রবিবার ২৪ নভেম্বর, ২০২৪


বিজ্ঞানী টম ওগলে। ছবি: সংগৃহীত।

সংস্কৃতে একটি শ্লোক আছে—’মনসা চিন্তিতং কর্ম, বচসা ন প্রকাশয়েৎ’। অর্থাৎ কোনও কাজ শুরু করার আগে মনে মনে তা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা উচিত। কখনওই কাজটি সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত তা জনসমক্ষে আনা ঠিক নয়।

অনেক সময় কোনও কোনও গবেষকের আবিষ্কার প্রকাশের আগেই তা চিরতরে বিলুপ্ত হয়ে যায়। এর কারণস্বরূপ বলা যায়, হয়তো বা তাঁরা তাঁদের আবিষ্কারের গবেষণা নিয়ে কোনও কিছু প্রকাশ করে ফেলেছিলেন তা সফলতার মুখ দেখার আগেই। ফলে তাঁদের কষ্টার্জিত আবিষ্কার সর্বসমক্ষে আসার আগেই চিরতরে বিলীন হয়ে গিয়েছে।
তেমনি এক যুগান্তকারী আবিষ্কার সম্পর্কে আজ আপনাদের জানাবো। সাল ১৯৭৭। আজ বিশ্ব দূষণে পরিপূর্ণ, যার জন্য মূলত শিল্পই দায়ী। যদিও এই শিল্পের জন্যই মানুষ পেয়ে থাকে উন্নত জীবনযাত্রা। আমরা সকলেই এই উন্নত জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত এবং গড্ডালিকা প্রবাহে প্রবাহিত। তবে পৃথিবীতে সব সময়ই মহান কিছু ব্যক্তি অবতীর্ণ হন, যাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন আমেরিকার এক বিজ্ঞানী টম ওগলে। যিনি এক জীবন পরিবর্তনকারী গাড়ির অংশ আবিষ্কার করে বিশ্বকে পরিবর্তনের সংকল্প নিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন চার্লস নেলসন পোগের পদাঙ্ক অনুসরণকারী। প্রতিদিনের মতো বাগান পরিষ্কার করতে গিয়ে তাঁর একটি মেশিন ভেঙে যায়। সেই ভাঙা মেশিন দেখে তাঁর মাথায় আসে এক অভূতপূর্ব যুগান্তকারী যন্ত্র আবিষ্কারের কথা। কী সেই যন্ত্র?
আরও পড়ুন:

অজানার সন্ধানে: ‘বঙ্গীয় বিশ্বকোষ’ প্রণেতা হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন রবীন্দ্রনাথের প্রিয়পাত্র

ইতিহাস কথা কও, কোচবিহারের রাজকাহিনি, পর্ব-১: রাজবাড়ির ইতিকথা—ইতিহাসের অন্তরে ইতিহাস

সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন: ডায়াবিটিস ধরা পড়েছে? হার্ট ভালো রাখতে রোজের রান্নায় কোন তেল কতটা ব্যবহার করবেন? দেখুন ভিডিয়ো

টম এমন এক যন্ত্র আবিষ্কার করেছিলেন, যা গাড়ির ইঞ্জিনের কার্বুরেটরে প্রতিস্থাপন করলে এক লিটার পেট্রোলে গাড়ি ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত ছুটতে পারবে। টমের বক্তব্য, তাঁর এই যন্ত্র গাড়ির ইঞ্জিনের জ্বালানি সঞ্চয়ী করবে। তিনি প্রথমে ৪২৭ অশ্বক্ষমতাযুক্ত একটি ভি-৮ ইঞ্জিন এবং প্রায় সাড়ে এগারো লিটারের ট্যাঙ্কযুক্ত একটি ফোর্ট গ্যালাক্সি গাড়িতে তাঁর তৈরি যন্ত্রটি ব্যবহার করেন। এর সাহায্যে তিনি প্রায় ১৬০ কিলোমিটার রাস্তা অতিক্রম করেছিলেন। ফোট গ্যালাক্সি গাড়ি অন্যান্য গাড়ির তুলনায় ওজনে বেশ ভারী। তাই যে কোনও গাড়িতে এই যন্ত্র আরও বেশি জ্বালানি সাশ্রয়ী করবে বলে টম আশা করেছিলেন।
আরও পড়ুন:

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-২: মেয়েটি যেন গৃহলক্ষ্মী

এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৫: সুন্দরবন নামরহস্য

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৪২: আশা-ভরসার ‘শঙ্কর নারায়ণ ব্যাঙ্ক’

টম গাড়ির ইঞ্জিনের কার্বুলেটর এবং জ্বালানি পাম্পে একটি বিশেষ ধরনের ফিল্টার সেট করে ইঞ্জিনের দহন চেম্বারগুলিতে পেট্রোল ভর্তি করে দিয়েছিলেন। কিন্তু মানুষ যা ভাবে অন্তর্যামী তা অনেক সময়ই সম্পন্ন হতে দেন না। বরং চুপিসারে হাসেন। ভাগ্যের পরিহাসে টমের এই কালজয়ী আবিষ্কার তেল সংস্থাগুলি ভালোভাবে গ্রহণ করেনি। কারণ এই যন্ত্র আবিষ্কৃত হলে তাদের লাভের থেকে লোকশানই হবে বেশি। যন্ত্রটি সফলভাবে পরীক্ষার পর অনেক বিনিয়োগকারীকেই তাঁর বাড়িতে আনাগোনা করতে দেখা যায়। এরকমও শোনা যায় যে, তিনি অনেকের কাছ থেকে মোটা টাকাও নিয়েছিলেন।
আরও পড়ুন:

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-২৩: গোবিন্দর হেঁয়ালি

ক্যাবলাদের ছোটবেলা, পর্ব-৭: তোমরা যে সব বুড়ো খোকা

দশভুজা: আমি আর কখনওই ফিরে আসার প্রত্যাশা করি না…

তবে এই সব কিছুর মধ্যে হঠাৎ করেই উধাও হয়ে যান টম। তার এই হঠাৎ অন্তর্ধানের পেছনে নানা মুনির নানা মত শোনা যায়। কেউ বলেন, তাঁর স্ত্রী তাঁকে ছেড়ে চলে যান। কারণ তাঁদের পারিবারিক সমস্যা ছিল। আবার অনেকে এও মনে করেন, তিনি নাকি মাত্রাতিরিক্ত মদ্যপান করতেন। এর জেরে অসুস্থতার কারণেই তিনি মারা যান। কিন্তু আমেরিকার জনপ্রিয় রেডিও ভাষ্যকার পল হারবে জানান, যেদিন টম তাঁর আবিষ্কৃত যন্ত্রটি জনসমক্ষে আনবেন বলে স্থির করেছিলেন সেদিন-ই তিনি হঠাৎ করে উধাও হয়ে যান।

এমনকি, তার আবিষ্কৃত এই যন্ত্রটি সম্পর্কে যাবতীয় নথিগুলিকেও আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে বেশিরভাগ মানুষই মনে করেন, টম এবং তাঁর আবিষ্কৃত যন্ত্রের নথি হঠাৎ করে বেপাত্তা হয়ে যাওয়ার পেছনে নিশ্চিত ভাবে কোনও ‘বড় চক্রের’ হাত রয়েছে। কিন্তু সেই দাবি এখনও পর্যন্ত প্রমাণ করা যায়নি।
* অজানার সন্ধানে (Unknown story): ড. সঞ্চিতা কুণ্ডু (Sanchita Kundu) সংস্কৃতের অধ্যাপিকা, হুগলি মহসিন কলেজ।

Skip to content