’ গানটির কথা ভাবুন! গুলজার সাহেবের লেখায় যেন মনপ্রাণ ঢেলে সুর বসিয়েছেন পঞ্চম। যেন কোনও স্বর্গীয় সুরের সুবাসে ম ম করে গানটি। প্রেলুড কিছুটা দীর্ঘায়িত। ইন্টারলুড সযত্নে সাজানো। এক সুরের বাগিচা। আর লতা-কিশোরের যৌথ উপস্থাপনা গানটির সার্বিক সৌন্দর্যকে বহু মাত্রায় বর্ধিত করে। এই গান চিরনবীন। এই গান অজেয় অমর।
‘নৌকরি’ ছবির ‘ম্যায়নে তুমকো পিয়া কহে দিয়া’ গানটির ছন্দ খেয়াল করলে দেখবেন, অনেকটাই আলাদা। প্রেলুডটিকে গিটারের ছন্দে একটু দ্রুতগতির করে মূল গানের ছন্দের মাত্রা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। গানটিতে ছন্দ ধরে রাখে তবলা। এখানে সেই লতা। কেন? গানের দৃশ্যটি দেখলেই পরিষ্কার হয়ে যাবে।
১৯৭৮ সালের ব্লক বাস্টার ছবি ‘শালিমার’ পঞ্চমের সঙ্গীত জীবনের আরও একটি মাইলস্টোন হিসেবে ধরা হয়। লতাকে দিয়ে গাওয়ানো হয় ‘আয়না ওহি রহেতে হ্যায়’ আর আশাকে দিয়ে গাওয়ানো হয় ‘মেরা পেয়ার শালিমার’ গানটি। ঊষা আইয়ার গান ‘ওয়ান টু চা চা চা’ গানটি। তিনটি গানই ভিন্ন স্বাদের। এ জন্যই তো তিনজন ভিন্ন গায়িকাকে বেছে নেন আরডি। গানের দৃশ্যগুলি একবার দেখলেই বোঝা যায় কেন পঞ্চম এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। ঊষা আইয়ারের ওই গানটিকে ইস্ট-ওয়েস্ট ফিউশন বলা যেতেই পারে। ওই ধরনের একটি গানের মাঝে সেতারের ব্যবহার সত্যিই অভাবনীয়। এখন আমরা ফিউশন শুনে অনেকটাই অভ্যস্ত। কিন্তু সেই সময় শ্রোতাদের কাছে এই গান কতটা গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠবে সে বিষয়ে পঞ্চমের অবশ্য কোনও চিন্তা ছিল না। আজও কোনও প্রাইভেট অথবা অফিস পার্টি চলাকালীন আমাদের কানে আসে এই গানটি। মনোহারী সিং একবার যথার্থই বলেছিলেন, ‘পঞ্চম তাঁর সময়ের থেকে তিরিশ বছর এগিয়ে রয়েছেন’।
আরও পড়ুন:
এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-২৯: ডায়াবেটিসে কি আলু একদম বন্ধ?
বর্ষায় প্রতিদিন গাড়ি চালিয়ে অফিস যান? চারচাকা নিয়ে বেরোনোর আগে এই ৫টি বিষয় অবশ্যই মাথায় রাখুন
এবার আসি সেই গানের কথায়। ‘হাম বেওয়াফা হারগিস না থে’। এটিকে পঞ্চমের কিছু শ্রেষ্ঠ গানের মধ্যে একটি বলে মনে করা হয়। কিশোর কণ্ঠের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কোরাসে ফোনেটিক্সের ব্যবহার এক কথায় অদ্বিতীয়। এই আবেগের বিস্তার বোধহয় কিশোরের পক্ষেই সম্ভব। এটি পঞ্চম-কিশোর জুটির আরও একটি কালজয়ী গান।
আসে ‘নেয়া দৌড়’ ছবিটি। আশা-কিশোরের দ্বৈতকণ্ঠে গাওয়া ‘চলো কাহি আউর চলতে হ্যায়’ এবং কিশোরের গাওয়া ‘ও পাইসে ওয়ালো’ গান দুটি তেমন ভাবে জনপ্রিয় হয়নি। তবে দুটি গানের ক্ষেত্রেই গায়ক-গায়িকার কণ্ঠাভিনয় বিশেষ ভাবে কানে ধরা পড়ে। ‘আজাদ’ ছবির ‘জান কি কসম সচ কহেতে হ্যায় হাম’ গানটি কি অসাধারণ বলুনতো। লতা-কিশোরের দ্বৈতকণ্ঠে পঞ্চমের মেলোডি যেনও আরও বেশি করে মন ছুঁয়ে যায়।
এই ছবির ‘ম্যায় হুঁ তেরি প্রেম দিওয়ানি’ গানটির সুর পঞ্চম নিজেরই গাওয়া একটি বাংলা গান থেকে নিয়েছিলেন। গানটি ছিল ‘সজনী গো প্রেমের কথা প্রেমের ব্যথা জানে বলো কয় জনা’। আনন্দ বক্সীর এই লেখাটিতে সুর বসাতে তাই খুব বেশি ভাবতে হয়নি পঞ্চমকে। খুব সহজেই তৈরি হয়ে যায় গানটি। আর লতা গেয়েছেনও তেমনি। অসাধারণ।
‘রাজু চল রাজু’ গানটি বোধহয় কিশোর-পঞ্চম জুটির কিছু শ্রেষ্ঠ কর্মকাণ্ডের মধ্যে একটি। ধর্মেন্দ্র ঘোড়ায় চড়ে বিদ্যুৎ গতিতে ছুটে চলেছেন আর ছুটন্ত ঘোড়ার তালে তাল মিলিয়ে বেজে চলেছে বঙ্গ। মূলত বঙ্গ দিয়েই শুরু হয় গানটি। কিছু পরেই ভেসে আসে কিশোর কণ্ঠ। বৈচিত্র্য আনা হয়েছে প্রথম দুটি অন্তরার ছন্দকে মূল ছন্দের থেকে কিছুটা অন্যরকম ভাবে তৈরি করে। কিশোরের সেই ‘ম্যানলি ভয়েস’। তাঁর তুলনা তিনি নিজেই। আরডি বর্মণের এহেন সুরের ওপর বোধহয় একমাত্র কিশোরেরই অধিকার। সময় করে কখনও শুনবেন গানটি।—চলবে।
আসে ‘নেয়া দৌড়’ ছবিটি। আশা-কিশোরের দ্বৈতকণ্ঠে গাওয়া ‘চলো কাহি আউর চলতে হ্যায়’ এবং কিশোরের গাওয়া ‘ও পাইসে ওয়ালো’ গান দুটি তেমন ভাবে জনপ্রিয় হয়নি। তবে দুটি গানের ক্ষেত্রেই গায়ক-গায়িকার কণ্ঠাভিনয় বিশেষ ভাবে কানে ধরা পড়ে। ‘আজাদ’ ছবির ‘জান কি কসম সচ কহেতে হ্যায় হাম’ গানটি কি অসাধারণ বলুনতো। লতা-কিশোরের দ্বৈতকণ্ঠে পঞ্চমের মেলোডি যেনও আরও বেশি করে মন ছুঁয়ে যায়।
এই ছবির ‘ম্যায় হুঁ তেরি প্রেম দিওয়ানি’ গানটির সুর পঞ্চম নিজেরই গাওয়া একটি বাংলা গান থেকে নিয়েছিলেন। গানটি ছিল ‘সজনী গো প্রেমের কথা প্রেমের ব্যথা জানে বলো কয় জনা’। আনন্দ বক্সীর এই লেখাটিতে সুর বসাতে তাই খুব বেশি ভাবতে হয়নি পঞ্চমকে। খুব সহজেই তৈরি হয়ে যায় গানটি। আর লতা গেয়েছেনও তেমনি। অসাধারণ।
‘রাজু চল রাজু’ গানটি বোধহয় কিশোর-পঞ্চম জুটির কিছু শ্রেষ্ঠ কর্মকাণ্ডের মধ্যে একটি। ধর্মেন্দ্র ঘোড়ায় চড়ে বিদ্যুৎ গতিতে ছুটে চলেছেন আর ছুটন্ত ঘোড়ার তালে তাল মিলিয়ে বেজে চলেছে বঙ্গ। মূলত বঙ্গ দিয়েই শুরু হয় গানটি। কিছু পরেই ভেসে আসে কিশোর কণ্ঠ। বৈচিত্র্য আনা হয়েছে প্রথম দুটি অন্তরার ছন্দকে মূল ছন্দের থেকে কিছুটা অন্যরকম ভাবে তৈরি করে। কিশোরের সেই ‘ম্যানলি ভয়েস’। তাঁর তুলনা তিনি নিজেই। আরডি বর্মণের এহেন সুরের ওপর বোধহয় একমাত্র কিশোরেরই অধিকার। সময় করে কখনও শুনবেন গানটি।—চলবে।
* পঞ্চমে মেলোডি (R D Burman): সৌম্য ভৌমিক, (Shoummo Bhoumik) সঙ্গীত শিল্পী।